আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপ্লবে নেই, কমরেডদের লিভটুগেদার ও ভাঙন



বিপ্লবে নেই। কমরেডদের প্রেম-প্রণয়-লিভটুগেদার এবং ভাঙন আছে। তোপখানা রোডের বামপাড়ায় লাল পতাকা উড়ানো বাসদের কমরেডদের হাতে হাতে এখন অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বুকলেট। বামপন্থিদের মুখে মুখে দলনেতাদের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির মুখবোচক খবর। যারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন-মনিকার সম্পর্ক নিয়ে আদর্শবাদীতার মুখোশ পরে বুর্জোয়া সমাজের স্বাভাবিক নৈতিকস্খলন বলে নাক সিটকান তারাই লাল বইয়ের পাতা বন্ধ করে নারী কমরেডদের নিয়ে আশ্রম খুলে শয্যা পেতেছেন।

বিয়ের পিঁড়িতে বসা দূরে থাক, ভালবাসার স্বীকৃতিও দেননি। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত দীর্ঘদিন লিভটুগেদার করেছেন। এসব নিয়ে দলের ভিতর তাত্ত্বিক সংগ্রাম শুরু হয়েছে। সামনে ভাঙনের পালা। বাসদ ’৮০ সালে অতিবিপ্লব ও ত্যাগের মহিমায় জাসদ ভেঙে গঠিত হয়েছিল।

কিন্তু তিন বছর পার না হতেই বাসদ আবারো প্রেম-প্রীতি নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ তুলে ভেঙে যায় ’৮৩ সালে। একদিকে আফম মাহবুবুল হক, মইনুদ্দিন খান বাদল আর মাহমুদুর রহমান মান্না। অন্যদিকে খালেকুজ্জামান, আব্দুল্লাহ সরকার, মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ও শুভ্রাংশু চক্রবর্তীরা ব্রাকেটবন্দি হন। প্রথম অংশটি প্রায় বিলুপ্ত। দুর্ঘটনায় অসুস্থ এবং কানাডায় বসবাস শুরু করেন আফম মাহবুব।

বাদল জাসদ ও মান্না যান আওয়ামী লীগে। এদিকে আব্দুলাহ সরকার, সাইফুর রহমান তপন বিবাহিত হলেও বিপ্লবের দোহাই দিয়ে খালেকুজ্জামান, মবিনুল হায়দার চৌধুরী, শুভ্রাংশ চক্রবর্তী, বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতনরা চিরকুমার থাকেন। দলকে সম্পত্তি দেয়ার মধ্যদিয়ে যেমন কাজ চলছে তেমনি বুর্জোয়া অর্থনীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও শেয়ার বাজারে টাকা বিনিয়োগের ঘটনাও ঘটেছে। বিপ্লবী সংগঠন মার্কসবাদী-লেলিনবাদী সে­াগান তুললেও ২৭ বছরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে একটি সংগঠন দাঁড় করাতে পারেনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ছাত্রসংগঠনÑ ছাত্রফ্রন্ট একসময় শক্তিশালী হলেও এখন সে অবস্থানে নেই।

গত বছর দলের কনভেনশনে খালেকুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক ও ৭ জনকে সদস্য করা হয়। ৭ জনের মধ্যে ’৭৯ সালের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ সরকার ও সাইফুর রহমান তপন আছেন। এই দুজন দল থেকে বিদায় নিয়ে সবস্তরের নেতাকর্মীর কাছে নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ করেন। সাইফুর রহমান তপনের বক্তব্য ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাসদ একটি অদ্ভুত দল। এখানে এক ব্যক্তিরÑ মানে খালেকুজ্জামানের ইচ্ছায় দল চলে।

কোনো আলোচনা ছাড়া তিনি সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয়ে পার্টিতে কথা বলেন তপন। খালেকুজ্জামানের বিরুদ্ধে পার্টির এক নারী নেত্রীর সঙ্গে বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাকে মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়। মুবিন তাকে তদন্তের আশ্বাস দিলেও তা হয়নি। তপন এবং আব্দুল্লাহ সরকারের পদত্যাগ এবং তাদের অভিযোগ নিয়ে দল মুবিনুল হায়দারের নামে ‘দলত্যাগীদের কুৎসা ও অপপ্রচারের জবাব’ শিরোনামে দীর্ঘ বুকলেট ছেপে বিলি করে।

