আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিতা হক গ্যাং , রবীন্দ্রনাথ, জাজ এবং শিল্পীর দায়।

এইটা আমার ব্লগ।

মিতা হক এর একটি মন্তব্যের আলোকে আজকে এই বাঙালি মৌলবাদীদের আরো কিছু আপত্তিকর অবস্থান কে নিয়ে আলোচনা প্রাসঙ্গিক হয়ে পরেছে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তারা তাদের হেজেমনি বজায় রাখতে চান এবং গণমানুষ থেকে রবীন্দ্রনাথ কে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চান। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ কে তাদের নিজের কোটারী গ্রুপ এর মধ্যে আবদ্ধ রাখা। এই জন্যে তারা প্রয়োজনে তারা মাকসুদ এর মত একজন দেশখ্যাত শিল্পী কে জেলে পর্যন্ত ঢুকিয়েছেন।

কিছু দিন আগে ক্ষিয় ব্যান্ড এর গাওয়া জাতীয় সঙ্গীতএর চমত্কার একটা ভার্সন কে নিয়ে একটা অনর্থক কুতর্কের জন্ম দিয়েছিল। এই মৌলবাদী গ্রপ টি। এই বিষয় টা নিয়ে একটা লেখা। —————————————— আমরা বাঙ্গালিরা জাতি হিসেবে কত সৌভাগ্যবান্ যে, রবীন্দ্রনাথ এর মাপ এর একজন কবি আমাদের ভাষায় লিখেছেন। এক বিপুল ঐশ্বর্য তিনি দিয়ে গেছেন এই ভাষাকে এবং সময়ের শেষ পর্যন্ত তার এই শিল্পগুলো আমাদের মন আর মানুষ এর খোরাক হয়ে থাকবে।

আজকে প্রশ্ন জাগে রবীন্দ্র চর্চা কি এখনও সার্বজনীন হতে পেরেছে বা উল্টো করে বলতে গেলে ধীরে ধীরে রবিন্দ্রনাথ এর গান এর সাথে সর্ব সাধারণ মানুষের একটি দূরত্ব সৃষ্টি হছে কি? শুধু সুশীল ভাব ধরা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী কি এখন রবি বাবুর গানকে মানুষের কাছে পৌছানোর বাধা হয়ে দাড়িয়েছে ? এবং যার ফলে উনার গান আজ মানুষের থেকে দুরে চলে যাচ্ছে ? উত্তরটা হয়ত , হা। একটা মফস্বল এর দোকানে বসলে, গান এর যন্ত্র থেকে শোনা যাবে, একটা আঞ্চলিক গান বা হাবিব এর গান বা রবি চৌধুরি এর গান। রাস্তা এর জ্যাম গাড়িতে বসে গলদ্ঘর্ম হতে হতে বেশির ভাগ সময় এফএম দিয়ে বেশি আসবে, হাবিব, ফুয়াদ বা অর্ণব এর গান বা হিন্দি গান । একজন টিন এজ ছেলে, কলেজ থেকে ফিরে বাসায় এসে আই পড এ, রবীন্দ্রনাথ এর গান শুনছে, নাকি শুনছে ব্ল্যাক বা হিপহপ মিলা এর গান। টিভিতে চ্যানেল চাপতে চাপতে যখন ঘরে ফেরা কর্মজীবী মধ্যবিত্ত নাগরিক যখন একটা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর গান দেখছেন তখন তিনি কি মনোযোগ দিয়ে পুরোটা শুনছেন নাকি চ্যানেল চেপে চলে যাচ্ছেন ৯ এক্স এ মুন্নি বদনাম হুয়ি বা ডিনকা চিকা ডিনকা চিকাতে।

উপরের প্রশ্ন গুলোই বলে , রবীন্দ্রনাথ এখন মূল জনগোষ্ঠির দৈনন্দিন জীবন এর আবশ্যিক অংশ নেই। তাই বলে সমসাময়িক জীবনে রবিন্দ্রনাথ এর গান কি অপ্রাসঙ্গিক ? শিল্পের সমসাময়িকতটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন আমরা ঘরে ঘরে চর্যাপদ বা পুঁথি পাঠ করিনা। শিল্পের সমসাময়িকতটাকে অস্বীকার করে একটা শিল্পকে ধ্রুপদ এর প্যাকেট পরিয়ে, সোনার বাক্সে লক করে জনমানুষ এর কাছ থেকে দুরে রাখাটা ভীষণ অন্যায়। অন্তত রবিন্দ্রনাথকে এই ট্রিটমেন্ট দেয়াটা ঠিক নয়।

