আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিক্রেট ফ্রেন্ড

*~*জীবনে যত কম প্রত্যাশা থাকবে ... .. . তত বেশী ভালো থাকা যাবে*~*

... .. . বেস্ট ফ্রেন্ড,পেন ফ্রেন্ড,ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড,সিক্রেট ফ্রেন্ড...ফ্রেন্ডের ক্ল্যাসিফিকেশন করতে বসলে অনেক রকমের ফ্রেন্ড-ই পাবো। সিক্রেট ফ্রেন্ডের থিমটা হোষ্টেলে থাকার সময় দেখেছি। প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষার প্রায় একসপ্তাহ আগে থেকে যার যার সিক্রেট ফ্রেন্ড পেয়ে যেতাম আর বড়দিনের ছুটিতে বাসায় আসার আগে যে প্রাক-বড়দিন অনুষ্ঠান হত,সেইদিনই সবার সামনে ফ্রেন্ডের নাম বলতাম। এটা শুধু আমাদের হোষ্টেলের মেয়েদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলোনা সাথে থাকতো হোষ্টেলের দুই ইনচার্জ আর রান্নাঘরের কাজ করতো এমন চার -পাঁচজন দিদিরা ও। শুধু বাদ পড়তো হোষ্টেলের বুড়া বুড়া দারোয়ান দাদুরা।

মেয়েরা সবার ফ্রেন্ড হতে চাইলে ও বুড়া দাদুদের বাদ দিতো ...তখন আমাদের কাছে সিক্রেট ফ্রেন্ডের থিমটা অনেক মজার মনে হত। যারা তাদের মনমত ফ্রেন্ড পেত,খুব খুশী হত। আবার যাদের ফ্রেন্ড পছন্দ হতোনা,তারা প্রথমে ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কান্নাকাটি করলেও পরে মেনে নিতো। প্রায় একমাসের মতন কেউ কাউকে বুঝতে দিতাম না কে আমার সিক্রেট ফ্রেন্ড শুধু দূর থেকে তাকে নানাভাবে ইমপ্রেসড করার চেষ্টায় থাকতাম। ব্যাপারটা এমন সুমি যদি আমার সিক্রেট ফ্রেন্ড হয় তাহলে হয়ত দেখা গেল আমি তার গোসলের পানি তুলে দিচ্ছি,কাপড় ভাজ করে তার শেলফে রেখে দিচ্ছি,বই গুছিয়ে রাখছি আর ফ্রেন্ড যদি বেশী পছন্দের হয় তাহলে বোনাস হিসেবে মাঝে মাঝে হ্য়তো তার বিছানায় ফুল নয়তো চকলেট রেখে আসছি।

এসবই করতে হত সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে...গোপণে। কেউ দেখে ফেললে তাকে বলে -কয়ে চুপ থাকতে বলতাম। সবচেয়ে মজার কান্ড হত রান্নাঘরের দিদিদের ফ্রেন্ড যারা হত...দিদিরা খাবার পরিবেশন করার সময় তাদের দোস্তদের বেশী করে খাবার দিত প্লেটে। একবছর আমার মনমতন ফ্রেন্ড পাইনি বলে সেবার খুব বিরক্ত হয়ে ভেবেছি..."এসব আজাইরা কাম,সামনে বার্ষিক পরীক্ষা,পড়াশুনা করবে...তানা করে মেয়েরা আজাইরা সিক্রেট ফ্রেন্ডের পিছনে সময় দিয়ে সময় নষ্ট করছে"...এখন বুঝি একটা বদ্ধ পরিবেশে ফ্যামিলি থেকে দূরে থাকতাম বলে নানা পজেটিভ মোটিভেশনের মধ্যে এটাও তেমনই ছিলো। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে যেদিন প্রাক-বড়দিনের অনুষ্ঠান হত সেদিন সবাই সাজুগোজু করে অনুষ্ঠানে হাজির হতাম আর একজন একজন করে যার যার সিক্রেট ফ্রেন্ডের নাম বলে যেতাম।

টিয়ার ফ্রেন্ড প্রীতি...প্রীতির ফ্রেন্ড তন্দ্রা...তন্দ্রার ফ্রেন্ড জেরী(আমি)...জেরীর ফ্রেন্ড সুমি.....নাম বলার সাথে সাথে যার যার বড়দিনের গিফটের পোটলা নিয়ে এক দৌড়ে ফ্রেন্ডের কাছে হাজির আজকাল বুয়াগিরির পরে যেটুকু অবসর পাই স্মৃতির পোটলা নিয়ে ঘাটতে বসি...বয়স হচ্ছে,বুড়ি হচ্ছি এটাই তার প্রমাণ। দুনিয়াতে দুইরকমের মানুষ আছে...একশ্রেণীর লোক সময়ের সাথে খুব সহজে নিজেকে বদলে ফেলে,তাদের কাছে এসব স্মৃতির কানাকড়ি মূল্য নেই....আরেকশ্রেণী লোক আছে যারা সময় বদলে গেলেও আগের স্মৃঁতি খুজে বেড়ায় (এই জাতীয় গাধী আমি)। ছোট ছোট বিষয়েও স্মৃতি তো গাধীরাই খুজে বেড়ায়। কবে,কোনকালে কার কাছে নাকমোছার (হয়ত বা ঘাম ও মোছার) জন্য একটা টিস্যু চেয়েছিলাম পরে সে যখন পুরা টিস্যুর প্যাকেট ধরেই দিয়ে দিলো। সেই টিস্যু আজো ব্যবহার করা হয়নি...মাঝে মাঝে বের করে দেখি আর বুড়িদের মতন স্মৃতির জাবর কাটতে কাটতে হালকা-পাতলা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি......সবই বুড়ি হবার পূর্বলক্ষণ


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.