আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইহুদি সম্প্রদায় : অত্যাচারিত থেকে অত্যাচারী : বর্তমান পৃথিবীর শাসক ও সুপারপাওয়ার : (২য় পর্ব)

মানুষ নিদ্রিত এবং মৃত্যুর পরপরই সে জেগে উঠবে।
মুসলমান অধ্যুষিত মিডল ইস্টে ছোট একটি রাষ্ট্র হলেও ইসরেলকে স্পর্শ করতে পারে না কেউ। ইসরেল প্রতিষ্টার সময় ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৬, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালে আরবদের সঙ্গে ইসরেলের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধগুলোতে ইসরেল এগিয়ে যায়। আরবরা কিছুই করতে পারেনি বরং অনেক সময় নিজেদের জায়গা হারিয়েছে।

মানচিত্রে বর্তমান ইসরেল-প‌্যালেষ্টাইন প্যালেষ্টিনিয়ানদের নিজ আবাস ভূমি থেকে উৎখাত করে জুইশ (Jewish) কমিউনিটি বা ইহুদি সম্প্রদায়ের নিজস্ব আবাসভূমি ইসরেল সৃষ্টি ও তাকে রক্ষা করার প্রতিটি পর্যায়ে পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকা, সবসময়ই সর্বাত্মক সমর্থন যুগিয়ে এসেছে। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, পরোক্ষভাবে ইহুদিরাই বিশ্বকে শাসন করছে। একটি সম্প্রদায়ের অল্প কিছু মানুষ কিভাবে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরো বলা হয়, আমেরিকা পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করে আর আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে জুইশ কমিউনিটি। বিশ্বের অস্ত্র, মিডিয়া, ব্যাংক থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই জুইশ কমিউনিটির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে পুরোপুরি।

আর এ কারণে গত ৫০ বছরেরও বেশী সময় ধরে প্যালেষ্টিনিয়ানদের উপর যে নিপীড়ন তারা চালিয়েছে তাকে ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন (Clash of Civilization)-এর মোড়কে ঢুকিয়ে বৈধ করে নিয়েছে পশ্চিমি সমাজ। মানচিত্রে সভ্যতার সংঘাত আমরিকার ইসরেল প্রীতি বিশ্বের নিয়ন্ত্রক আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্টগণ বিশেষ করে জর্জ বুশ বরাবরই প্রকাশ্যে ইহুদিদের সমর্থন করে এসেছেন। আমেরিকা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইস তার ইসরেল সফরকে বর্ণনা করেন নিজের বাড়িতে ফিরে আসা বলে। বুশ প্রশাসনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদেই বসে আছেন জুইশ কমিউনিটির সদস্যরা। এরা আছেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার, চীফ পলিসি ডিরেক্টর, পলিটিক্যাল মিলিটারি এফেয়ার্স কর্মকর্তা, বাজেট ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা, ফরেন সার্ভিস ডিরেক্টর, হোয়াইট হাউজের স্পিচ রাইটারসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ এবং পলিসি নির্ধারণের পদগুলোতে।

শুধু ভূমিতে নয়, মহাশূন্যে কাজ করার প্রতিষ্ঠান নাসার এডমিনিষ্ট্রেটর হিসেবে ডেনিয়েল গোল্ডিন ইসরেলের স্যাটেলাইট পাঠানোতে অনেক ছাড় দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক তাদের দখলে। বছর কয়েক আগে দি ইউনাইটেড জুইশ কমিউনিটি ঘোষণা দিয়েছিল, ২০০৭ সালে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে আরে ২৫ মিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ড দেবে। ফলে আমেরিকার কেউ চাইলেও এদের কিছু করতে পারবে না। বরং জুইশ কমিউনিটি বা ইহুদি সম্প্রদাকে হাতে না-রাখলে ক্ষমতায় টেকা যাবে না।

এসব কারণে শুধু জুইশ কমিইনিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসেডেন্টের প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যেতে হয়। আমেরিকার রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে মূলতঃ কর্পোরেট হাউজগুলো। তারা প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত বানাতে পারে, সরাতে পারে। এসব কর্পোরেট হাউজগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় এদের মালিক কিংবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কম্পানিগুলোর মূল দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা চীফ এক্সজিকিউটিভ অফিসার, সিইও হলেন জুইশ কমিউনিটির মানুষ। এ কথা মাইক্রোসফটের ক্ষেত্রে যেমন সত্য তেমনি জাপানিজ কোম্পানি সনির আমেরিকান অফিসের জন্যও সত্য।

