আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ম্যাট্রিমোনিয়াল লিগ্যাসী অব মামু



রাজশাহী কলেজের রসায়নের মেধাবী শিক্ষক অনুপম বলেছিলেন আর যাই করো শিক্ষকতা কোরোনা। এত মেধাবী সফল শিক্ষক একথা কেন বললেন? কারণ তার বাবা সমাজের সাফল্য নির্ধারক মামু পর্ষদের সঙ্গে অনুপম কে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেবার পর তারা বলেছিলেন, টিচার? তার মানে এখনো যুতমত চাকরী পায়নি। এই মামু পর্ষদ ষাটসত্তুর আশির দশক ধরে শুনতে চেয়েছে, ছেলে ডাক্তার বা ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। এই মামু পর্ষদ কন্যা সন্তানের জনকদের মাথায় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের ড্রিম ইনসেপশনের কাজ করেছেন। পাত্রীর বাপেরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের চাহিদা প্রকাশ মাত্র হড়মড় করে ডাক্তারিঞ্জিনিয়ার হতে শুরু করে আমাদের সোনার ছেলেরা।

তারা পাত্রী পেয়েছে,চাকরী পেয়েছে। ক্লিনিক করেছে,ঘুষ খেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের হেলথ সেক্টর বা বিভিন্ন প্রকৌশল সার্ভিসে ইঞ্জিনিয়ারদের অবদান দেখে গুন্টার গ্রাসের মতো জিভ কাটি লজ্জায়। মামুপর্ষদেরা বেকার শ্রেণীর লোক। জমিজমা আছে ঘুরে ফিরে খায়।

আর সাফল্যের ড্রিম ইনসেপশন করে। তো মামুরা ম্যাজিস্ট্রেট পছন্দ করে,ডিসি পছন্দ করে, এরপর পুলিশ,কাস্টমস,ট্যাক্স,নিরীক্ষণ জামাই। বিয়ের কথা বার্তার সময় ফোকলা দেতো মামু জিজ্ঞেস করে ছেলের উপরি কেমন? ছেলে গর্বের সঙ্গে হাসে। বোঝা যায় কামেল জামাই হবে। অপদার্থ সৎ জামাইদের হাসিতে গর্বের লেশচিহ্ন থাকে না।

লিবারেল মামুরা সন্দেহ করে,সত জামাই নিরোধ ক্রয় ক্ষমতা রাখেনা আর জীবন ক্রয় করিবে। সম্ভব নহে। অর্থাত সৎ তরুণেরা সমাজের স্টেপ জামাই হয়ে গেলো। নব্বুই দশকের মামুরা এমবিএ শব্দবন্ধের মানে না বুঝে উহা টাকাওলা মানুষ তৈরির ফ্যাক্টরীজাতীয় কিছু বুঝিয়া, উক্ত মামুরা কইন্যার পিতাদের এই নতুন এমবিএগুপ্তধনের সন্ধান দেন। ফলে একবিংশের প্রথম প্রভাত পর্যন্ত এমবিএ জামাই আমরা ছোটবোনের জন্য খুঁজেছি।

রিসেশনের সময় ছোট বোন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে নাইওরে এসে গেলে,মামুপর্ষদ কনফিউজড হয়ে পড়ে। তাহলে হোয়াট ইজ নেক্সট? অনুপম ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-ডিসি-পুলিশ-এমবিএদের চেয়ে সুখী এই মুহূর্তে, আর তার ছাত্ররা ওইসব লুক্রেটিভ জামাই হয়েছে। ফলে সে সাফল্যের দাবীদার অনুপমো। এই অনুপম কলেজের শিক্ষক শুনে যে মামুদল বা লীগ ছেলে চাকরী পায়নি বলে উপহাস করেছিল, তারা শাস্তি পেয়েছেন। হাসপাতালে বিনা চিকিতসায় মরেছেন, রাজনীতি করতে গিয়ে র্যাপবের রিমান্ডে মরেছেন, ডিসির ধমক খেয়ে স্ট্রোক করেছেন বা এমবিএর ইংরেজী শুনে প্যারালাইজড হয়ে গেছেন।

