আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্লাউড কমপিউটিং



গত দুই-তিন বছর ধরে ক্লাউড কমপিউটিং নিয়ে অনেক কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে এবং বলা হচ্ছে, আগামী দিনের কমপিউটিং হবে মূলত ক্লাউডনির্ভর। এর ভবিষ্যত সম্ভাবনা উপলব্ধি করে মাইক্রোসফট, গুগল, আমাজন, আইবিএম, এইচপি ও ডেলের মতো বড় বড় টেকনোলজি কোম্পানি এ খাতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করছে এবং চেষ্টা করছে সেরা হবার। ক্লাউড কমপিউটিং ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে মোটামুটি শুরু হয়ে গেছে এবং সেখানে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এটি কমপিউটার ও ইন্টারনেটে পুরো প্রযুক্তিগত এক ধরনের পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্লাউড কমপিউটিং কি? ক্লাউড কমপিউটিং নিয়ে কোনো সর্বসাধারণ স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। তবে মোটামুটি ধারণাটা হচ্ছে এইরকম- আপনি একটি সাধারণ মানের কমপিউটার নিয়ে কাজ করবেন এবং যাতে প্রসেসর, কীবোর্ড, মনিটর এবং র্যাাম থাকবে।

হার্ড ড্রাইভ, সিডি ড্রাইভ ও ডিভিডি ড্রাইভ না থাকলেও চলবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি কেন্দ্রীয় সুপার কমপিউটারের সাথে আপনার কমপিউটারটি সংযুক্ত থাকবে এবং আপনার সব ধরনের ফাইল ও প্রোগ্রাম সেই সুপার কমপিউটারে থাকবে এবং আপনি আপনার প্রয়োজনমতো কাজ করবেন। এটি হলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের উদাহরণ। কোম্পানি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অফিসের ক্ষেত্রে ধারণাটা একটু ভিন্ন রকমের। বর্তমানে বড় বড় কোম্পানি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কমপিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করে থাকে এবং সেগুলো দেখাশোনার জন্য অনেক লোকজনের দরকার হয়।

সত্যি বলতে কি আমেরিকার বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে যেই প্রযুক্তিতে কোম্পানি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তথ্যপ্রযুক্তির বাজেট ব্যয় করে তাতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ খরচই হয় অনুৎপাদনশীল খাতে। অর্থাৎ অন্য কথায় বলতে গেলে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অর্থই ব্যয় হয় এমনভাবে যাতে করে একটি কোম্পানি বা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সরাসরি কোনো উপকার হয় না বা উৎপাদন বাড়ে না। ক্লাউড কমপিউটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে কোনো কোম্পানির ডাটা গুগল বা মাইক্রোসফটের মতো বড় বড় কোম্পানির সার্ভারে থাকবে এবং সেখান থেকে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রয়োজনমতো ব্যবহার করবে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়ে। এতে করে অনেক অর্থ ও সময় বাঁচবে। ক্লাউড কমপিউটিংয়ের ধারণাটি পুরনো হলেও ইদানীং তার বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এ দীর্ঘ সময় ক্ষেপণের কারণ পাঁচ-ছয় বছর আগেও খুব উন্নত গতির ইন্টারনেট ছিল না। পাবলিক, প্রাইভেট ও হাইব্রিড ক্লাউড ক্লাউড কমপিউটিং স্থাপন করার কৌশলের ওপর নির্ভর করে তিন ধরনের ক্লাউড কমপিউটিংয়ের দেখা মেলে। পাবলিক ক্লাউড বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং এটিই মূলধারার ক্লাউড। মূলত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটের মাধ্যমে জায়গা ও অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করে থাকে এবং ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যে নামমাত্র মূল্যে অথবা যতটুকু ব্যবহার করছেন সে পরিমাণ অর্থ খরচ করে তা ব্যবহার করবেন। পাবলিক ক্লাউডের সফল দুটি উদাহরণ হচ্ছে- আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস এবং গুগল অ্যাপস।

প্রাইভেট ক্লাউডের একটি বড় অসুবিধা হলো, এর জন্য একটি কোম্পানিকে ভালো অর্থ খরচ করতে হয়। প্রাইভেট ক্লাউডের ডাটা সেন্টার কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তার বিনিময়ে কোম্পানিটি তাদের ডাটার ওপর প্রায় পুরো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। হাইব্রিড হলো এ দুয়ের সংমিশ্রণ। সেবার ধরন অনুযায়ী শ্রেণীবিন্যাস ক্লাউড কমপিউটিং সেবাদানকারী কোম্পানিগুলো মূলত তিন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে : ইনফ্রাস্ট্রাকচার এজ অ্যা সার্ভিস (IaaS) : এতে ব্যবহারকারী কোম্পানিকে সার্ভার, নেটওয়ার্কিং যন্ত্রপাতি, স্টোরেজ সরঞ্জামের ওপর বলতে গেলে তেমন অর্থ খরচ বা বিনিয়োগ করতে হয় না ও এসবের দায়িত্ব নেয় ক্লাউড সার্ভিস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান. Amazon EC2 ইনফ্রাস্ট্রাকচার এজ অ্যা সার্ভিসের একটি ভালো উদাহরণ। প্লাটফরম এজ অ্যা সার্ভিস : এতে ক্লাউড সেবাদানকারী কোম্পানি একটি প্লাটফর্মের ব্যবস্থা করে ব্যবহারকারীর জন্য।

