আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামুর সকল সম্মানিত ব্লগার এবং সামু মডারেটরের প্রতি খোলা চিঠিঃ

সামহোয়ারইন ব্লগে নিজের নিক রেজিস্ট্রেশন করতে পেরে আনন্দিত। সব ভাল আমার আপন, সব খারাপ আমার পর......সবাইকে শুভেচ্ছা। শ্যামল বাংলা।

প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা, পাঁচ বছর পুর্বে হঠাত করেই সামহোয়্যারইনব্লগ দেশের বাংলাভাষীদেরতো বটেই বিদেশে বসবাসকারীদের প্রবাসী বাংগালীদেরকেও স্বদেশ-মাতৃভূমির স্পর্শ দিয়েছিল। সারাবিশ্বে লক্ষ কোটি বাংলাভাষীদের কাছে সামহয়্যারইনব্লগ আদরের "সামু" হয়ে ওঠে।

সামু'র তরুন ব্লগার লেখকগনের লেখা মাতৃভূমি আর মাতৃত্বের স্পর্শ বুলিয়েদেয় শিক্ষিত তরুন-যুবা-বৃদ্ধ সকলের মনে। ইংরেজী ব্লগিং দেখতে দেখতে, পড়তে পড়তে যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম-তখনই সামহোয়্যারইন বাংলা ভাষায় ব্লগিং করার সুযোগ করে দেয়। ইন্টারনেটেই সামু সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। আমারমত লক্ষ লক্ষ প্রবাসী তখন সামু নেশা জ্বরে আক্রান্ত। কিন্তু তখন প্রবাসীদের বেশীরভাগ বাংলাভাষাভাষীরাই বাংলা টাইপ করতে পারতামনা-তাই শুধু পাঠক হয়ে মুগ্ধ থেকেছি।

দেখেছি শিক্ষিত তরুন অপেশাদার কিছু লেখক ভিন্ন ভিন্ন আংগীকের ভিন্ন ভিন্ন কত সুন্দর সুন্দর লেখা পাঠকদের অন্তরে স্থান করে নিয়েছেন। সেই সামু গত কিছু দিন(প্রায় বছর খানেক) যাবত কিছু ভন্ড ব্লগারদের গালাগালি,অসুস্থ্য মানষিকতা প্রকাশের চারনভূমি হয়ে উঠেছে। সামুর এই অধপতন সাধারন সুস্থ্য, রুচীশীল গুণী-জ্ঞানী পাঠক মেনে নিতে পারেননি। অনেক গুণী ব্লগারদের কেউ কেউ নিরবেই লেখক হিসেবে সামু ত্যাগ করেছেন। যাদেরকে আমরা সবসময় মিস করি, মিস করবো।

সামুর এই অধপতন নিশ্চই একদিনে হয়নি। সামুর অলক্ষ্যে, কিম্বা নির্লিপ্ততায় দিনে দিনে ভন্ড ব্লগারেরা প্রশ্রয় পেয়েছে-যা এখন ভন্ডদের ভন্ডামীর মহীরুহ হয়ে দাড়িয়েছে। কিছু শিক্ষিত তরুন সচেতন ব্লগার সামুর এই অধপতন ঠেকাতে প্রতিবাদী হয়েছেন। প্রতিবাদ পোস্ট করেছেন অত্যন্ত ভদ্র, সৌজন্যতা বজায় রেখেই। সেইসব তরুন সাহসী সুস্থ্য ব্লগারদের সালাম জানাই।

আপনাদের এই প্রতিবাদ নিশ্চই মাতৃভাষা আর সামুকে ভালোবেসে। আশা করি সামুতে “অশ্লীলতার বিরুদ্ধে” প্রতিবাদের প্রেক্ষাপট সামু মডারেটর “সামুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ” ভাববেননা। প্রতিবাদের বিষয়টাকে সামু মডারেটর সামু সহায়ক ভাবলেই সামু উপকৃত হবে। লক্ষ কোটি বাংলাভাষাভাষী সামু ব্লগ নিয়ে গৌরবান্বিত হবেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে যেমন অনেক বিদেশীদের অবদান আমরা শ্রদ্ধার সাথে শরণ করি, তেমনি বাংলাভাষার জন্য অনেক বিদেশীদের ভালোবাসায় আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।

