আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্তমান ছাত্ররাজনীতির অস্থিরতা ও ছাত্রসমাজের করণীয়

মানুষের জন্য কিছু করছি............

আমরা সব সময় দেখে আসছি যখনই ছাত্রসমাজের স্বার্থ বিরোধী কোন সিদ্ধান্ত তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তখনই তারা জ্বলে উঠেছে এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা্র আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। এর মূলে ছিল প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতির বিশাল ভূমিকা। ছাত্রসমাজ হচ্ছে সমাজের সবচেয়ে অগ্রগামী একটা অংশ। তাই তারা সব সময় ছাত্র অধিকার এবং জনস্বার্থ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী সচেতন। ইতিহাস থেকেই আমরা দেখতে পাই ছাত্ররা শুধু ছাত্র অধিকার নয়, জনগণের অধিকার নিয়েও কথা বলেছে প্রয়োজনে আন্দোলন সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে।

কেননা তখন ছাত্রদের সাখে জনগণের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল। তাই তারা সাধারণ জনগণের স্বার্থ আর ছাত্রসমাজের স্বার্থ বিচ্ছিন্নভাবে দেখত না। কিন্তু বর্তমানে এর অনুরূপ ঘটছে না কেন ? এই কেন-র উত্তর আমাদেরকেই খুজে বের করতে হবে। প্রথমে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ছাত্ররাজনীতির এই দৈন দশা পূর্বে ছিল না।

বিভিন্ন সময়ে ছাত্ররা ছাত্র অধিকারসহ জনস্বার্থে অনেক উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে ১৯৫২সালের ভাষা আন্দোলন তার মধ্যে অন্যতম। ভাষা আন্দোলনের বীজ বপন হয় ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। “প্রত্যেক জাতিসত্ত্বার নিজ ভাষায় কথা বলার অধিকার আছে” এই বক্তব্যকে সামনে আনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি এবং এই বক্তব্যকে সামনে রেখে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রসমাজ। এই আন্দোলনে সমগ্র ছাত্রসমাজ সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তিতে সুবিধাবাদী দালালদের চক্রান্তে আন্দোলনের মূলমন্ত্র পাল্টে যায় এবং তা রূপ নেয় উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে।

“রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” এই দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন শুরু হয়। এভাবে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তা চুড়ান্ত রূপ লাভ করে কয়েকজন ছাত্রের তাজা রক্তের বিনিময়ে। এরপর ছাত্রসমাজসহ আপমর জনতার তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের মুখে পশ্চিম পাকিস্তান ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষট্রভাষা বাংলা’ মেনে নিতে বাধ্য হয়। তারপর আসা যাক ১৯৬২ সালের সামরিক জান্তা আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে।

১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে (পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান) সংসদীয় সরকারকে উৎখাত করে সামরিক আইন জারি করা হয়। আইয়ুব খান সামরিক আইন জরি করার মাধ্যমে সকল রাজিৈতক দল ও রাজনৈকি কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এমতাবস্থায় জনগণ দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দেঅলনে নামে। ছাত্রসমাজ এই আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয় হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে।

এই হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন ছিল গণমুখী ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার পরিপন্থী। এই শিক্ষাণীতির মূল বক্তব্য ছিল “টাকা যার শিক্ষা তার”। ফলে আইয়ুব খানের প্রণীত শিক্ষা নীতির প্রতিবাদে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ছাত্র জনতার আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ছাত্র আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খানের গদি কেঁপে উঠে এবং এই গণআন্দোলন সফলতা লাভ করে। এরপর ১৯৬৪ সালের বাঙালি-অবাঙালি সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফলতা উল্লেখযোগ্য।

পরবর্তীতে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানও ছাত্রসমাজের সংগ্রামী চেতনার উদাহরণ। ১৯৬৯ সালে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্রসমাজ ১১ দফা দাবি ঘোষণা করে ছাত্রদের ১১ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন সমগ্র পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রজনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সংগ্রামী ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান। এতে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে এবং উপায়ন্তর না দেখে আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং সকল বন্দীদের মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্রসমাজের আরেকটি গৌরবউজ্জল দিক।

১৯৯০সালের অক্টোবর মাসে ২২ টি ছাত্র সংগঠন একত্রিত হয়ে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ গড়ে তুলে এবং স্বৈরাচারী এরশাদ পতনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের দৃঢ় সংকল্প নেয়। এই আন্দোলনে বিরোধী দলগুলোও অংশ নেয় এবং আন্দোলনটি গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয়। ক্রমে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের উদ্দেশ্যে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ ঐতিহাসিক ১০ দফা দাবি পেশ করে।

কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় আসলেও বাসবতবায়ন হয়নি ছাত্রসমাজের ১০ দফাসহ, কৃষকের ৫ দফা, শ্রমিকের ১৭ দফা। যে দেশের ছাত্রসমাজ এত সংগ্রামী সেই দেশের ছাত্রসমাজ আজ কেন নিজেদের হীন তুচ্ছ স্বার্থকেই বড় করে দেখছে, এর উত্তর খুজতে আমাদেরকে একটু পেছন থেকে শুরু করতে হবে। ১৯৭১ সালের পর যে বাংলাদেশ নামক ভূ-খন্ডটি পৃথিবীর মানচিত্রে স্বতন্ত্র অবস্থান সৃষ্টি করেছে প্রকৃতপক্ষে তা ছিল একটি সামাজিক উপনিবেশ। পরবর্তিতে ১৯৭৫ সালে সামাজিক সা¤্রাজ্যবাদের দালাল মুজিব হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিণত হয় একটি নয়া উপনিবেশিক আধা সামন্ততান্ত্রিক দেশে। যার ফলে ’৭১ পরবর্তীতে যে সকল সরকার ক্ষমতায় এসেছে তারা সবাই সাম্রাজ্যবাদের দালাল ভিন্ন কেউ নয়।

তাই তারা শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ তথা জনগণের স্বর্থে কাজ না করে কাজ করেছে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থে। সমাজের সবচেয়ে অগ্রগামী এবং প্রগতিশীল অংশ ছাত্ররা যে এতে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছিল তা পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। তাই সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ এবং তার দালাল আমলা মুৎসু্িদ্দ পুজিবাদীদের জন্য ছাত্রসমাজ হয়ে উঠে এক আতঙ্কের নাম। কারণ ছাত্ররা অধিকাংশই ছিল নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাই ছাত্ররা শুধু ছাত্রসআজ নয় কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের তথা সমগ্র জনগণের প্রতিনিধিত্ত্ব করত।

ফলে জনস্বার্থ বিরোধী সরকার তথা সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের সকল সিদ্ধান্তের বিরূদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করত ছাত্রসমাজ। তাই ছাত্রসমাজ হয়ে উঠে শোষক গোষ্ঠীর জন্য বিরাট হুমকি এবং জনগণের জন্য পরম বন্ধু। এমতাবস্থায় ’৭১ পরবর্তীতে ছাত্ররাজনীতিকে সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবার জন্য সাম্রাজ্যবাদের প্রেসক্রিপশনে তাদের এদেশীয় দালালেরা নতুন কৌশল হাতে নেয়। নতুন কৌশলস্বরূপ ছাত্রদের মধ্যে লেজুরবৃত্তিকারী সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করা হয় এবং আরও নতুন লেজুরবৃত্তিকারী সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। এছাড়াও পূর্বের কিছু সাম্প্রদায়িক সংগঠন নতুন নাম ধারণ করে ছাত্রসমাজের মাঝে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিতে তৎপর হয় যারা পূর্বে বিভিন্ন গণবিরোধী কার্যকলাপের জন্য জনগণ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মগোপন করে ছিল।

এই সকল লেজুড়বৃত্তিকারী সংগঠনগুলোর হাতে তুলে দেয়া হয় প্রচুর পরিমাণ অর্থ, অস্ত্র সর্বোপরি ক্ষমতা। এরপর থেকে শুর” হয় ছাত্রসমাজের ঋণাত্মক চলন। লেজুড়বৃত্তিকারী সংগঠনগুলো ক্রমশ দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের নেতৃত্বে অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে অছাত্রদের। নানা সংগঠনের অছাত্র নেতারা নিজ ও অন্যান্য দলের মধ্যকার কোন্দলে ছাত্রদের ব্যবহার করতে শুরু করে। এসময় ছাত্রদের মাঝে ব্যপকভাবে অস্ত্রের ব্যবহার বাড়তে থাকে।