গুগল Gc ইঞ্জিন ও Force.com হচ্ছে এমন দুটি উদাহরণ। সফটওয়্যার এজ অ্যা সার্ভিস (SaaS) : এতে ক্লাউড সেবাদানকারী কোম্পানি ইন্টারনেটে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করার সুবিধা দিয়ে থাকে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো গুগল ডকস। গভর্নমেন্ট ক্লাউড গভর্নমেন্ট ক্লাউড বা সরকারি পর্যায়ে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের ব্যবহারের ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্রে এখন খুব জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এর সমর্থক যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি অনেকেই এ ব্যাপারে বেশ চিন্তিত।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি পর্যায়ে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত বাজেট প্রায় ৭৬ বিলিয়ন ডলার এবং কয়েক বছরের মধ্যে তা ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে এটি একটি বিশাল বাজার এবং সরকার যেহেতু জনগণের পয়সায় চলে তাই সরকারি কাজে খরচ কমানোর জন্য সব সময় এক ধরনের চাপ থাকে। ক্লাউড কমপিউটিংয়ের সুবিধা নিলে সরকারি কাজে খরচ যেমনি কমবে, ঠিক তেমনি কাজের গতিশীলতাও আসবে। তবে সরকারি তথ্য বা ডাটা বেসরকারি কোম্পানির সার্ভারে রাখা কতটা যুক্তিসঙ্গত এবং এর ঝুঁকি কিভাবে মোকাবেলা করা যায় এসব নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে। সরকারি পর্যায়ে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুগল ইতোমধ্যে অনেক এগিয়ে গেছে।

২০০৯ সালে গুগল এ ব্যাপারে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয় এবং ২০১০-এর জুলাই মাসের ২৬ তারিখে Google Apps for Government নামে নতুন একটি সেবা দেবার কথা ঘোষণা করে। এটি হচ্ছে গুগল অ্যাপসের একটি এডিশন, যার মাধ্যমে সরকারের সব তথ্য আলাদা সার্ভারে রাখা হবে এবং যার সাথে কোনো কোম্পানির তথ্য বা ব্যক্তিগত তথ্যের সম্পর্ক থাকবে না। এভাবে গুগল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাগুলোকে তাদের ডাটার নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে এবং ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গরাজ্য তাদের তথ্যপ্রযুক্তিসংক্রান্ত সাহায্যের জন্য গুগলের দারস্থ হয়েছে। গুগল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাগুলোকে যে শুধু সরকারি কাজে সাহায্য করছে তা নয়, শিক্ষার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছে। এজন্য গুগল অ্যাপসের একটি এডুকেশন এডিশন বা শিক্ষামূলক এডিশন রয়েছে।

গুগল অ্যাপস বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুলগুলোর জন্য ছাড়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা যোগাযোগ, কোলাবরেশন করতে পারছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যদি সফলভাবে ক্লাউড কমপিউটিং ব্যবহার করতে পারে, তবে তা অন্যান্য সরকারের জন্য একটি অনুকরণীয় মডেলে পরিণত হবে অচিরেই। ক্লাউড কমপিউটিংয়ে রাতারাতি সব কিছু চলে যাবে এমনটা কেউ মনে করছেন না। এটি একটি নতুন প্রযুক্তি এবং গুগলের সিইও এরিক স্মিট ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, ১০ থেকে ২০ বছর লাগবে বড় বড় কোম্পানি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্লাউড কমপিউটিং সম্পর্কে পূর্ণ আস্থা আনার জন্য। আইবিএম ও মাইক্রোসফটও গভর্নমেন্ট ক্লাউড বা সরকারি ক্লাউডের দিকে ঝুঁকছে এবং এ ব্যাপারে তারা বেশ জোরেশোরে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

মাইক্রোসফট এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের সরকারকে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য চেষ্টা করছে। কিছু ওয়েবসাইট গুগল : code.google.com/appengine/ , http://www.google.com/apps/ মাইক্রোসফট : microsoft.com/windowsazure/ আইবিএম : ibm.com/ibm/cloud/ আমাজন : http://aws.amazon.com/ সেলসফোর্স ডট কম : salesforce.com , http://force.com/ এইচপি : Click This Link ডেল : Click This Link কেন ক্লাউড কমপিউটিং আগামীতে আমাদের সবাইকে ক্লাউড কমপিউটিংয়ে ধাবিত হতে হবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুবিধার জন্য। চিন্তা করুন বিদ্যুতের কথা। একশ’ বছর আগে যখন বিদ্যুৎ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া শুরু করে, তখন প্রায় প্রতিটি কোম্পানিকেই আলাদা করে নিজেদের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হতো। পরে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটে যখন গ্রিড প্রযুক্তির বিদ্যুৎ ব্যবহারের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়।