প্রায় অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পদে জুইশ আমেরিকানরা কাজ করছেন। জুইশ কমিউনিটির ক্ষমতাধর বিলিয়নেয়াররা মিলিতভাবে যে-কোনো ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারেন। সেটা হতে পারে অর্থে, অস্ত্রে কিংবা মিডিয়ায়। মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ : হাতের মুঠোয় পৃথিবী বিশ্বের এবং বিশেষ করে আমেরিকার জনগনের মূল নিয়ন্ত্রক মিডিয়া। তারা টিভি দেখে, মুভি দেখে, অনলাইনে কিছু নির্দিষ্ট সাইট দেখে এবং পেপার পড়ে।

স্কলারদের বাদ দিলে সাধারণ আমেরিকানদের মন এবং মনন পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে মিডিয়া, বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলো। টাইম ওয়ার্নার ভবন আমেরিকার অন্যতম বড় মিডিয়া গ্রুপের নাম টাইম-ওয়ার্নার। এ গ্রুপের অধীনে পত্রিকা, অনলাইন বিজনেস, মুভি প্রডাকশন হাউজ এবং টিভি চ্যানেল সবই আছে। যারা নিয়মিত টিভি দেখেন বা মুভি সম্পর্কে খোঁজ রাখেন তাদের কাছে ওয়ার্নার ব্রাদার্স নামটা খুবই পরিচিত। প্রায় ১০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা ছিলেন ইহুদি এবং বর্তমান চীফ এক্সজিকিউটিভ অফিসার বা সিইও জেরাল্ড লেভিন-সহ এর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদই ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে।

টাইম ওয়ার্নারের আরেক প্রতিষ্ঠান আমেরিকা অনলাইন (AOL)। এই প্রতিষ্ঠানটি ৩৪ মিলিয়ন আমেরিকান সাবস্ক্রাইভার (Subscriber) নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে পরিচিত। টিনএজার, নারী ও শিশুদের টার্গেট করে নামা এওএল (AOL) এখন জুইশ কমিউনিটির প্ল্যাটফরমে পরিণত হয়েছে। নব্বই এর দশকে ইরাক ওয়ার কাভার করে আমেরিকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে CNN টিভি চ্যানেলটি। এর মালিক টেড টার্নার বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেলেও এক পর্যায়ে চ্যানেলটি চালাতে ব্যর্থ হয়ে আত্মসমর্পণ করেন টাইম ওয়ার্নার গ্রুপের কাছে।

তিনি নামে থাকলেও মূল ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে টাইম ওয়ার্নার। ৭০ মিলিয়ন দর্শকের চ্যানেল CNN কিভাবে খবর বিকৃত করে তার একটি ছোট উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে নাইন ইলেভেন টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দৃশ্য দেখানো হচ্ছিলো প্রতিক্রিয়া হিসেবে। হঠাৎ দেখা গেল প্যালেষ্টাইনিরা আকাশে গুলি ছুড়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। এতে বোঝা যায় তারা টুইন টাওয়ার ধ্বংসে খুশী।

কিছুদিন পর CNN খুব গুরুত্বহীনভাবে টেলপে জানায়, প্যালেষ্টিনিয়ান ফুটেজটি ছিলো পুরনো। তা ভুল করে সেদিন দেখানো হয়। কিন্তু ততদিনে পৃথিবীতে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে এ কাজ মুসলমানদের। আমেরিকার সবচেয়ে বড় পে-টিভি চ্যানেলের নাম এইচবিও (HBO) । যা বাংলাদেশেও খুবই জনপ্রিয়।

আমেরিকায় এর দর্শক ২৬ মিলিয়ন। HBO চ্যানেলটি টাইম ওয়ার্নার-এর অর্থাৎ পুরোপুরি ইহুদি নিয়ন্ত্রিত এবং এর কথিত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে পরিচিত CINEMAX আরেকটি টাইম ওয়ার্নারের অঙ্গ সংগঠন। আমেরিকার সবচেয়ে বড় মিউজিক রেকর্ড কোম্পানি পলিগ্রাম মিউজিকও তাদের দখলে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ম্যাগাজিনের নাম এলে প্রথমেই উচ্চারিত হয় যে নামটি তা হলো টাইম। এই পত্রিকাসহ টাইম ওয়ার্নার গ্রুপে আছে লাইফ, স্পোর্টস ইলাসট্রেটেড, পিপল - এর মতো বিশ্বনন্দিত পত্রিকাসহ ৫০ টি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন।

