!!
"তাহলে কাল দেখা হচ্ছে?"
ও পাশ থেকে হাসি ভেসে আসল, "কেন তোমার বিশ্বাষ হচ্ছে না বুঝি?"
"কিভাবে হবে? এই নিয়ে কতবার?"
মুচকি হাসি, "তিন বার!"
"উহু ম্যাডাম! এই নিয়ে চারবার। "
"জান আমার খুব ভয় হচ্ছে। "
রাগের সাথে, "আবার!"
"দেখ আমি তোমাকে হারাতে চাই না। কিছুতেই না। "
"পাখি শুন আমি তোমার ভিতরের তোমাকে ভালোবাসি।
ভালোবাসি তোমার কন্ঠকে, তোমাকে, তোমার চেহারাকে নয়। তুমি দেখতে কেমন তা দিয়ে আমার কি হবে বল?"
"তারপরও ভয় হয় যদি তুমি আমাকে পছন্দ না কর। "
"দুর কি যে পাগলামী কর না,এসব আর বলবে না। এমন তো হতে পারে তুমিই আমাকে পছন্দ করলে না, তখন?"
"আরে দুর কি যে বল না। "
"আচ্ছা জানপাখি তুমি কি পরে আসবে?"
"কি পরে আসব মানে?"
"মানে তুমি, কি পরবে, কোন রং এর জামা পরবে?"
"কেন বলত?"
"বারে তোমাকে চিনব কি করে?"
"কেন তুমি মোবাইল নিয়ে আসবে না?"
"দুর! ওখানে ঢুকে তোমাকে ফোন করতে পারব না।
"
"আচ্ছা তুমিই বল কি পরে আসব। "
"আকাশী শাড়ি। "
"শাড়ি! তোমার মাথা ঠিক আছে? আমি ওটা ভাল করে পরতেই পারি না। "
"জান প্লিজ!"
কতক্ষন চুপ থাকার পর, "আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসব। আর শুন মা ডাকছে এখন রাখছি।
"
"আচ্ছা ঠিক আছে কাল বিকাল চারটায় তাহলে আসছ তুমি। "
"হুম,এখন রাখি। "
ফোন রাখার পর আনন্দে আত্নহারা হবার উপক্রম হল বাদলের। মিতুর সাথে মোবাইলে পরিচয় প্রায় ৭ মাস ধরে। এই দুষ্ট মিষ্টি মেয়েটাকে সে এতদিনে আসলেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।
কিন্তু যতবার দেখা করার কথা বলেছে ততবার নানা করনে দেখা হয়ে উঠে নি। মিতুর অজুহাত ছিল যদি তাকে বাদলের পছন্দ না হয়। কি যে পাগলী মেয়েটা।
দুপুর গড়ানোর সাথে সাথে আনন্দের সাথে টেনশনও বাড়তে লাগল বাদলের। যদি মিতু তাকে পছন্দ না করে তবে?
ফোন বাজতে লাগল বাদলের।
"হ্যা মিতু বল। "
"এই তুমি কোথায়?"
"তুমি পৌছে গেছ?"
"কখন!"
"আর দশ মিনিট। আমি রমনাতে। "
বেইলী রোডের পিজা হাটের হিমশীতল রুমে ঢুকেও ঘামতে লাগল বাদল। হার্টবিট এখন কত?প্রথম ব্লকটায় কোন মেয়ে নাই।
দ্বিতীয়টায় ঢুকার আগে ভাল করে লক্ষ্য করতে লাগল সে। কোণার দিকে দুটো মেয়ে বসা। একজন আকাশী শাড়ি। মুখটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সামনে গিয়ে দাড়াতেই বাদলের হাসিমুখ মলিন হয়ে উঠল।
আকাশী শাড়ি পরা কালো বেটে মেয়েটা তার মিতু!শাড়িতে ওটাকে একটা মুড়ির বস্তার মত মনে হচ্ছে বাদলের কাছে।
"কি ব্যাপার বাদল তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? তুমি কি অসুস্থ?"
