আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ নীল মনিহার

আকাশ ছোঁয়ার সপ্ন দেখি-------------- আকাশ ছোঁয়া সপ্ন
আমি তোমাকে কিছু কথা বলবো আজ। ‘’তোমাকে” শব্দটি জুলির কানে খট করে বাজলো। ফিরে তাকালো ফিরোজের মুখের দিকে । তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। তার মুখ থেকে চোখ সরাতে পাড়ল না ।

পূর্ন দৃষ্টি মেলে সে তাকিয়ে আছে জুলির দিকে। । সেই চোখে রয়েছে কাতরতা। একটা অস্বস্থিকর অনুভুতি হতে লাগল। সত্যি বলতে গেলে বলতে হয় বেশ মজাও পেল জুলি।

এই বয়সে তার প্রেমে কেউ পড়েছে ভাবতেও ভালো লাগে। খুব দ্রুতার সাথে একজন প্রফেশনাল কাউন্সিলারের মত বলল-- কি কথা বলুন? তার আগে আসুন বসি। অফিস থেকে ফিরলেন বিকালে কিছু কি খেয়েছেন? ----জুলি, তুমি কিন্তু কথা এড়িয়ে যাচ্ছো। প্রফেশনাল হাসি হেসে বলল ----আপনি তো কিছু জিজ্ঞাসা করেননি এখনো ? কি এমন কথা, খুব কি জরুরী। শুনলাম আপনি নাকি বদলী হয়ে গেছেন? --- হ্যাঁ।

আমি অনেক দিন থেকে বলবো বলবো করেও বলতে পারিনি। তাই যাবার আগে বলতে চাই। যাতে যোগাযোগ রাখতে সুবিধা হয়। --চলুন ও ঘরে গিয়ে বসি। সে হাত বাড়িয়ে আবারও বাধা দিল।

-- না তুমি কোথাও যাবে না। --আপনি বিছানায় বসুন। সে চট করে জুলির বাহু ধরে টেনে বিছানায় বসালো। নিজে বসলো পায়ের কাছে মেঝেতে। নিদারুন বিব্রতকর অবস্থা।

জুলির কোলের উপর তার দুই হাত আকড়ে ধরে রেখে বললো -- আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি কি কিছুই বোঝো না? কয়েকদিন ধরে জুলি ব্যাপারটা বেশ ধরতে পেরেছে তাই এড়িয়ে চলেছে ফিরোজকে। ইচ্ছে করেই যেন ফিরোজ একটু ছুঁয়ে যায় জুলিকে। আবার হেসে বলে ‘সরি’। মুনির আর ফিরোজ ছিল দুই বন্ধু ।

ফিরোজ কখনই ফিরোজের প্রথম স্থান মুনিরকে দেয়নি সেই ক্লাশ ওয়ান থেকে। আর্মিতে ফিরোজ চান্স পেল। মুনির পায়নি । তাই সে বুয়েটে ভর্তী হয়। তারপর মুনিরের জীবন মুনিরের আর ফিরোজের জীবন ফিরোজের।

ফিরোজ প্রেম করে বিয়ে করেছে এক ব্রিগেডিয়ারের অনিন্দ্য সুন্দর মেয়েকে। ফিরোজ ভেবেছে এখানে ও সে জিতে গিয়েছে। কারন এত সুন্দরী মেয়ে সচারাচর চোখে পড়ে না তার উপর ধর্ণাঢ্য। প্রথম ফিরোজ জুলিকে দেখেছে পোর্চের আলো অন্ধকারে। এত সাধারন এত সাদামেটা একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে মুনির।

মনে মনে আবারও হাসেছে সে। সেদিন সন্ধ্যায় জুলি ও মনির বের হয়েছে বেড়াতে যাবে। গাড়িতে উঠবার সময় দেখে দুটা মিলিটারী জীপ ওদের বাসার দিকে এগিয়ে আসছে। জীপ দুটো এসে দাঁড়ালো একে বারে ওদের গাড়ির সামনে। মনির গাড়ির কাছ থেকে সরে জীপের দিকে এগিয়ে গেল।

