আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একশ বছর আগের লেখক পরিচিতি...



রেখোমা দাসেরে মনে... "দাঁড়াও পথিক বর জন্ম যদি তব বঙ্গে! তিষ্ট ক্ষণকাল!" এ উক্তিটি লেখা আছে মধুকবি - মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্হান ও তাঁর পৈত্রিক নিবাস যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী সাগরদাড়িঁ গ্রামে তাঁর মুর্তিতে এবং কলকাতায় তাঁর সমাধিস্হলে । মহাকবি মাইকেলের জন্ম ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে । প্রায় ১২টি ভাষা জানা মধুসূদন ইংরেজি ভাষায় অন্ধ হয়ে , ইংরেজি সংস্কৃতিতে প্রীতি হয়ে পরিবারের শত বাধাঁ সত্ত্বেও খ্রিস্টধর্ম গ্রহন করে চলে গিয়েছিলেন সুদূর ইংল্যান্ডে । তিনি ছিলেন জমিদার পুত্র । জন্মলগ্নের সময় থেকেই অভাব কাকে বলে বোঝেননি ।

বরং দুহাত ভরে খরচ করেছেন নিজের জন্য এবং বন্ধু বান্ধবের জন্য । প্রথম জীবনে তিনি বাংলা ভাষা সহ্য করতে পারতেননা । তাই তিনি সাহিত্য জীবন শুরু করেছিলেন ইংরেজি কাব্যগ্রন্হ " দি ক্যাপটিভ লেডি " রচনার মধ্য দিয়ে । তিনি ভেবেছিলেন এটি আভিজাত্যের লক্ষণ । অবশ্য পরবর্তী সময়ে জীবনের বিচিত্র কষ্টকর অভিজ্ঞতায় পাশ্চাত্য জীবন যাপনের প্রতি মোহাবিষ্ট মধুকবির এই ভুল ভেঙ্গেছিলো ।

আর এই ভুল ভাঙ্গাতে সাহায্য করেছিলেন আরেক মানবতাবাদী বিখ্যাত লেখক, সমাজ সংস্কারক, বীর সিংহের সিংহ পুরুষ , বাংলা গদ্যের জনক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । ১৮৫৯ সালে প্রথম নাটক 'শর্মিষ্ঠা' রচনার মধ্য দিয়ে তাঁর বাংলা সাহিত্য জগতে অনুপ্রবেশ । ১৮৬০ সালে মাত্র দুটি প্রহসন 'একেই কি বলে সভ্যতা' এবং 'বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ' লিখেই বাংলা প্রহসনকে নিয়ে যান সার্থকতার শীর্ষে । একই বছর 'তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য' দিয়ে তাঁর মহাকাব্যের যাত্রা শুরু । এর পরের বছর অর্থাত ১৮৬১ সালে লিখলেন বাংলা সাহিত্যের অমর মহাকাব্য 'মেঘনাদ বধ' কাব্য ।

এ মহাকাব্যের মাধ্যমেই তিনি সর্বপ্রথম প্রচলিত মহাকাব্য রচনার ধারাকে ভেঙ্গে দু:সাহসের পরিচয় দেন । এখানেই তিনিই প্রথম বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন । সর্বোপরি এ কাব্যেই তিনি প্রথা ভেঙ্গে রাবণের মতো রাক্ষসরাজকে নায়ক বানিয়ে সবার চোথের জল ঝরিয়েছেন । আর রাম - লক্ষণকে উপস্হাপন করেছেন ঘৃণিত কাপুরুষ ব্যক্তি রূপে । বাংলা সনেটের প্রবর্তক মধুকবি পত্রকাব্যেও দেখিয়েছেন পারঙ্গমতার পরিচয় ।

এই প্রথম বাংলা সাহিত্যে নারীরা তাদের সনাতন পৌরাণিক আশ্রম ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিজ অধিকারের কথা , ক্ষোভের কথা , প্রেমের কথা উচ্চকিত কন্ঠে ঘোষণা দিয়েছে মধুসূদনের 'বীরাঙ্গনা' কাব্যে । ১৮/১৯ বছর বয়সেই হিন্দু ফিমেলস বিষয়ে একটি রচনা প্রতিযোগিতায় তিনি লেখেন , "নারীকে হতে হবে আদর্শ জননী ও গৃহিণী । হতে হবে কুসংস্কার মুক্ত । নারী শুধু ভোগের সামগ্রী নয় , সমাজের পালয়ত্রী ও শিক্ষাদাত্রী । " এক কথায় বীরাঙ্গনা নারী মুক্তির কাব্য ।

বলা যায়, মধুসদূন যে রচনাতেই হাত দিয়েছেন সে রচনাতেই ফলেছে সাহিত্যের স্বর্ণফসল । বিদ্যাসাগর সমাজে নারী মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন আর সে কাজটিই মধুসূদন করেছেন তাঁর সাহিত্যে । আর এ প্রগতির পথেই হেঁটেছিলেন বেগম রোকেয়া । এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্য গ্রন্থ হলো --- চতুর্দশপদী কবিতাবলি । মধুসূদনের ছদ্মনাম 'টিমোথি টেনপোয়েম' ।

এই নামে তিনি মাদ্রাজ সার্কুলেটর পত্রিকায় লিখতেন । বাংলা সাহিত্যের সর্বাধুনিক সার্থক মধুকবি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭৩ সালে খুবই অযত্নে অবহেলায় কলকাতায় মৃত্যুবরন করেন । এখানে উল্লেখ্য যে, মাইকেল মধুসূদনের সর্বশেষ বংশধর সুদূর ইংল্যান্ডের টেনিস সেনসেশন 'লিয়েন্ডার পেজ' । দেখতে অবিকল মধুসূদন !!!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।