আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আম আর শাল সমাজের দ্বন্দ্ব ................

-- আম আর শাল সমাজ আজ এক গভীর সংকটের বিপর্যস্ত। মর্জাদা, সম্মান, বংশ পরিচয় কোন দিন থেকেই শালের সমকক্ষ নয় আম। আর তার সাথে-ই কি না সম্বন্ধ করার ধৃষ্টতা দেখালো ওই পুচকে জাতী। পুরো বন দুই ভাগে বিভক্ত, একদিকে জাতের দম্ভ ভূলে সবাইকে এক করার চেষ্টা, অন্যদিকে সমাজে বহু দিন ধরে চলে আসা উচু-নিচুর ব্যবধান কোন ভাবেই জলাঞ্জলি দিতে দিবে না শালের প্রবীন প্রজন্ম। এ নিয়ে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তারা।

মোদ্দা কথা, এক আম নারীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে শাল যুবরাজ। রাজ্যের সব নারীরা যখন তার পানি প্রার্থী তখন ওই কৃষ্ণবর্ণা নারীর মধ্যে কি এমন মায়া পেল সে! রাজ দরবারের থম থম পরিস্থিতি, একের পর এক বৈঠক, হচ্ছে না কোন সুরাহা। রাজা, মন্ত্রী, প্রজা সবার একটাই প্রশ্ন কি ভাবে ওই নারীর ছলের থেকে মুক্ত করা যায় যুবরাজকে। কেউ তো কোন সমাধানে আসছেই না বরং বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন আম নারীর সাথে শাল যুবকের বিয়ে হলে কি হবে তার ভবিষ্যৎ? যুবরাজ- ই যদি এমন কাজ করেন তাহলে সাধারণ প্রজারাও ভিন্ন জীবনের খোঁজে বিভিন্ন জাতের মেয়েদের বিয়ে করবে। আর তা হলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে শাল গাছ।

সৃষ্টি হবে নতুন প্রজাতি, কেমন হবে এদের রুপ--রেখা? সবাই যখন এমন চিন্তায় মগ্ন তখন রাজ দরবারের পন্ডিতের মনে প্রশ্ন শালের রাজ্যে আম নারীর সন্ধান কি ভাবে পেল যুবরাজ। পুরো রাজ্য চুষে একটা আম গাছের ও তো সন্ধান মেলেনি। থাকার সন্ভাবনাও তো নেই, কারণ এ রাজ্য তো পুরোটাই শালের। আর আম রাজ্য সে তো রহু দুরের পথ। সেখানে তো কোন কালে পাও রাখেনি যুবরাজ দিপ্তশাল।

তাই উপায়আন্তর না দেখে রাজার কানেই দিলেন কথাটা। কিন্তু হায়!!! রাজাও তো জানেন না সেই আম নারী কে, কি বা তার পরিচয়, কেমন করেই বা সন্ধান পেল যুবরাজের। অগত্য মান সম্মান জলাঞ্জলি দেয়া যুবরাজকেই তলব পিতা আমায় ডেকেছেন? ওই মুখে আর বাবা নাম উচ্চারণ করো না। আমিতো আপনায় পিতা বলেই ডাকছি, সেখানে তো বাবা শব্দটির অস্তিস্ত নেই। জাতীয় এমন ক্রান্তি কালেও তুমি মসকরা করছো? পিতা আপনিই তো শিখিয়েছেন শত কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে হয়।

হম........ যা জানতে চাই তা বলে এই স্থান ত্যগ করো তুমি। জি বলুন ওই আম নারীর সাথে তোমার কেমন করে পরিচয়, কি বা তার বংশ পরিচয়, কোন গোত্রীয় আম সে। সে অত্যন্ত সাধারণ নারী পিতা, না আছে তার ঐশর্য্য, না চোখ ধাঁধাঁলো রুপ, আছে শুধু ভূবন ভোলানো মায়া, হৃদয়ের উদারতা। গত বছর যখন মনুষ্য সমাজ এই শাল বনে আক্রমন চালানো, মনে আছে বাবা বহু শাল কে বৃথায় প্রাণ দিতে হলো। মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল এই শাল রাজ্য।

সে সময় তো দাদা, মামা, কাকাদের কেটে নিয়ে গেল বনদসু্যরা। তাদের সাথে তো আমারও একটা হাত কাটা পরে ছিল, ট্রাকে করে ওরা আমাদের নিয়ে গেল। সে কি অমানুষিক নির্যাতন! রোঁদের তাপ , আর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রাণ গেল সাথের সবার। আমার হাতটাও যায় যায় অবস্থা। প্রাণ বাঁচাতে যখন আমি মরিয়া, তখনই সেই আম নারীর আর্বিভাব আমার জীবনে।

নিজের জীবনের আশঙ্কা সত্ত্বেও অমানুষিক কষ্ট সহ্য করে সে আমায় সুস্থ করেছে। দীর্ঘ দিন আমি তার গাছের ছায়া ছিলাম। পরম মমতায় সে আগলে রেখেছে আমায়। এর পর কেমন করে আমি ভুলে যাই তাকে। তার সায্যেই আবার এখানে আসা।

