আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মূত্রনালীর সংক্রমণ ও করণীয়

আতাউর রহমান কাবুল

ওয়েবসাইট অবলম্বনে লিখেছেন আতাউর রহমান কাবুল ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই হলো মূত্র্রণালীর সংক্রমণ। মূত্র্রনালীর কাজ হলো শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় বস্তু মূত্রের মধ্য দিয়ে শরীর থেকে নিষ্কাশিত করা। মূত্রাশয় মূত্রগ্রন্থি বা কিডনি, বহির্মূত্রনালী বা ইউরেথ্রা এবং মূত্রনালী বা ইউরেটার্স নিয়ে মানবদেহের মূত্র প্রণালী গঠিত। মূত্রগ্রন্থি রক্ত পরিশ্রুত করে আবর্জনাগুলো মূত্র হিসেবে মূত্রনালী দিয়ে মূত্রাশয়ে পাঠায়। সেখানে মূত্রগুলো জমা হতে থাকে।

পরে প্রস্রাব করার সময়ে সেগুলো বহির্মূত্রনালীতে হয়। সেই সংক্রমণ কষ্টকর ও অসুবিধাজনক হলেও, তেমন ক্ষতিকারক নয়। সংক্রমণ মূত্রগ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়লে নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ইউটিআই সাধারণত মেয়েদেরই বেশি হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪০ শতাংশ নারীর এক সময়ে না এক সময়ে এটি হয়।

অনেকের ক্ষেত্রে একাধিক বার হয়। ইউটিআই-এর লক্ষণ কী? সবার ক্ষেত্রেই যে লক্ষণগুলো এক হবে তা নয়, তবে সাধারণত —বার বার প্রস্রাবের বেগ, কিন্তু স্বল্প পরিমাণে প্রস্রাব হওয়া —প্রস্রাবের সময়ে জ্বালা-পোড়া বোধ করা —প্রস্রাবে দুর্গন্ধ —প্রস্রাব ঘোলাটে হওয়া কিংবা তাতে রক্তের আভাস। ইউটিআই-এর প্রকারভেদ ইউটিআই-র রকমভেদ আছে। অ্যাকিউট পায়েলেনেফ্রাইটিস-এর ক্ষেত্রে সংক্রমণ মূত্রাশয় থেকে মূত্র গ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে পিঠে ব্যথা, গা কেঁপে জ্বর, বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।

মূত্রাশয়ের প্রদাহে পেটে চাপ বা অস্বস্তি বোধ হওয়া। ইউরে থ্রাইটিস বা বহির্মূত্রনালীর সংক্রমণে প্রস্রাবে জ্বালা বোধ হয়। কেন ইউটিআই হয়? বহির্মূত্রনালী দিয়ে জীবাণু মূত্রাশয়ে ঢুকে বংশ বৃদ্ধি করে এই সংক্রমণ ঘটে। যদিও এসব জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করা একটা সহজাত প্রতিরোধ ক্ষমতা মূত্রাশয়ের থাকে, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবাণুর প্রাবল্যে সেটা সম্ভব হয় না। মেয়েদের সিস্টাইটিস অনেক সময়ে হয় যৌন সঙ্গমের ফলে।

কিন্তু যৌনসঙ্গম ছাড়াও এটা হওয়া সম্ভব। মেয়েদের মলদ্বার এবং বহির্মূত্রনালী কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় মলনালী থেকে নির্গত ইকোলাই জীবাণু বহির্মূত্রনালীতে প্রবেশ করে সিস্টাটিস হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন যৌন-সংক্রামিত রোগের জীবাণু (হার্পিস, ক্ল্যামিডিয়া, গনোরিয়া, ইত্যাদি) পুরুষ ও নারীর মূত্র প্রণালী আক্রমণ করতে পারে। কাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি? মেয়েদের এটি বেশি হয়, কারণ তাদের বহির্মূত্রনালীর দৈর্ঘ্য পুরুষদের থেকে কম। মূত্রাশয়ে পৌঁছতে থাকে।

