আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজয় দিবস ১৯৯৬

seremos como el Che
[এই লেখাটা একটা বক্তব্য প্রতিযোগীতায় পড়ার জন্য লেখা হয়েছিল যেটা ১৯৯৬ সালের রজত জয়ন্তী বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল যশোরে। তখন আমি নিতান্তই শিশু ছিলাম, এটা লিখতে আমাকে সাহায্য করেছিলেন আমার বাবা। কিছুদিন আগে পুরানো অনেক কাগজের মধ্যে এটা খুঁজে পেলাম। আমার তখনই মনে হয়েছিল যে এবারের বিজয় দিবসে লেখাটা ব্লগে দিব, দুটি ছবিও খুঁজে পেলাম। ব্লগে এ উপলক্ষ্যে যেসব লেখা আসবে তার সাথে মান বিচারে এই লেখাটা কিছুই না।

কিন্তু দেশকে নিয়ে এটা ছিল আমার প্রথম কিছু করা। আশা করি আপনারা সেটা অনুভব করতে পারবেন। ] সন্মানিত সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলী ও উপস্থিত সূধীবৃন্দ, আপনাদের সবাইকে রজত জয়ন্তী বিজয় দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা জানাই। আজকের বক্তৃতার বিষয়- বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আমি এই বিষয়বস্তুর পক্ষে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করছি।

সন্মানিত সভাপতি, আপনারা জানেন যে, ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট জাতির ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়। পাকিস্তানের দুইটি প্রদেশ ছিল- পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানীদের ভাষা ছিল উর্দু, আর পূর্ব পাকিস্তানীদের ভাষা ছিল বাংলা। দুই প্রদেশের মধ্যে ব্যবধান ছিল ১৫শ মাইল। পাকিস্তানের জনক কায়েদে আযম ঘোষণা করলেন যে উর্দুই হবে সকল পাকিস্তানীদের রাষ্ট্রভাষা।

তার এই ঘোষণা বাংলাভাষী পূর্ব পাকিস্তানীরা গ্রহন করতে পারেনি। উর্দু ভাষা তাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানীরা তাদের মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তাই ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক নেতাগণ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন ফলে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী সংগঠিত হয় মহান ভাষা আন্দোলন। সকল স্তরের মানুষ এই সংগ্রামে শরীক হয়। পুলিশের সাথে বিরোধ বাধে, ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে।

ফলে পুলিশ ছাত্রদের উপর গুলি চালায়। নিহত হয় সালাম, রফিক, জব্বার এবং আরও অনেকে আহত হয়। মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের নেতাগণ একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। এরপরে সংগঠিত হয় ’৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান। আন্দোলন দাবানলের মত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা ছাড়তে রাজী হননা, টাল-বাহানা শুরু করেন। তার মনোভাব শেখ মুজিব বুঝতে পারেন। এরপর তিনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ঐ ভাষণে আমরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা পাই।

ঐ সালের ২৫শে মার্চ শুরু হয় গণহত্যা। হাজার হাজার বাঙ্গালীরে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়। তারপর দীর্ঘ নয় মাস আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেন। অবশেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভূমি স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর।

আজকের মত এমনই এক দিনে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন এক দেশ স্থান পায় যার নাম বাংলাদেশ। আমরা পাই গাঢ় সবুজের বুকে লাল সূর্যখোচিত একটি সুন্দর পতাকা। আমরা আমাদের স্বাধীন দেশ- মাতৃভূমি বাংলাদেশ, এবং মাতৃভাষা নিয়ে সত্যিই গর্বিত। সন্মানিত সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলী ও উপস্থিত সূধীবৃন্দ আপনাদের আবারও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে ও সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।

১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯৬, যশোর।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।