আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামাত "রাজনীতির" অন্দর মহলের চিত্র।



ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ধর্মীয় গোড়ামী দুটি পাশাপাশি চললে আমরা কখনোই ধর্ম বিশ্বাসকে পরিপূর্ণ ভাবে আমাদের মাঝে ধারন করতে পারব না। ধর্ম বিশ্বাসকে ধারন করতে ধর্মীয় গোড়ামী থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশে এখনও অনেকে জেনে বুঝেই ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা করছে। ধর্মের লেবাশে আবদ্ধ মুখোশধারী জামাত-শিবির কতটা ধূর্ত তার কিছু বাস্তব চিত্র আমার এ লেখায় ফুটে উঠবে। জামাত-শিবিরের টার্গেট বরাবরই দরিদ্র পরিবারের মেধাবীদের প্রতি।

জামাত-শিবিরের সাথীরা তাদের উর্ধ্বতন নেতাদের নির্দেশে দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মা-বাবাকে প্রথমে ধর্মের কথা বলে তাদের দুর্বল করে তার পারিবারিক অবস্থা জেনে নেয়। প্রথমে সুন্দর সুন্দর ধর্মীয় কথা বার্তা বলে তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে। ধর্মীয় ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের মনকে দুর্বল করে আসল উর্দ্দেশের পথে অগ্রসর হয়। অনেকটা আধুনিক বাংলা উপন্যাসের অন্যতম প্রবক্তা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ও তার উপন্যাস লালসালুর মতো। ওয়ালীউল্লাহর অন্য দু'টি উপন্যাস "চাঁদের অমাবশ্যা" ও "কাঁদো নদী কাঁদো"।

তিনটি উপন্যাসেরই মূল ভিত্তি "ভয়ভীতি"। ধর্মপ্রান মানুষকে শোষনে ভয় ভীতির কোন বিকল্প নেই। ভয়ে মানুষের চিত্ত দূর্বল হয়, সিদ্ধান্তে আসে জড়তা। বিবেচনাবোধ দ্বিধাগ্রস্থ হয়। যুগে যুগে স্বেচ্ছাচার ও স্বৈরাচার সাধারনের নিপীড়নে "ইস্তেমাল" করেছেন ভয়-ভীতি।

বিভিন্ন আনুষাংগিক ভয়ই মানুষকে টেনে নেয় দাসত্বের দূয়ারে। সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সংগঠন জামাত "ইসলামের" নামে একই কাজ করছে। অবশ্য বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে জামাতের ধর্ম বানিজ্য। বাংলাদেশে "ডেডিকেটেড" সদস্য-হান্টাররা সমাজে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে "আর্বিভূত" হয়। একদল "পাকিস্তানী সুন্নতী লেবাসে" থাকেন আল্লাহর ঘরের দখলে।

গেল শতাব্দীর চল্লিশ শতকের সংস্করনের দেওবন্দী কেতাব ও "মুসলমান পাকিস্তানের" রাষ্ট্রদ্রোহী আবুল আলা মওদুদীর "ঘৃনার" উচ্চারন গিলে উনারা আলেম সাজেন। জনগনের দেয়া মসজিদ নির্মাণের অর্থ ও এতিমখানা-মক্তবের জন্যে ধর্মপ্রানদের দান আত্মসাতের মধ্য দিয়ে উনাদের সুন্দর "ক্যারিয়ারের" সূচনা। অথচ এরাই "আল্লাহর আইন আর সৎ লোকের শাসন চায়"। পবিত্র মাদ্রসায় "এতিম" বাচ্চাদের সমকামী ধর্ষনের মধ্য দিয়ে উনাদের "বিদ্যা" পরিপূর্নতা পায়। এই শ্রেণীর ''জামাত'' হচ্ছে 'নমশুদ্র' শ্রেণীর জামাত।

