মগবাজারের গাড়ি পোড়ানো ও ফারুক হোসেন হত্যামামলায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পাঁচ দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দা পুলিশ।
এ মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতাকে হেফাজতে পাওয়ার আবেদন জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে আবেদন জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান।
এতে সাড়া দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি দিয়ে বেলা সাড়ে ৩টায় আদেশ দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ ১০ দিনের জন্য চাইলেও মহানগর হাকিম পাঁচ দিন হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সালাউদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তারের পর তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।
বিএনপির ডাকা হরতালের একদিন আগে গত ২৬ জুন মগবাজার রেলক্রসিংয়ের কাছে একটি প্রাইভেটকারে আগুন ধরানো হয়। এতে আহত হন দুজন। অগ্নিদগ্ধ ফারুক হোসেন পরে হাসপাতালে মারা যান।
রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়- হরতাল সফল করতে উস্কানি দিয়ে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আগুনের উৎস এবং ওই ঘটনায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র উদ্ধার এবং প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সালাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
হরতালে লাশ ফেলার জন্য সালাউদ্দিন পুরস্কার ঘোষণা দিয়ে নেতা-কর্মীদের প্ররোচিত করেন বলেও আবেদনে বলা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনের সঙ্গে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ৩৫টি সাধারণ ডায়েরি ও মামলা থাকার তথ্য উল্লেখ করা হয়।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটকের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের বার্ষিকীতে বৃহস্পতিবার ভোররাতে বনানীর একটি বাড়িতে গ্রেপ্তার হন সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের।
তাকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে না জানালেও দুপুরে রমনা থানার ওসি শিবলী নোমান সাংবাদিকদের বলেন, সালাউদ্দিনকে মগবাজারে গাড়ি পোড়ানো ও মানুষ হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এ মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরীসহ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতারাও আসামি।
জামায়াত নেতাদের পরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একই প্রক্রিয়া সালাউদ্দিনের ক্ষেত্রেও হবে ধারণা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তারের পর প্রথমে কাফরুল থানায় এবং পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে রাজধানীর মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান কার্যালয়ে রাখা হয় সালাউদ্দিনকে। সেখান থেকে দুপুর আড়াইটার দিকে র্যাব ও পুলিশের প্রহরায় তাকে নেওয়া হয় পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায়।
আদালতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবী ও দলীয় নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়েছেন।
অন্যদিকে আদালত এলাকায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সালাউদ্দিনের বিচার দাবিতে মিছিল করে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ।
দুপুরে ডিবি কার্যালয় থেকে সালাউদ্দিনের গাড়ি বের হওয়ার সময় তার স্ত্রী ও ছেলেরা গাড়ির সামনে দাঁড়ান। তবে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। ওই সময় সেখানে উপস্থিত বিএনপি নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। সালাউদ্দিন কাদেরের স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরীর অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পর তার স্বামীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
সে কারণেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।
চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিএনপি বন্দরনগরীতে রোববার আধাবেলা হরতাল ডেকেছে।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেপ্তারে সন্তোষ প্রকাশ করে নূতন চন্দ্র সিংহের ছেলে প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ বলেছেন, এখন বিচার শুরু হওয়া প্রয়োজন।
যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারের আবেদন জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোররাতে সালাউদ্দিন কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের স্থান এবং বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী দল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংসদ সদস্য সালাউদ্দিনের জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায়।
তখন বিএনপির এ নেতার বিরুদ্ধে '৭১ এ কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার অভিযোগ তদন্ত দলকে জানান তার ছেলে প্রফুল্ল সিংহ।
প্রফুল্ল বৃহস্পতিবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "যুদ্ধাপরাধ তদন্ত দল রাউজান ঘুরে তার (সালাউদ্দিন) বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছে। এবার নিয়ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। আমরা আমার বাবার হত্যাকারীর বিচার চাই। "
সংসদ সদস্য সালাউদ্দিনের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে।
সাকা চৌধুরীর গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে বলেও মন্তব্য করেন নূতন সিংহের মেজ ছেলে প্রফুল্ল।
তিনি গত ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল দলের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, ১৯৭১ এর ১৩ এপ্রিল সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি সেনাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং নূতন চন্দ্র সিংহকে সেদিনই বাড়ির মন্দির থেকে বের করে এনে হত্যা করা হয়।
প্রফুল্ল জানান, স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে তার বড় ভাই সত্য রঞ্জন সিংহ ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি নূতন চন্দ্রকে হত্যার অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের ও তার বাবা মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদেরকে আসামি করে রাউজান থানায় একটি হত্যামামলা করেন।
এদিকে সালাউদ্দিন কাদেরের গ্রেপ্তারের পর নগরীর গুডস হিলে তার বাসভবনে এবং বিএনপি কার্যালয় নাসিমন ভবন সংলগ্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে সালাউদ্দিন কাদেরের গ্রেপ্তারের পর নগরী ও রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টিও বিতরণের খবরও পাওয়া গেছে।
বিজয় দিবসে সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষের চোখে-মুখে ছিলো সন্তোষের ছাপ।
কবি ও সাংস্কৃতিক সংগঠক কামরুল হাসান বাদল বলেন, "সাকা'র গ্রেপ্তার আজকের বিজয় উৎসবকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। "
রাউজানে কোনো ধরনের বিক্ষোভ কিংবা সহিংস ঘটনা দুপুর পর্যন্ত ঘটেনি বলে রাউজান থানার ওসি নিখিল মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।