আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তানভিরের ডায়রি। (কেসঃ শোয়েব স্যারের মার্ডার)

কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন।

(সত্যি কাহিনী অবলম্বনে) বাস ধরলাম বিকেলে। গন্তব্য ঢাকার বাইরে।

কাজ তেমন ছিলনা। বসে বসে ভাগ্নেকে দুই চারটা অঙ্ক করাচ্ছিলাম। এমন সময় দুলাভাইয়ের ফোন। জানিয়ে রাখি আমার দুলাভাই পুলিশ। পুলিশের শোয়াল ভ্যালু কম হলেও আমার দুলাভাই মানুষ ভাল।

দুলাভাই ফোন দিল, “ তানভির চলে আস”। আমিও গেলাম। বেকারদের বেকার সময় থাকেনা। আমি বেকার। থাকি বোনের সংসারে।

এই অবস্থায় খোঁটা খাওয়া উচিত কিন্তু আমার দুলাভাই এতই ভাল মানুষ যে খোঁটা খাওয়া দূরের ব্যাপার। পারলে তিনি এমন ব্যাবস্থা করে দেন যে সারা জীবন আমি তার বাসাতেই থাকি। ভাগ্নেদের অঙ্ক করিয়ে দেই। বাজার করে দেই। আর হা মাঝে মাঝে দুলাভাইকে সাহায্য করি।

কিরকম সাহায্য? শুনলে হাসি পাবে। কেস সল্ভ করে দেই। ব্যাপারটা কিভাবে হয় আমি জানিনা। আমি পুলিশ নই ডিটেক্টিভ নই। টেকনিকাল জ্ঞ্যান কম।

কখনো ফেলুদা শার্লক হোমস কিছুই পড়িনি। তারপরেও কিছু একটা বলে ফেলি লেগে যায়। ভয়ঙ্কর এক জায়গায় চলে আসছি। এক লোককে কয়েকজন মিলে ধরেছে আর একজন দা দিয়ে তার হাতে কোপ দিয়ে আলাদা করে ফেলবে প্রায় এমন সময়ে আমরা হাজির। আমরা মানে সব পুলিশরা আর অনেক পিছনে আমি।

ঘটনাটা সহ্য করতে পারলাম না। আতন্নকে বমি করে ফেললাম। দুলাভাইরা দা হাতের লোকটাকে ধরে নিয়ে আনল। নাম নাকি আজহার খা। আজহার খা যা বলল ব্যাপারটা হাস্যকর।

শোয়েব স্যারকে মারার কথা ছিল তার কিন্তু সে নাকি মারেনি। বিশ্বাসযোগ্য কথা কিনা জানিনা। আজহার খা ব্যাপক লোক। সে বলছে তাকে ছেড়ে না দিলে নাকি সবার খবর আছে। উঁচু পর্যায়ে কিছু একটা হয়ে যাবে।

পলিটিকাল মার্ডার সে করে। যাদের হয়ে করে তারা এখন ক্ষমতায়। আমি আরও চুপসে গেলাম। কেন যে দুলাভাইয়ের মাঝে মাঝে সাহায্য করতে আসি!! জেমস বন্ড এর ১/১০০০ সাহস ও নাই আর আসছি কিনা ডিটেকটিভ গিরি করতে। ভাল কথা কেস নিয়ে দুলাভাই ছাড়া আর কারো সাথে আমার কখনও কথা হয় না।

রাতে দুলাভাই আর আমি একসাথে ঘুমাতে গেলাম। কথাবার্তা সারলাম। ঘটনা ভাল মত শুনলাম। শোয়েব স্যার খুন হয়েছেন। শোয়েব স্যার ঢাকার এক স্কুলে পড়াতেন।

নাম করা স্কুল। মর্নিং শিফটের টিচার। সকাল সাতটায় স্কুলের পথে যাওয়ার সময় তাকে কয়েকজন গুলি করে মারে। উইটনেস তেমন কেউ নাই। কেস নাকি খুবই সোজা।

আজহার খা মেরেছে। কেন? শোয়েব স্যার এর জমি গুলা দখল করে নেওয়ার জন্য। কে দখল করবে? শোয়েব স্যারের এর ভাই শাহজাহান। আজহার খা স্বীকার করেছে শাহজাহান তাকে ১ লাখ টাকা দিবে এই কাজ করার জন্য। কিন্তু আজহার খা এর মতে এই কাজ সে করেনি।

