আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের পুঁড়িয়ে মারা হবে, আমাদের বেতন দেয়া হবে না, এক মাসের মজুরি আরেক মাসে দেয়া হবে আর আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের গ্রেপ্তার করা হবে , পুলিশ দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হবে

মানবতাই ধর্ম !

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর যাবত গার্মেন্টস শ্রমিকদের উপর যে প্রচন্ড নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে তা আমরা সবাই প্রতিনিয়ত দেখে যাচ্ছি। সম্প্রতি হা-মীম গ্রুপের গার্মেন্টসে আগুন লেগে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৬ জন। আরো অনেক শ্রমিকই মারাত্নক ভাবে আহত এবং অনেকেই দাবি করছেন তাদের স্বজন ঐ গার্মেন্টসে কাজ করতেন এবং ঐ দিনের পর থেকে সে নিঁখোজ। হা-মীম গ্রুপ ঘটনার পর দাবী করেছে এটা নিছক একটি দুর্ঘটনা এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ১ লাখ করে টাকা দেয়া হবে। বেঁচে যাওয়া এবং উদ্ধারকৃত অনেক শ্রমিকই বলেছেন যে তারা আগুন লাগার পর বাঁচার জন্য নিচে নামতে চাইলেও নামতে পারেননি।

কেন ? -কারণ নিচের ফ্লোরে নামার গেট বন্ধ ছিল, তালা দেয়া ছিল । তাহলে এর জন্য কী গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় ? আগুন লাগার ঘটনার পরই গ্রেপ্তার করা হল গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী মোশারেফা মিশু কে। কেন? কী তার অপরাধ ? -তাঁর অপরাধ হল তিনি গার্মেন্টস কর্মীদের ন্যায্য পারিশ্রমিক আদায়ের জন্য তাদের একতাবদ্ধ করেছেন , তাদের নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন । মাসিক সাত হাজার টাকা বেতনের দাবী কী অযৌক্তিক ? বর্তমান বেতনে ঘর ভাড়া, বাজার খরচ, বাচ্চাদের শিক্ষার খরচ, হাত খরচ, চিকিৎসা খরচসহ অন্যান্য খরচ বহন করা সম্ভব? সম্ভব না । এর জন্য তারা আন্দোলনে নামে।

এর জন্য তারা পুলিশের মার খায় । নারী শ্রমিকদের কাপড় ধরে পুলিশ টানে। পুরুষ পুলিশগুলো নারী শ্রমিকদের টেনে হিচরে পুলিশের গাড়িতে উঠায় , গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তাদের ওপর করা হয় অমানুষিক নির্যাতন। যে শ্রমিকটি টাকা রোজগারের জন্য তার গ্রাম ছেড়ে,তার পরিজন ছেড়ে সুদূর ঢাকা শহরে এসছে দু মুঠো অন্নের আশায় , একটু ভালভাবে বাঁচার আশায় তার কী দায় পড়েছে তার কর্মস্থল, চাকরিস্থল গার্মেন্টসটি ভাঙ্গচুর করার? তার কী দায় পড়েছে তার পুলিশের লাঠির বাড়ি খাওয়ার ? না তার দায় পড়েনি।

তার কোনই দায় পড়েনি । সে তার ন্যায্য পাওনা বুঝে নিতে চায়। সে তার ন্যায্য পারিশ্রমিক পেতে চায়। সে তার পরিবার আর পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বেঁচে বর্তে থাকতে চায়। তার কীইবা দায় পড়েছে কর্তৃপক্ষের নির্যাতন সওয়ার? কেন সে অন্যায় সহ্য করবে? কেন সে দিনের পর দিন কাজ করে যাবে অথচ পারিশ্রমিক সময় মত পাবে না ? সে অবশ্যই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।

সে অবশ্যই তার অধিকারের জন্য পথে নামবে। কিন্তু শাসক শ্রেণীর কোন অধিকার নেই তাকে নগ্ন করে পেটানোর,শাসক শ্রেনীর অধিকার নেই তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে বাঁধা দেয়ার । কেউ কি বলতে পারবে এই গার্মেন্টস শ্রমিকেরা এমন যায়গায় আন্দোলন করেছে যেখানে ন্যায্য পারিশ্রমিক দেয়া হয়? তারা কি এমন যায়গায় আন্দোলন করেছে যেখানে সময় মতো পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়? -না। তারা শুধু সেই গার্মেন্টসেই আন্দোলন করেছে যেখানে অন্যায় হয়,অবিচার হয়, শোষণ করা হয় , সময় মত বেতন পরিশোধ করা হয় না । হা-মীম গার্মেন্টস বলেছে তারা নিহত সকল শ্রমিকের পরিবারকে ১ লাখ করে টাকা দিবে।

১ লাখ টাকা কি একজন মানুষের মূল্য? ১ লাখ টাকা কি তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা এনে দিবে ? ১ লাখ টাকা কি ঐ মায়ের আহাজারি থামাতে সক্ষম ? - না । এই ঘোষণার মাধ্যমে হা-মীম গার্মেন্টস নিহতদের অপমান করেছে। মানবতা এবং মানবতা বোধের কিছু থাকলে কেঊ অকারণে মানুষ আগুনে পুঁড়িয়ে এরকম করতে পারে না । আজ শাসকশ্রেণী কী চায় ? শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করবে আর তারা দামি খাবার , দামি পোষাক পড়ে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে বেড়াবে। তাই না ? এইটাই কী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ? এইটাই কী স্বাধীন দেশের বৈশিষ্ট্য? আমরা এই স্বাধীনতা চাই না।

আমরা এর জন্য দেশ স্বাধীন করিনি । দেশ স্বাধীন করার জন্য কাদের অবদান ছিল সবচেতে বেশী ? কাদের অংশগ্রহণ ছিল মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশী? এই শ্রমিক শ্রেণীর। দেশটা নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তই স্বাধীন করেছে । উচ্চবিত্ত এই দেশ স্বাধীন করেনি । অথচ আজ এই উচ্চবিত্তই সবচেয়ে সুখে আছে দেশে।

এই উচ্চবিত্তই আজ সকল সুবিধাভোগী। এই উচ্চবিত্তই আজ এই দেশের সুনাগরিক !! আমি আমার লেখা শেষ করছি গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী মোশারেফা মিশুর মুক্তির দাবি চেয়ে এবং সকল শ্রমিকের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।