আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরোদমে চলছে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি



বিশ্ব ইজতেমা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জামাত। আর এই জামাত বিগত ৪৫ বছর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই। গর্বের ও সম্মানের। শুধু দেশের লোকজনই নয় বরং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ছুটে আসেন বাংলাদেশে শুধুমাত্র ইজতেমা পালন করতে।

আর এবারের বিশ্ব ইজতেমা অন্য বারের তুলনায় কিছুটা আলাদা। কেননা ইজতেমা শুরুর চার যুগেরও বেশী সময় পরে এবারই প্রথমবারের মত দুই দফায় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তার জন্য প্রায় সকল সত্তর ভাগ প্রস্তুতি সম্পন্ন্ হয়েছে। ইজতেমার ইতিহাস সম্পর্কে জানা গেছে , হযরত মুহাম্ম্দ (স তাবলিগের দাওয়াতী কাজের জন্য ব্যাকুল ছিলেন। তার কাজের ধারাবহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মওলানা ইলিয়াস (র সর্বপ্রথম দিল্লির মেওয়াত এলাকায় দ্বীনি দাওয়াতের প্রচলন করেন।

মওলানা ইলিয়াস (র এর সাথে দেখা করে নিকট থেকে ১৯৪০ বাংলাদেশে দ্বীনের দাওয়াতের দায়িত্ব নিয়ে আসেন মওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী। তিনি ১৯৪৪ সালে এ দায়িত্ব দেন বাগের হাটের মওলানা আবদুল আযীযের (রহ ওপর। এরপর খুলনা জেলার উদয়পুর মাদ্রসা ছিল তাবলিগের বাংলাদেশের প্রথম কার্যালয় । সেখানেই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ইজতেমা শুরু হয়। এরপর তাবলিগের দ্বিতীয় ইজতেমা খুলনার তেরখাদা থানার বামনডাঙ্গায়,তৃতীয় ইজতেমা খুলনা শহরের হেলালতলার তালাবওয়ালী মসজিদে,চতুর্থ ইজতেমা ঢাকার লালবাগ শাহী মসজিদে, পঞ্চম ইজতেমা ঢাকার লালবাগ কেল্লা এলাকার খান মসজিদে এবং ষষ্ঠ বছর রমনা পার্ক সংলগ্ন মাওআলী মসজিদ অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর থেকে মাওয়ালী মসজিদকে কেন্দ্র করেই সারা বাংলাদেশে তাবলিগের কার্যক্রম শুরু হয় যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আছে। মাওয়ালী মসজিদ টি অবশ্য পরে সংস্কার ও বৃহত্তর আকৃতি দান করার পর কাকরাইল মসজিদ নামে সুখ্যাতি লাভ করেছে। তাবলিগ জামাতের ইজতেমা প্রথমে মসজিদ ভিত্তিক শুরু হলেও পরবর্তীতে লোক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে ১৯৬৫ সালে একে ঢাকার তুরাগ নদীর তীরের ১৬৫ একরের বিস্তির্ণ মাঠকে ইজতেমা মাঠ হিসেবে নির্বাচন করা হয়। তার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তুরাগ তীরেই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। দিন দিন বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহন কারী দেশীÑবিদেশী মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে।

১৯৬৫ সালে তুরাগ তীরে শুরু হওয়া ইজতেমা এবারই প্রথমবারের মত দুটি পযায়ে অনুষ্ঠিত হবে। তাবলিগের লাখ লাখ মুসল্লি নিয়ে সুশৃঙ্খল অবস্থানের মধ্য দিয়ে দুটি পর্যায়ে দুটি খিত্তায় ইজতেমার কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কতৃপক্ষ। প্রথম পর্যায়ে ২১ শে জানুয়ারী থেকে শুরু হয়ে ২৩ শে জানুয়ারী আখেরী মোনাজাত এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৮ শে জানুয়ারী থেকে শুরু হয়ে আখেরী মোনাজাত হবে ৩০ শে জানুয়ারী । তবে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন ও ভিআইপিদের নিরাপত্তা দেবার ঝামেলাহেতু প্রশাসন আখেরী মোনাজাত একদিনে করার জন্য অনুরোধ করেছে । কিন্তু স্থান সংকুলান না হওয়ায় আখেরী মোনাজাত ও তাবলিগের দুটি জামাত দুই পর্যায়ে কারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইজতেমা পরিচালনা কমিটি।

দুটি পর্যায়ে অনুষ্ঠিতব্য ইজতেমার প্রথম পর্যায়ে মাঠকে ৪২ খিত্তায় আর দ্বিতীয় পর্যায়ে মাঠকে ৩৪ খিত্তায় ভাগ করে দেশের সকল থানাকে দুটি ভাগে ভাগ করে আগেই জানিয়ে দেওয়া হবে কবে কোন জেলার মানুষ ইজতেমায় অংশ নিবেন। তবে বিদেশী মেহমানরা তাদের সুবিধামত যে কোন দিন অংশ নিতে পারবেন বলে জানিয়েছে পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য। বিদেশী জামাতের সদস্যরা ইজতেমায় অংশ নিতে ১২ দিনই তাদের তাবুতে থাকতে পারবেন। এবারের ইজতেমা দুটি পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবার কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, দীর্ঘ ৪৬ বছরে মাত্র ১৬৫ একর জমিতে স্থান সংকুলান হয়না মুসল্লিদের । ফলে প্রতিবছরই তাদেরকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।

