আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দখল-বাণিজ্য জমজমাট



ক্ষমতার অপব্যবহার করে দখল বাণিজ্য জমাট হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পাহাড় কেটে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছেন এক আ’লীগ নেতা। অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরিশালে পিডিবির সেবাকেন্দ্র দখল করে শ্রমিক লীগের অফিস বানানো হয়েছে। জামালপুর, জেলার সরিষাবাড়ীতে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা।

নাটোরের সিংড়ার পল্লীতে এক বিধবার জমি দখলের চেষ্টা করছে ভূমিদস্যুরা। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা : চকরিয়া (কক্সবাজার) : তিনি আওয়ামী লীগের বড় নেতা তাই পাহাড় কাটলেও তার নামে মামলা হবে না। গত দুই মাস আগে ওই নেতাই স্থানীয় একটি পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তার বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার উত্তর হারবাং আজিজনগর এলাকার পরিবেশ সচেতন মহল। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে গত বছর বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকায় ভয়াবহ পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৫ জনসহ ১০ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানির পরও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নতুন করে পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে আজিজনগরে পাহাড় কাটার এ মহোত্সব অব্যাহত থাকায় বর্তমানে ওইসব পাহাড়ের ঢালুতে বসবাসরত অন্তত শতাধিক পরিবার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) হারুনর রশিদ বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের। এছাড়া পাহাড়টি বন বিভাগের নয়। এটি জেলা প্রশাসনের। তাই এ ব্যাপারে আমাদের করার কিছুই নেই। পাহাড় কাটার বিষয়ে স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মহলের দেয়া লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, অভিযোগ পেয়েই জড়িতদের নোটিশ দেয়া হয়েছে।

তারা এ নিয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় প্রাথমিকভাবে পাহাড় কাটায় জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে। পাহাড় কাটায় নিজের সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আজিজনগর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, পাহাড়টি তার মালিকানাধীন। স্থানীয় তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসাটি জরাজীর্ণ হওয়ায় এটি ওই জায়গায় নিতেই পাহাড়টি কাটা হয়েছে। বরিশাল : দখল প্রক্রিয়ায় এবার ক্ষমতাসীন দলের পিডিবির সেবাকেন্দ্র দখল করে শ্রমিক লীগের অফিস বানানো হলো।

সোমবার এ দখলের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, ওজোপাডিকো বিদ্যুত্ শ্রমিক কর্মচারী লীগ (বি-২১৩৫) বরিশাল বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরের নেতৃত্বে সোমবার বেলা ১১টায় একদল শ্রমিক হঠাত্ করে আমানতগঞ্জের পিডিবির সেবাকেন্দ্রটি দখল করে তাদের শ্রমিক লীগের অফিস বানায়। মুহূর্তেই সেখানে দেয়াল লিখন, সাইনবোর্ড সেঁটে দেয়াসহ বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টানানো হয়। এ সময় পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী বাধা দিলেও তা মানা হয়নি। এ ঘটনায় একই দলীয় ওজোপাডিকো বিদ্যুত্ শ্রমিক-কর্মচারী লীগের অপর গ্রুপ (বি-২১৩৮) ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

তাদের মতে, ওরা আ’লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে চলেছে। এরা দলের মূল স্রোতের কেউ নয়। তারা দাবি করেন, পিডিবির সেবাকেন্দ্র দখল করে রাজনৈতিক অফিস বানানোর ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী এটিএম তারেকুল ইসলাম জানান, সেবাকেন্দ্র দখল করে শ্রমিক লীগের অফিস করতে তাদের বাধা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বাধা না মেনে তারা শ্রমিক লীগের নামে দেয়াল লিখন ও ছবি টানিয়েছে।

এ ব্যাপারে শ্রমিক-কর্মচারী লীগ (বি-২১৩৮) গ্রুপের বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, আগে বিদ্যুত্ শ্রমিক লীগের একটিই সংগঠন ছিল। এখন ভেঙে দুটি হয়েছে। অপরদিকে দখলকারী বিদ্যুত্ শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, এর আগে শ্রমিক লীগের অপর গ্রুপটি সেবাকেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় তাদের অফিস বানায়। তখন এখানকার পিডিবির দায়িত্বরতদের দখলবাজদের তুলে দেয়ার জন্য বলা হয়। অথবা তাদেরও অফিস দেয়ার দাবি জানানো হয়।

তিনি বলেন, নিচতলার কক্ষটি খালি থাকায় সেখানে বসার চিন্তা-ভাবনায় শুধু দেয়াল লিখন, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টানানো হয়েছে। তাদের অফিসের ব্যবস্থা করে দেয়া হলে এটি ছেড়ে দেয়া হবে। সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবি) নামে রেকর্ডীয় এবং মালিকানাধীন জমি কোনোভাবেই লিজ প্রদান করা যাবে না এ ধরনের আইন থাকলেও সরিষাবাড়ী বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের পাঁচ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা সরিষাবাড়ী বিদ্যুত্ সরবরাহের আওতাধীন কৃষিজমি ও পুকুর দখল করে চাষাবাদ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আবুল হোসেন নামের শ্রমিক লীগ নেতা পিডিবির জমি দখল করেন বলে জানা গেছে।

গত এপ্রিলে সরিষাবাড়ীর বিউবোর কয়েক কর্মচারী ঢাকা বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের সিএসওটু চেয়ারম্যানের কাছে অবৈধ দখলদারের হাত থেকে জমি এবং পুকুর দখলমুক্ত করার আবেদন জানান। আবেদনে জানানো হয়, সরিষাবাড়ী বিদ্যুত্ সরবরাহের আওতাধীন উপকেন্দ্রের সংরক্ষিত এলাকার পাঁচ একর কৃষিজমি ও একটি বিশাল পুকুর স্থানীয় বহিরাগত লোক জমিতে ধান, শাকসবজি ও পুকুরে মাছ চাষের আবাদ করে আসছে। এমনকি সেই পুকুরপাড়ে একটি অবৈধ সেচ পাম্প বসানো হয়। জমির চাষাবাদ দেখাশোনার জন্য ঘর তোলা হয়। সংরক্ষিত এলাকায় এসব নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের ফলে ওই এলাকার নিরাপত্তা সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।