আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৃষকের মনে নতুন আশা : সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প

অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেয়, তার বক্ষে বেদনা অপার...
বাংলাদেশের একদম দক্ষিনের জেলা বরগুনা। অল্প কিছুদূর এগুলেই অসীম সাগরের হাতছানী। কিন্তু সেই বরগুনার অধিকাংশ আবাদী জমিতেই সেচের অভাবে বছরে মাত্র একটি ফসল উৎপন্ন হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নীচে। খোদ ঢাকা শহরেই যেখানে বিদ্যুতের অভাবে আমরা হাসফাস করি সেখানে প্রত্যন্ত বরগুনায় তাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ আশা করাটা অস্বাভাবিক।

একপাশে সুন্দরবন আর দুই পাশে সাগর বেষ্টিত বরগুনা জেলাতে তাই বছরে মাত্র একবার ফলন হয়। তাও আমন মৌসুমে। আর এর মাঝে কখনো যদি সাগর ফুসে উঠে বা খরার প্রকোপ দেখা দেয় তাহলে বরগুনা জেলার হতভাগ্য মানুষগুলোকে আধপেটা করে কাটাতে হয় পুরোটf বছর। ব্যাপারটা মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংকের এস.এম.ই ডিভিশনের প্রধান মোহম্মদ ইকবালের নজরে আসে বেশ আগেই। কিন্তু চাইলেও সব সময় সবকিছু করা যায় না।

বিদ্যুৎ সমস্যাতো পুরো জাতির সমস্যা। একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের পক্ষে তো তা রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। তারওপর এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংটির নিজস্ব কোন শাখা নেই। নেই লোকবলও। তাই রহিম আফরোজ সাভারে সৌর বিদ্যুতের একট মডেল প্রজেক্ট করছে জেনে মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক এস,এম.ই বিভাগের লোকজন ছুটে যান সেখানে।

রাতারাতি আমরা আমাদের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে পারবো না, কিন্তু প্রকৃতির শক্তি আর মানুষের অদম্য ইচ্ছা দিয়ে কিছুতো একটা করতে পারবো হতভাগ্য মানুষগুলোর জন্য। রহিম আফরোজের প্রকল্পটি পছন্দ হয় সবার। মনে হয় এমন একটা কিছু করা যেতে পারে বরগুনার সেচ সমস্যা সমাধানের জন্য। তাই ধীরে হলেও কাজ এগিয়ে চলে। কিন্তু সেখানকার কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের হাতে প্রযুক্তি তুলে দেয়া আর সম্পূন্য সুবিধাটা তুলে দেবার জন্য উদ্যোক্তার প্রয়োজন হয়।

এগিয়ে আসে বহুদিন ধরে এতসাথে কাজ করা আর ডি এফ। তাদের সাথে ব্যাংকের কিছু ঋণ প্রকল্প আগে থেকেই ছিলো। তাই সমন্বয় করতে সমস্যা হয়নি। মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক ,রহিম আফরোজের আর আর.ডি.এফ এর সহযোগীতায় শুরু হয় সমীক্ষা কাজ। কোথায় কতটুকু জায়গায় প্রকল্প হবে, টার্গেট ইউজার কারা হবে,কতদিনে কিভাবে তাদের সাহায্য করা হবে এসব।

তবে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় মনে হয় ছিলো প্রকল্পের কার্যকারীতা প্রমাণ করা। কেননা, সৌর বিদ্যুৎ একটি অত্যন্ত ব্যায়বহুল প্রযেক্ট। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানী চাহিদা পূরণে এর কোন বিকল্প নেই। সবচেয়ে বড় কথা একবার স্থাপনের পর খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। তাই সৌর বিদ্যুতের পরিবর্তে ডিজেল জ্বালানী ব্যাবহার করলে আগামী দশ বছরে কত খরচ হবে আর সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করে দশ বছরে কি পরিমান সাশ্রয় হবে সেই হিসেব কষাটা ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ডিজেলে অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানীকে প্রায় দুমূল্য জ্বালানীতে পরিনত করছে, তাতে সৌর বিদ্যুতের এই প্রকল্পের যৌক্তিকতা প্রমাণ হতে তাই সময় লাগেনি। পূরো প্রকল্পটিই কৃষকবান্ধব আর সাশ্রয়ী প্রমানিত হয়। সবচেয়ে বড় কথা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেলে এই অঞ্চলে বছরে তিনটি ফসল ফলানোর সম্ভাবনা তৈরী হয়। বিরূপ প্রকৃতির কারনে তাই একটি ফসল নষ্ট হলেও কৃষককে অসহায় হয়ে বসে থাকতে হবে না। প্রাথমিক সার্ভে শেষে বরগুনা সদর উপজেলার ফুলতলা ও কুমারখালী গ্রামের মাঝে অবস্থিত ৫০ একর ভূমিকে উপযুক্ত নির্বাচন করা হয়।

এরপর শুরু হয় এই প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্য সুবিধাভোগী কৃষকদের সম্পূণভাবে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা এবং তাদের সমস্যাগুলো পর্যালোচনা করা। অবশেষে আরডিএফ তিরাশি জন কৃষককে নিয়ে একটি সমবায় সংগঠন গড়ে তোলে। এগিয়ে আসে রহিম আফরোজ, মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক । কৃষকদের সহজ শর্তে দশ বছর মেয়াদী ঋণ দিয়ে শুরু হয় একটি স্বপ্নের। অবশেষে গত ১৭ ই জুলাই তারিখে বরগুনার সদর উপজেলার বদরখালি উপজেলার ফুলতলা এবং কুমারখালি গ্রামের ৫০ একর জমিতে দৈনিক আট লক্ষ লিটার সেচ সুবিধা নিয়ে চালু হয় সোলার ইরিগেশন প্রজেক্ট।

মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সাথে এই সাফল্যের আনন্দ ভাগ করে নিতে সেখানে হাজিন হন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর জনাব ড. আতিউর রহমান, মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এবং প্রধান নির্বাহী জনাব আনিস এ খান এবং এস.এম.ই ডিভিশনের প্রধান মোহম্মদ ইকবাল । এখানে পানির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় খালের পানি। দশ হর্সপাওয়ারের তিনটি মোটরে অবিরাম বিদ্যুৎ শক্তি যোগান দিয়ে যাচ্ছে 8.4KWp ফটোভোলটিক ক্ষমতার সোলার প্যানেল। মাথার উপর গনগনে সূর্য আর সেই তাপে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়ে পার্শবর্তী খালের পানি এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে মাঠ। তরতর করে বেড়ে উঠছে শস্য আর তাই সূর্য্যের হাসির সাথে হাসি ছড়িয়ে পড়ছে প্রত্যন্ত বরগুনার ফুলতল আর কুমারখালীর কৃষকের মুখে।

একদিন এই হাসি ছড়িয়ে যাক বাংলাদেশের সব কৃষকের মুখে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.