আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস

আমি সাধারন মানুষ, সাধারন কিছু চিন্তা আমার এগুলো নিয়েই তো আমি

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালির সবচেয়ে আনন্দের দিন। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দিন। এদিন বিশ্বের মানচিত্রে সৃষ্টি হয় নতুন একটি সার্বভৌম দেশ, বাংলাদেশ।

যা বাঙালি জাতিকে এনে দেয় আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন আজ সেসব শহীদকে বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিপাগল মানুষের প্রবল প্রতিরোধ আর লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ থেকে পরাজিত হয়ে এ দিনে আত্মসমর্পণ করেছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ৩৮ বছর আগে আজকের এই দিনে পূর্ব আকাশে উদয় হয়েছিলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সূর্য। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিলো নতুন দিনের স্বপ্ন।

আর এ স্বপ্নের জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন ৩০ লাখ মানুষ। তাদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এ বিজয়, এ স্বাধীনতা। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে- এমন ¯^cœ নিয়েই আজ বিজয় দিবস পালন করতে যাচ্ছে গোটা জাতি। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এক বুক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিলো এ দেশ। বিজয়ের এ দিনে সবার অঙ্গীকার সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার।

যেসব বৈষম্য থেকে স্বাধীনতার জন্ম সেই বৈষম্যগুলো থেকে এ জাতি বেরিয়ে আসতে আবার দৃঢ় প্রত্যয় নেবে আজ। বিজয়ের পর ৩৮টি বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ পরিবারের সদস্যদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আজো থামেনি। বিগত তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে গণহত্যা ও ধর্ষণের বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বদ্ধপরিকর বর্তমান মহাজোট সরকার।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার। পৌষের সেই পড়ন্ত বিকেলে তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল সাড়ে ৪টায় পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক জোন-বি এবং ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীর নেতৃত্বে ৯১ হাজার ৫৪৯ পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণের দলিলে বিকালে স্বাক্ষর করেন জেনারেল নিয়াজী ও লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। মুজিবনগর সরকারের পক্ষে এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। আর এ আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটে।

জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ- বাংলাদেশ। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তার বাণীতে বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিসীম ত্যাগ ও বীরত্বগাথা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে এক অনন্য গৌরবময় দিন। দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম এবং লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।

তিনি বিজয়ের এই মহান দিনে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে জীবন উৎসর্গকারী অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জনে অনন্যসাধারণ নেতৃত্ব দান করেন। তিনি আরো শ্রদ্ধা জানান জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সব বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বস্তরের জনগণকে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের এ বিজয় অর্জনে অবদান রেখেছেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের লক্ষ্য ছিলো একটি সমৃদ্ধ ও মর্যাদাপূর্ণ পৃথক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা; যেখানে সাধারণ জনগণ স্বাধীন জীবনযাপন করবে। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর প্রায় চার দশক কেটে গেলেও সে লক্ষ্য অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাও বহুবার ব্যাহত হয়েছে।

তিনি বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০২১’ ঘোষণা করেছেন। রাষ্ট্রপতি ‘ভিশন-২০২১’ অর্জনে সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে দল-মত-শ্রেণী-পেশা ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনকে, যাদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনে তিনি বিনম্র সালাম জানাচ্ছেন সব মুক্তিযোদ্ধাকে। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যার আহ্বানে সাড়া দিয়ে নয় মাসের মরণজয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদর ও আলশামসরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের এ দীর্ঘ লড়াইয়ে ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র নির্বাচন, ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-র ছয় দফা, ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭০-র নির্বাচনের পথ পেরিয়ে বাঙালি জাতি উপনীত হয় ’৭১-র ৭ মার্চের মিলন মোহনায়। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বাঙালির মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন : ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।

’ মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয় মুক্তি সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর ৩৮ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু স্বাধীনতা স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে এবং জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে পরাজিত শক্তি হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দিয়ে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তারা ধ্বংস করতে চেয়েছিল সংবিধান, গণতন্ত্র, মানবতা, সংস্কৃতি, উন্নয়নসহ আমাদের মহত্তম অর্জনগুলো।

যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে, সে জাতিই আবার জীবন দিয়ে, দীর্ঘ সংগ্রাম করে ফিরিয়ে এনেছে গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকার। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি রায় দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে, দিনবদলের পক্ষে। আজ সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধের ফসল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেয়ার। সরকার মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

তিনি বলেন, আজকের এই দিনে তিনি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছেন সেসব বীর শহীদের কথা, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। স্বাধীনতার জন্য যেসব মা-বোন সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন তিনি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। খালেদা জিয়া বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ডাকে শুরু হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধ ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছিলো। এদেশের দামাল ছেলেরা হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতার সূর্য।

তিনি বলেন, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়েই ১৯৭১-এ এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয়েছে, জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার খর্ব হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধার করেছে। খালেদা জিয়া বলেন, ১৯৭১-এ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত হলেও দুশমনদের শ্যোন দৃষ্টি আজো বিদ্যমান। আধিপত্যবাদী শক্তি এদেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বকে গ্রাস করে আমাদের একটি পদানত জাতিতে পরিণত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত।

ওই অপশক্তির নীলনকশা বাস্তবায়নে এদেশেরই কিছু চিহ্নিত মহল মদদ জুগিয়ে চলেছে। ওদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্রকে বিপদমুক্ত করতে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মহান বিজয় দিবসে আমি দেশবাসীর প্রতি সে আহ্বান জানাই। আজ সূর্যোদয়ের সময় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান পুষ্পার্ঘ অর্পণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে কোপেনহেগেনে যাওয়ায় স্মৃতিসৌধে তার পক্ষে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হবে।

অনুষ্ঠানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিত গার্ড অফ অনার প্রদান করবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। দেশের জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র, সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার ও এফএম রেডিও স্টেশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সমপ্রচার করবে। দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের।

আজ সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশের আয়োজন করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। আজ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর বাদকদল জাতীয় সংসদ এলাকায় ক্রিসেন্ট লেক, ফার্মগেটের পার্ক এলাকা ও মিরপুর ২ নম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করবে। নৌবাহিনীর কিছু জাহাজ জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, মংলা ও বরিশালে উন্মুক্ত রাখা হবে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।