আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বান্দরবাজার - শেষ ট্যুর



সারাটা বছর ব্যস্ত সময় কাটাই । পড়াশোনা, ক্লাস, assignment , tutorial , পারিবারিক ঝামেলা সবকিছু মিলিয়ে প্রচন্ড বোরিং । দরকার ছিল একটু বিরতির । নিজের উপর পড়া মরিচা একটু দূর করার । কপাল ভাল , সুযোগও পেলাম ।

department থেকে বান্দরবান ও কক্সবাজার যাওয়া হবে । ট্যুর আয়োজন করবে আমাদের ব্যাচের লোকজন । মূলত শরীফ আর আশীষ । কষ্ট করে টাকা যোগাড় করে দু’জনেই যাওয়ার জন্য মানষিক প্রস্তুতি নিলাম । দু’জন মানে আমি আর আমার ইয়ে ।

ট্যুর নিয়ে আমরা খুবই excited ছিলাম । অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে রওনা দিলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ট্রেনে । ট্রেন আমার দু’চক্ষের বিষ । সারাক্ষণ ঝালমুড়ির মত ঝাঁকাতে থাকে । কেন যে সবার ট্রেন জার্নি এত পছন্দ আল্লাহই জানে ।

অবশ্য আমার সাথে ক্লাসের সবার মতের মিল হবে না এটাই স্বাভাবিক । After all, I am the bloody me … যাওয়ার জার্নিটা মোটেও সুখকর ছিল না । একে তো স্টেশনে ৩ ঘন্টা অপেক্ষা , তার উপর সামনে এক মালগাড়ির accident এর কারনে ইমামবাড়ি স্টেশনে ৭ ঘন্টা বসে থাকা । তার উপর খাওয়া দাওয়ার সমস্যা । কুফা একটার পর একটা লেগেই আছে ।

চট্টগ্রাম থেকে যে বাসে বান্দরবান যাওয়ার কথা সেটাও মাঝপথে গেল নষ্ট হয়ে । অবশেষে বান্দরবান পৌছালাম সন্ধ্যা ৭ টায় । তখন দুপুরের ভাত খেলাম । আর সাড়ে ১১ টায় খেলাম রাতের ভাত । মোটা আমি হব নাতো হবে টা কে ।

রাতে যে ঘুমটা দিলাম তা ছিল ফাটা ফাটি । পরদিন সকালে বের হব ঘুরতে । এমনিতে ১ দিন নষ্ট হয়েছে । যেখানে ২ দিনে ৬টা যায়গা ঘোরার কথা সেখানে ১ দিনে ৬ যায়গায় ঘুরলাম । ৬ যায়গা মানে নীলগিরি, নিলাচল, স্বর্ণমন্দির, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড় আর মেঘলা ।

সারা গা এত ব্যাথা , মনে হচ্ছিল হরতালে পিকেটিং করতে গিয়ে পুলিশের ডলা খাইছি । সেদিন রাতেই বাসে কক্সবাজার আসলাম । আসার জার্নিটাও যেরকম চেয়েছিলাম সেরকম হয়নি । তাই মেজাজটাও গরম ছিল । যার ফলাফল ভোগ করতে হয়েছে আমার হবু সহধর্মিনিকে ।

মানুষের অতীত কখনই তার পিছু ছাড়ে না । আমারও ছাড়েনি । এই ডিপার্টমেন্টে আমি অনেক কিছু সহ্য করেছি , suffer করেছি । সেই অতীত আমার জীবনে আবার ফিরে আসুক তা আমি কোন অবস্থাতেই চাই না । কিন্তু এই ট্যুরে তা আসার মৃদু একটা লক্ষণ দেখা দিয়েছে ।

আমি বরাবরই ভীতু টাইপের ছেলে । সেই ভয়ের কারনেই আমি এই ট্যুরে বেশ কিছু খারাপ সময় কাটিয়েছি । তবে যে ভাল সময়টা পেয়েছি তা তুলনাহীন । আমার অতীত আমার বর্তমানকে আক্রমণ করে আমার ভবিষ্যৎ কে নষ্ট করে নাকি সেটাই এখন দেখার বিষয় । কক্সবাজারে প্রথমদিন সকালে গেলাম কস্তুরঘাটে ।