আমতা আমতা করে বলল, "না ও কিছু নয়। তুমি মিতু?"
মুচকি হাসি "কি ভেবেছিলে অনেক সুন্দর কেউ?"
"না মানে...."
বাদলের নজর পড়ল সাথে বসা সুন্দরীটার উপর।
"উনি কে?"
"ও আমার বান্ধবী অহনা। আচ্ছা এবার কথা বল।
"
"কি বলব?"
বারে তুমি না অনেক কিছু বলবে বলেছিলে। কথা বাদল ঠিকই বলল তবে যতটা মিতুর সাথে তার বেশী অহনার সাথে।
কিছুক্ষন পরই সে বলল, "মিতু আমি উঠছি। "
"কি বলছ! এখুনি?"
"হুম, আমার কাজ আছে। "
বিমর্ষ মিতু বলল, "তুমি না বললে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাকে আটকে রাখবে।
"
"না আমার সত্যিই জরুরী একটা কাজ আছে এখন যাই। "
রাত দশটা। বেশ কয়েকবার রিং বাজার পর ফোন ধরল বাদল। "কি ব্যাপার বল?"
"কি ব্যাপার মানে? বাদল আমাকে তোমার ভাল লাগে নি?"
"প্লিজ মিতু এখন এসব কথা বাদ দাও। আমার শরীর ভাল না রাখছি।
"
পরদিন একটানা ফোন দিতে লাগল মিতু। অনেকক্ষন পর রিসিভ করল বাদল। "এত ফোন দিচ্ছ কেন?"
আস্তে আস্তে বলল মিতু, "তোমাকে ফোন দেওয়া যাবে না?"
কিছু বলল না বাদল। ধরা গলায় মিতু বলল, "আচ্ছা আমাকে তোমার যদি পছন্দ নাই হয় তবে কেন এত কথা বলেছিলে আগে?"
"দেখ মিতু তুমি কালো হতেই পার তাই বলে এতটা তা আমি কখনই ভাবিনি। তুমি নিজে চিন্তা কর আমার সাথে কি তোমাকে মানায়?"
হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠল মিতু।
"আরে কি হল তোমার হাসি থামাও। "
"বাদল তুমি এতটা বোকা তা আমি ভাবিনি। তোমাকে বোকা বানানোর জন্য আমি এ নাটক সাজিয়েছিলাম। আসলে আকাশী শাড়ি পরা মেয়েটা ছিল আমার বান্ধবী অহনা। "
স্তম্ভিত বাদল চুপ হয়ে গেল।
অনেকক্ষন পর কোনমতে বলল,"জানপাখি তুমি বিশ্বাষ কর আমারো তাই ধারনা ছিল। তুমি দেখতে এত বিশ্রী হবে তা আমি ভাবিই নি। আমারো এমন সন্দেহ হচ্ছিল তুমি যা দুষ্ট এমন একটা কিছু করতে পার। জানপাখি আমি তোমাকে না অনেক ভালোবাসি। আমাদের আবার কবে দেখা হবে জানপাখি?"
"কখনই না!"
"কি বলছ এসব?"
"শুন বাদল তুমি আমাকে নয় আমার রুপকে ভালোবেসেছ?তোমাকে আমি কখনই এমন ভাবিনি।
ছি: বাদল ছি:"
"শুন জান আমার কথা শুন...."
ফোনটা বন্ধ করে সিমটা নষ্ট করে ফেলল মিতু। বিমর্ষ মিতু ভাবতে লাগল, এই নাটক সাজিয়ে কি জিততে পেরেছে সে? প্রতিশোধ নিতে পেরেছে কি সে? কেন জানি তার মনে হচ্ছে এই ছলনার খেলায় জিতে তার লজ্জা,অপমান শুধু বেড়েছেই।
ফুপিয়ে উঠল মিতু। অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল, ঈশ্বর কালো হয়ে জন্মানোটা কি আমার নাকি তোমার অপরাধ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।