আমরা আশা করতে পারি-এমন একদিন আসবে যেদিন বাংলা ভাষায় ব্লগিং’র সুযোগ দানের পথিকৃত একজন বিদেশীর জন্য বিশ্বব্যাপী সকল বাংলাভাষীদের কাছে অনেক বড় শ্রদ্ধা আর স্বীকৃতির অংশীদার হবেন আরো একজন বিদেশী-যার নাম আরিল। একটা বিষয় আমাকে অবাক করেছে-তাহলো, সামুর অসভ্য ব্লগারদের বিরুদ্ধে, অসভ্যতার অভিযোগ কিছুকিছু ব্লগার অসভ্যতা দিয়েই করে চলেছেন! অশ্লীলতা/অসভ্যতার প্রতিবাদের ভাষাও যদি হয় অশ্লীলতা, অসভ্যতা-তাহলে অভিযুক্ত আর অভিযোগকারীদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? অভিযোগের ক্ষেত্রে এখন অনেকের নামে আমরা অভিযোগকারীরা নিজেদের ব্যাক্তি আক্রোশ মেটাতেও কারো কারো নামে অশ্লীল ট্যাগিং করতে পিছপা হচ্ছিনা। আমি শুধু একটি উদাহরনই দিতে চাই। ব্লগার “ক্যামেরাম্যান” শুধু একজন সিনিয়র ব্লগারই নন, বয়সেও উনি অন্যতম সিনিয়র ব্লগার। ওনাকে কেউ কেউ “লুলম্যান”/”বুইড়াভাম” নামে অভিহিত করে ওনাকেও অভিযুক্ত করেছেন।

আমরা অনেক ব্লগার দেখেছি-উনি আমাদের থেকে বয়সে অনেক বড় হলেও ওনার মধ্যে তারুণ্যের কমতি নেই। উনি সকলকেই স্নেহের চোখে, সম্মানের চোখে দেখেন। প্রবাসী অনেক নারী/পুরুষ ব্লগার দেশে আসবেন-ব্লগে সেই পোস্ট পড়েই উনি সেই ব্লগারদের অনেককেই এয়ারপোর্টে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থেকেছেন, অনেক ব্লগার মফস্বল থেকে ঢাকায় এসেছেন-জেনেই উনি সেই ব্লগারের সাথে দেখা করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। উনি একজন আমোদ প্রিয় মানুষ-যা বাংগালীদের মধ্যে কমই দেখা যায়। তাই ব্লগারদের সব অনুষ্ঠানের মধ্যমনি উনি।

কাউকে কখনোনই রুঢ় মন্তব্য খুব কমই করেন। উনি একজন ভালো অর্গানাইজার। প্রতিবার পিকনিকের অন্যতম অর্গানাইজার উনিই। এবারের পিকনিকেও উনি একজন অন্যতম উদ্যোক্তা। পিকনিক পোস্টে কয়েকজন ব্লগারের ভিন্নমত উনি সহজ ভাবে নেননি-যা ওনারমতো একজন শিক্ষিত সিনিয়র ব্লগারের কাছে আমিও আশা করিনি।

কিন্তু উনি হয়ত উত্তেজনার বশেই কিম্বা কিছুটা ক্ষোভের বশেই ওনার “পিকনিক” সংক্রান্ত পোস্টে দুইজন ব্লগারের মন্তব্যের জবাব সেই দুইজন ব্লগারকে অসৌজন্য ভাষায় জবাব/মন্তব্য করেছেন এবং ঐ মন্তব্যে তিনি এবং আরো কয়েকজন অভিযুক্তদের মন্তব্যে “মুক্তিযোদ্ধা সন্তান” নিয়েও কুটুক্তি করেছেন-যা ওনার স্বভাব বিরুদ্ধ বলেই মনে হয়েছে। আমরা সবাই ভূল করতেই পারি। কিন্তু একটা মানুষ দীর্ঘ দিন, সব সময় ভূল করতে পারেনা। বেশীর ভাগ জ্ঞানী মানুষই ভূল করে তাঁর ভুল বুঝতে পারেন। আমি নিশ্চিত, শ্রদ্ধেয় ক্যামেরাম্যান ভাইও অমন মন্তব্যে নিজের সৌজন্যবোধের সীমাবদ্ধতা অস্বীকার করবেননা।