সাধারণভাবে, যে সব নারী যৌন জীবনে অধিক সক্রিয় তাদের ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া, মেনোপজের পর অন্য কারণে ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। পুরুষদের ক্ষেত্রে মূত্র-নির্গম পথে যদি কোনো বাধা পড়ে (যেমন : প্রস্টেট বড় হলে) তাহলে ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কিডনি স্টোনও প্রস্রাব নির্গমণে বাধা দেয় এবং ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ অথবা কেমোথেরাপি বা অন্য কোনো ওষুধ যা দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ শক্তিকে ব্যাহত করে।

যদি প্রস্রাবের জন্য ক্যাথেটার ব্যবহার করতে হয় দীর্ঘদিনের জন্য তাহলেও ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। রোগ নির্ণয় প্রস্রাব পরীক্ষা করে এই রোগ কোন জীবাণুর জন্য হচ্ছে সেটা ধরতে পারা যায় এবং উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ডাক্তাররা দিতে পারেন। সময়মত চিকিত্সার প্রয়োজনীয়তা আছে। এটি উপেক্ষা করলে জটিলতার সম্ভাবনা থাকে। চিকিত্সা সাধারণত, এই অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়।

ঠিক কোন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে, যা কতদিন খেতে হবে, সেটা নির্ভর করছে রোগের তীব্রতা এবং প্রস্রাব পরীক্ষা করে কি জীবাণু পাওয়া গেছে তা দেখে। সাধারণত, বাহ্যিক লক্ষণগুলো উপশম কয়েক দিনের মধ্যে হয়। কিন্তু তার অর্থ রোগের উপশম নয়। রোগটি নির্মূল করতে হলে অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো কোর্স শেষ করাটা আবশ্যিক। যাদের বার বার করে ইউটিআই হয়, তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক অনেক দিন ধরে খেতে হতে পারে।

যদি ইউটিআই-এর সঙ্গে যৌন ক্রিয়ার সম্পর্ক প্রমাণিত হয়, তাহলে চিকিত্সকরা যৌন সঙ্গমের পর অ্যান্টিবায়োটিকের একটি মাত্র ডোজ খেতে বলতে পারেন। ইউটিআই-এর সংক্রমণের তীব্রতা খুব বেশি হলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। ইউটিআই যদি বার বার হয়, তাহলে মূত্র-সংক্রান্ত রোগের বিশেষজ্ঞ (ইউরোলজিস্ট) বা মূত্রগ্রন্থি বিশেষজ্ঞ (নেফেরালজিস্ট) দেখানোর দরকার হতে পারে। সাধারণভাবে কী করলে এটি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে? —সাধারণভাবে যথেষ্ট পরিমাণে পানি বা তরল খাওয়া উচিত। —প্রস্রাব পেলেই প্রস্রাব করা উচিত।

পরে করব বলে চেপে রাখা উচিত নয়। —মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রস্রাব বা পায়খানা করার পর নিজেকে পরিষ্কার করার সময়, টয়লেট টিস্যু ব্যবহার করলে সামনের থেকে পেছনে মোছা (যাতে নোংরা বহির্মূত্রনালীতে প্রবেশ করার সুযোগ না পায়। পানি ব্যবহার করলে যতদূর সম্ভব সতর্ক হওয়া যাতে নোংরা পানি যোনিপথে প্রবেশ না করে। —যৌনসঙ্গমের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রস্রাব করা। —এমন কোনো ফেমিনিন প্রোডাক্ট (গন্ধনাশক বা ডিওডরেন্ট স্প্রে, ডুশ, পাউডার, ইত্যাদি বা বহির্মূত্রনালীতে জ্বালা বা অস্বোয়াস্তির সৃষ্টি করে—তা ব্যবহার না করা।

লেখক : স্বাস্থ্য নিবন্ধকার বিভাগীয় সম্পাদক, আমার স্বাস্থ্য ইমেইল: সূত্র: Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.