আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এটা কি হলো? ভারতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত!!!!!!

মেঘে মেঘে অলস বেলা ...

রাষ্ট্রীয় ঋণের আওতায় ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে পাওয়া ১০০ কোটি ডলারের পণ্য ও সেবা ভারতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিনতে হবে। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ পণ্য সরাসরি ভারতের কাছ থেকে কিনতে হবে, আর অবশিষ্ট ১৫ শতাংশ কিনতে হবে ভারতীয় ঠিকাদারের পরামর্শে। এ ছাড়া ঋণ চুক্তির আওতায় যেসব প্রকল্পে অর্থায়ন হবে, তাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এক্সিম ব্যাংকের (এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া) মহাব্যবস্থাপক নাদিম পাঞ্জেতান ঢাকা সফর করে ভারতের এসব শর্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ মনে করে, এক্সিম ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা যেসব ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন, সেগুলো চুক্তিতে উল্লেখ ছিল না। বিশেষ করে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি। যদিও এক্সিম ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রাষ্ট্রীয় ঋণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা আছে, ঋণগ্রহীতাই প্রকল্প অনুমোদন করবেন। আর এক্সিম ব্যাংক এ ব্যাপারে পরামর্শ দেবে। জানতে চাইলে ইআরডির সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত এ ধরনের কোনো চুক্তি সইয়ের আগেই সম্ভাব্য ঋণদাতার সঙ্গে আলোচনা করে প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়।

এখানে যেহেতু আগেই চুক্তি সই হয়েছে, তাই আলোচনার মাধ্যমে এখন প্রকল্প চূড়ান্ত করা হবে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প অনুমোদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে প্রকল্প চূড়ান্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরামর্শ দেবে, অনুমোদন নয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে টেলিফোনে নাদিম পাঞ্জেতানের দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তাঁর একজন সহকর্মী বলেন, ঋণের শর্তের ব্যাপারে এক্সিম ব্যাংকের অবস্থান সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর পরও কোনো তথ্য জানার থাকলে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়।

একই দিন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের বাণিজ্য শাখার প্রথম সচিব সুশীল সিংহাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ঋণ চুক্তির শর্ত মেনেই মোট পণ্যের ৮৫ শতাংশ ভারতীয় উৎসের হতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় ঠিকাদারেরা পণ্য সরবরাহ করবেন। তাই যেখান থেকে সস্তায় কেনা যায়, সে জায়গার ব্যাপারেই তাঁদের পরামর্শ থাকবে। তিনি আরও জানান, বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশের সঙ্গে ১৪০টি ঋণ-সহায়তা চুক্তি সই করেছে এক্সিম ব্যাংক। সব ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয়েছে একই নিয়ম।

বাংলাদেশের জন্য বরং চুক্তির কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে, কমানো হয়েছে সুদের হার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আকবর আলি খান বলেন, সারা পৃথিবীতেই রপ্তানি ঋণ চুক্তির শর্তগুলো এমনই থাকে। ভারত চুক্তিটি করেছে তার পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর জন্য। বাংলাদেশে ভারতের পণ্য রপ্তানি বাড়ানোই তাদের প্রধান লক্ষ্য। তারপর আসবে বাংলাদেশে উন্নয়নের প্রসঙ্গটি।

তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে আমরা রাস্তাঘাট, সেতুসহ অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এ ধরনের ঋণ নিইনি। কাজেই এ ঋণ কেন নেওয়া হয়েছে, সেটি পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। ’ প্রসঙ্গত, গত ৭ আগস্ট ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওই চুক্তি সই হয়। ইআরডির সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া এবং এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক টি সি এ রঙ্গনাথন বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন। আর এই ঋণের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছিল গত বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময়ে।

জানা গেছে, গত ৮ নভেম্বর নাদিম পাঞ্জেতানের নেতৃত্বে আসা এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইআরডিতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বৈঠক হয়। বৈঠকে ৮৫ শতাংশ পণ্য ভারত থেকে কেনার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ব্যাখ্যা চাইলে এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের কাছে ৮৫ শতাংশ পণ্য বিক্রি করা হবে, তা হবে ভারতে উৎপাদিত। দরপত্রে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে, সেগুলো ভারতে নিবন্ধিত, প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বত্বাধিকারীরাও হবেন ভারতীয় নাগরিক এবং ৫১ শতাংশ মালিকানা হবে ভারতীয়। অন্যদিকে, ভারতের বাইরে থেকে যে ১৫ শতাংশ পণ্য বাংলাদেশ কিনবে, সেটি ঠিক করে দেবে ভারতীয় ঠিকাদারেরাই।