মুক্তমনা- প্রগতিশীল ধর্মপ্রান মুসলমানদের নিয়মিত মসজিদে যাতায়েত ঠেকানোই এই "পাহারাদার" শ্রেণীর জামাতের কাজ। এরা দৃশ্যমান জামাত। আরেক দল ইংরেজী- আরবী-বাংলা শিক্ষিত হয়ে প্রকাশ্যে "দ্বীন-ইসলামের বাণী" বিতরণে নামে। উনারা "রোকন"। উনারা প্রকাশ্যে থাকেন দলীয় রাজনীতিতে।

অপ্রকাশ্যে থাকেন "জামাতের" বিভিন্ন অপ্রদর্শিত ব্যবসায়। জামাতের ব্যবসার লোভী হাত সর্বত্র। প্রকাশ্যে ব্যাংক-বীমা-কিন্ডারগার্টেন-মুদ্রন-চিকিৎসা-এনজিও বিভিন্ন বৈধ বানিজ্যের পাশাপাশি জামাতের এই শিক্ষিত শ্রেণী থাকেন বিভিন্ন অপকর্মের লীডারশীপে ও লিয়াজোঁতে। এই তালিকায় আছে অস্ত্র ব্যবসা, কন্ট্রাক কিলিং, বস্তিতে বস্তিতে মাদক সরবরাহ, বার্মা সীমান্তের অবাধ চোরাচালান, মধ্যপ্রাচ্যে "নারী মাংস" সরবরাহ ইত্যাদি এবং এসব কিছুই হয়ে থাকে 'পবিত্র ইসলামের" নামে। বাংগালী কাফেরদের দেশে সব না-জায়েজই 'জায়েজ" ফতোয়ার জোরে।

কোথাও কোন ব্যাপারে এদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ উঠলে "বিদ্রোহ- বেয়াদবী' দমনে ফতোয়াবাজীতে মত্ত হয় জামাত। এই শ্রেনীর কাছে 'পরকালের চেয়েও মূল্যবান ইহকালীন প্রাপ্তি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাতী শিক্ষকরা নবী পত্মী বিবি খাদিজার নামের ছাত্রীবাস নির্মামানের প্রস্তাব ছুঁড়ে ফেলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নামে ছাত্রীবাস নির্মানের ইহকালীন প্রাপ্তিতে। নারী নেতৃত্ব "হারাম" হলেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে 'হালাল" হয় ইহজাগতিক স্বার্থে মন্ত্রীত্ব লাভের আশায়। ব্যাংকের নিষিদ্ধ 'সুদ" হারাম বলে প্রচার করে ধর্মপ্রান সাধারন মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে জামাতীরা মগ্ন হয় ইসলামী ব্যাংকের লভ্যাংশের ভিত্তিতে ঋন গ্রহনে।

কিন্তু মাদ্রাসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত জামাতীরা রাষ্ট্রীয় সুদ-বানিজ্যের সোনালী ব্যাংকের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ''সুদ" গ্রহনে দ্বিধাম্বিত হয় না। আমি কখনো শুনিনি লভ্যাংশের ভিত্তিতে ঋন দেওয়া ইসলামী ব্যাংক কারো অসফল ব্যবসার ভাগিদারী হয়েছে। এই "শিক্ষিত" শ্রেণী নিজেদের ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তার ও চিরস্থায়ীতে "নিজেদের খরচে" অন্য রোকন ভাইদের, তাদের ছেলে-মেয়েদের, দরিদ্র পরিবারের মেধাবীদের তাদের স্বার্থের জালে আটকিয়ে বিভিন্ন উচ্চভিত্ত কলেজ সহ বিদেশে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে ব্যারিষ্টার, ডাক্তার, ম্যাজিষ্ট্রেট, শিক্ষক বানিয়ে আনেন এবং তাদের পক্ষে মিডিয়া সহ নিজের মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত সংবাদ পত্র সাময়িকীতে তাদের অপকর্ম জায়েজ করতে এদের লেখনীর আশ্রয় নিয়ে নিজেদের অপরাধ ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করেন। আমাদের সোনার বাংলাদেশ নামক ব্লগেও এরকম কিছু ব্লগার আছে। ইতিমধ্যেই তাদের পরিচয় আপনারা পেয়েছেন।