লেজড়বৃত্তিকারী সংগঠনগুলো জড়িয়ে পড়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে। এক হিসাবে দেখা যায় বিগত তিন দশকে ছাত্রদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ হানাহানিতে দুই শতাধিক ছাত্র অকালে জীবন দিয়েছে। এসকল সহিংসতা ও গণবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ছাত্রসমাজ জনগণ হতে পৃথক হয়ে পড়ে। ছাত্ররা নিজেদের তুচ্ছ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সর্বদা দলাদলি, মারামারিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে করে ছাত্ররাজনীতির উপর থেকে ছাত্রসমাজ এবং জনগণের আস্থা হরিয়ে যেতে থাকে।

আমরা জানি যে পুজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী সমাজ ব্যাবস্থায় উৎপাদন সামাজিক, কিন্তু মালিকানা ব্যাক্তিগত। তাই পুজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ অতি উৎপাদন সংকট এবং তাদের নিজেদের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে অবশ্যম্ভাবীভাবে অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হয়। তাই বর্তমান বিশ্বে বিশাল অর্থনৈতিক মন্দা পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের মত নয়া উপনিবেশিক দেশের এর প্রভাব পড়েছে। তাই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর নির্দেশে বাংলাদেশের দালাল সরকার শিক্ষাখাতসহ শিল্প, কৃষি এবং বিভিন্ন সেবা খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে চলেছে।

এ লক্ষ্যে প্রতি বছরই শিক্ষাক্ষেত্রে দফায় দফায় বেতন বৃদ্ধি করে চলেছে বাংলাদেশের সরকারগুলো। এতে করে শিক্ষা খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহারের সুযোগ পাচ্ছে এবং তার পাশাপাশি ছাত্রসমাজকে জনগণ হতে পৃথক করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে এই বেতন বৃদ্ধিকে। কারণ যে সকল নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এতদিন উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেত তারা এখন আর তা পাবে না। এতে করে সাধারণ জনগণের সাথে ছাত্রসমাজের কোন সম্পর্ক থাকবে না, তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হযে পড়বে। পূর্বে যে ছাত্রসমাজ জনগণের সমস্যার কথা বলতো তারা হয়ে পড়বে জনবিচ্ছিন্ন।

যে ছাত্রসমাজ ছিল শাষক ও শোষকগোষ্ঠীর জন্য হুমকি স্বরূপ, তারা তখন আর প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠবে না। তাই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারগুলো তথা সাম্রাজ্যবাদ এবং তার দালালেরা উঠেপড়ে লেগেছে। এত কিছুর মধ্য দিয়েও বিভিন্ন সময় ছাত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন গড়ে তুলে। তাই এসব আন্দোলনকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন কৌশল হিসেবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার পায়তারা চালাচ্ছে সরকার। কারণ হিসেবে সামনে আনছে ছাত্রসমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন অস্থিরতা ও অস্থিতিশীল পরিসি’তিকে।

কিন্তু ইতিহাস ঘাটলে আমরা দেখতে পাই ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন বেআইনি ও অনৈতিক কর্মকান্ড যে সকল ছাত্রসংগঠনগুলো করছে তারা মূলত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারের লেজুড়বৃত্তিকারী দালাল সংগঠন তথা শোষক গোষ্ঠীর লাঠিয়াল বাহিনী। তাই স্পষ্টভাবেই বলা যায় যে, বর্তমান ছাত্ররাজনীতিতে বিদ্যমান অস্থিরতা ও অরাজকতা সুপরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং এর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্রসমাজকে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন তথা সঠিক ও প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতি হতে বিচ্যুত রাখা অর্থাৎ ছাত্রসমাজের অধিকর আদায়ের আন্দোলনের বিরূদ্ধে ছাত্রসমাজকেই দাড় করানো। সর্বশেষ প্রণীত শিক্ষানীতিতে ক্যাম্পাস পুলিশ স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ক্যাম্পাসে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। এর কারণ হিসেবেও ঐ ছাত্ররাজনীতির অস্থিরতাকে দায়ী করা হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের উদ্দেশ্যে হচ্ছে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করে সাধারণ জনগণ হতে ছাত্রসমাজকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি চালু থাকলে ছাত্রদের মধ্যে বিরাজমান প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো তা করতে দিবে না। তাই তারা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য ক্যাম্পাসে স্থায়ী পুলিশ রাখার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে ক্যাম্পাস পুলিশ প্রথা চালু করার চক্রান্ত করছে। এছাড়াও পরিকল্পিতভাবে ছাত্রসমাজের মাঝে ব্যপকভাবে মাদকের প্রচলন দেখা যায়।