ধরা যাক, আপনি কোনো একটি তৈরি পোশাক কারখানার মালিক এবং আপনার প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক হাজার কর্মচারী কাজ করে। তাদের জন্য যে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে তা কিন্তু আপনি উৎপাদন করেন না বরং তা সরকারিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয়ভাবে পাঠানো হয় এবং আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে আবার সেই বিদ্যুৎ নিজেরা নিয়ে থাকি। কিন্তু তা না করে যদি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ব্যবহার করতো, তাহলে একদিকে খরচ যেমন বেশি লাগতো, তেমনি অন্যদিকে অনেক ঝামেলা হতো। তৈরি পোশাক কারখানার যারা মালিক স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাদের কোনো দক্ষতা নেই। ক্লাউড কমপিউটিংয়ের ধারণা অনেকটা সেই ধরনেরই।

মাইক্রোসফট, গুগল, আইবিএমের মতো বড় বড় কোম্পানি বড় বড় ডাটা সেন্টার বানাচ্ছে এবং সেখানে সব ধরনের সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম থাকবে এবং বিভিন্ন কোম্পানি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান তা তাদের প্রয়োজনমতো ব্যবহার করবে। ভাবুন গুগল ডট কমের মতো একটি ওয়েবসাইটের, যেখানে প্রতিদিন সারাবিশ্ব থেকে কয়েক কোটি লোক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সার্চ করছে। এমন একটি বড় ওয়েবসাইট চালানো সত্যিই খুব কঠিন কাজ। কিন্তু গুগল সেই কাজ সাফল্যের সাথে বছরের পর বছর করে যাচ্ছে কোনো সমস্যা ছাড়াই। আমাজন ডট কমে প্রতিদিন লাখ লাখ লোক ঢুকে বিভিন্ন পণ্য যাচাই করে কেনাকাটা করছে।

গুগল বা আমাজনের রয়েছে লাখ লাখ লোকের ইন্টারনেট ব্যবহারের ধাক্কা সামলানোর ভালো অভিজ্ঞতা। তারা তাদের এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সরকার ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সে ধরনের সেবা দিতে চায়। এতে কোম্পানিগুলো যেমন খরচ, সময় ও ঝামেলা কমাতে পারবে ঠিক তেমনি গুগল, আইবিএম বা মাইক্রোসফট কোম্পানিগুলো ক্লাউড কমপিউটিংয়ের মাধ্যমে আরো বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবে। বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে তো বটেই এমনকি বাংলাদেশেরও বেশিরভাগ কোম্পানিরই তথ্যপ্রযুক্তি বা কমপিউটারসংক্রান্ত ঝামেলা পোহাতে হয়। হার্ডওয়্যার নষ্ট হয়ে যাওয়া, সফটওয়্যার আপডেট করা, ডাটা ঠিকমতো রাখা, ডাটা হারিয়ে যাওয়া, ই-মেইল দেখাশোনা করা, ওয়েবসাইট দেখাশোনা করা ইত্যাদি নিয়ে প্রায় প্রতিটি কোম্পানিরই সবসময় কোনো না কোনো ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়।

ক্লাউড কমপিউটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই ঝামেলার একটা বড় অংশকে আউটসোর্স করে দেয়া যাতে করে কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবসায়ের দিকে আরো বেশি মনোযোগ দিতে পারে এবং গুগল বা আইবিএমের মতো কোম্পানিগুলো যারা কমপিউটার খাতের কাজে পারদর্শী তারা তাদের কাজে আরো সেবা দিয়ে ব্যবসায় বাড়াতে পারে। এভাবে এটি দু’পক্ষের জন্যই লাভজনক হতে পারে। এই মুহূর্তে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের বাজার খুব একটা বড় নয়, কিন্তু আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তা ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্লাউড কমপিউটিংয়ের সমস্যা ক্লাউড কমপিউটিং নিয়ে কিছু উদ্বেগও রয়েছে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে- এটি একটি নতুন প্রযুক্তি এবং এখন পর্যন্ত এর সুবিধাগুলো পুরোপুরি শতভাগ প্রমাণিত নয়।

নতুন যেকোনো কিছু নিয়ে উদ্বেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই চিন্তিত তা হচ্ছে সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা। যখন আমার কোম্পানির তথ্য আমার সার্ভারে থাকছে, তখন আমি এর সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু যখন এটি গুগল অথবা আমাজনের সার্ভারে চলে যাচ্ছে, তখন এর নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আশার কথা, বড় বড় কোম্পানি যারা ক্লাউড কমপিউটিংয়ের ডাটা সেন্টারগুলো তৈরি করছে, তারা এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন।