টাইমসহ এ-ম্যাগাজিনগুলোর মাথার উপরে বসে এডিটর ইন চীফ হিসেবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন নরম্যান পার্লষ্টাইন। যিনি একজন ইহুদি। টাইম: প্রচ্ছদ > ডাবল হেলিক্স (মানব ডি.এন.এ) লাইফ: প্রচ্ছদ > সুপার মডেল নাওমি ক্যাম্পবেল বিশ্বজুড়ে শিশুকিশোরদের মনে রঙিন স্বপ্ন তৈরি করে যে প্রতিষ্ঠানটি তার নাম ওয়াল্ট ডিজনি কম্পানি। এই কম্পানির ওয়াল্ট ডিজনি টেলিভিশন, টাচষ্টোন টেলিভিশান, বুয়েনা ভিসটা (Buena Vista) টেলিভিশনের আছে কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন নিয়মিত দর্শক। সিনেমা তৈরিতে কাজ করছে ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স, টাচষ্টোন পিকচার্স, হলিউড পিকচার্স, ক্যারাভান পিকচার্সসহ আরো অনেক কিছু।

ইনডিপেনডেন্ট মুভি তৈরিতে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান Miramax Films-ও কিনে নিয়েছে ডিজনি। বিকল্প ধারার মুভি তৈরিতে Miramax অত্যন্ত জনপ্রিয়। ওয়াল্ট ডিজনি কম্পানির বর্তমান সিইও একজন ইহুদি। তার নাম মাইকেল আইসনার। আমেরিকার আরেকটি প্রভাবশালী মিডিয়া গ্রুপের নাম ভিয়াকম (Viacom)।

এর প্রধান সুমনার রেডষ্টোন-সহ বড়বড় অধিকাংশ পদেই আছেন ইহুদিরা। জনপ্রিয় সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্কসহ ৩৯টি টেলিভিশন ষ্টেশন, ২০০টি সহযোগী ষ্টেশন, ১৮৫টি রেডিও ষ্টেশন, সিনেমা তৈরির বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান প্যারামাউন্ট পিকচার্স, - তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। ভিয়াকমের আর এক ইহুদি কো-প্রেসিডেন্ট টম ফ্রেসটন-এর নিয়ন্ত্রণে আছে মিউজিক চ্যানেল এমটিভি। মুভি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল মিলে গিয়েছে এনবিসি গ্রুপের সঙ্গে। এনবিসি খুবই প্রভাবশালী টিভি চ্যানেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

এদের মূল সংগঠন সিগ্রাম (Seagram) সহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন ইহুদি মিডিয়া মুগল এডগার ব্রনফম্যান জুনিয়র। তার বাবা এডগার ব্রনফম্যান সিনিয়র হলেন ওয়ার্ল্ড জুইশ কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট। ইরাকের বিরুদ্ধে আমেরিকার আগ্রাসনকে আমেরিকানদের কাছে বৈধ হিসেবে চিত্রায়িত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ফক্স নিউজ। বিশ্ববিখ্যাত মিডিয়া মুগল রুপার্ট মারডকের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই জুইশদের সমর্থন দিয়ে এসেছে। কথিত আছে, মারডকের মা ইহুদি ছিলেন।

মূলতঃ ফক্স নিউজ যিনি পরিচালনা করেন তার নাম পিটার শেরনিন। অবধারিতভাবেই তিনি ইহুদি। রুপার্ট মারডকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সারা বিশ্বের অসংখ্য পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেল। বাংলাদেশে জনপ্রিয় ষ্টারপ্লাস-সহ বিভিন্ন দেশে নানান ধরণের এমনকি বিপরীতধর্মী চ্যানেলও তিনি পরিচালনা করেন। ভারতের ষ্টার প্লাস চ্যানেলের লোগো এবং ইহুদিদের প্রধান ধর্মীয় প্রতীক ষ্টার অব ডেভিড এর সাদৃশ্য লক্ষ্যণীয়।

টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে এবিসি, স্পোর্টস চ্যানেল, ইএসপিএন, ইতিহাস বিষয়ক হিস্টৃ চ্যানেলসহ আমেরিকার প্রভাবশালী অধিকাংশ টিভি-ই ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। আমেরিকায় দৈনিক পত্রিকা বিক্রি হয় প্রতিদিন কমপক্ষে ৫৮ মিলিয়ন কপি। জাতীয় ও স্থানীয় মিলিয়ে দেড় হাজার পত্রিকা সেখানে প্রকাশিত হয়। এসব পত্রিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ পত্রিকা যে নিউজ সার্ভিসের সাহায্য নেয় তার নাম দি এসোসিয়েটেড প্রেস বা এপি (AP)। এ প্রতিষ্ঠানটি এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন এর ইহুদি ম্যানেজিং এডিটর ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল সিলভারম্যান।

তিনি প্রতিদিনের খবর কী যাবে, না-যাবে তা ঠিক করেন। আমেরিকার পত্রিকাগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী তিনটি পত্রিকা হলো নিউইয়র্ক টাইমস্ , ওয়াল ষ্টৃট জার্ণাল এবং ওয়াশিংটন পোষ্ট। এ তিনটি পত্রিকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখন ইহুদিদের হাতে। ওয়াটারগেট কেলেংকারীর জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলো ওয়াশিংটন পোষ্ট। এর বর্তমান সিইও ডোনাল্ড গ্রেহাম ইহুদি মালিকানার তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে কাজ করছেন।

উগ্রবাদী ইহুদী হিসেবে তিনি পরিচিত। ওয়াশিংটন পোষ্ট আরও অনেক পত্রিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে আর্মিদের জন্যই করে ১১টি পত্রিকা। এই গ্রুপের আরেকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত। পত্রিকাটির ইনটারন্যাশনাল এডিশনের সম্পাদক হিসেবে মুসলমান নাম ফরিদ জাকারিয়া দেখে বা কিছু ক্ষেত্রে এর উদারতার জন্য অনেকেই একে লিবারাল পত্রিকা বা ডেমক্রেট সমর্থক হিসেবে মনে করেন।

টাইম এর পরে বিশ্বের দ্বিতীয় প্রভাবশালী এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটির নাম নিউজউইক। আমেরিকার রাজনৈতিক জগতে প্রভাবশালী নিউইয়র্ক টাইমস্-এর প্রকাশক প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইহুদিরা হয়ে আসছেন। বর্তমান প্রকাশক ও চেয়ারম্যান আর্থার শুলজবার্জার প্রসিডেন্ট ও সিইও রাসেল টি লুইস এবং ভাইস চেয়ারম্যান মাইকেল গোলডেন সবাই ইহুদি। বিশ্বের অর্থনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করে ওয়াল ষ্টৃট জার্নাল। আঠার লাখেরও বেশী কপি চলা এই পত্রিকার ইহুদি প্রকাশক ও চেয়ারম্যান পিটার আর কান তেত্রিশটিরও বেশী পত্রিকা ও প্রকাশনা সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন।

আমেরিকান মুভি ইণ্ডাষ্টৃ-র শুধু নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই নয়, এর মুভি নির্মাতা, পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যেও রয়েছে ইহুদিদের প্রাধান্য। বিশ্বখ্যাত অভিনেতা মার্লোন ব্রান্ডো কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, হলিউড চালায় ইহুদিরা। এর মালিকও ইহুদিরা। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ট্যালেনটেড পরিচালক হিসেবে পরিচিত ষ্টিভেন স্পিলবার্গ আরো দুই ইহুদি ব্যবসায়ী ডেভিড গেফিন ও জেফরি ক্যাজেনবার্গ-কে নিয়ে গড়ে তুলেছেন তার কোম্পানি ডৃমওয়ার্কস্ এসকেজি। হলিউডে এমন অসংখ্য ব্যক্তি আছেন যারা জুইশ কমিউনিটি থেকে এসেছেন।

