আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেশ্যা/পতিতা/পথনারী

ব্লগে আসার বা থাকার কোন কারন খুজে পাই না,তবু পুরনো টানে বার বার আসি সামুতে

ক কলেজের ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা হত নতুন ভবনে যেখানে অনার্সের,মাস্টার্সের ক্লাস হয়,আমাদের ক্লাস হত পুরাতন ভবনে । পরীক্ষা ২ থেকে ৪.৩০/৫.০০ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়ে একা একা রেললাইনের উপর দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। একদিন হেঁটে হেঁটে স্টেশনের কাছে আসার পর এক মহিলা হাত টেনে ধরে বলে,চল ঐ খুপরিতে নাহয় ত্রিশ টাকা দে। কিছুটা ভয়ে আত্মরক্ষার জন্য কাছে থাকা বিশ টাকা দিয়ে দেই। তখন ই দেখি এক রিকশাওয়ালা বলল, ঐ মাগী ভাগ বলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলো।

আমাকে বলল,এদের এড়িয়ে চলবেন। তখন ই আমার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হল এরা ঘৃণার পাত্রি। রিকশাওয়ালারাও এদের খুব ঘৃণা করে। এদের স্তর অনেক নিচুতে। এখন বুঝি ঐ ত্রিশ টাকা তারা দু মুঠো খাবারের জন্যই চেয়েছিল।

তারা বাধ্য হয়েই ঐ পথ বেঁছে নিয়েছে। খ ছোটবেলায় আমাদের গ্রামের বাড়িতে ফতে নামে একজন কাজ করতো,বয়সে আমার থেকে বড় হলেও ফতে বলেই ডাকতাম। তার পুরো নাম ছিল ফাতেমা। ক্লাস থ্রিতে উঠার পর আমি শহরে চলে আসি। ফতের আর কোন খোজ তারপর আমি জানিনা।

কিছুদিন আগে শহরের বাড়িতে ভার্সিটি ছুটিতে যাই। দেখি ফতে আমাদের বাড়িতে কাজ করতেছে,সাথে ৩/৪ বছর বয়সের একটা ছেলে। ১৩/১৪ বছর পর দেখলাম। কয়েকদিন পর কথা বলে জানতে পারলাম,ওর স্বামী ওকে ছেড়ে চলে গেছে। গার্মেন্টসে কাজ করতে গিয়েছল সেখানে মেয়েদের বাধ্য করা হয় বিছানায় যেতে।

অনেক মেয়ে শেষ পর্যন্ত সেই পথটিকেই বেচে নেয় শেষ পর্যন্ত। ফতে সেখান থেকে তাই চলে আসছে। ফতে নিজেকে বাঁচিয়ে চলে এসেছে কিন্তু যে মেয়েগুলো পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে নষ্ট পথ বেঁছে নিল তার জন্য দায়ী কে? গ শেফালি নামক এক মেয়ের জীবনের বাস্তব ঘটনা নিয়ে আমার লেখা একটি কবিতার চেষ্টা। নষ্ট পৃথিবীব নষ্ট কাব্য, নষ্ট পৃথিবীব নষ্ট দেহ, সুশীল সমাজের সুখের মাঝে শেফালী বুবুদের নষ্টের গদ্য। পোষাক শ্রমিক, সস্তা শ্রম ন্যায্য পারিশ্রমিকের নিঃসঙ্গ কান্না, দু মুঠো খাবাবের হাহাকারে ঘুম ঘামের দাম জোটেনা, জোটে পুলিশের ড়ান্ডা।

শেফালী বুবুব সুখের সংসার ভেঙ্গে তছনছ,সংসারে অনাহার স্বামী পঙ্গুত্ব পায় চাইতে গিয়ে অধিকার। পোশাক শ্রমিক! তার আবার কিসের অধিকার? শূন্য উনুনে জমে ছেলের কান্না, স্তব্ধ তিনটি মুখ অনাহারের যন্ত্রনা, খাবার জোটাল শরীর শেফালী বুবুর অসহায় শরীর। বুর্জোয়া সমাজ ধিক ধিক শেফালীর জন্মদাতা, শ্রমের বিনিময়ে পথ নারীর কারিগর কত আর পথ দেখব আলোর(!!)। কাব্য হয় কবিতা হয়, রচনার রসন হয়, শেথালীরা যে শুধু উপমায় হয়, হয়না পূনর্বাসন ভেঙ্গে বুর্জোয়া আগ্রাসন। ঘ ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পর সন্ধ্যার সময় এক বন্ধু ফোন করে দেখা করতে বলল।

সময়মত বীরশ্রেষ্ঠ স্কোয়াড এর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম বন্ধুর অপেক্ষায়। স্কোয়াডের পাশেই দাঁড়িয়ে দেখছিয়াম কিছু ভবঘুরে নারী আর টোকাইরা স্কোয়াডের ভিতরে পলিথিনের উপর কোন হোটেল থেকে পাওয়া অবশিষ্ট খিচুডী খাচ্ছিল। সেখানেই তারা হৈ চৈ করে খাচ্ছিল। আমি দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। আমার পাশেই কোট টাই পড়া এক লোক হোন্ডা থামিয়ে হটাৎ চিত্কার করে বলল , ওই বেশ্যা ,ওই বেশ্যার ছল ,বের হ ,ভিতরে কি করিস।

ময়লা করতেছিস কেন? লোকটার কথায় যে পরিমাণ ঘৃণা বের হচ্ছিল তা আমাকে অবাক করে দিয়েছিল। ওই সুশীলের কলার ধরে বলতে ইচ্ছা হল, হারামজাদা,ওকে বেশ্যা বানিয়েছে কে?তুই,আমি। এই সমাজ। কখনো কিছু করছিস এদের জন্য। .........বলতে পারি নি ।

আমিও যে সুশীল । আজব রকমের সুশীল । আমদের এই সমাজ, আমাদের এই সুশীল সমাজ, আমাদের সমাজের ই একটা অংশ, এই পতিতা/রাস্তার নারীদের নিজেরাই তৈরি করি আবার নিজেরাই সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। আমরা তাদের পুনর্বাসনের জন্য কি আদৌ কিছু করি?মাঝে মাঝে কিছু লেখালেখি করা যা পুরোটাই ফলহীন। যাদের ক্ষমতা আছে এদের অবস্থার পরিবর্তন করতে,তারা কিছু করি না।

অন্যরা আমরা সুশীল সেজে থাকি। কাব্য হয় কবিতা হয়, রচনার রসন হয়, পথনারীরা শুধু উপমায় হয়, হয়না পূনর্বাসন ভেঙ্গে বুর্জোয়া আগ্রাসন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।