কেননা, কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের ব্যবসায়ের জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে। ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের তথ্যের প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা নিয়েও চিন্তা অনেকের। বিশেষ করে প্রায় প্রতিটি দেশের সরকারের কাছেই প্রতিটি নাগরিকের জন্মতারিখ, সবসময় না হলেও প্রায়শই হাতের আঙ্গুলের ছাপ, যারা ট্যাক্স বা কর দিচ্ছেন তাদের করসংক্রান্ত তথ্যে এগুলো জমা থাকে। কিন্তু যদি সরকারি সংস্থাগুলো এই ধরনের ডাটাকে ক্লাউড কমপিউটিংয়ে আউটসোর্স করে দেয়, তাহলে গোপনীয়তা ভঙ্গের একটা ভয় নাগরিকদের মনে আসতেই পারে। নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার এই দুটি বিষয় শুধু নাগরিকদের নয়, সবারই।

আর একটি ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, যদি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় তখন খুব বড় ধরনের অসুবিধা হতে পারে সবার জন্যই। যেমন- একটি ডাটা সেন্টার কোনো সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের শিকার হলো বা ভূমিকম্প বা অন্য কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে গেলো, তখন ওইখানে যে ডাটা রয়েছে তার কি হবে। এ ব্যাপারে অবশ্য বড় বড় কোম্পানি ভোক্তাদের আশ্বস্ত করছে, এসব ডাটার ব্যাকআপ আরো কয়েক জায়গায় রাখা হচ্ছে বা হবে। ক্লাউড কমপিউটিং একটি নতুন প্রযুক্তি বলে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে এই সংক্রান্ত কোনো সুনির্দিষ্ট আইন গড়ে ওঠেনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেরও বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন রকমের আইনগত পার্থক্য রয়েছে।

তাই বাংলাদেশের একটি কোম্পানি যদি তার সব ডাটা আমেরিকার কোনো কোম্পানির সার্ভারে পাঠিয়ে দেয় এবং তখন কোনো রকম আইনগত সমস্যা দেখা দেয় তবে সে সমস্যার নিষ্পত্তি বাংলাদেশের আইনে হবে নাকি যুক্তরাষ্ট্রের আইনে হবে এটি ভেবে দেখার মতো বিষয়। আশা করা যায়, এ ব্যাপারটির সমাধান আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হয়ে যাবে। কেননা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সরকারই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ক্লাউড কমপিউটিং নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। উপরে যেসব উদ্বেগের বা সমস্যার কথা বলা হলো সেগুলো প্রতিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ক্লাউড কমপিউটিংয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায়ও নেই।

কারণ ক্লাউড কমপিউটিং একদিকে যেমন খরচ কমাবে ঠিক অন্যদিকে ঝামেলাও কমিয়ে দেবে। তাই প্রতিটা কোম্পানি আস্তে আস্তে এই দিকটাতে চলে যাবে। ওয়েব হোস্টিং ইন্ডাস্ট্রিতে ক্লাউড কমপিউটিং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে সারাবিশ্বে। বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে হয়তো জনসংখ্যার বড়জোর এক বা দুই শতাংশ প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্রাউজ করছে।

কিন্তু আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে হয়তো জনসংখার ১০/২০ শতাংশ প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করবে। এশিয়া-আফ্রিকাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না এমন লোকের সংখা অনেক, কিন্তু আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অনেকেই সংযুক্ত হবেন। তাই স্বভাবতই নিত্যনতুন ওয়েবসাইট তৈরি হবে এবং পুরনো ওয়েবসাইটগুলোর ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে, এজন্য আস্তে আস্তে ওয়েব হোস্টিংয়ের যে বাজার তা অনেক বিস্তৃত হবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে প্রথাগত ওয়েব হোস্টিংয়ের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে এই, হঠাৎ করে আপনার ওয়েবসাইটে যদি এক ঘণ্টা বা আধা ঘণ্টার মধ্যে হাজার হাজার লোক ভিজিট করতে আসে, প্রায়শই সার্ভার সমস্যা দেখা দেয় এবং ক্র্যাশ করতে পারে। এর সমাধান হচ্ছে ডেডিকেটেড হোস্টিং বা ডেডিকেটেড সার্ভার নেয়া, যা খুবই ব্যয়বহুল।

বাংলাদেশের এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল যে ওয়েবসাইটে দেয়া হয় সেই প্রসঙ্গটাই আনা যাক। সারা বছর এই ওয়েবসাইটে খুব বেশি লোকজন ভিজিট করেন না। কিন্তু যেদিন এসএসসি বা এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হয় সেদিন হাজার হাজার লোক তাদের নিজেদের এবং আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের পরীক্ষার ফল জানার জন্য এই ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করেন। এক সাথে এত লোক এ সাইটে ভিজিট করায় সাইটটি খুবই †¯­v হয়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা অনেক ওয়েবসাইটকেই সম্মুখীন হতে হয়।