পরে সবাই আসলে সেখান থেকে গেলাম মহেশখালি । আমরা ২জন মিলে । সময়টা খুবই ভাল যেত যদি না অতীতের ছায়া আমাদের পিছে লেগে থাকত । মহেশখালি থেকে ফিরে বীচে প্রায় ৩ ঘন্টা পানিতে দাপাদাপি করলাম । এটাই ট্যুরের সবচেয়ে ভাল সময়ের একটা ।

ভাল সময় কারন কিছুক্ষণের জন্য হলেও এসময় আমরা দুজনের মাঝখানে অতীত এসে interfere করেনি । সারা জীবন মনে থাকবে । হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে গেলাম বার্মিজ মার্কেটে । মহা শপিং করলাম । একটা শার্ট গিফট পেলাম ।

রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম । পরদিন ইনানী বীচ আর হিমছড়ি যাব । ওনার আবার ঠান্ডা লেগেছে । তাই ভাবলাম পানিতে নামব না । কিন্তু ইনানী বীচে গিয়ে পানিতে না নেমে মনটাও খারাপ হচ্ছিল ।

তার উপর বড় মুজিব স্যারের স্পষ্ট হুমকি, সবাই পানিতে না নামলে উনি পানি থেকে উঠবেন না । নামলাম । আরও একটা অসাধারণ সময় কাটালাম । ইনানী বীচে এক couple এর সাথে পরিচয় হল । তারা হানিমুনে এসছে ।

বলল তাদের ছবি তুলে দিতে । খুশি হয়েই দিলাম । ছবি তোলার পর তারা থ্যাংকস জানাল । আমি বললাম থ্যাংস এ কাজ হবে না । এর বদলে আমাদেরও ছবি তুলে দিতে হবে ।

তারাও আমাদের বেশ কিছু ছবি তুলে দিল । আমি এরকম হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত couple খুবই কম দেখেছি । আল্লাহ তাদের ভাল রাখুক । এরপর হিমছড়ি এসে হালকা কেনাকাটা করে হোটেলে ফিরলাম । আজই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিব ।

তাই সন্ধ্যায় আবার বীচে কিছু সময় কাটালাম একসাথে । আবার কবে এভাবে একসাথে সময় কাটানো হয় কে জানে । তাই যতখানি সম্ভব স্মৃতি জমা করে নেই । এবারের ট্যুরটা ভাল হয়েছে তার কারন এবারকার টীচাররা অনেক ভাল ছিল । আমাদের সাথে গিয়েছিল ছোট এবং বড় মুজিব স্যার আর এলমা ম্যাডাম ।

দুই মুজিব স্যারকে আমাদের সাথে দেখে মনেই হচ্ছিল না যে তাঁরা আমাদের চেয়ে বয়সে অনেক বড় । আমাদের সাথে তাঁরাও যেন বাচ্চা হয়ে গিয়েছিলেন । বরং আমার তো মাঝেমাঝে মনে হচ্ছিল, তাঁদের চেয়ে আমার বয়স বেশী । এরকম ফ্রেন্ডলি টীচার আমি খুব কমই পেয়েছি আমার জীবনে । এরকম টীচার আরও পেলে এই ডিপার্টমেন্টটা হয়ত আমার কাছে এতটা অসহ্য লাগত না ।

মনে অনেক আনন্দ , স্মৃতি , একটু কষ্ট, হালকা ভয় আর সারা গায়ে অসম্ভব ব্যথা নিয়ে ঢাকায় ফেরত আসলাম । জানি , এটাই আমাদের ব্যাচের শেষ ট্যুর । আর কখনও এভাবে ঘুরতে যাওয়া হবে না । কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা থাকলেও , যে অসাধারণ সময়টা আমি ( অথবা আমরা ) কাটিয়েছি তার তুলনা হয় না । সেই ভাল সময়টুকুর জন্য কিছু খারাপ সময়কে মেনে নিতে রাজি আছি ।

অনেক কষ্ট সহ্য করতে রাজি আছি । কিন্তু জানি এরকম আর হবে না ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.