আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাইট হো, জীভস- ষষ্ঠ অধ্যায়



রাইট হো, জীভস রূপান্তরঃ শরীফুল হাসান ছয় গুসিকে দেখে মনে হল এখনো সে গত রাতের স্মৃতি রোমন্থন করছে। মুখটে ফ্যাকাসে, চোখগুলো দেখাচ্ছে হাসের ছানার মত, কান ঝুলে পড়েছে, আর মনে হচ্ছে সে যেন কোন জলন্ত চুলার উপর দিয়ে হেঁটে এসেছে। আমি বালিসটাতে আরো গ্যাট হয়ে বসলাম আর ওকে চুলচেরা পরীক্ষা করতে লাগলাম। এটা এমন একটা সময় যখন প্রথমিক চিকিৎসা দরকার অথচ আমি কেসটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলাম। -হুম, গুসি।

- হুল্লো, বারটি - কি খবর -কি খবর সামাজিকতা শেষ হয়েছে, এবার সময় হয়েছে সূক্ষভাবে অতীতকে ফিরে দেখার। -শুনলাম তুমি বেশ ঝামেলার ভেতর দিয়ে যাচ্ছো? -হ্যা। -জীভসকে ধন্যবাদ জানাও। - এখানে জীভসের কোন ভুল নেই - পুরোটাই জীভসের ভুলে হয়েছে। - আমি তো দেখতে পাচ্ছিনা, আমি টাকা আর চাবি আনতে ভুলে গিয়েছিলাম...... - এখন তুমি জীভসকেও ভুলে যেতে পারো।

তুমি জেনে হয়তো খুশি হবে,গুসি, আমি বললাম,সে এখন তোমার এই ছোট সমস্যাটা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। মনে হচ্ছে এই কথাটা ওকে দ্বিখন্ডিত করে দিল। চোয়াল খুলে গেল, ঝোলা কান দুটো আরো ঝুলে গেল। ওকে এমনিতেই মরা মাছের মতো দেখাচ্ছিল, এখন মনে হচ্ছে মরা মাছটার বয়স এক বছর হয়ে গেছে,যা এখন পড়ে আছে নীরব কোন সৈকতে, বাতাস আর স্রোতের দয়ায়। -কি! - হ্যা - তুমি নিশ্চয়ই বলতে চাচ্ছোনা যে জীভস... -না, - কিন্তু, আচ্ছা, বাদ দাও... আমি দয়ালু কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

-জীভসকে ছাড়া তুমি ভালোই থাকবে। গতরাতে তোমার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাই বলে দেয় জীভসের বিশ্রাম দরকার। অতি সুক্ষ চিন্তাকারীরাও কখন খারাপ সময়ের কবলে পড়ে। জীভসের সাথে তাই ঘটেছে। আমি অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম বিষয়টা।

এখন সে তার নৈপুন্য হারিয়েছে। সন্দেহ নেই ব্যাপারটা তোমার কাছে একটা ধাক্কা। আমার ধারনা আজ সকালে তুমি এসেছো ওর পরামর্শ নিতে? - অবশ্যই তাই - ঠিক কোন পয়েন্টের উপর? - ম্যাডেলিন বাসেট গ্রামের দিকে গেছে ওদের সাথে থাকতে, আমি জীভসের কাছে জানতে চাচ্ছিলাম এখন আমার কি করা উচিত। - আচ্ছা, কিন্তু আমি যা বললাম, জীভস এই কেস থেকে অবসর নিয়েছে। - কিন্তু,বারটি, ... -জীভস, আমি বললাম স্পষ্টস্বরে, এই কেসের সাথে আর নেই।

আমি এখন একমাত্র দায়িত্বে আছি। - কিন্তু তুমি এমন কি করতে পারবে? আমি নিজেকে সংবরন করলাম। আমরা ঊষ্টাররা সুন্দর মনের লোক। আমরা এমন লোককে ছাড় দিতে পারি যে বিচিত্র পোষাকে সারা রাত লন্ডনে ঘুরে বেড়িয়েছে। -সেটা, আমি বললাম শান্ত স্বরে, আমি দেখছি।