কারণ তার তার গান ক্লাসিক। তার গান যুগে যুগে বাঙ্গালি এর ভাল লাগার মত গান। রবীন্দ্রনাথ এর কথা আর সুর অনবদ্য এবং রবিন্দ্রনাথ এর প্রচুর গান রয়েছে, যা ঠিক মত উপস্থাপন করলে আজকের শ্রোতা তা লুফে নেবে এবং সকাল বিকেল তাই জপতে থাকবে। গান হিসেবে এই গান গুলো এর সাথে আজকালকার গীতিকার সুরকারদের গান এর তুলনা করা বালখিল্যতা। অনেক গভীর, অনেক সরল, অনেক মনমনকাড়া , অনেক হৃদয়গ্রাহী এবং অনেক প্রেরণাদায়ী গান রবিন্দ্রনাথ এর।

তবুও কেন, কেন রবিন্দ্রনাথ এর গানে এই জনগোষ্ঠি বুদ হয়ে নাই ? ব্যাপারটা সাইকোলজিক্যাল। যে যুগ এর শ্রোতাদের যে ধরনের গান শোনার অভ্যাস, সে সেই ধরণের গানকেই আপন করে নেয় এবং এই গানকেই সে সারা জীবন খুজতে থাকে। আমরা কৈশোরে যে ধরণের গান শুনি সেই সব গান এর জন্যে আমাদের একটা আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। এই জন্যে আমার পিতা মান্না দে শুনতেন, আর আমি যখন ওয়াফেজ বা জেমস এর গান শুনেছি, আমার পিতা নাক সিট্কেছেন। আজ যখন ডিজ্যুস জেনারেশন এর ছেলে-পেলেকে, হিপ হপ শুনতে দেখি, আমি নাক সিট্কাই।

ওগুলো গান হল নাকি ? কিন্তু এইটাই মানব সাইকোলোজী। এইটা গান এর এ্যাকসেপট্যানন্স এর একটা গুরুত্বপুর্ন উপাদান। এইটা হালের রবীন্দ্র সংগীত এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একজন যে রবীন্দ্রসংগীত শুনে বড় হয়নি, নিছক পাকে না পরলে সে একজন রবীন্দ্রপ্রেমী হয়ে উঠবেনা। চ্যানেলে রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী দেখলেই সে চ্যানেল চেইন্জ করে যাবে, তার প্রিয় প্রোগ্রাম এ।

এই শ্রোতারা জানতেও পারছেনা কি অসাধারণ গান এর মুগ্ধতা থেকে বঞ্ছিত হছে তারা। প্রেমে পরার পর আইপড এ রবীন্দ্রনাথ এর প্রেমের গান শুনে সে শিহরিত হচ্ছেনা। ছেঁকা খাওয়ার পর সে রবিন্দ্রনাথ এর বিরহের গান শুনে নিজের হৃদয়কে খুড়ে বেদনা জাগাতে পারছেনা। তাকে নির্ভর করতে হছে হাবিব, ফুয়াদ আর বালাম এর কিছু অসম্পূর্ণ অনুভূতি এর গান এর উপর। যা তার অনুভূতিকে কোন মাত্রাই যোগ করতে পারছেনা।

হয়ত কেউ কেউ বলবে, এইটি শ্রোতার ব্যর্থতা। কিন্ত তা নয়, এই টা শিল্পী এর দায়। শিল্পী এর দায় শিল্পকে মানুষ এর কাছে পৌঁছানো। এখানেই বাঙ্গালি এ্যারানন্জার, কম্পোজার, প্রডিউসারদের ব্যর্থতা। হয়তো টানতে টানতে এই ব্যর্থতা আবার গিয়ে পরবে সেই সব কূপমণ্ডুক রবীন্দ্রপ্রেমীদের ঘাড়ে – যারা সুশীলতার মোড়কে, এমন ভাবে রবীন্দ্রনাথকে প্যাকেট করেছেন যে, রবিন্দ্রনাথ এর শুদ্ধতার মধ্যে কোন ত্রুটি দেখলে তারা গোড়া ধর্ম ব্যবসায়ীদের মতোই প্রতিক্রিয়া দেখান।

