আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুগল্পঃআপনাদের জন্য উন্নতমানের সুগন্ধির ব্যবস্থা করা হবে

যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
সেদিনও নগর এদিনের মত ব্যস্ত ছিল। আমি যে সময়টার কথা বলছি সেটা সন্ধ্যা,এখন যেমন সন্ধ্যা হয় সে সন্ধ্যা টাও ঠিক তেমনি ছিল। নগরীর ঠিক মধ্যেখানে যাবার সামনের রাস্তার একটা জায়গায় তিনদিক থেকে এসে তিনটি রাস্তা মিলিত হয়েছে।

এই ত্রি রাস্তার সঙ্গমস্থল অত্যন্ত যানযট পূর্ন ছিল এবং যানবাহনের চাকার ঘর্ষনে ঘর্ষিত,মানুষের পদভারে দলিত হচ্ছিল তার জন্মলগ্ন থেকেই। এখনো হচ্ছে,আপনি ওখানে গেলে দলিত এবং ঘর্ষিত রাস্তাটা দেখতে পাবেন। ওইদিনের কথায় আসি। ওইদিন সন্ধ্যায় সুর্য ডুবার পর যানবাহনের চাপ বেড়ে গেল জনাকীর্ন নগরীর এই রাস্তাটায়। যা ছিল প্রত্যাশিত এবং স্বাভাবিক।

কিন্তু হঠাত একটি আশ্চর্য ঘটনায় কিছুক্ষনের জন্য থেমে গেল যানবাহনের চাকা। থেমে গেল না বলে থামতে হল বলাই শ্রেয়। কারন রাস্তার মঝাখানে উপুর হয়ে শুয়ে ছিল এক বৃদ্ধা। ঠিক মাঝখানে বৃদ্ধা উপুর হয়ে ঘর্ষিত রাস্তার ক্ষতে নিজের মুখ লুকিয়ে পড়ে ছিল। তার উপর সারা গায়ে সামান্য এক টুকরো কাপড় যা থাকা এবং না থাকা প্রায় একই।

গাড়ির চালকরা বিরক্ত হল। বিরক্ত হল পথচারীরা। একজন ট্রাফিক পুলিশ চেষ্টা করল বৃদ্ধার সাথে কথা বলতে। কিন্তু বৃদ্ধা পড়ে আছে মরার মত। আর কেউ কথা বলার জন্য আসল না।

কারন এমন বিকট দূর্গন্ধ বের হচ্ছিল বৃদ্ধার শরীর থেকে যে কাছে আসাই অসম্ভব মনে হচ্ছিল তখনকার গাড়িতে বসে থাকা ভদ্রলোক,ভদ্রমহিলা এবং রাস্তায় পাশে ফুটপাথে হাটতে থাকা ভদ্র পথচারীদের। ওদিকে সময় চলে যাচ্ছে। মূল্যবান সময়। নগরির সময় মুহুর্তে মুহুর্তে প্রসব করে টাকা। সবাই মিলে চাপ দিতে থাকল ট্রাফিক পুলিশকে।

ট্রাফিক পুলিশও অত্যন্ত ভদ্রলোক। তিনি প্রথমবার কর্তব্যের খাতিরে বৃদ্ধার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলেন। তিনি সবাইকে বললেন, আইনে এরকম পরিস্থিতিতে আমার কি করা উচিত তা লেখা নেই। রাগান্বিত হয়ে গাড়ির চালক,গাড়িতে বসা ভদ্রলোক,এবং ভদ্র পথচারীরা বললেন, আমাদের যে সময় নষ্ঠ হচ্ছে। এভাবে আর বসে থাকা যায় না।

একটা কিছু করতে হবে। ব্যস্ত নগরবাসী উত্তপ্ত কন্ঠে ট্রাফিক পুলিশের সাথে আলোচনা করল কিছুক্ষন। এতক্ষনে লম্বা গাড়ির সারি জমে গেছে রাস্তায়। ভদ্রলোকেরা ঠিক করলেন এভাবে বসে থাকলে সময় নষ্ঠ হবে,তাই তারা গাড়ি ছুটিয়ে চলে যাবেন বৃদ্ধার উপর দিয়েই। যে লম্বা গাড়ির সারি জমেছে তাতে মৃত বৃদ্ধার বৃদ্ধ মৃতদেহের কোন চিহ্নই থাকবে না।

এক ভদ্রলোক গাড়ির পিছনের সিট থেকে বলে উঠলেন, আমার গাড়ির চাকায় যে পচা রক্ত লাগবে,তার কি হবে? ট্রাফিক পুলিশ বলল, এ ব্যাপারে চিন্তা করবেন না। আমি মেয়রকে ফোন করে জানিয়েছিলাম। উনি বলেছেন,আপনাদের গাড়ির জন্য বিনামূল্যে উন্নতমানের সুগন্ধীর ব্যবস্থা করা হবে। ওইদিন নগরবাসী সত্যি রাস্তায় পিষে গিয়েছিল,পায়ে দলিত এবং চাকার ঘর্ষনে ঘর্ষিত করেছিল,তবে কোন মানুষকে নয়,বৃদ্ধারুপী তাদের বিবেককে। পিষ্ট,দলিত,এবং ঘর্ষিত বিবেক নিয়ে নগরবাসী এখনো বেচেঁ আছে।

আপনি গেলে দেখতে পাবেন । ২/১১/২০১০ রাত ১টা ০৯
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।