পরেরদিন ঘুম থেকে উঠলাম। সোজা গ্রাম গেলাম। একা একা কাউকে না জানিয়ে। শোয়েব স্যারের বউয়ের সাথে দেখা করলাম। অল্পবয়স্ক বাচ্চাটার সাথেও দেখা করলাম।

শাহজাহানকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে কিন্তু তার বউ বাচ্চাকেও দেখলাম। তারপর এক দোকানে চা খেতে গেলাম। আজহার খা যেই লোকটার হাত দা দিইয়ে কোপ দিতে গিয়েছিল সেই লোকটার খবর নেওয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারলাম না। গ্রামের পলিটিক্স ভয়াবহ। কে আবার হাত কেটে রেখে দেয়।

একটা কাজ করা যায়। শোয়েব স্যার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা যায়। তাই করলাম। জানলাম স্যার ভাল মানুষ। ৩ মাস আগে বাড়ি এসেছিলেন জমিজমা নিয়ে কথা বলতে।

তার ভাইয়ের সাথে ঝামেলা। এটা হতেই পারে আজহার খা টাকা নিয়েছিল। কিন্তু আমার কথা একটাই। আজহার খা বিরাট কিছু হতে পারে তাই বলে ঢাকা শহরে কাউকে মারার জন্য আজহার খা কেন? আর শাজাহান গ্রামে যাই হোক, ঢাকায় গিয়ে মাস্তান ঠিক করে মেরে ফেলবে এরকম মনে হয়না। দুলাভাইরা পুরা ব্যাপারটা এক দিক দিয়েই দেখছে।

থানায় ফিরে দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলাম পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট এসেছে কিনা। এসেছে। যেই গুলি শোয়েব স্যার কে বিদ্ধ করেছে সেই গুলির স্যাম্পল ও আছে। দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলাম এই গুলি যেই বন্দুকের হয় সেই বন্দুক আজহার খায়ের আছে কিনা? শোয়েব স্যারের দেহে দুই ধরনের গুলি পাওয়া গেছে। তার মানে দুই ধরনের বন্দুক ছিল।

বুঝতে পারলাম এই খুন আজহার খা করেনি। আজহার খায়ের স্টাইল এটা না। এক কোপে মানুষের কল্লা নামিয়ে দেওয়াতে সে বীরত্ব খুঁজে। সে আরেকজনকে নিয়ে ঢাকা শহরে গিয়ে গুলি মারবে এমন মনে হয়না। ঢাকায় চলে আসলাম।

দুলাভাইয়ের এখনো ধারনা আজহার খা খুনি। ঢাকায় এসে দুলাভাইকে বললাম একটা ব্যাবস্থা করে দিতে যাতে গুলিগুলা কোন কোন বন্দুকের আর কই কই পাওয়া যায় তা জানাতে। পুলিশের কাজ আমি বুঝিনা। বন্দুক সম্পর্কেও জানিনা। দুলাভাই একটা ফোন নম্বর দিলেন।

সময়মত ফোন করে জানতে বললেন। বা ঐখান থেকেই জানাবে। আমার অবস্থান এখন শোয়েব স্যারের ঢাকার বাসার সামনে। যেখানে তার নিথর দেহ পাওয়া গেছে সেটা দেখলাম। এটা নরমাল সময়ে ব্যাস্ত থাকে তাই ভোর ৭ টায় এই কাজ।

আশে পাশে ঘুরলাম। চা খাওয়ার জায়গা খুঁজে পেলাম। এই দোকান থেকে স্যারের বাসা দেখা যায়। আমি যদি স্যারকে খুন করতাম এখান থেকেই খেয়াল করতাম। খুনিরা কি করেছে জানিনা।

দোকানের পিচ্চিটা দেখতে চাইনিজ চাইনিজ। চাইনিজ পিচ্চিরকে টিপস দিলাম চা খাওয়ার পর। বললাম রাতে কই থাকিস কই ঘুমাস? দোকানেই নাকি থাকে। চাইনিজ পিচ্চির সাথে কথা বললাম দশ মিনিট। শোয়েব স্যার ভাল লোক ছিলেন।

সিগারেট কিনতেন এই দোকান থেকে। ঘটনার দিন পিচ্চি নাকি ঘুমিয়ে ছিল। স্যারকে কারা জানি গুলি করে দিয়ে চলে গেছে। আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করেও তেমন কিছু বুঝতে পারলাম না। স্যারের স্কুলে এখন আমি।

