আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতিগতভাবে আমরা মেথরে পরিনত হতে পারিনা।

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা সাভারের দূর্ঘটনা আমাদেরই পাপের ফসল, এর দায়ভার সমগ্র জাতির। দূনীতিবাজ রাজনীতিবিদ (ভবনের মালিক), মুনাফাখোর ব্যবসায়ী (দালানের মালিক), সরকারী কর্মচারীদের দায়ীত্বহীনতা (পুকুরের উপর বহুতল ভবন) সবই আছে এর পিছনে। যদি জাতি হিসাবে আমরা সচেতনই হতাম, একই দূর্ঘটনা, অন্য ভাষায় হত্যাকান্ড বার বার ঘটে কি ভাবে। মুনাফাখোরদের মুনাফালাভের একটি সমীকরন হল এই যে, প্রতিবছর কয়েকশ লাশের খরচে (লাশ প্রতি ২০ হাজার), লক্ষ লক্ষ শ্রমিকদের (যার বড় অংশ নারী) সারা বছর অনিরাপদ এবং ঝুকিপূর্ন পরিবেশে খাটিয়ে নিলে ক্ষতি কি? দাসপ্রথার আধুনিক (মানবিক!) নমুনা এটি। মজার ব্যপার নারীদের ক্ষমতায়নে এইসব রাজনীতিবিদ আর ব্যবসায়ীরাই (যাদের নিয়ন্ত্রনে অধিকাংশ মিডিয়া) সোচ্চার বেশি।

ওদের চোখের পানিতে টিভির পর্দা প্রায়শ:ই ভিজে উঠে। এক সিএনজিওয়ালার সাথে আলাপচারিতায় (যে কিনা আগে এক গার্মেন্ট মালিকের গাড়ি চালিয়েছে কিছুদিন) জানতে পারলাম কিভাবে ঐ গার্মেন্টসের মালিককে তার বড় অফিসাররা শলা পরামর্শ দিচ্ছে ঐ বছরের বোনাস কর্মচারীদের না দিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়া যায়। পুলিশী ঝামেলা হলে তাও যেন টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। ক্ষতির যা হবে তা হল আন্দোলনকারীদের ইটের আঘাতে গার্মেন্টেসের কয়েকটা কাচ ভাংগবে। পেটের দায়ে কয়দিন আবার কাজে নামবে এই অশহায় মানুষগুলো।

বেশকয়দিন আগে বিবিসিতে একটা ইংরেজিতে প্রচারিত প্রোগ্রাম শুনছিলাম। চীনের গ্রামগুলো থেকে আসা মজুরেরা বলছিল, সারা দিনের খাটাখাটুনির পর আমাদের পাবে নাচ গানের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু জীবন যাপন করতে অত্যন্ত করুন অবস্থায়, তাই নাচ গান আর সুরার প্রয়োজন নেই, আমাদের প্রয়োজন সঠিক মজুরীর। আমাদের দেশেও এখন নাচ, গান, আর আনন্দ উল্লাশের ছড়াছড়ি, কোন একটা উপলক্ষ পেলেই পুরো জাতি মগ্ন হই আনন্দ উচ্ছাসে। এমনকি গার্মেন্টসের মেয়েদের জন্য চ্যানেলগুলা আয়োজন করে সেরা গায়িকার পুরস্কার।

দেখলে মনে হবে এদেশের মানুষের কোন সমস্যা নেই, নেই কোন দু:খকষ্ট। মাঝখানদিয়ে যা কিছু লুটপাটের, তা লুটপাট করে নেয় লুটেরারা। ছোটবেলায় মেথরদের দেখতাম মনুষ্যবর্জ পরিষ্কার করতে। অত্যন্ত ঘৃন্য এবং অমানবিক কাজ। তারা তাদের কষ্ট ভুলে থাকতে রাতে বাংলা মদে ডুবে থাকত, মাঝে মাঝে আয়োজন করত গান বাজনার।

হিন্দি উচ্চারনের গানগুলোতে আর সুরায় বুদ হয়ে তারা পালানোর চেষ্টা চালাতো কষ্টের এক ঘরে জীবন যাপনের কাছ থেকে। এখন আমরা পুরো জাতই আমাদের দু:খ কষ্ট আর সমস্যার কাছ থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য, বেশি বেশি করে গান বাজনা আর মাদকে জড়িয়ে পড়ছি। পুরো জাতিকেই এখন মেথর (দু:খিত এখানে মেথর শব্দটি রূপক অর্থে) বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর যা ফায়দা তা লুটে নিচ্ছে সমাজের উপরের তলার মানুষেরা। নেশার পারদ যত উপরে চড়তে থাকবে, জাতি ক্রমশ:ই হয়ে পড়বে বিকারহীন।

একসময় সবকিছুই গা সওয়া হবে যাবে। শোকপালন, হাহুতাশ, সচেতন নাগরিকদের প্রতিবাদ সবকিছুই হয়ে পড়বে গতানুগতিক। গরীব মানুষেরা, অসহায় মরতেই থাকবে, যথারীতি শোকপালনও হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে নেশার ছোবলে মরতে থাকা জাতি শিখবে সবকিছু মেনে নিতে হয় সহজভাবে। কিন্তু ভয়ংকর দু:সংবাদটি হল এই যে, একসময় আমি কিংবা আপনিও শরীক হবেন, অসহায় মৃতমানুষদের মিছিলে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।