এতে করে ছাত্ররা হয়ে পড়ছে সমাজ বিচ্যুত। অন্যদিকে বর্তমান ছাত্রসমাজের মধ্যে বড় একটি অংশ পর্ণোগ্রাফির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। এসবের পেছনেও ছাত্রসমাজকে জনগণ তেকে বিচ্যুত করার নোংরা উদ্দেশ্য রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বর্তমান ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকারসমূহের লেজুড়বৃত্তিকারী সংগঠনগুলো ছাত্রসমাজের স্বার্থে কোন কাজ না করে তারা ব্যবহৃত হচ্ছে সরকারের তথা শোষকগোষ্ঠীর লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে। বিভিন্ন সময় ছাত্রসমাজের ন্যায়সঙ্গত দাবিতে যে সকল আন্দোলন সংঘঠিত হচ্ছে তাতে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনগুলো নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করছে।

অন্যদিকে বিভিন্ন বাম ধারার ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃত্বে অতিতে প্রায় সকল ছাত্র আন্দোলন সংঘঠিত হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে যে সকল ছাত্র আন্দোলন হয়েছে তার সবগুলোতেই প্রগতিশীল বাম ধারার ছাত্রসংগঠনগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু এই আন্দোলনকে থামিয়ে দেবার জন্যও সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালেরা বিভিন্ন সময়ে নানা চক্রান্ত করেছে এবং বর্তমানেও সে প্রয়াস অব্যাহত আছে। এই চক্রান্তের অংশ হিসবে প্রগতিশীলতার লেবাস নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে তথাকথিত বাম নামধারী অনেক সংগঠন। আজকে যখন ছাত্রসমাজ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত তখন তথাকথিত প্রগতিশীল বাম নামধারী কিছু ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশের মত নয়া উনিবেশিক আধা সামন্ততান্ত্রিক দেশে ছাত্রসমাজের শ্রেণীগত সীমাবদ্ধতাকে আড়াল করে ছাত্রদেরকে সমাজতন্ত্রের প্রলোভন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করছে।

অথচ ছাত্রসমাজের বিভিন্ন সমস্যা সংকটের প্রেক্ষিতে আন্দোলনের ক্ষেত্রে এসব সংগঠনের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। এদের মধ্যে অনেকে প্রগতিশীলতার লেবাস ধারণ করে সাম্রাজ্যবাদের দালাল বিভিন্ন ঘএঙ-র পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন সংকটের মধ্যে শ্রমিক সেক্টর অন্যতম। বর্তমানে পোশাক শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল শ্রমিকসহ শ্রমিক অঙ্গণে অসন্তোস প্রায় তুঙ্গে উঠেছে। এর মধ্যে পোশাক শিল্পে শ্রমিক আন্দোলন অন্যতম।

পোশাক শ্রমিকেরা নানাভাবে অত্যাচার, নীপিড়নের শিকার এবং তাদের বেতন ভাতাও অত্যন্ত মানবেতর। অন্যদিকে কৃষকেরাও আজ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখিন। একেতো ফসলের ন্যায্য মূল্য তৃণমূল কৃষকেরা পাচ্ছে না তার উপর সেচ সমস্যা, সার সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে তারা। এতে করে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। তাই বর্তমানে শ্রমিক, কৃষক সমস্যার কারণে বাংলাদেশে এক অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে।

এ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের কবল থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি তথা সামগ্রিক মুিক্ত প্রতিষ্ঠা করা। আর তাই এখন প্রয়োজন জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের। শ্রমিক, কৃষক, ছাত্রসহ সমগ্র জনসাধারণের গণআন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই এই বিপ্লব সম্ভব এবং এর নেতৃত্ব দিবে শ্রমিকশ্রেণী আর ছাত্রসমাজ পালন করবে সহায়ক ভূমিকা। কারণ কৃষক সমস্যা, শ্রমিক সমস্যা, ছাত্র সমস্যা কোনটিই বিচ্ছিন্ন নয়। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র তথা সমগ্র জনগণ সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও তার দালাল আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিবাদের শোষণ, নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার।

আজ তাই ছাত্রসমাজের দায়িত্ব হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও তার বিশ্বসংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-র দালালদের বিরূদ্ধে আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সাথে শিক্ষার সংগ্রামকে যুক্ত করা। আর তাই শিক্ষার সংগ্রামকে অগ্রসর করার জন্য আজ ছাত্রসমাজের উচিত দালাল ও লেজুড়বৃত্তিকারী সংগঠন বর্জন করে মূলধারার প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ছাত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ দুর্বার ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.