আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসিত রায়ের কবিতা “কুকুরের বাচ্চা” এবং কিছু কথা

চলছি শিলা পথে....

সামাজিক যোগাযোগের সাইবার মিডিয়া 'ফেসবুক'এ সামাজিক অসঙ্গতি নিয়ে ক্ষুরধার লিখিয়ে কবিদের অন্যতম-কবি অসিত রায় ! সহজ পাঠকের অভিযোগ আছে যে, আজকাল কবিতা কবিগণ ছড়া খুব সহজে অকবিগণ কমই বোঝেন ! দুর্বোধ্য দূর্দান্ত স্টাইলের কারণে ! সেখানে কবি অসিত রায় তাঁর সহজ সাবলীল প্রাঞ্জল উপস্থাপনায় অনেক পাঠকেরই মন ও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছেন ! তাঁর আরো একটি কারণ বিষয়বস্তু নির্বাচন ! অন্যদিনের মত গতপরশুও আমি একটি কবিতা শেয়ার পাই ! কবিতাটি আচ্ছা ব্যতিক্রমধর্মী, শিরোনাম- "কুকুরের বাচ্চা" ! এই নিয়া কিছু মন্তব্য করার বক্তব্য মাথায় এতো ভারী হয়ে গলো যে তা পুরোটা সেখানে তোলে ধারার মত স্পেস বেমানান । তাই মাথা খালি করার বিকল্প এখানেই ভাল । কবিতাটি এই: “নগরীর রাজপথে ব্যস্ততা কম থাকে গভীর রাতে মানুষের বাঁচার যুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্র হয় নগরী, দিবালোকে অন্ন-বস্ত্র-চিকিৎসা-বাসস্থানের সন্ধানে পাগল হয়ে কার আগে কে যাবে কাকে মেরে কে খাবে আবাল-বৃদ্ধবনিতা'র ঢল নামে রাজপথে । নগরীর সংখ্যালঘু কুকুরগুলো পশু আইনের বিধান জানে না চারিদিকে শব্দদূষণ, মানুষের এত ব্যস্ততা যেমন নিরাপত্তাহীনতা তেমনি মোটরগাড়ির স্বেচ্ছাচারিতা বাঁচার অধিকার যেন বিষময় হয়ে ঊঠেছে জীবনে সোডিয়াম বাতির নীচে ক’জন স্বজাতি মিলে খাবার খোঁজছে ডাস্টবিনে। পথচারী অকারণে ঢিল ছুঁড়ছে কুকুরগুলো দৌড়ে পালাচ্ছে তাই নিয়ে হাসি তামাশা হচ্ছে, যার পেটে আছে লজ্জাহীন ক্ষুধা, সে কি মানে কোন বাধা ? দূর থেকে কুকুরগুলো ডাস্টবিনের দিকে তাকিয়ে আছে । কোন আইনে কুকুরগুলোকে অপরাধী করে হাসির খোরাক পেতে পথচারী ঢিল ছুঁড়ে যারা বোমা তৈরী করে বা ফতোয়া দিয়ে মানুষ মারেনি, প্রাণকূল ধ্বংসের জন্য রসদ যোগায়নি কিংবা প্রতিবছর তীর্থ করে এসে সাম্প্রদায়িক অত্যাচার করেনি । নিরীহ পশুর ঊপর অত্যাচার নেই কোনো প্রতিকার ‘কুকুরের বাচ্চা’ বলে মানুষ গালি-ও দেয়, নিজেদের হীনমন্যতাকে ঢেকে রাখতে গিয়ে কিছু মানুষ দোষারোপ করে থাকে নিরীহ প্রাণীকে ওরা কুকুরের নামে গালি দিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়।“ আসলে গালি’টা 'কুকুরের বাচ্চা' না - 'কুত্তার বাচ্চা’ ! কবিও কি একটু বাটারিং করলেন ! জনৈক পান্ডবে'র জুতা তসরুপ করার দোষে কুকুরের স্থান ঘরে হল না এই বাংলা-ভারতে ! হায় কুকুর ! বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্রের 'অতিথি'র পর আমার স্বল্প জানা মতে এই প্রথম কোন আধুনিক কবি কুকুরকে মর্যাদা দিচ্ছেন ! ভালই লাগছে ! মানুষ দোষ করলে অমানুষ হয়, নির্দোষ কুকুরকে নিয়ে টানাটানি কেন ? কুকুরের রাজকীয় টানাটানি হয় রাজনীতিতে “কুকুর লেজ নাড়ায় না, লেজে কুকুর নাড়ায়” ! ন্যাক্কারজনক ব্যবহার দেখি ব্যাকরণে - "যেমন কুকুর, তেমন মুগুর" ! এক কবি তো লিখেই বসলেন- "কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তাই বলে কি ...."। কথাটা হওয়া উচিত ছিল- " অমানুষের কাজ অমানুষ করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তাই বলে কি অমানুষকে কামড়ানো মানুষের/কুকুরের শোভা পায় ? সংখ্যার লঘুত্ব নয়, এদেশে জন্মই কুকুরের আজন্ম পাপ ! বেওয়ারিশ কুকুর গুলো এদেশে জন্ম না নিয়ে যদি ভূটানে জন্ম নিতো, তাহলে কতোযে রাজ কপাল ছিলো, এত ছিদ্দত হতো না ! ভূটানে নাকি ভূটানী'র চেয়ে কুকুরের সংখ্যা বেশি ! সেখানে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো আরো বেশি কুতুব, বেশি স্বাধীন ও মযার্দাশালী ! কোন বাংলাদেশী যদি সেখানে বেড়াতে যান, আর যদি কোন ভূটানী গাইড ছাড়াই একা রাস্তায় বেরোন তাহলে আর রক্ষা নাই ! কোথা থেকে যে আচমকা সংঘবদ্ধ কুতুব এসে আক্রমণ শানাবে তা টের পাবেন না ! ভূটানীদের সংস্কার মতে কুকুর মারা মহাপাপ ! তাঁদের বিশ্বাস মৃত পূর্বপুরুষদের আত্মা কুকুরের বেশে ভূটানে পূনর্জন্ম হয় ! তাই ভূটানীরা মাস বা সপ্তান্তে ওয়ারিশ-বেওয়ারিশ কুকুরের জন্য সবচেয়ে প্রিয় ব্যঞ্জণায় মুখরোচক খাবার পরিবেশন করেন ! নিপীড়িত দেশের কুকুরের দৈন দশা'র খবর টেলিপ্যাথির মাধ্যমে ভূটানী কুকুর কি জানে ? তা না হলে বিদেশি ভিজিটরদের তাড়া করার কারণ কি ! জানতে একবার ভূটান ভ্রমণের অভিপ্রায় রইলো ! তবে আমাদের দেশের কুকুরগুলো সংখ্যায় লঘু হলেও, দেশ প্রেমিক বটে ! এতো অবহেলা, এতো অমর্যাদা আর সীমান্ত বাঁধা না থাকা সত্ত্বেও তারা দেশ ত্যাগ করে না !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।