সামনের জীপ থেকে তিন জন নেমে এগিয়ে এলেন। একজন খুব রুক্ষ ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন-- আমি কি মুনির হোসেনের সাথে কথা বলছি? মুনির হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়বার সাথে সাথে সেই ভদ্রলোক চেঁচিয়ে উঠলেন--- শালা হারামজাদা শুয়োর শুনিস নাই আমি আসছি। মুনির হাসতে হাসতে বললো --ফিরোজ! আমি শুনেছি তুই এখানে কমান্ডেন্ট হয়ে এসেছিস। ---আমি ও খবর নিয়েছি কে,পি,আই গুলিতে চীফ কে কে। ঞ্জুলির সাথে ফিরোজের সেদিনই পরিচয়।

এরপর প্রায়ই ফিরোজ ওদের বাসায় আসতো ওরাও ফিরোজের বাসায় যেত। মুনিরের সাথে তার আড্ডা চলেছে দিনের পর দিন। কখনও জুলি থাকত সেই আড্ডায় কখনও নয়। প্রায় ছয়মাস কেটে যায় এভাবেই। একদিন দুপুর সাড়ে তিনটায় দিকে সে বাসায় এসে হাজির।

এই সময়তো মুনির বাড়িতে থাকে না। কিন্তু ধীরে ধীরে জুলির ব্যাক্তিত্ব সৌন্দর্য্য ফিরোজের স্ত্রীকে তার চোখে ম্লান করে দিল। পয়ত্রিশ উর্ধ্ব জুলি যেন এখন ও কথায় কাজে চেহারায় বাইশ বছরের যুবতী। সব সময় উচ্ছ্বল। ব্যাডমন্টনের বা টেবিল টেনিস মাঠে অথবা গল্পের আড্ডায়।

কিংবা কোন সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। ---এসব কি কথা ? আপনি তো প্রেম করে বিয়ে করেছেন? যান বাড়িতে যান। ---আমি কিছুই চাই না শধু তুমি বল তুমি আমাকে ভালবাস। শুধু এটুকুই চাই। ---- মানুষ সামনে দরজা বন্ধ পেলে পিছনের দরজা খোঁজে।

আমার সামনের দরজা একেবারেই খোলা। আপনি আসুন। রশিদ বলেছে বিয়ের পাচঁ বছর পর প্রায় প্রতিটি পুরুষ অন্য মেয়ের সংগ কামনা করে বঊ কে ঘরকা মুরগী মনে হয় । এক ফেরেশতা বা মহাপুরুষ ছাড়া অন্য কেউ এক নারীতে তুষ্ট নয়। মুনির খুব দৃঢ় ও গভীর স্বরে বলেছে আমার এমন কখনওই মনে হয়নি আমার জুলি নিত্য নতুন আমার কাছে, জুলি অসাধারন।

সে আমাকে ভালবাসে তা এতটাই গভীর যে আমি অন্য কিছু কখনই ভাবিনি বা ভাবার সুযোগ আসেনি। ---শালা তুমি কি ফেরেশতা? ---না আমার জুলী আছে। সেদিন আবার ও নতুন করে চাওয়া পাওয়ার হিসাব কষেছে ফিরোজ দেখেছে তার প্রাপ্তি বিরট একটা শূন্য। সে হেরে গেছে । সেই জ্বালাতেই মনের অজান্তে জুলিকে বহুভাবে বহুবার কল্পনা করেছে।

মাতাল হয়ে সব বন্ধুরা যখন নিজের আনন্দে মত্ত তখন মুনির সবাইকে ফেল চলে যায় জুলির কাছে যে তার অকৃত্তিম ভালবাসা নিয়ে ওর জন্য বসে আছে। ফিরোজ সত্যিই ভালবেসে ফেলেছে জুলিকে যদিও প্রথমে ভেবেছিল মুনিরের সুখে আঘাত হানতে কিন্তু জুলীর ব্যাক্তিত্বের কাছে সব কিছুই ভেসে গেছে। ----আমি আর আসবো না শুধু আমায় মনে রেখ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।