যেহেতু ডেডিকেটেড সার্ভার খুবই ব্যয়বহুল এবং বছরের বেশিরভাগ সময় যদি তেমন ভিজিটর না আসে, সেক্ষেত্রে ক্লাউড হোস্টিং হচ্ছে সবচেয়ে ভালো সমাধান। আবার সেই বিদ্যুতের উদাহরণটাই আনতে হচ্ছে প্রাসঙ্গিকভাবে। আমরা গরমকালে অনেক বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করি এবং শীতকালে অনেক কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। কিন্তু জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ থাকার ফলে আমরা যতটুকু ব্যবহার করি ঠিক তত ইউনিটের জন্যই আমাদেরকে অর্থ খরচ করতে হয়। ক্লাউড হোস্টিংয়ের কনসেপ্টটা ঠিক ওই রকমই।

বড় বড় হোস্টিং কোম্পানি ক্লাউড হোস্টিংয়ে চলে গেলে ক্লাউড হোস্টিংয়ে যেটা হবে তা হচ্ছে আপনি যতটুকু স্পেস বা জায়গা এবং ব্যান্ডইউডথ ও সিপিইউ পাওয়ার ব্যবহার করবেন ঠিক সেই পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে। তবে এ কথাও বলে রাখা উচিত, ক্লাউড হোস্টিং এখনো সম্পূর্ণ একটি নতুন ধারণা এবং এটি এখনো কিছুটা ব্যয়বহুল। কিন্তু আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ক্লাউড হোস্টিংয়ের খরচ অনেক কমে আসবে এবং হঠাৎ করে আপনার ওয়েবসাইটে হাজার হাজার লোক ভিজিট করতে আসলেও কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না বা খুব বেশি খরচ করতে হবে না। কয়েকটি কোম্পানি ইতোমধ্যেই ক্লাউড হোস্টিংয়ের সুবিধা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং এদের মধ্যে http://www.rackspacecloud.com/-এর কথা সবার আগে বলতে হয়। ক্লাউড কমপিউটিংয়ের কিছু পরিসংখ্যান বাজারের আকার ২০০৮ : ৳৪৬.৪১ বিলিয়ন ২০০৯ : ৳৫৬.৩০ বিলিয়ন ২০১৩ : ৳১৫০.১ বিলিয়ন (আনুমানিক) (সূত্র : gorumors.com/crunchies/ cloud-computing-growth-forecast/) ২০১০ সালের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হবে ক্লাউড কমপিউটিং।

(সূত্র : news.cnet.com/8301-30685_3-10378782-264.html?part=rss&subj;= news&tag=2547-1_3-0-20) মেরিল লিনচের ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে ২০১১ সালে এর বাজারের আকার দাঁড়াবে ১৬০ বিলিয়ন ডলার। (সূত্র : readwriteweb.com/enterprise/ 2009/11/merrill-lynch-cloud-computing. php ) এমাই পার্টনার্সের মতে, ২০১৪ সাল নাগাদ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় ক্লাউড কমপিউটিংয়ের বাজার দাঁড়াবে ১০০ বিলিয়ন ডলার। (সূত্র : Click This Link ) বর্তমানে সারাবিশ্বে ফিজিক্যাল সার্ভারের সংখ্যা ৫ কোটির মতো এবং ২০১৩ সাল নাগাদ ৬০% সার্ভারের কাজ ক্লাউডে পাঠিয়ে দেয়া হবে (ভার্চুয়ালাইজেশন)। সারাবিশ্বে প্রায় ৮ মিলিয়ন সার্ভার প্রতিবছর বিক্রি হয় এবং তার প্রায় অর্ধেক ডাটা সেন্টারের জন্য কেনা হয়। (সূত্র : elasticvapor.com/2010/05/ cloud-computing-opportunity-by- numbers.html) সারাবিশ্বের ৫ কোটি সার্ভারের ২%-এর মালিক হলো গুগল অর্থাৎ গুগলের প্রায় ১০ লাখের মতো সার্ভার আছে।

(সূত্র : m.gizmodo.com/5517041/ googles-insane-number-of-servers-visualized) অর্থাৎ সার্ভারের জগতে কারো কোনো একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ নেই। গুগলের পরিকল্পনা হলো আগামী ১০ বছরে সার্ভারের সংখ্যা বর্তমানের ১০ লাখ থেকে ১ কোটিতে উন্নীত করা। মাইক্রোসফটও বসে নেই। কয়েক মাস আগে মাইক্রোসফটের সিইও স্টিভ বালমার এক ভাষণে বলেন, বর্তমানে মাইক্রোসফটের ৭০% জনবল ক্লাউড কমপিউটিংসংক্রান্ত প্রজেক্টে কাজ করছে এবং ২০১১ সালে এই সংখ্যা ৯০%-এ দাঁড়াবে। ভারতে ক্লাউড কমপিউটিং ভারতে ক্লাউড কমপিউটিং এখনো তেমন বিস্তার লাভ করেনি, তবে ধারণা করা হচ্ছে আগামী ৫ বছরের মধ্যে এর বাজার ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

