আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কন্ঠই যার কলঙ্কের ঢোল...

আগামীর স্বপ্নে বিভোর...

মোর কিছু ধন আছে সংসারে বাকি সব আছে স্বপনে, নিভৃত স্বপনে। স্বপ্নের ভেলায় ভেসে ভেসে অনেকগুলো স্বপ্নের জন্ম দিয়েছি, লালন করেছি আবার নিজেই তাদের গলা টিপে হত্যা করেছি। স্বপ্ন হত্যায় আমি আজ বড্ড ক্লান্ত। আমার এই ক্লান্ততার অযুহাতে বেঁচে যাওয়া স্বপ্নের নাম তুমি। তোমাকে ঘিরে জন্ম নেয়া স্বপ্ন গুলোকে হনন করতে পারছিনা, ক্লান্ত বলেই।

ক্লান্ত না বলে ভীতু বলাটাই... বোধ হয় যথার্থ হবে। ভীতু আমি ! প্রচন্ড সাহসীরাও ভীতু হয়ে পড়ে ঠিক আমার মত যুগে যুগে তোমাদের কারণেই ! আবার দঁড়ি দেখলেই সাপ মনে করা ভীতুরাও পরাক্রমশালী হয়ে উঠে তাও তোমাদের কারনে। তোমাদের কারণেই তৈরী হয় তাজমহল, তোমাদের কারণেই ধ্বংস হয় ট্রয় নগরী, তোমাদের কারণেই রচিত হয় ইতিহাস। আর তুমি ত তোমাদেরই একটা অংশ তবুও তোমার কারণে তাজমহল গড়তে পারিনা বলেই আমি গড়ি স্বপ্ন, নানান রঙের স্বপ্ন; কিংবা ধ্বংস করতে পারিনা কোন ট্রয় বলেই ধ্বংস করি নিজেই নিজেকে। আর ইতিহাস ? সে ত একদিন হয়েই যাবো।

তোমাকে পুরোপুরি বুঝার আগেই বুঝে নিয়েছিলাম তোমার ভালোবাসা! যখন তোমার ভালোবাসার দখল নিতে গেলাম তখনি একটু একটু করে বুঝতে শিখলাম এ ভালোবাসা স্পর্শ করা যায়না শুধু অনুভব করতে হয়। আমি তাই করে যাচ্ছি, তুমি আছো মোর অনুভবে মিশে সারাক্ষণ। আমার কন্ঠ শুনেই তুমি আমার কন্ঠের প্রেমে পড়ে যাও !! তোমার আব্দার মেটাতে রুটিন করে তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে কখন যে তোমার মায়ায় জড়িয়ে গেছি তা আমি টেরই পাইনি। অথচ তুমি আমার কন্ঠের প্রেমেই আটকে থাকলে, আমার প্রেমে নয়! আজ সেই কন্ঠই আমার কলঙ্কের ঢোল। তবুও সেই কলঙ্ককে গায়ে না মেখে স্বপ্নের ধূসর আকাশে তোমাকে নিয়ে হাজার হাজার স্বপ্নের ফানুস উড়াই রোজ রোজ।

তোমাকে নিয়ে নদীর স্বচ্ছ জলে স্বপ্নের ভেলায় চড়ি সারাদিন। পূর্ণিমা রাতে হাতে হাত রেখে রাতকে পৌছে দিই পূব আকাশের শিশির ভেজা নরম সূর্য্যের কাছে। সমুদ্রের লোনা জলের ভেতর তোমার নূপুর পরা পায়ে ঢেউ আছড়ে পড়ে আর আমি দূর থেকে দেখে যাই। পাহাড়ি হিম শীতল বাতাসে কেঁপে উঠা তোমার শরীরকে তাপ দিই আমার শীর্ণ শরীরের সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে। রিক্সায় করে তোমায় নিয়ে ঘুরি সন্ধ্যাজুড়ে শহরময়, রিক্সার প্রতিটা প্যাডেলের সাথে একেকটা স্বপ্ন উঁকি মারে কথপোকথনের ভীড়ে।