তাদের এই প্রতিরোধ জনমানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথ এর পৌঁছানোর বড় একটা বাধা। এই বাধা নেই, লালন এর গানে। তাই লালন এর গান আজ ছড়াচ্ছে। নতুন মাত্রা ধরে লালনকে প্রকাশ করছে একজন শিল্পী। তাই লালন আজ অনেক মুক্ত।

নতুন জেনারেশন এর শিল্পীদের হাতে লালন আজ ছড়িয়ে পড়ছে ব্যাপক ভাবে। এদের মধ্যে অনেকেই নিম্ন মানের কাজ করছে, আবার অনেকেই চমৎকার ভাবে উপবেশন করছে লালন। কিন্তু মূল যে বিষয়টি তা হল, লালন এর অনেক গান মানুষের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। রেডিওতে শোনা যাচ্ছে, ডিস পাল্টে লালন এর গান যখন আসছে, তখন সে পাল্লা দিচ্ছে, শিলা কি জাওয়ানী এর সাথে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বাকসো, বাকসো ভরা, হিরে, ,মতি,কোহনুর এবং হাজার হাজার অমূল্য জহরত আজ রাজপ্রাসাদের অন্দর প্রকোষ্ঠে, শুধু রাজাদের ভোগ এর জন্যে রয়ে যাচ্ছে।

মানুষ এর কাছে যাচ্ছে না। এত দূর পর্যন্ত যুক্তি আমাদের বোদ্ধাদের মধ্যে যারা একটু মুক্ত মনা তারা সাধারণত মেনে নেন। তারা বলেন, ঠিক আছে কর। তোমাকে করতে মানা করছে কে। কিন্তু কথা সুর বিকৃত করতে পারবেনা।

সেতো আরও বড় দায়রে বাবা। একটা ঘর ভাঙ্গবো, কিন্তু ড্রয়িং রুম এ ধুলা পরবেনা । এ কেমন কথা। একজন শিল্পীকে লিমিটেশন এর মধ্যে কাজ করতে হবে কেন। ব্যাপারটা হয়তো লিমিটেশন এর না।

ব্যাপারটা অন্যখানে। ব্যাপারটা সেল্প এক্সপ্রেশান, শিল্পী এর নিজেকে প্রকাশ এর। যে কোন সার্থক শিল্পের একটাই উদ্দেশ্য, তা হছে নিজেকে প্রকাশ করা। নিজের অনুভূতিকে প্রতিষ্ঠা করা,সেল্প এক্সপ্রেশান । রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে সেল্প এক্সপ্রশান এর গুরু।

তিনি নিজেকে হাজার হাজার গানে, কবিতায় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু একজন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী কি একটা তোতা পাখি ? শুধু লাইন লাইন কে লাইন স্বরলিপির মত গেয়ে যাওয়াই তার কাজ ? তার কোন আত্মপ্রকাশ এর তাড়না নেই ? সে কি পারেনা একটা রবীন্দ্র সংগীতকে সে নিজের মত করে উপস্থাপন করতে? কার অধিকার আছে তার এই শিল্পী সত্ত্বাকে বাধা দেয়ার ? এইখানেই আসে জাজ এর কথা। জাজ প্রাশ্চাত্তের সব চেয়ে উন্নত ফর্ম এর মিউজিক। সংগীত এর ক্ষেত্রে উন্নত, অনুন্নত এই কথাটা বলতে আমি ভয় পাই। বাট জাজ এর ক্ষেত্রে এই কথাটা খাটে।

জাজ অনেক কঠিন একটা ঘরানা। যে কেউ চাইলেই জাজ করতে পারেনা। ভারতে আছেন অনেকেই। ওস্তাদ জাকির আলি, বালা সুমব্রিনিয়াম, আর রাহমান সবাই জাজ আর্টিস্টদের সাথে ফিউশান করেন। এই যুগে, জাজ খুবি ঘনিষ্ঠ ভাবে ফিউশান এর সাথে যুক্ত।