মাইক্রোসফটের সিইও স্টিভ বালমার গত মে মাসে বলেছেন, সফটওয়্যার আউটসোর্সিংয়ের মতো ক্লাউড আউটসোর্সিংয়ে সাফল্য আসবে ভারতের এবং ধারণা করা হচ্ছে, এ খাতে আগামী ৫ বছরে ভারতে ৩ লাখ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভারতের বাজারে এখন মাইক্রোসফট ও গুগলের একটা তুমুল লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এ খাতে। মাইক্রোসফট ভারতে এজন্য এইচপির সাথে হাত মিলিয়েছে। ভারতের ইনফোসিস, টাটা, উইপ্রোর মতো বড় বড় আইটি কোম্পানি বসে নেই। তারা চেষ্টা করছে ক্লাউড কমপিউটিংনির্ভর প্রজেক্ট ধরতে।

ভারতে অবশ্য সরকারি পর্যায়ে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের দিকে উত্তরণ কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। তবে সাফল্যের গল্পও রয়েছে কিছু। পিসিকোয়েস্টের সেপ্টেম্বর সংখ্যায় এর সম্পাদক অনিল চোপড়া এমন একটি সফল উদাহরণের কথা উল্লেখ করেছেন। জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের ছোট প্রদেশগুলোর একটি (জনসংখা ১ কোটি) ও অপরদিকে মধ্যপ্রদেশের জনসংখা ৬ কোটি। মধ্যপ্রদেশের সরকারি ডাটা সেন্টারে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন তথ্য রাখা আছে এবং জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা মধ্যপ্রদেশের ডাটা সেন্টার ব্যবহার করে জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে বিভিন্ন আইটি সেবা দিচ্ছে।

ক্লাউড কমপিউটিং ওয়ার্ল্ড ফোরাম এশিয়া আগামী ১৭ ও ১৮ নভেম্বর ২০১০ হংকংয়ের দ্য মীরা হোটেলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তৃতীয় ক্লাউড কমপিউটিং ওয়ার্ল্ড ফোরাম এশিয়া সম্মেলন। একই সাথে কনফারেন্স ও প্রদর্শনী চলবে এবং বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি সেখানে উপস্থিত থাকছে। গুগল ও আমাজন এই সম্মেলনকে বেশ গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে : cloudcomputinglive.com/asia/ ওয়েবসাইটে। ক্লাউড কমপিউটিং ও স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ (এসএমই) ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর (এসএমই) জন্য ক্লাউড কমপিউটিং একটি আশীর্বাদ- একথা বললে অত্যুক্তি হবে না।

এসএমইদের মূলধন কম থাকে এবং অনেক সময় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেট নিয়ে টানাটানি পড়ে যায় ও ফলে উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ছোট বা মাঝারিমানের প্রতিষ্ঠানের জন্য কয়েক লাখ টাকা দিয়ে একটি সার্ভার কেনা অনেক সময়ে সম্ভব নয়। তাছাড়া সার্ভার কিনলেই হবে না, তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভালো বেতনে দক্ষ লোক রাখতে হবে, সফটওয়্যার কিনতে হবে, কর্মচারীদের জন্য ই-মেইলের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্লাউড কমপিউটিং এই খরচ ও ঝামেলা অনেকাংশে কমিয়ে এনে সেই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশেও এটা সম্ভব, তবে এজন্য এসএমই উদ্যোক্তা এবং তার কর্মচারীদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে।

উদ্যোক্তাদের দুটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে- প্রথমত, বাংলাদেশ সরকার আগামী ২০১১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর এবং আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে সরকারের অনেক সেবাই অনলাইনে চলে আসবে। তাই এসএমইগুলোকেও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে হলে কমপিউটারভিত্তিক সেবা দিতে হবে এবং ওয়েবসাইট ও ই-মেইলের ব্যবহার অনেক বাড়াতে হবে। ই-কমার্সের প্রসারের সাথে সাথে হয়তো এটি আপনাআপনিই হবে। বেশিরভাগ এসএমইর পক্ষে কমপিউটার সার্ভার, দামী সফটওয়্যার, ডাটাবেজ চালানোর জন্য খরচ ও লোকবলের জন্য বড় মাপের বাজেট রাখা সম্ভব হবে না। দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে তাহলো, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এসএমইগুলোর জন্য পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা অনেকাংশে দুরূহ ও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে (এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আরো পরে)।

তাই ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে ক্লাউডে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না। ক্লাউড কমপিউটিং ও পাইরেসি বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশ এবং কমপিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবহার এখানে এখনও অত্যন্ত সীমিত। এটা সত্যি, বিগত কয়েক বছরে আমাদের দেশে অনেক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গড়ে উঠেছে এবং অনেক ছাত্র এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কমপিউটার সায়েন্সের ওপর পড়ালেখা করাতে বিগত কয়েক বছরে ইন্টারনেট এবং কমপিউটার সম্পর্কে লোকজনের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তবে এটি এখনো বড় শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ। প্রথমেই আসা যাক সফটওয়্যারের কথায়।

