আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইয়োরোপ ভ্রমণ ক্যাচাল-১

ব্যাকগ্রাউন্ড ক্যাচাল-১ আমি নিজেকে কখনই গানের উত্তম শ্রোতা দাবি করিনা। তার পরও যে কয়েকটি গান শুনি তার একটি হল নচিকেতার আমি ভবঘুরেই হব এটাই আমার অ্যাম্বিশন, যা আমার খুব প্রিয় গান গুলোর একটি। জানি না এ গানটিই কেন এত প্রিয়, হয়ত নিজেকে ভবঘু্রে হিসেবে ভাবতেই বেশী ভাল লাগে এজন্য। ভ্রমনের কথা মাথায় আসলে কেন জানি মাথা আর কোন কাজ করেনা। কিছুদিন আগে নেত্রকোনা ঘুরতে গিয়ে ভ্রমণ পাগল এক সিনিয়রেকে বলেছিলাম ভাই ট্যুরের কথা শুনলেই মাথায় রক্ত উঠে যায়, উনি জবাবে বলেছিলেন একজন জাত পর্যটকের মনের কথা বলেছ।

সেই থেকে নিজের ভবঘুরে মানসিকতার ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছিল। ছোট বেলা থেকেই ইউরোপের প্রতি কেন জানি একটা প্রবল আকর্ষন কাজ করত, হয়ত সিলেটে বাড়ি এবং বেশীর ভাগ আত্নীয় স্বজনের বাস ইউরোপে হওয়ার কারনে। গত এক দেড় বছরে চার পাঁচটি দেশ ঘুরে আসার পরও অনেক দিন থেকেই ইউরোপ যাওয়ার সুযোগের অপেক্ষয় ছিলাম, সেই সুযোগ এত তাড়াতাড়ি আসবে তা কল্পনাও করিনি। আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু বলে কেউ যদি সত্যিই মন থেকে কিছু চায় তা হলে তা আজ হোক কাল হোক সে পাবেই। আমার ইউরোপ ভ্রমণের কাহিনী অনেকটা সে রকমই কাকতালীয়।

ক্লাসে যাওয়ার আগে হঠাৎ করেই মেইল চেক করতে গিয়ে আকাশ থেকে পড়লাম, মেইলরে সাবজেক্ট দেখেই চিৎকার দিয়ে উঠলাম যদিও তখনও জানতাম না যে এটা মেইল অব অ্যাকসেপ্টেন্স না মেইল অব রিজেশন। একটানে পুরো মেইল পড়েতো আনন্দে কথাই বলতে পারছিলাম না। হেলা ফেলা করে একটা মটিভেশন লেটার আর আগে থেকেই তৈরী একটা জীবন বৃত্তান্ত মেইল করেছিলাম এরফুর্ট সামার স্কুলের জন্য। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমাকে কোন ভাবেই আমানে নির্বাচন করবে না। কারন পুরো বিশ্ব থেকেই যেখানে অংশ নেবে মাত্র হাতে গোনা পনেরজন বাংলাদেশ থেকে হয়ত একজনকে নিতে পারে।

