আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নার্স ভিসায় সৌদিতে নিয়ে বাধ্য করা হয় যৌনকর্মে

তবে তাই হোক, ক্লান্তিহীন তিল তিল আরোহনে সত্য হোক বিক্খুব্ধ এই জীবন _____

আশুরা বেগম। বাড়ি যশোরের শার্শায়। দরিদ্র কৃষক খলিলুর রহমানের তালাকপ্রাপ্ত কন্যা। মেয়েকে নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েন তিনি। এ সময় মেয়েটিকে সেবিকা ভিসায় বিদেশ পাঠানোর পরামর্শ দেন পার্শ্ববর্তী গ্রামের মিলন ও কুদ্দুস।

অভাবের তাড়নায় আশুরার সহজ সরল বাবা রাজি হয়ে গেলেন। নিজের ঘর-ভিটে বিক্রি করে মেয়েটিকে ওদের হাতে তুলে দিলেন। ২০০৬ সালের ৩ মার্চ সৌদি আরবের মাটিতে পা রাখার পর পরই সেবার ধরন পাল্টে যায় তার। অসুস্থদের সেবার পরিবর্তে যৌনকর্মে বাধ্য করা হয় আশুরাকে। বিমানবন্দর থেকে নামার পর থেকে টানা ২০ দিন যৌন নির্যাতন চলে তার ওপর।

অমানুষিক নির্যাতনে মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়ত । এক পর্যায়ে তাকে ২৩ মার্চ ঢাকায় ফেরত পাঠিয়ে দেয় প্রতারক চক্র। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই চিত্র তুলে ধরেন মানব পাচার প্রতিরোধে কাজ করা সংগঠন 'বিভা'র নির্বাহী পরিচালক সুকুমার ঘোষ। সেন্টার ফর উইমেন এ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজের (সিডবিউসিএস) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিডবিউসিএসের সভাপতি অধ্যাপক ইশরাত শামীম, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সালমা আলী, এসিডি নির্বাহী পরিচালক সালিমা সারওয়ার, বিএমডিএফ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইদ মাহাবুব আলী । অনুষ্ঠানে নওগাঁর ওয়াজেদ ও কুলসুম বিদেশে গিয়ে তাদের হয়রানি ও নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন।

এ ছাড়াও এনজিও এবং আইএনজিও'র প্রায় ১০০ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এসিডি নির্বাহী পরিচালক, সালিমা সারওয়ার রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ৬টি জেলায় বিভিন্ন স্টোকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে অনুিষ্ঠত কর্মশালায় প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরে বলেন জীবনের মান উন্নয়নে বিদেশ যাবার জন্য নারী ও পুরম্নষ আধুনিক দাসত্বের শিকার হচ্ছে। সারাদেশে এ রকম হাজার হাজার সহজ সরল মানুষ দালাল প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সর্বহারা হচ্ছে। দেশে ফিরে এসেও কোন ঠাঁই হয় না তাদের। যেমনটি হয়নি আশুরা বেগমের।

তিনি আর কোনভাবেই ফেরত পাননি টাকা। ৰতিপূরণ পাননি নির্যাতন নিপীড়নের। লিখিত বক্তব্যে সুকুমার ঘোষ শুধু যশোর ও সাতক্ষীরা হতে চাকরির নামে শ্রম পাচারের শিকারীদের তালিকা তুলে ধরে বলেন ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরাই বেশি পাচার হচ্ছে। ২০০১ থেকে ২০১০ পর্যনত্ম যশোরের অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৯ জন। এর মধ্যে ১০ হাজার ১৯৩ পুরম্নষ এবং ৮৬৬ মহিলা।

এই সময়ে মোট মামলার সংখ্যা ছিল ১৫৬। যার ভিতরে মীমাংসা হয়েছে ৬৫টি এবং চলমান আছে ৯১টি। সাতক্ষীরাতে ২০০৯ সালে বিদেশে গেছে ১৫৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪৩২ জন এবং নারী ১৩২ জন। এর মধ্যে মামলা করেছে ২৫ জন।

বিভিন্ন কোর্টে ২০০৯ সালে ১১৩টি মানব পাচারের মামলা হয়েছে। সিডবিউসিএসের সভাপতি অধ্যাপক ইশরাত শামীম আশা প্রকাশ করেন যে, তৃণমূল পর্যায়ের সভার সুপারিশমালা মানব পাচারের সমন্বিত খসড়া আইনে প্রতিফলিত হলে সমস্যার সমাধান হতে পারে। তিনি বলেন, শুধু আইন প্রণয়ন করে মানবপাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। এ জন্য প্রতিটি এলাকার সংসদ সদস্যদের কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠা করা হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে, যার ফলে অভ্যনত্মরীণ এবং আনত্মর্জাতিক অভিবাসন ও মানবপাচার কমে আসবে। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সালমা আলী, এ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, মানব পাচার একটি আনত্মঃদেশীয় অপরাধ তাই অপরাধীকে শনাক্ত করে শাসত্মি প্রদান করা খুবই কঠিন।

মানব পাচার প্রতিরোধে খসড়া আইনে যে সব দেশে আমাদের লোক বেশি থাকে সেই দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার কথা বলা হয়েছে। এটি আমাদের অভিবাসন প্রক্রিয়ায় অত্যনত্ম ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা উলেস্নখ করে বলেন, যে রিক্রুটিং এজেন্সি বিদেশে পাঠাচ্ছে তারা কেন কোন খোঁজ না নিয়ে কর্মী পাঠাবে। তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কোন শ্রমিক বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়লে রিক্রুটিং এজেন্সিকে এর দায়িত্ব নিতে হবে।

ভুক্তভোগী ওয়াজেদ বলেন, বিদেশে যে চাকরির কথা শুনে যাই তা পাইনি। এরপর ওখানে অমানবিক কষ্টের মধ্যে থাকতে হতো। অনেক কষ্টে দেশে ফিরে আসি। আমার টাকা ফেরত পাবার জন্য মামলা করেছি কিন্তু এখনও টাকা ফেরত পাইনি। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে আছি।

কুলসুম বলেন, আমি যার মাধ্যমে বিদেশে যাই তিনি বলেছিলেন ওখানে গিয়ে আমি বুয়ার কাজ করব। কিন্তু কোন কাজ পাইনি। প্রায় আট মাস ছিলাম। অনেক কষ্টে থাকতে হয়েছে। পরে দেশে ফিরে আসি।

আমার সঙ্গে আরও ৩৬ মেয়ে ছিল। তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে আমি জানি না। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক বাংলাদেশী ভাইবোন কষ্টে আছে আপনারা তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। Click Here


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.