জামাত বিরোধী কোন লেখা প্রকাশ পেলে যেভাবে মাইনাচের হিড়িক পড়ে তাতে মনে হয় এই ব্লগও নিয়ন্ত্রন করেন জামাত-শিবির পন্থী মডারেটররা। মাঝে মাঝে লক্ষ্য করা যায় কোন কোন লেখায় মন্তব্য আসার আগেই মাইনাচ পড়ে। এটা কিভাবে হয় আমার বোধগম্য নয়। চোর- ডাকাতের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান পুলিশ ও উকিল। জামাতের রাজনৈতিক জীবনে এই দুয়ের আধিক্য লক্ষ্য করার মত।

পেশাগত জীবনে জামাতী পুলিশ ম্যাজিষ্ট্রেটরা "উপরি" খাওয়া কিন্তু বন্ধ রাখেননি। তাদের এই উপরি কামাই দিয়ে বিভিন্ন লাভ জনক ব্যবসার শেয়ার কিনছে, নামে বেনামে জমি, কিন্ডার গার্টেন তৈরী করে সেটাকে জামাত তৈরীর কারখানায় পরিনত করে। আমার এলাকায় এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান ইদানিং চোখে পড়ে। এ ব্যাপারে জামাত-শিবিরকে জিজ্ঞেস করলেই একটা ফতোয়া বা কোরআন হাদিসের কথা বলে আপনাকে ধামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। ইসলামে গান-বাজনা নিষিদ্ধ হলেও উনাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যরা কিন্তু "দিগন্ত" টিভিতে হারমোনিয়াম হাতে নিয়ে গান বাজনা করে যাচ্ছে।

প্রশ্ন করলেই ইসলামী সংগীততের কথা বলে ফতোয়া হাজির করবে। এরা সব দৃশ্যমান জামাত। ধর্ম বানিজ্যে "এনারা" প্রকাশ্যে। কোন লুকোচুরির বালাই নাই। এই শত্রু চিহ্নিত শত্রু।

কিন্তু এনাদের চেয়েও ভয়ংকর হচ্ছেন "তেনরা"। সরকারের ছদ্মবেশী গোয়েন্দা-গুপ্তচরের মতই এই তেনাদের চেনার জো নেই। সহজে ছুরিকাঘাত করার প্রয়োজনে এরা থাকেন সাধারনের "হৃদপিন্ডের" কাছাকাছি। এরাই শত্রু ভয়ংকর । সমাজে এরা নিজেদের পরিচিত করে ভদ্রবেশী মানুষে।

অথচ এদের দ্বারাই সমাজের ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশী। এরা ধর্মের মুখোশ পড়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে সমাজের ধর্মভীরু মানুষকে প্রতারিত করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করায় ব্যস্ত থাকে। পতিতাদের মতই মধুর হাসির ভদ্রতা এদের সর্বাঙ্গে। এই শ্রেণীর জামাতীদের প্রধান ও প্রথম কর্তব্য মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়ানো। 'Morally" মানুষকে 'Guilty" বানানো।

প্রবাসে জামাতীদের প্রকৃত স্বরূপ এটাই। জনগন যাতে জামাতী সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য তারা প্রথমেই আকারে ইংগিতে জানিয়ে দেয় "একাত্তরে তাদের বাড়ী ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি। কথাটি আংশিক সত্য। কারন তাদের বাড়ীতেই মুক্তিযোদ্ধাদের আটক রাখা হতো। কেবল বলে না, সেই ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর চর্চার হতো।