ঘুমন্ত নগরীর আলো আঁধার পথে তোমার নরম হাতে আমার দৃঢ় শক্ত হাতটি রেখে ছুটে চলি অবিরাম জনাকীর্ণ শহর ছেড়ে বহুদূর যাবার প্রত্যাশায়। শরৎ আসতে এখনো অনেক বাকি তবুও আমার চোখে কাশফুল দুল খায় তোমার শাড়ীর আঁচলের হাওয়ায়, তোমায় ভাবি বলে। তোমায় নিয়ে নীল গিরিতে যাবো, হাত বাড়িয়ে পেঁজো তুলোর মতন দলছুট মেঘের টুকরো হতে কিছুটা মেঘ হাতের মুঠোয় ভরে তোমার মুখে ছড়িয়ে দিতে। তোমার কোলে মাথা রেখে তোমাকে গান, কবিতা, গল্প শোনাই আর তুমি আলতো আলতো করে আমার মাথা হাত বুলিয়ে দেও। এরকম হাজারো স্বপ্ন বুকের নীল নির্জনে আশ্রিত হয়ে আসছে শুধুই তোমাকে নিয়ে।

কিন্তু ওসব ত স্বপ্ন। শুধুই স্বপ্ন ? বাস্তব হবার নয় ? স্বপ্নেরা কি বাস্তব হতে জানে না ? অ্যালজেব্রার ধকল সইতে না পেরে কত ছাত্রই স্কুল ছেড়ে গেছে, আমি যাইনি, কচ্চপের মত কামড় দিয়ে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলাম বলে উৎরেও গেছি। এবার কি জীবনের অ্যালজেব্রাতে হার মানতে হবে ? যখন এই ভাবনা গুলো আমার মাথার ভেতর আঘাত হানে তখন আমার সারা পৃথিবী অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়, যে দিকে দু চোখে যায় শুধু অন্ধকারের হাতছানি। তবে কি আমার জন্য আলোর পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ ? আত্মহত্যাটা সমাজ স্বীকৃত নয় বলে আমি বড়ই অসহায়। তবুও মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় তোমার ভাবনাটা মাথায় চাপিয়ে (তোমার ভাবনাটা মাথায় আনলে পৃথিবীর মোহ মায়া পায়ে দলতে পারি) দুই হাত প্রসারিত করে হাইওয়ের মাঝ পথ ধরে হেঁটে যাই, দ্রুত যানের শক্ত চাকা যখন আমাকে পিষ্ট করে দেবে তখন নিশ্চয় সমাজ আমাকে স্বীকৃতি দেবে।

হয়তো একদিন তাই হবে, তাই করে দেখাবো। তুমি এখনো বলো এই জন্মে আমাদের মিল না হলেও পরজন্মে হবে নিশ্চয় কিন্তু তুমি ত জানো পরজন্মে আমি বিশ্বাসী নই তবুও এই জন্মে যখন তোমাকে পাওয়া হবেনা তখন না হয় পরজন্মকে একটু বিশ্বাসের স্থানে জায়গা দিয়ে তাড়াতাড়ি প্রস্থান করাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ... আমি অতটা বোকা নই, এই বুদ্ধি আমার আছে... আমার কিছু কথাঃ পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে গত ক'দিন থেকে ভীষণ মন খারাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এই মন খারাপটা প্রকাশ করিনা বলেই প্রিয় বন্ধুরা (যারা আমার লেখা পড়ে কুঁচকানো ভ্রুদ্বয় হাতের আড়ালে লুকিয়ে আমাকে বাহবা দেয়!) বেশ ক'দিন থেকে তাড়া দিচ্ছে নতুন একটা নোট লেখার জন্য। কিন্তু মন খারাপ নিয়ে কি আর নোট লেখা যায় ? তবুও প্রতিদিনই ভাবি আজ কিছু একটা লেখবো কিন্তু দিন শেষে দেখা যায় কিছুই লেখা হয়না যা লেখা হয় তা হলো শূণ্যতা... শূণ্য মন নিয়ে যন্ত্রের মত দিনগুলোকে পার করে দিচ্ছি এক এক করে। প্রতিদিন সূর্য্য উঠে শিশিরের ঘ্রাণে, আর মিলিয়ে যায় আরেকটা দিনের অপার সম্ভাবনায় (আর আমার জন্য আশংকায়)। সেই সূর্য্যটা সবাইকেই কিছু না কিছু দিয়ে যায় আমাকেও বাদ রাখেনা দু-হাত ভরে শূণ্যতা বিলিয়ে দেয়।