বর্তমানে বাংলাদেশী কমপিউটার ব্যবহারকারীরা পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে অভ্যস্ত, যা খুবই সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আগামী তিন বছর পরে আমরা হয়তো একটি বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছি। ১৯৯৫ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন Trade In Intellectual Property Rights (TRIPS) চুক্তি প্রবর্তিত হয়। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো কিভাবে কপিরাইট আইন প্রবর্তন করবে তার বিশদ বিবরণ দেয়া হয়। ১৯৯৪ সালে এই চুক্তিটি তৈরি করা হয় এবং ১ জানুয়ারি ১৯৯৫ সাল থেকে এই চুক্তি প্রবর্তিত হয়।

এই চুক্তি অনুসারে ১৯৯৬ সাল থেকে উন্নত দেশগুলোতে, ২০০০ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে TRIPS চুক্তি অনুযায়ী কপিরাইট আইন প্রবর্তন করা হয়। Least Developed Countries (LDC) বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ২০০৬ সাল থেকে TRIPS চুক্তি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল, কিন্তু ২০০১ সালে এই চুক্তিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়, যার ফলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য এই চুক্তি প্রণয়নের সময়সীমা ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন প্রশ্ন হলো, ২০১৩ সালের পরে বাংলাদেশে TRIPS চুক্তি বাস্তবায়িত হলে কি হবে? এতে করে সফটওয়্যার পাইরেসির হার কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ আসবে। এখন আমাদের দেশে সবাই পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে, এমনকি বেশিরভাগ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু ২০১৩ সালের পর থেকে সাধারণ ব্যবহারকারী না হোক, অন্তত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়বে।

এখন পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করার ফলে আমরা কমপিউটার কেনার ক্ষেত্রে তেমন সমস্যার সম্মুখীন হই না, কিন্তু যদি আমাদের আসল সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করতে হয় তখন কমপিউটার অনেক ব্যয়বহুল হবে। এখন যেমন অনেক মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ লোক ও স্কুল-কলেজের ছাত্ররা সহজেই কমপিউটার কিনে ব্যবহার করতে পারছে তখন আর সেরকম অবস্থা থাকবে না এবং এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ক্লাউড কমপিউটিং। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ক্লাউড কমপিউটিং থেকে বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে লাভবান হতে পারে? ক্লাউড কমপিউটিং চালু হলে আমাদেরকে আসল সফটওয়্যার কেনা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কারণ, ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডারই আমাদেরকে যাবতীয় প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারের ব্যবস্থা করবে। বাংলাদেশে ক্লাউড কমপিউটিং বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশে ক্লাউড কমপিউটিং বাস্তবায়নে বেশ কিছু বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এ ব্যাপারে সচেতনতার অভাব। গুগলে ‘ladesh cloud computing’ দিয়ে সার্চ করলে কোনো তথ্যই আসে না। ইন্টারনেট গতি ও মূল্য দুটিই খুব বড় প্রতিবন্ধক হবে। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কেউ কেউ হয়তো ধনুক ভাঙ্গা পণ করে বসে আছেন, দরকার হলে সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইডথ পানিতে ফেলা হবে কিন্তু এদেশের মানুষকে স্বল্পমূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না। ব্যান্ডউইডথের দাম এক মেগাবিট যদি বর্তমানের প্রায় ১৮,০০০ টাকা থেকে ৭,০০০ টাকায় (১০০ ডলার) আনা হয়, তবে দেশের কি ক্ষতি হবে এটা সত্যিই বোধগম্য নয়।

উচ্চগতির ইন্টারনেট ছাড়া কোনমতেই ক্লাউড কমপিউটিং বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বিদ্যুতের সমস্যা বাংলাদেশে অত্যন্ত প্রকট এবং এ প্রসঙ্গে নতুন করে বলার কিছু নেই। বাংলাদেশে গুগল ও আমাজনের কোনো সরাসরি উপস্থিতি নেই। তবে আশা করা যায়, আমাদের ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর বাজারের জন্য হলেও অন্তত গুগল অচিরেই বাংলাদেশে আসবে। ক্লাউড কমপিউটিংয়ের ওপর এখন পর্যন্ত কোনো আইনের কথা শোনা যায়নি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের একটি প্রস্তাবিত মডেল বাংলাদেশে ক্লাউড কমপিউটিং প্রবর্তন করতে হলে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। এখানে তিন ধরনের প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে- একজন ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার, একজন কমপিউটার নির্মাতা এবং একজন ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আর এর সাথে বাংলাদেশ সরকারকে যুক্ত হতে হবে তার নিজের স্বার্থেই। ধরা যাক, এই ক্লাউড নির্মাতা হচ্ছে এক্স, সার্ভিস প্রোভাইডার হচ্ছে ওয়াই এবং ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হলো জেড।