এর জবাবে আব্দুল্লাহ সরকার ও তপন ‘কথিত কুৎসা ও অপপ্রচারের অভিযোগ প্রসঙ্গে’ আরেকটি বুকলেট বিলি করেন। এতে বলা হয় দলে ‘খোলামেলা’ আলোচনার পরিবেশ না থাকায় ৩০ বছরে কয়েক হাজার কর্মী ঝরে যায়। অভিযোগ করা হয়েছে কমরেড খালেকুজ্জামান পার্টির এক নারী কমরেডÑ ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষিকার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে ৫ বছর স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করেছেন। এতে তিনি তিন ধরনের অপরাধ করেছেন। পার্টির নিয়মে কারো প্রতি প্রেমভাব জাগলে পার্টিকে জানাতে হবে।

তিনি তা করেননি। পার্টিতে বিবাহবহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ। তিনি তা লঙ্ঘন করেছেন। তিনি মেয়েটির সঙ্গে প্রতারণা করে রাষ্ট্রীয় আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন। বলা হয়Ñ গত বছর ৩০ জুন কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় জামান বলেছিলেন তিনি এ নিয়ে পল্টনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারবেন।

অথচ ৪ জুলাইয়ের কর্মিসভায় ওই মেয়েটি থাকলেও তা আলোচনা করা হয়নি। আমাদের সময় মেয়েটির সঙ্গে কথা বললে তিনি মিডিয়ায় তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বুকলেটে যে কথা বলা হয়েছে তা সত্য। এটা নিয়ে পার্টিতে সংগ্রাম চলছে। এ নিয়ে মিডিয়ায় কথা বলার সময় হয়নি। জানা যায়Ñ দলের নেত্রী তাহেরা বেগম জলির বাসায় হামলা হয়েছে তার জামাতার তৈরি একটি কার্টুনকে ঘিরে।

আরো অভিযোগ উঠেছে আনবিক শক্তি কমিশনের এক বিজ্ঞানী ও দলের নারী কমরেডের সঙ্গে মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর প্রণয় চলছে। মুবিনের বয়স ৭৭, প্রেমিকা ৪০-এর কোঠায়। ষাটোর্ধ জামানের লিভটুগেদার পার্টনারের বয়স ৩০-এর কোঠায়। জামানের সঙ্গে বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক যুদ্ধাপরাধীর কন্যার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বলে ইঙ্গিত করা হয়। জানা যায়, জীবনের সবক্ষেত্রে মার্কসবাদের চর্চার কথা বলে বিয়ে, প্রেমবিরোধী বাসদ নেতারা বিয়ে না করে এক সঙ্গে মেস করে থাকার রেওয়াজ চালু করেন।

দলের কার্যালয় ছাড়াও নিজস্ব দুটি ফ্ল্যাটে রয়েছে মেস। এছাড়া সারাদেশেই পুরুষ ও নারী কমরেডদের আলাদা মেস আছে। দলের কর্মীরা বলছেন, বিপ্লবী পার্টির চরিত্র খুইয়ে নেতারা একধরনের আধ্যাত্মিক ভঙ্গিমায় আশ্রম খুলে বসেছেন। বছরে একবার কর্মী জলসা হচ্ছে। সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন চোখে নিয়ে আসা তরুণ-তরুণীরা ঠকছেন।

এসব নিয়ে পার্টিতে এখন স্ট্রাগল চলছে। সব অভিযোগ নিয়ে বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমাদের সময়কে বলেন, তার নিজস্ব কোনো বক্তব্য নেই, দলের বুকলেটের বক্তব্যই তার বক্তব্য। বুকলেটে বলা হয়েছে, তপন কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্পর্কে বলছেনÑ কেন্দ্রীয় নেতারা বিয়ে করেননি, কিন্তু প্রায় সবাই এক্সক্লুসিভ নারী সম্পর্কে চর্চা করেন। বিষয়টি উপস্থাপনার ঢঙ এবং কিছু নাম যুক্ত করে জনমানসে এটাকে কেন্দ্র করে পশ্চাদপদ ধ্যান-ধারণায় সুড়সুড়ি দেয়ার কাজটিই সামনে রাখা হয়েছে। জৈবিক চাহিদার বাইরে নারী-পুরুষের মেলামেশা থাকতে পারে না, যৌথ কর্মপ্রয়াস থাকতে পারে না, প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ পরাস্ত করার ক্ষমতা মানুষ রাখে না এটা আদিম ভাবনা।

এটা সাংস্কৃতিক সংকট। যঃঃঢ়://িি.িধসধফবৎংযড়সড়ু১.পড়স/পড়হঃবহঃ/২০১০/১২/০৬/হবংি০৩৬৩.যঃস

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.