আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিসিবিতে নির্বাচনী হাওয়া

পোস্টার-মার্কা—এসব নেই। তার পরও মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পা দিলেই নির্বাচনী একটা আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল বিসিবি থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি যাওয়ার পর নির্বাচনী হাওয়াটা এখন নিশ্চয়ই আরও জোরে বইতে শুরু করবে।  এনএসসির নির্দেশনা এবং বিসিবির গঠনতন্ত্র সঠিকভাবে অনুসরণ করে চললে ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনী প্রক্রিয়া এমন জটিল কিছু নয়। বিসিবির চিঠি পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এনএসসি।

বিসিবি সভাপতির কথা অনুযায়ী, ১২ আগস্ট সব জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা এবং ক্লাবগুলোকে কাউন্সিলরের নাম পাঠানোর জন্য চিঠি দেবে বোর্ড। কাউন্সিলরদের নাম পেলে খসড়া ভোটার তালিকা পাঠানো হবে এনএসসিতে। সে তালিকার ওপর আপত্তির মীমাংসা শেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন, মনোনয়নপত্র তোলা, জমা ও প্রত্যাহারের ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন।  সহজ এ প্রক্রিয়াটাকেই দিনে দিনে জটিল করে তুলছে ক্রিকেট সংগঠকদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব। ঢাকার ক্লাব এবং বাকি দেশ—এই বিভাজনে দুই ভাগ বাংলাদেশের ক্রিকেট।

বর্তমান বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান ক্লাব শক্তির গরিমায় এতটাই অন্ধ হয়ে আছেন যে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোরও যে দেশের ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান আছে, সেটা ভুলে যাচ্ছেন। অন্যদিকে জেলা ও বিভাগ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলর মনোনয়নের ব্যাপারে সোচ্চার। তাদের শঙ্কা, জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর মনোনয়ন স্বচ্ছ হবে না। চাপ আসতে পারে ওপর মহল থেকে। গতকাল চট্টগ্রামের একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বর্তমান প্রধান নির্বাচক আকরাম খানকে উদ্ধৃত করে ছাপা হওয়া বক্তব্যের পর শঙ্কাটা আরও বেশি করে জাগছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর মনোনয়ন প্রসঙ্গে বিসিবির আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক আকরাম বলেছেন, ‘বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরের কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ নেই। কেন্দ্র থেকে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি অর্থাৎ চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার কাউন্সিলর নির্বাচন করে পাঠাবেন। আলমগীর কাউন্সিলর হতে পারবেন না, এটি প্রায় নিশ্চিত। ’ বিসিবি কাউন্সিলরদের নাম চাওয়ার আগেই এতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে কারও কাউন্সিলর হওয়ার সম্ভাবনা বাতিল করে দেওয়াটা বিস্ময়কর।

বরং বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংস্থার যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সভাপতির কার্যনির্বাহী পরিষদ এবং সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর মনোনয়নের ক্ষেত্রেও আছে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। গত বছরের ৩০ আগস্ট জারি করা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, ‘জেলা ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি/কাউন্সিলরকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ পরিষদ/কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হতে হবে। অন্যথায় উক্ত মনোনয়ন বাতিল বলে গণ্য হবে। ’ এ অবস্থায় কাউন্সিলর মনোনয়নে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা না হলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার হুমকি দিয়ে রাখছেন জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠকদের সংগঠনের প্রধান ইউসুফ জামিল, ‘জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কিছু হলে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।

বিসিবির কোনো ধরনের ক্রিকেট কর্মকাণ্ডেও আমরা অংশ নেব না। ’ গত ২৭ নভেম্বর নাজমুল হাসানের বর্তমান অস্থায়ী কমিটিকে তিন মাসের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় মূলত বিসিবির নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। দেখতে দেখতে সেই ‘তিন মাস’ এসে ঠেকেছে প্রায় আট মাসে। ২০১২-১৩ মৌসুমের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ আয়োজনেও ব্যর্থ এই অস্থায়ী কমিটি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই কমিটিকে নিয়ে বিতর্কও বাড়ছে।

এনএসসির কোটায় বিসিবি পরিচালক হয়ে এসে সভাপতি পদে নির্বাচনের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও নাজমুল হাসানই জানিয়েছেন, পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে তাঁরও একটি প্যানেল থাকবে। সে প্যানেলের সম্ভাব্য অনেকেই বর্তমান অস্থায়ী কমিটির সদস্য। প্রশ্ন জাগছে, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নাজমুল এবং তাঁর কমিটির সদস্যদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কতটা নৈতিক হবে। বিসিবির গঠনতন্ত্রে এ ব্যাপারে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকলেও সব ক্রীড়া ফেডারেশনের জন্য এনএসসির প্রস্তাবিত নির্বাচন বিধিমালা-২০১৩ অনুযায়ী বিদ্যমান কমিটির কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তাদের পদত্যাগপত্রও জমা দিতে হবে। বিদ্যমান কমিটির সভাপতি স্বয়ং নির্বাচনে অংশ নিলে, পদত্যাগ করতে হবে তাঁকেও।

সে ক্ষেত্রে ফেডারেশনের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনার জন্য অনধিক সাত সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করে দেবে এনএসসি। এই নির্বাচন বিধিমালা এখনো চূড়ান্ত না হলেও এনএসসির পরিচালক (ক্রীড়া) হাইয়ুল কাইয়ুম কাল টেলিফোনে বলেছেন, ‘সবার মতামত নিয়ে কার্যনির্বাহী পরিষদের পরবর্তী সভায় নির্বাচন বিধিমালা অনুমোদন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিসিবির গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকলে এই বিধিমালার শর্ত মেনেই নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। ’ বিধিমালা চূড়ান্ত হলেও বিসিবি সেটা কতটা মানবে কে জানে! প্রস্তাবিত বিধিমালা হাতে পাওয়ার পর গত পরশু বিসিবির প্রধান নির্বাহী এনএসসিকে পাল্টা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বিসিবির পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন বোর্ডের অনুমোদিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই পরিচালিত হবে। কিন্তু গঠনতন্ত্র আর নির্বাচন বিধিমালা যে এক নয়, ক্ষমতা মদমত্ত বিসিবির এই অস্থায়ী কমিটিকে সেটা কে বোঝাবে!:।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।