হেডস্যার আমার সাথে কথা বলতে তেমন আগ্রহী না থাকায় দুলাভাইকে ফোন দিলাম। দুলাভাই বলে দিলেন আমাকে জানি সহযোগিতা করা হয়। অনেকের কাছ থেকে এক দফা শুনলাম স্যার সম্পর্কে। কাজের কিছুই শুনলাম না। স্যারের নিজস্ব ড্রয়ার দেখতে চাইলাম।

যদিও দুলাভাইরা স্যারের বাসা আর স্কুল সবই দেখে গিয়েছে অনেক কিছু নিয়েও গিয়েছে তাও দেখলাম। একটা খাতা পেলাম। রাজিবুল ইসলাম নামক এক ছাত্রের। স্যার এক্সপেল করে দিয়েছিলেন। হেড স্যারের কাছ থেকে ছাত্রের ছবি চেয়ে নিলাম।

ছেলেটার ক্লাস এইটে থাকার কথা ছিল কিন্তু ক্লাস সেভেনে। নকল করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। বাবা জয়েন সেক্রেটারি। শাফিউল ইসলাম। মনে হল যেন ক্লু পাওয়া গেল।

তবে নিশ্চিত হওয়া দরকার। ক্লাস এইটের কয়েকজনের সাথে কথা বললাম। চাইনিজ পিচ্চির কাছে আবার গেলাম। রাজিবুল এর ছবি দেখালাম। চাইনিজ পিচ্চি চিনে।

রাজিবুলের সাথে আরো দুই একজন মাঝে মাঝে চাইনিজ পিচ্চির দোকানে চা খেত। প্রতিদিন বিকালে তারা আড্ডা দিত। দুলাভাইয়ের ওই নম্বর ফোন দিতে যাব। উলটা সেখান থেকেই ফোন আসল। দুইধরনের গুলির একট জার্মানমেড কি জানি।

শুনতেই ইচ্ছা করললনা। আরেকটা নরমাল বন্দুক। আমি বললাম এগুলা কি স্মাগলিং করে আসে? কিলাররা ব্যাবহার করে? নরমাল বন্দুকটা নাকি এতই সিম্পল যে এটা কিলাররা ব্যাবহার করেনা। ফোন কেটে দিলাম। দুলাভাইকে ফোন দিলাম।

দুলাভাই। একটা খবর নেন। শাফিউল ইসলাম নামের একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি আছেন। তিনি হোম মিনিস্ট্রি থেকে কখনো কোন বন্দুকের লাইসেন্স নিয়েছিলেন কিনা? এরপর আমি যখন ভাগ্নেকে অঙ্ক করাচ্ছিলাম তখন টিভি চ্যানেলে দেখাচ্ছিল রাজিবুলকে। তার নাম আসলে রাজিব।

ক্লাস এইটে পড়া ছেলে। সেভেনে এ্যানুয়ালী পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে শোয়েব স্যারের কাছে ধরা খায়। পুরা ক্লাস সেভেন শোয়েব স্যার প্রতিদিন তাকে শাস্তি দিত। রাজিবুল একমাস ধরে প্ল্যান করে শোয়েব স্যারকে মারার জন্য। ৩ জন তার বয়সী ছেলে তাকে সাহায্য করে।

ঐ তিনজনের কাছে একটা পিস্তল থাকে তারা রাতে এমনিতেই ছিনতাইয়ের কাজ করে। রাজিবুলের বাবার লাইসেন্স ওয়ালা বন্দুক ছিল। বাবার অগোচরে সে সেটা চুরি করে শোয়েব স্যারকে মারার জন্য। ঘটনা এটাই। দুলাভাই বেশ বাহবা পেল কেস সল্ভ করার জন্য।

আমি চুপ মেরে গেলাম। সেটাই ভাল। এত সাহস আমার নাই। ক্লাস এইটের পোলাপাইন যদি খুনটুন করা শুরু করে তাহলে চুপ থাকাই ভাল। ভাগ্নেকে অঙ্ক করানোর সময় দুলাভাই খবর দিলেন আজ সবাইকে নিয়ে চাইনিজ খেতে যাবেন।

তার মন খুব ভাল। সবাই তার কাজের খুব প্রশংসা করছে। যাই চাইনিজ খেয়ে আসি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।