আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অণুগল্পঃ শেঁকড়



আজও কি তোমাদের গাঁযে পুঁথির আসর বসে? আলাওলের পদ্মাবতী পড়তে পড়তে আজও কি তোমাদের রাত পোহায়? যমুনায় কি আজও গয়না নৌকা চলে? একজন দাঁড় বায়- আরেকজন ধরে হাল। পুবালী বাতাসের তালে উড়তে থাকে বাদাম। ছৈ এর ভেতরে বসে মিটিমিটি হাসতে হাসতে নতুন বৌ কি নাইওর আসে? বাকুর মাঝির বড়শিতে আজও কি ধরা পড়ে পাঁচ মণি বাঘার? দূর কি সব চিন্তা করছি-বাকুর মাঝি মরে গেছে সেই কবে গন্ডগোলের বছর? তারপর বাঘারদের সাথে আর কারও সখ্যতা গড়ে উঠে নাই। বাঘাররা যেন পণ করেছে বাকুর মাঝির বড়শি ছাড়া আর কারও বড়শিতে তারা ধরা দিবে না। আচ্ছা আমাদের গাঁয়ের কলেজ পড়ুয়া দুটো ছেলে-মেয়ে যারা লুকিয়ে রোজ চিঠি আদার-প্রদান করত তারা কি পরে ঘর বাঁধতে পেরেছিলো? লাল পুঁতি -নীল পুঁতি জোড়া দিয়ে গেঁথেছিলো সুখের মালা? নাকি কোনও এক চৈত্রের সন্ধ্যায় মালা ছিঁড়ে পুঁতিগুলো হারিয়ে গেছে বিরাণ পাথারে? না না তা হবে কেন? আরশাদ সাহেবের চিন্তায় হঠাৎ বাধা আসে।

কে যেন তাঁর মাথায় হাত রেখে ইংরেজীতে কি সব জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু তাঁর এখন উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না। এখন তিনি ব্যস্ত তাঁর গাঁয়ের খবর নিতে। তাঁর অনেকদিনের পুরাতন বন্ধুর সাথে তাঁর দেখা হয়েছে। তাঁরা এখন মন খুলে কথা বলছেন।

কিন্তু মেয়েটার প্রবল ডাকাডাকিতে তিনি একবার চোখ মেললেন। তাকিযে দেখেন ফুটফুটে চেহারার নার্স মেয়েটি। কি পবিত্র চেহারা মেয়েটার! এই মেয়ে গত কয়েকদিন ধরে তাঁর সেবা করে যাচ্ছে। নিজের মেয়েও এতটা করে না। আরশাদ সাহেব কয়েক যুগ আগে যমুনার পাড় থেকে মিশিগানে এসেছেন।

এখানে তাঁর ব্যবসা আছে, বাড়ী আছে, গাড়ী আছে, আমেরিকার পাসপোর্টও আছে। তিনি অবসর নেওয়ার পর তাঁর ছেলে-মেয়েরা মিলে তাঁকে ওল্ড হোমে রেখে আসে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ওল্ড হোমেই থাকেন। কয়েকদিন আগে তাঁর হঠাৎ ব্রেইন ষ্ট্রোক হয়। ওল্ড হোম থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় এই হাসপাতালে।

এখন তিনি আছেন আইসিইউ-তে। আরশাদ সাহেবের খুব গরম লাগছে। তিনি ঘামছেন। নার্স মেয়েটা ডিউটি ডাক্তারকে ডেকে এনেছে। হঠাৎ কে যেন এয়ারকুলারের তাপমাত্রা আরও কমিয়ে দিলো।

আহ! কি ঠান্ডা। মনে হচ্ছে চৈত্রের সন্ধ্যায় যমুনা পাড়ের হঠাৎ দমকা বাতাস! তিনি আবারও ডুব দিলেন তাঁর স্বপ্নের ভেতরে। ঐ যে দুষ্ট ছেলেটা যে কিনা রোজ রাতে তার মায়ের গলায় ঘুম পাড়ানি গান না শুনে ঘুমাতে চাইতো না সেই ছেলেটা এখন কতবড় হয়েছে? আমাদের গাঁয়ের সেই পাগলা কবিটা কি আজও দুঃখের কবিতা লেখে আর মানুষের মন খারাপ করে দেয়? গাঁয়ের হাট কি নিয়মিত বসে? চরের মানুষ কি আজও হাটে দুধ বেচতে আসে? কাওনের ধানের সাথে চরের দুধ মিশিযে মায়ের হাতের ক্ষীর-কতকাল, কত বছর খাওয়া হয় না! দূরে, অনেক দূরে মন্দ্রসপ্তকে কে যেন গেযে যাচ্ছে মন খারাপ করা কোন গান। গানটা আরশাদ সাহবের কাছে খুবই পরিচিত লাগছে কিন্তু কথাগুলো বোঝা যাচ্ছে না। আরশাদ সাহেব বোঝার চেষ্টা করছেন।

হঠাৎ তাঁর মনে হলো এটা কোন গান না-এটা হচ্ছে পুঁথি। কিন্তু এটা কোন পুঁথি-পদ্মাবতী? গাজীকালু? সোনাভান? নাকি কালিদাসের কোন পুঁথি? দুর! যা হয় হোক! আরশাদ চৌধুরী আর বোঝার চেষ্টা করছেন না এটা কোন পুঁথি। বাংলার সব পুঁথিই এক। তিনি এখন পুঁথি শোনায় ব্যস্ত। তপঃ জপঃ জানি নাহি ধ্যান জ্ঞান আর কবে যে দিয়াছ দেখা দয়া সে তোমার।

যে দয়া করিলে মোর এ ভাগ্য উদয় সেই দয়া হইতে মোরে দেহ পরিচয়। । .......................................... .......................................... প্রণমিয়া পাটুনি কহিছে জোড় হাতে আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে। তথাস্থু! বলিয়া দেবী দিলা বর দান দুধে-ভাতে থাকিবেক তোমার সন্তান। ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।