কমপিউটার নির্মাতা এক্স একটি কমপিউটার নির্মাণ করবে। এটা ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, নোটবুক, নেটবুক অথবা ট্যাবলেট পিসি ইত্যাদি এবং এই কমপিউটারে ক্লাউড সার্ভিস প্রোভাইডার ওয়াই যাবতীয় সফটওয়্যার আগে থেকে ইনস্টল করে রাখবে এবং ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জেড এই কমপিউটারটি বাংলাদেশে অবস্থিত তাদের বিভিন্ন দোকান থেকে ভর্তুকি দিয়ে কম দামে বিক্রি করবে। এখানে শর্ত থাকবে যে, এই কমপিউটারটিতে আগামী দুই বা তিন বছরে ক্রেতা অন্য কোনো কোম্পানির সফটওয়্যার বা অন্য কোনো ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সংযোগ ব্যবহার করতে পারবে না। এই ব্যবস্থাকে ভর্তুকি ব্যবস্থা বলে এবং উন্নত দেশ যেমন আমেরিকাতে বড় বড় টেলিকম প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসায়িক মডেল ব্যবহার করে অত্যন্ত কম দামে ভোক্তাদের কাছে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট সংযোগসহ নেটবুক, নোটবুক ও ট্যাবলেট পিসি বিক্রি করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা এখানে অ্যাপল কোম্পানির বিখ্যাত আইফোনের কথা উল্লেখ করতে পারি।

আইফোন বর্তমানে আমেরিকাতে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোন এবং একটি আইফোন হ্যান্ডসেটের আসল দাম হলো ৬০০ ডলার। কিন্তু এটি পাওয়া যায় মাত্র ২০০ ডলারে। এটা কিভাবে সম্ভব? আমেরিকার বিখ্যাত টেলিকম প্রতিষ্ঠান এটিঅ্যান্ডটি আইফোন বিক্রি করে থাকে। আর কোনো প্রতিষ্ঠান আইফোন বিক্রি করতে পারে না। একজন ক্রেতাকে এটিঅ্যান্ডটি মাত্র ২০০ ডলারে আইফোন বিক্রি করে।

কিন্তু কেনার সময় এটিঅ্যান্ডটির সাথে উক্ত ক্রেতার দুই বছরের একটি চুক্তি সই করে নিতে হয়। এই দুই বছরের মধ্যে উক্ত ক্রেতা তার আইফোনটিতে এটিঅ্যান্ডটি ছাড়া অন্য কোনো মোবাইল কোম্পানির সিম লাগাতে পারবে না। এভাবে এটিঅ্যান্ডটি আস্তে আস্তে তাদের লাভ তুলে নেয়। এখন বাংলাদেশে এই মডেল ব্যবহার করে ভোক্তাদের কাছে কমপিউটার বিক্রি করা সম্ভব এবং এই মডেলের অন্যতম প্রধান সুবিধা হচ্ছে ক্রেতাকে আর চড়া দাম দিয়ে আসল সফটওয়্যার কেনার কথা চিন্তা করতে হবে না। একই সাথে ক্লাউড সার্ভিসদাতা এবং কমপিউটার নির্মাতা বাংলাদেশে নতুন বাজার সৃষ্টি করতে পারবে।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের প্রায় সব হার্ডওয়্যার বিক্রেতা বিসিএসের সদস্য। বিসিএসের সদস্যদের যদি এ কাজে অংশীদার করা যায় তবে তাতে অনেক সুফল আসবে। বিসিএসের বর্তমান নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে ভাবতে পারেন। ঠিক একইভাবে বেসিস ও আইএসপিএবি ক্লাউড কমপিউটিং বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতার কথা চিন্তা করলে এই মডেলটিকে অনেকটা ছেঁড়া কাঁথায় বসে লাখ টাকার স্বপ্ন বা আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখার মতো কিছু বলে মনে হতে পারে। এদেশে এখন পর্যন্ত দ্রুতগতির ইন্টারনেট স্বপ্নের মতো মনে হয়। কমপিউটার কেনা সাধারণের ক্ষমতার বাইরে। তাই ক্লাউড কমপিউটিং নিয়ে চিন্তা করাটা হয়তো বিলাসিতাই বলে মনে হতে পারে এবং এজন্য কাউকে দোষ দেয়া যায় না। তবে আমেরিকা যেখানে এ প্রযুক্তির দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে, ভারত ও চীন যেখানে এ দিকটাতে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেখানে আমরা যদি চুপ করে বসে থাকি, তবে তাতে করে আমাদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে অনেক বেশি।

আমরা ক্লাউড কমপিউটিং নিয়ে যে মডেলের প্রস্তাব করেছি তা বাস্তবায়ন করতে হবে এমনটা বলছি না। সত্যি বলতে কি, আমরা এ বিষয়ের ওপর কোনো বিশেষজ্ঞ নই। আমরা শুধু আশা করি, আমাদের এই মডেল হয়তো এ খাতের বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ও চিন্তার খোরাক যোগাতে সামান্য হলেও অবদান রাখবে। আর বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এখন থেকেই ‘গভর্নমেন্ট ক্লাউড’-এর বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। তথ্য পাচার হয়ে যাবে- এমন ভয় থেকে যদি ক্লাউড কমপিউটিংয়ের ব্যাপারটি এড়িয়ে যাওয়া হয়, তবে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.