সে ক্ষেত্রে তৃতীয় দেশ থেকে কেনা হতে পারে, আবার ভারত আমদানি করেও তা বাংলাদেশে সরবরাহ করতে পারে। ঋণ চুক্তি অনুযায়ী ১০০ কোটি ডলারের জন্য বছরে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে ‘কমিটমেন্ট ফি’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, বগি ও ইঞ্জিন কিনতে ১৮ থেকে ২৪ মাস লেগে যায়। সে ক্ষেত্রে, পণ্য কেনার আগেই ওই ফি গুনতে হবে বাংলাদেশকে। এ ব্যাপারে এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা পরামর্শ দেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প নির্বাচিত করে তা যেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এরপর তা যেন এক বছরের মধ্যেই পাওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশকে ওই কমিটমেন্ট ফি গুনতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ সময় বলা হয়, ১৮ থেকে ২৪ মাস সময় লাগা ছাড়াও ভারতীয় ঠিকাদারেরা যদি কালক্ষেপণ করেন, বাংলাদেশের কী করার আছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে নাদিম বলেন, ঠিকাদারদের বুঝিয়ে এক বছরের মধ্যে তা পাওয়ার চেষ্টাটা বাংলাদেশকেই করতে হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়, আখাউড়ায় সেতু নির্মাণে যে সেবা দেওয়া হবে, তার মধ্যে নির্মাণসামগ্রী অন্তর্ভুক্ত কি না।

এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, ‘প্রজেক্ট এক্সপোর্ট’ নামের ওই সেবা প্রকল্পের মধ্যে রড, বালু, সিমেন্টসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রী অন্তর্ভুক্ত। ভারতীয় নির্মাণসামগ্রীর নিম্নমান এবং এসব পণ্য দিয়ে নির্মিত হলে সেতু মানসম্পন্ন হবে না—বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হলে ভারতীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে ভারতীয় নির্মাণসামগ্রীই কিনতে হবে। কারণ, এক্সিম ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী কোনো প্রকল্পের পরামর্শসেবার আওতায় সবকিছু ভারতীয় উৎসের হতে হবে। যা ছিল না চুক্তিতে: বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি উঠে এলে ইআরডির সচিব বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের এই প্রক্রিয়ার কথা চুক্তিতে উল্লেখ ছিল না। বিষয়টি এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হবে।

তবে এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা জানিয়ে দেন, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেতের পরই শুধু ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে। মান নিয়ন্ত্রণ নিয়েও নানা প্রশ্ন: বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) সামর্থ্য বাড়াতে ঋণ চুক্তির আওতায় বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনার কথা রয়েছে। ভারত যেখানে জার্মানি, সুইজারল্যান্ডসহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ওই সব যন্ত্র্রপাতি সংগ্রহ করে, সেখানে বাংলাদেশ কেন ভারত থেকে তা সংগ্রহ করবে—বৈঠকে জানতে চান বিএসটিআইয়ের প্রধান। এক্সিম ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক চুক্তির কথা উল্লেখ করলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক বলেন, ভারতীয় যন্ত্র্রপাতি দিয়ে কখনো বিএসটিআই আধুনিকায়ন সম্ভব নয়। কাজেই এসব যন্ত্রপাতি নেওয়ার দরকার নেই।

নিয়মিত জানাতে হবে: ভারতের দেওয়া ঋণে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তন কতটা হলো, তা নিয়মিতভাবে জানাতে হবে এক্সিম ব্যাংককে। এ নিয়ে ইআরডির সচিব প্রশ্ন তুলে বলেন, এ বিষয়টির উল্লেখ ছিল না চুক্তিতে। কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন নাদিম। নির্বাচিত ১৪ প্রকল্প: ভারতীয় ঋণের আওতায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ১৪টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। প্রকল্পগুলোর ১০টি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এবং বাকি চারটি পানিসম্পদ, নৌপরিবহন, বিদ্যুৎ ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন করা হবে।

রেলের পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে চারটি সরঞ্জাম কেনা এবং অন্যটি সেতু নির্মাণসংক্রান্ত। প্রকল্পগুলো হচ্ছে: ১০টি নতুন ইঞ্জিন কেনা, ১২৫টি যাত্রীবাহী বগি সংগ্রহ, জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য ৬০টি ব্রডগেজ ট্যাংক ওয়াগন ও দুটি বগি ব্রেক ভ্যান সংগ্রহ, কনটেইনার পরিবহনের জন্য ৫০টি মিটারগেজ ফ্ল্যাট ওয়াগান বগি ও পাঁচটি ব্রেক ভ্যান সংগ্রহ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জে দুটি সেতু নির্মাণ। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অন্য প্রকল্প হচ্ছে: বিআরটিসির জন্য সাড়ে ৩০০ বাস কেনা, সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-চিনাইর-আখাউড়া-সোনারদী স্থলবন্দর সড়ক জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করা, জুরাইন রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ, রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর সংযোগ সড়ক উন্নয়ন। এ ছাড়া রয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নৌবন্দর স্থাপন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ভেড়ামারা-বহরমপুর সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিএসটিআইয়ের ল্যাবরেটরির আধুনিকায়ন। নিউজ প্রথম আলো. এখন আমি কি করবো?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।