কিন্তু সেই একজন আমি হব এটা সুদূরতম কল্পনায়ও আসেনি। কারন প্রতিবছরই সেরা বিশ্বের সেরা মেধাবীরা এতে আবেদন করে। এ বছরও আমার পরিচিত অনেক প্রথম শ্রেনীতে প্রথম ছাত্র-ছাত্রী আবেদন করেছে, সুতরাং আমার মত মিডিয়াম ক্যাটাগরির একজনের সুযোগ পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। এরফুর্ট হল জার্মানীর নবীনতম বিশ্ববিদ্যালয়, যা মূলত সামাজিক বিজ্ঞান আর মানববিদ্যা কেন্দ্রীক পড়াশোনার জন্য প্রতিষ্ঠিত। সম্ভবত ইউরোপের সবচেয়ে ছোট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিলিজিয়াস স্টাডিজ মুসলিম রিলিজিওন এন্ড কালচারাল হিস্ট্রি বিভাগ প্রতি বছর গ্রীষ্মের ছুটিতে ১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা বিশ্ব থেকে পনের বিশজন স্নাতোকোত্তর শিক্ষার্থী নিয়ে আয়োজন করে ‘সামার স্কুল মুসলিম ইন দা ওয়েস্ট’। এ বছর বাংলাদেশ থেকে দু জন স্নাতোকোত্তর শীক্ষার্থী আমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ক্রিমিনলজি এবং ক্রিমিনাল জাস্টিস বিভাগের রোকন উদ্দিন অংশ গ্রহণ করছি। এই সামার স্কুলের মূল উদ্দেশ্য হল পাশ্চাত্যে বসবাস রত মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয় যেমন পাশ্চাত্য মিডিয়ায় ইসলাম এবং মুসলমান, পাশ্চাত্য সমাজ এবং অভিবাসী মুসলমান সমাজের সংহতি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাঠামো এবং কর্মপরিধি, সভ্যতার সংঘাত এবং পাশ্চাত্যের মুসলিম ডায়াসপরা, ইউরোপের ধর্মীয় শিক্ষার কাঠামো ইত্যাদি সনাতান একাডেমিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি আরব বসন্ত এবং বিশ্বরাজনীতির চলমান সমীকরণ সম্পর্কে ধারনা দেয়া এবং এ কেন্দ্রীক গবেষণায় উৎসাহিত করা । এ সামার স্কুলের যাতায়াত খরচ সহ পুরো ব্যয়ভারের মুটামুটি নব্বই ভাগই জার্মান একাডেমিক একচেঞ্জ সার্ভসি বা ডিএএডি বহন করে। ইউরোপে মর্যাদার দিকদিয়ে অসলো সামার স্কুলর পরই এ সামার স্কুলের অবস্থান।

তো মেইল পেয়ে আমিতো খুশিতে আটখানা। সাথে সাথে তাদের জবাব দিলাম আমার অংশগ্রহণ করতে আমার কোন সমস্যা নাই, যদিও মনে মনে ভয় ছিল মার্স্টাস পরীক্ষা আবার সমস্যা সৃষ্টি করে কিনা। অবশ্য ভাইভা সহ পরীক্ষা যাওয়ার সপ্তাহ খানেক আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় আর সমস্যা হয়নি, বরং পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইউরোপে ঘুরে আসা সোনায় সোহাগা অবস্থা। জার্মানির ভিসার জন্য দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয় শুনে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলাম, কিন্তু আমরা সাংস্কৃতিক বিনিময় ক্যাটাগরির হওয়ায় ভিসা পেতে কোন সমস্যা হয়নি। ভিসা পাওয়ার পর শুরু হল পরিকল্পনা, ভিসার মেয়াদ একমাস হওয়ায় সামার স্কুল শেষ হওয়ার পরও হাতে দশ দিন থাকে, সেই দশদিনকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় মূলত তারই পরিকল্পনা।

দুলাভাই মূলত ইতালির বাসিন্দা হলেও সুইজারল্যান্ডে থাকে, তাই মিলান আর জুরিখ ভ্রমণের দাওয়াত পেতে বেশী বেগ পেতে হল না, সাথে বোনাস হিসেবে ভেনিস ঘুরে আসার সম্ভাবনাও আছে। একসাথে ঈদ করব বলে চাচাত ভাই জাভেদ নেপোলি থেকে মিলান আসবে তাই সবাই মিলে ভেনিস ঘুরার একটা সম্ভাবনা আছে। ইউরোপে আসব আর অন্নদাশঙ্করের পাঁরীতে যাওয়া হবেনা তাতো হয়না। অবশ্য প্যারিস ভ্রমণের দাওয়াত আগেই দিয়ে রেখেছে খালাতো ভাই। তাই মুটামুটি প্রস্তুতি নিয়েই আসা।

(আরে বাবা প্রস্তুতি নিতে তো সমস্যা নেই পয়সা তো আর আমার পকেট থেকে যাবে না!!!)। অবশ্য প্যারিস যাওয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা সময়। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারনে প্যারিস যাত্রা কিছুটা অনিশ্চয়তার মাঝে ছিল। দুলাভাই বলল আগে আস তারপর দেখাযাবে কিভাবে কোথায় যাওয়া যায়। (চলবে....) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.