কিন্তু ওনার নামের সাথে যে নোংরা ট্যাগিং জুড়ে দেয়া হয়েছে-তার বিন্দুমাত্র সত্যতা কেউ কোনোদিন প্রমান করতে পারবেননা নিশ্চিত। আমরা সবাই একদিন বৃদ্ধ হবো-যেমন আমাদের বাবা, মা সহ পরিবারের আপন জনেরা বৃদ্ধ হয়েছেন-কিন্তু তাঁদেরকে কেউ “বুইড়াভাম” বলে উপহাস করবেননা। কাজেই ব্লগার ভাইদের নিকট অনুরোধ ব্যাক্তি আক্রোশ(যদি কেউ কারো আক্রোশের শিকার হয়েও থাকেন)বর্তমান অশ্লীলতা বিরোধী অভিযোগের সুযোগে কেউ যেনো আমরা কারোর প্রতি ব্যাক্তি আক্রোশ মেটাতে উতসাহি নাহই। তাহলে ব্লগের অশ্লীলতা বিরোধী প্রতিবাদী ভূমিকার যথার্থ কার্যক্রম থেকে দৃস্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হবে। মনে রাখতে হবে-কাউকে অসম্মান করে নিজেকে সম্মানিত করা যায়না, বরং কাউকে সম্মান করেই নিজেকে সম্মানিত করা সম্ভব।

অন্যদিকে অভিযোগের মাত্রাটা কোনো কোনো ব্লগার হয়ত অনেক ক্ষোভে, দূঃখে, রাগে অভিমানে সরাসরি মডারেটর 'সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা'কেই আক্রমন করেছেন। তাঁকে গালাগালি করে চলছেন। আমাদের ভুলেগেলে চলবেনা-আমরা শত শত ব্লগার অভিযোগ করছি-যা মডারেটর হিসেবে “একজন” জানা’কেই সামলাতে হচ্ছে। শত শত ব্লগারদের শত শত অভিযোগ মুহুর্তেই সমাধান দেয়া সম্ভব নয়। ব্লগারদের গড় বয়স বিচারে জানা আমাদের ছোট বোন তুল্য একজন নারী।

আমরা আমাদের কোনো একজন কিম্বা একাধিক ব্লগারের বিরুদ্ধে কতিপয় দুর্বিত্ব ব্লগার আক্রমান্মক কিছু বললে/লিখলেই কতটা কস্ট পাই-সেখানে একজন 'সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা'কে যখন সম্মিলিতভাবে আমরা অনেকেই আক্রমন করি-তা ওনার জন্য কতটা কস্টকর হতে পারে-তা কি আমরা একবারও ভেবে দেখেছি? উনিও একজন নারী, একজন বোন, এক জন স্ত্রী, সন্তানের মা-ওনাকেও পরিবার, সমাজে বাসকরতে হয়। আমরা যা অতি সহজে করা সম্ভব মনে করি-একজন "ইন্সটিটিউশন প্রধান"র পক্ষে তাকিন্তু করা ততটা সহজ হয়ে ওঠেনা। তাঁকে অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করে করতে হয়। কাজেই শুধু মাত্র বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য নয়-প্রত্যেকের বাস্তবতাও উপলব্ধি করতে হবে। অতীতে আমাদের সম্মিলিত দাবী এবং পালটা দাবীর কারনেই কিন্তু আমরা অনেক ভালো ভালো লেখকদের সামু থেকে হারিয়েছি।

আমরা আশা করবো-মডারেটর কারো দ্বারা প্রভাবিত নাহয়ে সুস্থ্য সঠিক বিচার বিশ্লেষন করে সিদ্ধান্ত নিবেন-যাতে নির্দোষ কোনো ব্লগার শাস্তি নাপায়। আবার কেউ লঘু পাপে গুরু দন্ড ভোগ করবে, অন্যদিকে কেউ জঘন্য অশ্লীলতা করে লঘুদন্ড পেয়ে পারপেয়ে যাক-সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রসংগত আমরা বিশ্বখ্যাত আইনজ্ঞ Marfy’s law-“anything that can go wrong,will go wrong”-বাক্যটি শ্রদ্ধেয় মডারেটর সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা’কে মনে করিয়ে দিতে চাই এবং আমরাও মনে রাখতে চাই। কয়েকদিন যাবত একের পর এক সামুর পাতায় বিভিন্ন ব্লগারদের অশ্লীলতার বিরুদ্ধে আসছেই......। অভিযোগতো একই।

