অসীম ব্যাসার্ধের একটি বৃত্ত, যা এখনও সরলরেখায় পর্যবসিত হয় নি
দেশের একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরপরই পত্রপত্রিকাগুলোর চিপায়-চাপায় রকমারি-চকমারী বিজ্ঞাপন। ততোধিক খ্যাতনামা একটি ২ টাকার পত্রিকার সাংবাদিক ছামচুর দৃষ্টি আকর্ষণ করলো উক্ত ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকারী ছাত্রের তিনটা কুচিংয়ে প্রকাশিত বক্তব্যে। ব্যাপারটা এরকম:
খামাখা কুচিং এর বিজ্ঞাপনে তার বক্তব্য-খামাখার লেকচার শীট ও সাজেশন গুলা এতটাই কাজে দিয়েছে তার প্রমাণ আমার ফলাফল।
ফাটাবাঁশ কুচিং এর বিজ্ঞাপনে লিখছে-ফাটাবাঁশের ভাইয়াদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিদারুণ মেধা আমাকে সাফল্য লাভের পথে উৎসাহ যুগিয়েছে।
ছামচু সবচে বড় ধাক্কা খাইল চানরাতআইজ কুচিং এর বিজ্ঞাপনে।
ওখানে ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকারী ছাত্র মো. হেদায়েত বলেছে-আমি চানরাতআইজ ছাড়া আর অন্য কুনো কুচিংয়েই কুচিং করি নাই। :
ঘটনা কি?? কাহিনী এরাম প্যাচাইন্যা ক্যা?? ছামচুর ছোট অ্যান্টেনায় বিষয়টা কোনভাবেই ধরল না। তাই সকল রহস্য সমাধানের উদ্দেশ্যে সে রওয়ানা দিল হেদায়েতের বাসায়।
সাংবাদিক শুনে হেদায়েত সাদরে অভ্যর্থনা জানাইলো। ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পর তো সাংবাদিকদের আনাগোনা লেগেই আছে।
কিছুক্ষণ ত্যানা পেচানোর পর ছামচু অবশেষে ঝেড়ে কাশল। আর সেই কাশি শুনে হেদায়েতের সে কি হাসি......
হেদায়েত সংক্ষেপে যা জানাইল তা হচ্ছে সে নিজে পড়ালেখা করছে ভালমতন,চান্সও পাইছে আল্লার রহমতে। কুচিং এ তো সবাই ই ভর্তি হয়-অভিমত হেদায়েতের।
-মানে?ছামচু শুধায়।
-আরে ভাই ওই খামাখা আর ফাটাবাঁশ এর একটাতে আমি শুরুতে ভর্তি হইছি আর আরেকটাতে শেষেরদিকে ২/১ টা মডেল টেস্ট দিছি।
-কিন্তু তাইলে বিজ্ঞাপন?
-আররে,বিজ্ঞাপন। জাস্ট মডেল টেস্টের জন্য ভর্তি হইতে গেছি তাতেই ছবি,স্কুল,কলেজ,নাম,বাপের নাম,ভাইয়ের নাম,মায়ের নাম,বোনের নাম,গার্লফ্রেন্ডের নাম সব ইনফরমেশন লয়া লইলো। আমার ত মনে হইতাছিল কোন পুলিশী ইনভেস্টিগেশনের সামনে পড়ছি।
-বুঝলাম,কিন্তু গার্লফ্রেন্ডের নাম??
-সরি,ভুল হইছে,স্লিপ অফ টাং। ওইটা চায় নাই।
মনে হয় শুধু ওইটাই বাকি ছিল
-আচ্ছা,তাইলে এইডাই ওগো পলিসি। বুঝলাম। কিন্তু চানরাইতআইজ এর বিজ্ঞাপনটা,ওইডাতে যে তোমার বক্তব্য ছাপা হইছে.......
-ও,ওইডা ত এক বিশাল কাহিনী। রেজাল্টের দিন রাইতের বেলা বাসায় আইসা মার কাছ থেকে শুনলাম মির্জা নুন ভাই ফোন দিছিলো। আমারে দাওয়াত দিছে।
-নুন ভাইডা আবার কে?
-আরে চানরাতআইজ কুচিং এর পরিচালক। হেরেও চেনেন না। কেমুন সাংবাদিক আপনে??
মনে মনে ছামচু কয়-২ টাকার পত্রিকার সাংবাদিক। নুন-মসলাগো চেনার টাইম কই?সারাদিন ব্যস্ত থাকি অপূর্ব-প্রভারে লইয়া ।
-হুমম,তারপর বলো।
বাস্তবে ফেরে ছামচু।
-গেলাম,এতবড় কুচিং এর পরিচালকের দাওয়াত। কবুল না করলে কেমন হয়.....
-তা কি বল্লো লবন ভাই?
-লবণ ভাই না,নুন ভাই। মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ।
-চরি,ক্যারি অন।
-তিনি আমার কাছে চাইলেন আমার ছবি আর একটা সই।
-সই?কিসে?? দলিলে??সম্পত্তি লিখে দিতে চাইল??
-ধুর। একটা কাগজে আমার ছবি আর আমার সাইন লাগবে। সেখানে লেখা থাকবে আমি তার কুচিংয়ে কুচিং করছি।
-হায় আল্লা,তুমি কি করলা?রাজি হয়া গেলা??
-পাগল নাকি?আমি অরাজি হইলাম।
-তারপর?
-তারপর শুরু হইল কাউন্টডাউন।
-কিসের, বিশ্বকাপের?
-আমিও প্রথমে তাই মনে করছিলাম। ৫-১০-১৫ এভাবে চলতাছিলো। পরে হঠাৎ মনে হইল বিশ্বকাপের কাউন্টডাউন তো উল্টা দিকে হয়!!
-হুমম,তাই তো।
-পরে নুন ভাইয়ের পাশে বসা তার সহকারী ও উক্ত কুচিং এর বিশিষ্ট হট টিচার জুম্মন ভাই বিষয়টা ক্লিয়ার করলেন।
-তারপর কি করলা?
-কি আর করবো ,সাইন কইরা ফেল্লাম। কাউন্টডাউন( নাকি কাউন্টআপ) জিনিসটারে এত বাড়তে দেয়া কি ঠিক??
-কিন্তু লেখাটা?
-ও,লেখা। ওনাদের ভাষ্যমতে লেখাটা অবশ্যই খামাখা আর ফাটাবাঁশ থিকা আনকমন হইতে হবে। তাই ওরাই লেখা সিলেক্ট করলো। আর আমি সাইন করলাম।
সাইন করার পর দেখি ওখানে লেখা-
আমি চানরাতআইজ ছাড়া অন্য কোথায়ও কুচিং করি নাই......
(যেহেতু ইহা একটি স্বপ্নে প্রাপ্ত পোস্ট,তাই বাস্তবের কোন ঘটনা বা চরিত্রের সাথে এর কুনো মিল নাই)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।