এরা দুনিয়াদারীর বিষয়ে মানুষকে বিভিন্ন ভীতিকর "এলেম" দান করে। হালাল-হারাম বির্তকে মানুষকে দ্বিধাম্বিত করে। সুদে বাড়ী না কেনার পরামর্শে জামাতী মালিকানাধীন "আর্থিক প্রতিষ্ঠানের" গ্রাহক বানায়। নিজেরা অবশ্য ব্যাংক ঋনে বাড়ী কিনে। এক্ষেত্রে এদের ফতোয়া হচ্ছে, ইহুদী-নাসারার দেশে প্রচলিত আর্থক ব্যবস্থায় একটি বাড়ী কেনা জায়েজ।

এরা ফাস্ট ফুড চেনের বিরুদ্ধে নামে হালাল-হারাম বির্তক তুলে। সাধারন মানুষকে মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত হতে দেয় না, "যদি চক্ষু খোলে যায়" এই আশংকায়। তবে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সামনের ফাস্ট ফুড চেনের খাবার ওদের কাছে হালাল। যেন ওদের জন্য ম্যাকডোনাল্ড বা কেএফসির ঐ শাখা গুলির জন্যে ভিন্ন স্থান থেকে মাংসের সরবরাহ আনে! যতদূর জানি হালাল খাবারের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল রোজগার। এছাড়াও বিধর্মীর রান্না ও পরিবেশনে "হালাল জবাইয়ের" মাংস প্রকৃতপক্ষে হালাল হয় না।

কিন্তু এরা "ক্ষুধার টানে" দিব্যি 'নান্দোস চিকেন" গিলেন হালালের নামে। ইহুদী-নাসারার সেন্টারলিংক কিংবা অন্য চ্যারিটির ফ্রি ভাউচারে এদের আপত্তি নেই। এদের বুলিতে সার্বক্ষনিক "সুন্নত গেল সুন্নত গেল" কিন্তু এরা দিব্যি সেভ করে দাঁড়ি কামিয়ে ইহুদী কোট-টাই পরে স্কার্ট পরিহিতা সহকর্মীর "ঘনিষ্ট" কাছাকাছি বসেন। এদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা শরীরের বাঁক দেখানো পোষাকাদি পরলেও ইসলাম বিপন্ন হয় না । পরনারীদের সাথে অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি ছাপা হলে, লিভটুগেদার করলে, সমকামীতা করলে ইসলাম এর কোন ক্ষতি নেই।

মসজিদে বসে কোথায় সরকারী খাস জমি আছে সেটা দখলের পায়তারায় দলিল পত্র ঘাটাঘাটি করলেও এদের কাছে সবই জায়েজ যদি এদের পক্ষে হয়। ইসলাম বিপন্ন ও অসহায় হয় যখন রাজাকার, আলবদর ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রসংগ উঠে। যখন পাকিস্তানকে তালেবান রাষ্ট্র ডাকা হয় তখন বড় দুঃখিত হয় এই জামাতীরা। নিজের স্ত্রী-কন্যারা যখন পরকীয়ায় ব্যস্ত থাকে তখন এই জামাতীরা অন্যকে ওয়াজ নসিহত করে পর্দা, ব্যাভিচার ও ধর্মীয় অনুশাসন কায়েমের কথা বলে। আসলে এই প্রবাসেও যাতে বাংগালী মূলধারা বিচ্ছিন্ন অসামাজিক জীবন-যাপনে সীমাবদ্ধ থাকে তারই অপচেষ্টায় থাকে এই জামাতীরা।

বিভিন্ন 'ধর্মীয় ভয়ে' ভীত জনবিচ্ছিন্ন মানুষকে এক সময় গ্রাস করা সহজ হয়। জামাতের প্রধান অস্ত্রই হলো প্রথমে মানুষকে ধর্মভীতির মাধ্যমে দূর্বল করে আস্তে আস্তে নিজেদের আদর্শ ও উর্দ্দেশ্যের পথে আকৃষ্ট করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা। বড়ই ছোঁয়াছে এই জামাত বীজানু........................। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ: আবিদ রহমানের কাছে। যার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা আমার এ লেখার অনুপ্রেরনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

sonarbangladesh.com/blog/HamidurRahman/12735

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.