তাহলে একই অভিযোগ বারবার সামুর প্রথম পৃষ্ঠায় কেন? মডারেটরতো বলেছেনই-“ব্লগটিমের বাইরে কেউ আমাদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেননা। ভাষা, জাতীয়তা, দেশ, পতাকা, স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্বের বিরোধীতাকারী বা অবমাননাকারীর বিরুদ্ধে আমরা সবসময়ই সোচ্চার। আমাদের নজরে এ, ধরণের কোন কিছু এড়িয়ে গেলে সম্মানিত ব্লগারদের কাছ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিপোর্ট আশা করি। একক বা দলবদ্ধভাবে ব্যক্তি আক্রমণ, নোংরা শব্দ/বাক্য ব্যবহার, ট্যাগিং- এর মত ক্ষুদ্রতায় না গিয়ে, নিয়ম বহির্ভুত ব্লগের পাতার মডারেটর/কর্তৃপক্ষ/নাম উল্লেখপূর্বক চিঠি না লিখে বরং সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে অনেক বেশী দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। ছুটির দিনগুলোতেও তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত সমাধান সহজ।

“-আসুন আমরা মডারেটরের কথার উপড় আস্থা রেখে আমাদের অভিযোগ সরাসরি জানাই এবং অভিযোগ জানানোর রেফারেন্স কপি রেখে দেই। যদি আমাদের সেই অভিযোগের জন্য যথাযথ ব্যবাস্থা নাইই নেয়া হয়-তখন আমরাও গালিবাজ হতে নাপারলেও সামু বর্জন করতে পারবো। একটা বিষয় লক্ষ করেছি-জানা’কে একদল ব্লগার “মগবাজারীয়”, একদল “আওয়ামী/ভাদা”, একদল “নাস্তিক” সহ বিভিন্ন নামে অভিহিত করে তাঁকে কঠোর সমালোচনা করেন। এই প্রসংগে নেলসন ম্যান্ডেলার একটি উক্তি পাঠকদের সামনে উদ্ধৃত করতে চাই-“কেউ যখন তোমাকে “ডানপন্থী” বলে গালি দিবে, আবার একই সংগে তোমাকে “বামপন্থী” কিম্বা “উগ্রপন্থী” বলে তিরস্কার করবে-তখন তুমি মনে করবে-তুমি জনগন পন্থী”! আমরাও সামু মডারেটর সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা’কে সামু’র ৬৫ হাজার ব্লগারদের ৬৪ হাজার ৯ শত ৫০ জন সুস্থ্য সুন্দর ব্লগার পন্থী হিসেবে দেখতে চাই। আমরা লক্ষ করেছি ইতোমধ্যেই সামু কর্তিপক্ষ বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত ব্লগারের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যাবস্থা নিয়েছেন এবং অভিযোগকারী ব্লগারদের পোস্টেই মডারেটর জানিয়েছেন-তারা পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে আরো ব্যাবস্থা নিবেন।

আমরা মডারেটরের উপড় আস্থা হারাতে চাইনা। তাঁকে সময় দেয়া হোক। আমাদের ভুলেগেলে চলবেনা-“কোনো থিউরি বা হাইপোথিসিস দাঁড়ায় লজিকের ওপর”। আমরা মডারেটরের উপড় আস্থা হারাতে চাইনা-তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নোটিশ বোর্ডের মাধ্যমেই সকল ব্লগার/পাঠকদের সামনে তাঁদের ভুমিকা/কার্য্যক্রম তুলে ধরবেন। একই সংগে মডারেটরকে মনে করিয়ে দিতে চাই-আমাদের অভিযোগগুলো সামু কর্তিপক্ষ বৃটিশ বেনিয়াদের মতোই ভ্রাতৃত্ব/বন্ধুপ্রতীম আচরণের আড়ালে প্রভুত্ব ভাব দেখাবেন-সেটা মেনে নেয়ারমত পরিস্থিতি/সুযোগ নেই।

ধন্যবাদ সবাইকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.