আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি



ছেলেবেলায় খেলার আসরে কাদামাটি দিয়ে বানাতাম সৌন্দর্যের দেবী, রাধা-কৃষ্ণ, শান্তির পায়রা... শান্তির পায়রা উড়িয়ে দিতাম—মাটির বলে উড়ত না, কিন্তু মনে মনে উড়িয়ে দিতাম; উড়তে উড়তে দেখতাম দূর-আকাশে চলে যেত—যেখানে তিনি আছেন; ভাবতাম রূপকথায় পড়া রাজসিংহাসনের চেয়েও বড় ও সুন্দর কারুকার্যে সজ্জিত সিংহাসনে বসে আছেন। কখনো নিজেকে ঈশ্বরগোত্রীয় ভেবে ভুল হতো; কঁচিকাঁচার আসরে কতবার আমি ঈশ্বর সেজেছি— ভক্তি-শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসা চোখে আমায় দেখত সবাই এবং পায়ের সামনে ঘুরঘুর করত, প্রভুভক্ত কুকুর যেমন; নিজেকে সত্যি সত্যিই ঈশ্বর ভেবে আমি পুলকিত হতাম। বড়ো হতে হতে একসময় জেনেছি মহাবিশ্বের এই রহস্য— তাঁর নির্দেশ ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না, জেনেছি ঈশ্বর নিরাকার—মন থেকে মুছে ফেলি তাঁর প্রতিচ্ছবি আরো জেনেছি স্বর্গ ও নরক—স্বর্গ-নরকের ধারণা থেকেই ভাল-মন্দ-সাদা-কাল... এই শব্দগুলোর মানে বুঝতে শিখি বুঝতে পেরে ভীষণ কষ্ট হয়—‘মন্দ’ কেনো মন্দ হয়? প্রার্থনার জন্যে মা আমাকে বকতেন, আমি বুঝতাম না— সামান্য এক মানুষ আমি, কী আসে যায় আমার প্রার্থনায়! আমাকে দেখে যেমন কেনো বানর ভেংচি কাটলেইবা কী! আবার পরম আনুগত্যের সাথে সালাম দিলেইবা কী! তাতে কি পাটক্ষেতে ধান হয়, নাকি মরুভূমিতে ফুল ফোটে! একদিন প্রার্থনায় বসলে দেখি ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি— সজ্জিত সিংহাসনে বসে পায়ের উপর পা তুলে দোলাচ্ছেন আর আমি চার হাত-পা গুটিয়ে, অর্থাৎ আরও ছোট হয়ে আমার কপাল ঠেকাচ্ছি তাঁর পায়ে; ফুলেফেঁপে উঠছেন তিনি— সবচে ভাল, নিস্পাপ ও সুন্দর নায়োকচিত চেহারার এক চিত্র; তারপর আর কোনোদিন প্রার্থনা করা হয় নি— প্রার্থনালয়ে যে দেখতে পাই আমি নিষিদ্ধ এই চিত্র! _________ উলুখাগড়া, ডিসেম্বর ২০১০-এ প্রকাশিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।