তবু তাদের লিগ্যাসী টিকে আছে প্রৌঢ়াভাগ্নীদের মাঝে। মামুদের পৃষ্ঠপোষকতায় পাওয়ারফুল জামাই পেয়ে ভাগ্নীরা একটি প্যারালেল সাফল্য নির্ধারক কিটি ক্লাব তৈরী করেছেন। এখন তারা এন আর বি জামাইদের ইন্টারভিউ নেন প্রজাপতি ক্যাফে গুলোতে। মেয়েদের মাভাগ্নীরা গৃহ অর্থনীতির চারুপাঠ দিচ্ছেন। বিদেশ ফেরত জামাইদের ব্যাপারে মামুরা উতসাহ প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে কোমা থেকে জেগে উঠছেন।

অবশ্য জামাই ডাক্তার জেনে ওবামার দেশে গিয়ে অনেকে দেখেন জামাই কিছুই করেনা,শুধু ইয়েস ইউ ক্যান বলে। অনেকে ফিরে আসে,অনেকে মেনে নেয়। ভুল করে বানরের গলায় মুক্তো পরিয়েছেন কি ফেঁসে গেছেন। বছর চল্লিশেক ঝগড়ার ইনিংস এ কেটে যাবে চারুলতার জীবন। মামুদের বিদায়ে মাতাভাগ্নীরা এখন ব্যবসায়ী বা এনটার প্রিনিয়ার জামাই খুঁজছেন।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের সমর্থনে কোন পদক্ষেপ নেই। তাই এই মুহূর্তে সাফল্য নির্ধারক খালাম্মাকূল সক্রিয় মীনাবাজারে, উদ্যোক্তা জামাইদের হ্যাঁ বলুন। শাশুড়ীকে কুয়ালামপুর ঘুরিয়ে আনা বা হজ্জে পাঠানোর মতো উদার জামাই উদ্যোক্তারা হতে পারে। এর বাইরের অন্য পেশার জামাইদের চিরকুমার পরিষদে যোগ দেয়া অথবা ইভটিজিং এর দায়ে পুলিশ হেফাজতে যাওয়্ এর বাইরে খালাম্মাদের সরল বিদ্রোহী কনে খোঁজা ছাড়া আর উপায় থাকেনা। সেই ক্ষেত্রে সাংবাদিক-শিক্ষক-ফিল্মমেকার-চিত্রকর-লেখক-কবি-গায়ক, মামু পর্ষদ ও খালাম্মাজোটের চোখের বিষ ওইসব চাকরীহীনেরা এগিয়ে থাকে।

এদের ইম্পেকেবল কম্যনিকেশন স্কিল। আর এদেরো মামু্র জোর আছে, আবেদ খান, সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম,জাফর ইকবাল,মোরশেদুল ইসলাম, শাহাবুদ্দীন, এদের সাফল্য বোকা হরিণীদের মনে অর্থহীন প্রতিভাবানদের প্রতি ঝোঁক তৈরী করে। আর হলিউড-বলিউড মিডিয়া সাপোর্ট এগিয়ে দেয় বাস্তব বুদ্ধিহীন পাত্র দের। আবেগপ্রবণ পাত্রীদের এই বিপ্লবে মামুদের সমাধী কেঁপে ওঠে। মাতাভাগ্নীরা কি পারবেন সাফল্যের মামু লিগ্যাসী অণুসরণ করতে? আগে রুমে তালা দিয়ে রাখলে লম্বা চুল বেয়ে রোমিও উঠে আসতো জানালা দিয়ে, আর এখন ধেয়ে আসে ফেসবুক বেয়ে।

ফেসবুকের প্রেম খুব নান্দনিক। শেক্সপীয়ার বেঁচে থাকলে ডেসডিমানার ফেসবুক একাউন্ট খোলা পেয়ে ওথেলোর জিঘাংসু হয়ে ওঠার গল্প লিখতে পারতেন। তবে এই অফবিট সমাজ পুরোটা নয়। এখনো মামুদের অষ্টাদশ শতাব্দীর সাফল্যের সংগার লিগ্যাসী কম্যুনিটি সেন্টারগুলোতে সানাই হয়ে বাজে,পিক দানিতে প্রতিধধনি তুলে,সুকুমারের জামাই দেখা পদ্য বাচ্চারা যখন ঘটকদের চোখ পাকিয়ে বলে, বোঝা যায় বাঙ্গালী বিবাহে মামু, একটি অভিসন্দর্ভ হতে পারে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.