পরিচালক বিলি ওয়াল্ডার, স্ট্যানলি কুবরিক, রোমান পোলানস্কি, উডি এলেন যেমন আছেন এই তালিকায় তেমনি আছেন কার্ক ডগলাস, মাইকেল ডগলাস, পিটার সেলার্স, জেসিকা টেনডি, এলিজাবেথ টেইলর, পল নিউম্যান, বিলি কৃস্টাল, ডাস্টিন হফম্যান, জেরি লুইস, রবিন উইলিয়ামস্। মায়ের দিক থেকে জুইশ কমিউনিটি থেকে এসেছেন রবার্ট ডি নিরো, হ্যারিসন ফোর্ড, ড্যানিয়েল ডে লুইস এর মতো সুপারষ্টাররা। এই তালিকা অনেক লম্বা। সহজে শেষ হবে না। ছবিতে > এলিজাবেথ টেলর, মাইকেল ডগলাস, পল নিউম্যান, কার্ক ডগলাস, উডি এলেন, রোমান পোলানস্কি, জেসিকা টেন্ডি, পিটার সেলার্স (ক্যাসিনো রয়াল ১৯৬৭)।

এসব ষ্টারের অংশগ্রহণই শুধু নয়, জুইশদের পক্ষে জনমত গঠনে হলিউড বা অন্যান্য অঞ্চলের মুভিগুলো ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এসব মুভির নির্মাণ কৌশল, গুণগত মান, বুদ্ধির প্রয়োগ ও বক্তব্য সবই উঁচু মাপের। ইহুদিদের নিয়ে যে বিষয়টি বেশী জায়গা করে নিয়েছে তা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি নির্যাতন বা হলোকস্ট (Holocaust) । বলা হয়, এ সময় প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা ও অসংখ্য ইহুদি নর-নারী ও শিশুকে নির্যাতন করে হিটলার-মুসোলিনির অক্ষ শক্তি। যুদ্ধ চলার সময়ই বিশ্বখ্যাত মুভি নির্মাতা চার্লি চ্যাপলিন দি গ্রেট ডিকটেটর নির্মাণ করে দুনিয়া কাপিয়ে দেন।

হিটলার এবং গরীব ইহুদি নাপিত দুই চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন। জুইশদের প্রতি তিনি অনুরক্ত কি-না এই ধরণের প্রশ্ন করা হলে চ্যাপলিন উত্তর দিয়েছিলেন, হিটলারের বিরোধী হওয়ার জন্য ইহুদি হওয়ার প্রয়োজন নেই। যুদ্ধের ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো হলোকস্ট নিয়ে অসংখ্য মুভি তৈরি হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এ ধরনের একাধিক মুভি অস্কার পুরষ্কার পেয়েছে। রোমান পোলানস্কির দি পিয়ানিস্ট, ইটালিয়ান মুভি ডিরেক্টর রবার্টো বেনিনির আধুনিক ক্লাসিক মুভি হিসেবে বিবেচিত লাইফ ইজ বিউটিফুল, এর আগে স্পিলবার্গের শিলডার্স লিস্ট এর অন্যতম।

স্পিলবার্গ বছর কয়েক আগে তৈরি করেছেন মিউনিখ নামের একটি মুভি যেখানে প্যালিস্টিনিয়ান গেরিলাদের হামলায় ইসরেলি এথলেটদের হত্যা করার বিষয়টি এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে টেন কমান্ডমেন্টস্ , ফিডলার অন দি রুফ , ফেটলেস , ডাউনফল-এর মতো মুভিগুলোতে ইহুদিদের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে। এসব মুভির ক্ষমতা এত বেশী যে, তা যে কোন দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারে। তারা যেভাবে চিন্তা করতে বলবে, সবাইকে সেভাবেই চিন্তা করতে হবে। শক্তি, বুদ্ধি এবং আবেগ সবকিছুই জুইশ কমিউনিটি মুঠোবন্দী করে রেখেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে ব্যাপকভাবে ইহুদি নিধন শুরু হয়। এসময় অসংখ্য ইহুদি জার্মানি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে আছেন গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। বিশ্ব জুড়ে ইহুদিদের উপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, - There are no German Jews, there are no Russian Jews, there are no American Jews …….. There are in fact only Jews. অর্থাৎ জার্মান ইহুদি বলে কিছু নেই, রাশিয়ান বা আমেরিকান ইহুদি বলেও নয় .... আসলে ইহুদিরা সবাই এক। ম্যাজিক জিনিয়াস আইনস্টাইন মাত্র ৫০/৬০ বছর পেরিয়ে এসেই কথার মানেটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে।

আসলেই জুইশরা সব এক। তবে তারা এখন নির্যাতিত হচ্ছে না। আর নিয়তির পরিহাস এই যে এখন তারা নির্যাতন করছে এবং বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। চলবে . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।