আমি সেই শূণ্যতা নিয়ে খেলা করি, গান গাই, বসে থাকি, কিংবা আনমনে হেঁটে বেড়াই। রোজকার ধারাবাহিকতায় তেমনি একদিন বিশাল শূণ্যতা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি উদাস ভঙ্গিতে ধূলো মাখা পথে। দূর থেকে হঠাৎ একটা অনাথ কাগজ আমার নজরে আঘাত করলো। বাতাসের ধাওয়ায় নির্যাতিত কাগজটা আশ্রয় খুঁজে চলেছে দেখে বড় মায়া লাগলো আমার। আমি সেই ধূলো মাখা কাগজটা পরম যত্নে দু-হাতে তুলে চোখের উপর রাখালাম প্রথম লাইনটা পড়তেই আঁৎকে উঠে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ না দিয়ে কাগজটা পকেটে গুঁজে বাসায় ফিরলাম।

নিজের কামরার সব কটা দরজা জানলা বন্ধ করে দিয়ে সেই মলিন কাগজটা হাতে নিয়ে নাড়া চাড়া করতে করতে নিজেকে ভর্ৎসনা করলাম অনধিকার চর্চার জন্য। কারণ সেই ধূলো মাখা মলিন কাগজটা নিছক কোন সাধারণ কাগজ ছিলনা, সেই কাগজের মধ্যে লুকিয়ে ছিলো দুই দুইটা জীবনের অংশ। জীবনের সবটুকু রঙ প্রতিবন্ধকতার আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই কালি বানিয়ে প্রিয়তমাকে নিয়ে লেখা এই চিঠিটা কতটা অবহেলায় পথের ধূলোয় আশ্রয় নিলো তা জানিনা। সেই চিঠিটা পড়ে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো। চিঠিটায় কোন ঠিকানা ছিলনা বলে নিজের কাছেই রেখে দিলাম পরম যত্নে।

আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সবচে প্রিয় বন্ধু রায়হান, যে পাশে থাকলে আমাকে আর কিচ্ছু ভাবতে হয়না, পরম আস্থার সাথে সব কিছু তার উপর ছেড়ে দিতে পারি। আমি যখনি বিদ্ঘুঁটে অন্ধকার পতিত হই তখন সে-ই আমাকে সেই অন্ধকার পথ থেকে শক্ত হাতে তুলে আলোর পথে এনেও ছেড়ে দেয়না, পাশে থাকে সারাক্ষণ নিখাঁদ বন্ধুত্বের বন্ধনে। সেই পরম প্রিয় বন্ধু রায়হানের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম এই চিঠিটা আমি প্রকাশ করবো আমার নোটে। তাই ঈষৎ সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত (প্রকাশ যোগ্য) করে সেই অনাথ অবহেলিত চিঠিটাকে চিরদিনের জন্য আশ্রয় দিলাম আমার নোটের ভাড়াড়ে। প্রতি বছরই নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে কিছু টুক টাক লেখা হয় কিন্তু এবার আর কিছু লিখতে ইচ্ছে না করলেও সবাইকে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

সুখ, শান্তি, সাম্য ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক সবার জীবন। শুভ কামনা প্রতিদিন। সুমন আহমদ সিলেট। ০১লা জানুয়ারী, ২০১১ইংরেজী।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।