আজ তাই আফ্রো জাজ,ল্যাটিন জাজম, ইন্ডিয়ান জাজ,এই ঘরানা গুলোতে জন্ম নিয়েছে ফিউশানএর আলোকে। রবীন্দ্র আলোচনার সাথে জাজ খুব প্রাসঙ্গিক। এইটা বুঝতে হলে, আমাদের দেখতে হবে জাজ এর বৈশিষ্টগুলো কি। রক, পপ,সোল , আধুনিক, ভাটিয়ালি, সব ধরণের গান এর কিছু নিজস্ব মৌলিক বৈশিষ্ট রয়েছে এবং জাজ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ইমপ্রোভাইজেশন এন্ড এবং সেল্প এক্সপ্রেশান। এর বাদে আরও কিছু জাজীয় বৈশিষ্ট্য আছে, যেমন জটিল হারমোনি (কর্ড ), অল্টারেড কর্ড এবং ইম্প্রভায়জেশান ।

জ্যাজ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো‌ ইমপ্রোভাইজেশন। একজন জ্যাজ শিল্পী একটি আট পৌওরে গানকে নিয়ে সম্পূর্ণ, ভেঙ্গে চুরে , দুমড়ে মুচড়ে সম্পূর্ণ নতুন কিছু সৃষ্টি করবেন। এইটাই জ্যাজ এর মূল স্পিরিট। কিছু গান আছে, যাদেরকে বলা হয়, যাজ্ স্ট্যান্ডার্ড। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায় অটামন লিভস।

অসম্ভব মিষ্টি একটা গান। এই অটামন লিভস গানটা…. লেখা আর … সুর করা। এই ভদ্রলোক মরে টরে দোজখে চলে গেছে … বছর আগে। কিন্তু সারা পৃথিবীর জ্যাজ শিল্পীরা এখন অটাম লিভস এ মেতে আছেন। খুঁজলে অটাম‍ লিভস গানটি এর কমপেক্ষে এক হাজার রকম ভার্সন পাবেন, ইয়োটিউব-এই ।

সুর, তাল, হারমোনি, লয় সব কিছু ভেঙ্গে পৃথিবীতে এক এক শিল্পী অটাম লিভস গেয়েছেন এক ভাবে। কেউ গেয়েছেন দ্রুত লয়ে, কেউ ধীরে, কেউ আবার মূল সুরকে রেখে অল্প জায়গায় পরিবর্তন করেছেন। কেউ আবার সুরকে ভেঙ্গে চুরে এমন করেছেন, তাতে বোঝা মুশকিল হয় এইটা অটামন লিভস কিনা। অটামন লিভস এর আমার ব্যক্তিগত ও প্রিয় দুটো ভার্সন ইভা কেসিডির গাওয়া। একটা ষ্টুডিও ভার্সন আর একটা লাইভ।

এর মধ্যে লাইভটা ইভা অসাধারণ গেয়েছেন, আর ষ্টুডিও ভার্সন টায় ইভার গাওয়া এবং এ্যারেন্জমেন্ট আমার বোরিং লেগেছে। কিন্তু এইটাই জ্যাজ এর আনন্দ -সৃষ্টির আনন্দ। এইখানেই অটামন লিভস গাওয়ার আনন্দ। আপনি আপনার মত করে গাইলেন। ইমপ্রোভাইজ করলেন।

একটা প্রোগ্রাম-এ দর্শক এর সাথে ইন্টারএ্যাক্ট করলেন। শ্রোতাদের উচ্ছ্বাসের উঠে-নামা এর সাথে শিল্পী তার এক্সপ্রেশান এর উঠা নামা করেন অডিয়েন্স এর সাথে কানেক্ট করেন। এইখানেই একজন গায়ক স্রষ্টা হয়ে ওঠেন। আজ একজন জ্যাজ শিল্পী যখন একটা রবীন্দ্র সংগীত গাইবেন, তখন এইটি হয়ে উঠে আরেকটি শিল্প কর্ম । রবীন্দ্রনাথ থেকে ভাল না খারাপ সেটা বিষয় নয়।

বিষয় হলো ইমপ্রোভাইজেশন। বিষয় হল সেল্প এক্সপ্রেশান । এইটা এই শিল্পীর নিজের হয়ে উঠবে। (অনেকে হইত শঙ্কাই মূর্ছা যাচ্ছেন। ). এইখানে রবীন্দ্রনাথ আর মুখ্য নয়, গানটি মুখ্য, সে গান এর প্রকাশটা মুখ্য।