এমন কাহিনীতে বাবার মন ভুললেও, প্রজাদের চিড়ে ভেজানোতে আর সহজ কথা না। এরই মধ্যে রাজার এন্টি পার্টি লিফলেট ছড়িয়েছে আম জাতীয় শাল বনে প্রবেশ হলে সম্ভাব্য কি কি অশনি সংকেত আসতে পারে। এমনকি আম তরুনীকে পুত্রবধু করলে রাজাকে বয়কট করার জন্য জনতার প্রতি আহবান জানিয়েছে 'শাল রেভলু্যশন পার্টি'। রাজ্যের অস্তিত্ত্ব রক্ষায় আগামী নির্বাচনে তাদের ভোট না দেয়ারও আহবান জানান তারা। সব মিলিয়ে গদি রক্ষায় রজার জন্য এখন এক মহা চ্যালেঞ্জ।

ছেলেকে বোঝানোর শত চেষ্টা করার পরও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় দিপ্তশাল। প্রয়োজনে রাজ্য ত্যগ করতেও রাজি। এদিকে, শালদের স্নান ঘাট, ক্ষেত্, বাজার এমনকি কারাগারে পর্যন্ত রাষ্ট্র হয়ে গেছে এই খবর। বুদ্ধিজীবীগণ এর ভবিষ্যত নিয়ে প্রবন্ধ রচনায় ব্যস্ত , চিকিৎসকরা শাল ও আমের মিলনে নতুন প্রযন্মের আগমন হলে কি কি সমস্যা হতে পারে তা ক্ষতিয়ে দেখছে , পরিবেশ বিদরাও বলছে নানা আশঙ্কার কথা। এই তিন দলই ছুঁটলো রাজ দরবারে ফয়দা লুটার জন্য।

প্রথমে-ই চিকিৎসক টিম--- মহামান্য রাজা এক ভয়াবহ পরিনতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্য এ থেকে আর বুঝি পরিত্রাণ নেই!!!!! শাল যুবকদের সাথে আম নারীদের বিয়ে হলে বিবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগবে নতুন প্রযন্ম, আকাঁড়ে তারা হবে শালের চেয়ে ছোট, আর তা হলে শত্রুপক্ষের সাথে লড়াই করা আমাদের জন্য হবে দুরুহ। এছাড়া জনাব শাল জাতীর প্রাণ কই মাছের মত, প্রাকৃতিক দুর্যোগের লড়াই করার মত ক্ষমতা আমাদের অনেক। সে দিক চিন্তা করলে আম বড়ই দুর্বল, ওই এক আম ছাড়া পৃথিবীকে দেয়ার মত তাদের তেমন কিছুই নেই । পরিবেশ বিদ---- জনাব এই যে এহেন সুন্দর সু-শৃঙ্খল শাল বন এ বুঝি আর থাকছে না । আম মানেই এক রসালো খাদ্য।

যেখানেই আম সেখানেই মাছি আর মশার উপদ্রপ,। আর আম গাছ থাকলেই এখানে মনুষ্য বান্দরের আনাগোনা বাড়বে। উহারা আমাদের পরিবেশকে ধবংসের দিকে টানিয়া লইবে। তাই যে ভাবেই হোক এই মিলন রুখতেই হবে। পিতা বুকে পাথর বাধিয়া তাই দিপ্তশাল কে বন্দি করিলেন।

দিন যায় বছর যায় যুবরাজ তার সিদ্ধান্ত থেকে এতটুকু সরে না। প্রিয়া হারানোর বেদনায় বাকশন্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে। আর অন্যদিকে আম তরুণয়ি শোকে ভারাক্রন্ত। সব গাছে আমের বোল আসে কিন্তু তার গাছ শুন্য। এমন করে একদিন সবাই ভুলতে বসে দিপ্ত শালের কথা।

ভালই কাটছিল শাল রাজ্যের দিনকাল, কিন্তু একদিন পুরো শাল রাজ্যে ছড়িয়ে পরলো আতঙ্গ। এক অজানা রোখে মরতে বসেছে মাইলের পর মাইল শাল গাছ। রানী অম্রশাল, যুবরাজ ও আক্রান্ত এই রোগে । কতো পথ্য, কতো কবিরাজ কোন কিছু্-ই বাঁচাতে পারছে না রাজ্যকে এই মহামারি থেকে। শেষ পর্যন্ত সমাধান আসলো অসুস্থ গাছের গোড়ায় আমের প্রলেপ দিলেই কেমল মাত্র এই মহামারি থেকে বাঁচা সম্ভব।

মুহুর্তেই রাজা প্রতিনিধি পাঠালো আম রাজ্যের। কিন্ত আম রাজার একটাই কথা দাম্ভিক শালদের বাঁচাতে কোন সাহায্যে করবে না তারা। এদিকে বাড়তে থাকলো শাল রাজ্যে মৃত্যের সংখ্যা, ঘরে ঘরে কান্নার রোল, এই রোগের মহামারি এড়াতে অন্য গাছরা বর্জন করলো শাল রাজ্যকে। এমন সময় যেন দেবি রুপে এক আম গাছ এগিয়ে এলো শাল বনকে বাঁচাতে। নিজের সব শন্ক্তি দিয়ে পুরো শরীরের জন্ম দিতে শত শত আমের।

তা বিলিয়ে দিলো প্রতিটি রোগীর সেবায়। শাল বন জুড়ে ধন্য ধন্য রব। সব শেষে সেই আম গাছ ছুঁটলো রাজপ্রাসাদের দিকে রাজ মাতার পর পরম স্নেহে আমের প্রলেব লাগিয়ে দিলো দিপ্তশালের গায়ে। চোখ না খুলেই যুবরাজ অনুভব করলো সে ফিরে গেছে বহু বছর আগের কোন দিনে। দিপ্তশালের চোখে পানি........দ্বিতীয় বারের মত সে ঋণি হলো এক আম তরুণীর কাছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।