সরকারও ইজতেমার মাঠের পরিধি বাড়ানো নিয়ে কোন কথা বলেননি। ফলে বাধ্য হয়েই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কষ্টের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দু দফায় ৬ দিন ব্যাপী ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কতৃপক্ষ। দুবার’ই আলাদা আলাদা বয়ান ও আলাদা মোনাজাত হবে। এবারের ইজতেমা দুদিন ব্যাপী করা হলে আগের মত জমজমাট থাকবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে একজন জিম্মাদার বললেন ,অপেক্ষা করুন, সময় মত দেখতে পাবেন। ইজতেমা মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুরব্বিদের তত্তাবধায়নে দলে দলে ভাগ হয়ে মুসল্লিরা টিন,চট,বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে ইজতেমা ছাউনি তৈরীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এতে শ্রমিকের পাশাপাশি সেচ্ছাশ্রম দিতে আসা বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ রয়েছেন। যাদের মধ্যে ছোট বড়, ধনীÑগরীব ভেদাভেদ নেই। সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এমন কাধেঁ কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার উদাহরণ বিরল। তবে মাদ্রাসা , স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই প্রধান। যারা এখানে শ্রম দেওয়াকেও একটি ইবাদত বলে মনে করছেন।

বাঁশ, পাইপ,ও চট দিয়ে ইজতেমা প্যান্ডেল তৈরীর কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আর এখানে শ্রমিক ও সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে যারা কাজ করছেন তাদের কে কি করবেন তার তত্তাবধায়ন করছেন তাবলিগের জিম্ম্দারেরা। প্রতিদিন এশার নামাযের পর কাজের অগ্রগতি, কোথায় কি কাজ করতে হবে তা খুজে বের করে সিদ্ধান্ত নেওয়া, এবং নতুন নতুন কাজের জন্য নতুন নতুন জামাত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ফলে কাজ এগুচ্ছে সুপরিকল্পিত ও দ্রুত গতিতে। কথা হল এরকম সেচ্ছা শ্রম দিতে সুদূর মাগুরা থেকে আসা লুৎফর রহমান ও মকিদুল ইসলামের সাথে তিনি জনালেন, “বিশ্ব ইজতেমাই বাংলাদেশের হজ্জের মত, আর এর জন্য আমরা কাজ করতে পারছি ।

যা অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার । ” আয়োজকরা আগামী ১৭ জানুয়ারী তারিখের মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন করবেন বলে জানিয়েছেন। এবার ১৫০ একর জমির ওপর প্যান্ডেল তৈরী হচ্ছে বলে জানা গেছে। উত্তর-পশ্চিমে তাবলিগের বিদেশী মেহমানদের জন্য সরকারী ভাবে তৈরী টিনশেড নির্মানের কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। সবগুলো টিনশেড মিলিয়ে এবার অন্তত ২৫ হাজার বিদেশী মেহমান থাকতে পারবেন বলে ধারণা করছে আয়োজক কমিটি।

তবে এবার বিদেশীদের জন্য অন্যান্য বারের তুলনায় ধারণ ক্ষমতা একÑচতুর্থাংশ বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেকটি শেডে দ্বিতল ওয়াশরুম, যাতে সার্বক্ষণিক ঠান্ডা ও গরম পানির ব্যবস্থা থাকবে। ইজতেমা মাঠে গভীর নলকূপের সাহায্যে তোলা হবে পানি যাতে কারও ওযূ গোছল বা যে কোন ধরনের পানির সংকটে ভুগতে না হয়। আর ইজতেমার ৬ দিন ইজতেমা মাঠে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। প্রতিবারের মত এবারও সেনাবাহিনী তুরাগ নদীর ওপর ভাসমান সেতু ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকবে।

এছাড়া পুলিশের সাথে থাকছে একদল চৌকস র‌্যাব সদস্য। ইজতেমা মাঠ এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পেশাকধারী প্রচুর সদস্য। যেন কেউ যে কোন সমস্যায় তাৎক্ষাণক ভাবে সাহায্য পেতে পারেন তারা। বাড়তি নিরাপত্তার জন্য থাকবে র‌্যাবের একটি স্পেশাল একটি কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।

প্যান্ডেলের ভেতরে ঢোকানোর সময়ও মেটাল ডিরেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। সব মিলিয়ে অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের আয়োজন ভিন্ন এবং সমৃদ্ধ। এখন কেবল ভালভাবে ইজতেমা শেষ করার পালা। মুসলিম জাহান সেদিকেই চেয়ে আছে। #................................. ১০/০১/১১



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।