এই শিল্পী এর আত্ম অনুভূতির প্রকাশই মুখ্য। ভাল-খারাপ, গ্রহণযোগ্যতা, অগ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণের দায় শ্রোতার। কিন্তু শিল্পীর দায় সৃষ্টি করা। এই পরিবর্তনটা শিল্প, তোতা পাখির মত গাওয়াটা শিল্প নয়, অনুকরণ। হয়ত আমাদের যারা রবীন্দ্রসংগীত গান, তারা নিজেদের শিল্পী মনে করেন না।

তারা নিজেদের মনে করেন তোতা পাখি। তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে বিশেষ ঢঙে, বিশেষ স্টাইল- এ। কেমন যেন টেনে টেনে অল্প কিছু যন্ত্র অনু সংগের সাথে রবীন্দ্র সংগীত গাইতে। এইখানে এ্যারেন্জমেন্ট-এ কোন প্রাণ নেই, চ্যালেন্জ নেই, রিদম পার্টকে ইন্টারেসটিং করার কোন দায় নেই, শুধু মাত্র সুন্দর করে যন্ত্রের মত ১০০ শত ভাগ স্বরলিপি অনুসারে গেয়ে যাওয়াটাই স্বার্থকতা । তাহলে আর এই শিল্পীর গান শোনার দরকার কি, সিডি ছেড়ে দিলেই হল।

এখানে সেলফ -এক্সপ্রেশান এর কোন ব্যাপার নেই, এখানে যে কোন পরিবর্তন হারাম-কবিরা গুনা। সুরের ব্যাপারে তারা এত সেনসিটিভ যে, দামি ডিনার সেট যেভাবে সাবধানে গেস্টদের সামনে দিতে হয়, রবীন্দ্র সংগীতকেও সেভাবে পরিবেশন করেন তারা। এতোই ঠুনকো যে একটু নারা কারা করলেই ভেঙ্গে যাবে। বাট রবিন্দ্রনাথ এর গান এত ঠুনকো নয়। আজ আমরা ক্রিয়েটিভিটি এর সঙ্কট এ আছি।

নতুন গান এর সঙ্কটে আছি। হিন্দি সিরিয়াল আর শিলা কি জাওয়ানি এর বেডরুম আগ্রাসন এর মুখে দাড় করানোর মত শক্ত প্রতিপক্ষ আজ আমাদের হাতে তেমন নেই। আছে রবিন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন এরাই। করপোরেট সংস্কৃতির এর এই যুগে, মৌলিক শিল্প সৃষ্টি হওয়ার পরিবেশ আর নেই। এই যুদের শিল্পীরা, ক্লোজআপ ওয়ান এর প্রচারণা কম্পিটিশন থেকে জন্ম নিয়ে, জি-সিরিজ আর প্রোডাকশন আর মিউজিক এর বাজারমুখী শিল্প সৃষ্টির বাধ্যবাধকতায় এই রকম বর্নে, গন্ধে,, সুরে মাধুর্যে,এক্সপ্রেশানে, ভালবাসায়, বিরহে এমন ব্যাপক, বিপুল শিল্পকর্ম সৃষ্টির ক্ষমতা রাখেন না।

কারন, সেই পরিবেশ টাই আর নাই। যুগে যুগে এমন মহামানবের প্রতিটি ভাষায় আসেনা। আমরা সৌভাগ্যবান্, আমাদের ভাষায় রবীন্দ্রনাথ এই বিপুল ঐশ্বরয দিয়ে গেছেন । হাজার বছর বা দশ হাজার বছরে রবিন্দ্রনাথ এর মত একজন মহান স্রষ্টার জন্ম হয়, যার কাজে মানব মন এর সব অনুভূতি এর প্রকাশ পাওয়া যায়। সকল অনুভূতিতে যার গান এর মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে হৃদয়কে সুরা মাধুর্যে ভেজানো যায়।

যার হাজার হাজার শিল্পকর্মের মধ্যে হাজার বছরের বাঙ্গালি এর রূপ রস গন্ধ আশ্বাদন এর সব উপাদান আছে। সেই রবীন্দ্রনাথকে, একটা সুশীলতার প্যাকেটে বন্দি করে, সাধারণ মানুষ এর কাছ থেকে দুরে রাখাটা বড় অন্যায়। রবীন্দ্রনাথকে আপনাদের প্যাকেট থেকে উন্মুক্ত করুন। শিল্পকে মুক্তি দিন, মানুষ এর কাছে পৌঁছতে দিন। সবাই বলুন।

আমিন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।