বসো, ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করি। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি পুরো জিনিসটাই আমার কাছে খুব সহজ মনে হচ্ছে। তুমি বললে, তরুনীটি গ্রামের দিকে ঘুরতে গিয়েছে তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। এটা নিশ্চিত যে তুমিও সেখানে যাবে আর তার আশেপাশে ঘুরে বেড়াবে । সোজা।

- কিন্তু এতো অপরিচিত মানুষের মাঝে আমি নিজেকে মিলাতে পারবো না। - তুমি ওর সঙ্গীদের চেনোনা? - অবশ্যই না, আমি তাদের কাউকেই চিনিনা। আমি ঠোঁট কামড়ালাম। বিষয়টা একটু জটিল মনে হচ্ছে। -যতোটা শুনেছি ওরা হচ্ছে ট্রাভারস, আর যেখানে ওরা থাকে সেটা হচ্ছে ওরসেস্টারসায়ারের ব্রিঙ্কলী কোর্ট।

আমি ঠোঁট কামড়ানো বন্ধ করলাম। -গুসি, আমি বললাম , আজ তোমার জন্য খুব শুভ একটা দিন কারন আজ বারট্রাম উষ্টার তোমার ব্যাপারে নাক গলিয়েছে। শুরু থেকে যা দেখছি, আমার ধারনা আমি সমাধান করতে পারবো। আজ বিকেলে তুমি ব্রিঙ্কলী কোর্টে যাচ্ছো, গুরুত্বপুর্ন মেহমানের মতো। - কিন্তু বারটি, তুমি নিশ্চয়ই বলতে চাচ্ছোনা যে তুমি ট্রাভারসদের চেনো? - ওটা হচ্ছে আমার আন্ট ডাহলিয়া।

- ওহ,খোদা। - দেখেছো, আমি বললাম, তুমি কতটা ভাগ্যবান যে আমি তোমার পেছনে আছি। জীভস তোমার জন্য কি করতে পারবে? সে তোমাকে অদ্ভুত সাজে সাজাবে, আমার অভিজ্ঞতায় যা সবচেয়ে ফালতু কাজ ছিল আর বল নাচের অনুষ্ঠানে পাঠাবে। ফলাফল, আত্মার কষ্ট আর পরিস্থিতির অবনতি। আমি তোমাকে ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিচ্ছি।

জীভস কি তোমাকে ব্রিঙ্কলী কোর্টে নিয়ে যেতে পারবে? কোনই সম্ভাবনা নেই। আন্ট ডাহলিয়া তো ওর আন্ট না। আমি সাধারনত এসব বলে বেড়াই না। -খোদার কসম, বারটি, আমি বুঝছিনা কিভাবে তোমাকে ধন্যবাদ দেব। - ওহ আমার প্রিয় বন্ধু, প্রয়োজন নেই।

- কিন্তু আমি বলছি? - আবার কি? - আমি ওখানে গিয়ে কি করবো? - তুমি যদি ব্রিঙ্কলী কোর্ট চিনতে তাহলে এটা বলতে না। এর চারপাশে যে রোমান্টিক পরিবেশ, তা অসাধারন। আদিকাল থেকেই মহান প্রেমিকরা ব্রিঙ্কলী কোর্টেই প্রেমের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন। তুমি তোমার প্রেমিকাকে নিয়ে এর ছায়াময় পথে হাটবে। ওখানকার ছায়াময় মাঠে তোমার প্রিয়জনকে পাশে নিয়ে বসবে।

হ্রদের পানিতে নৌকায় নিয়ে ঘুরবে আর তারপরই দেখবে তুমি এমন একটা পর্যায়ে চলে এসেছো যেখানে... -খোদার কসম, আমি নিশ্চিত তুমি ঠিক কথা বলছো। - অবশ্যই আমি ঠিক বলছি। এই ব্রিঙ্কলীতেই তিনবার আমার বাগদান হয়। কোন ফলাফল হয়তো আসেনি এসব বাগদান থেকে, কিন্তু ঘটনা তো সত্যি। আমি ধোঁয়াচ্ছন্ন মন নিয়ে ওখানে গিয়েছিলাম, আমার বিন্দুমাত্র কোন ইচ্ছা ছিলনা কাউকে স্বীকার করে নেওয়ার।

কিন্তু যখনই আমি এই প্রেমময় পরিবেশে প্রবেশ করলাম, দেখলাম আমি নিঝের অজান্তেই সবচেয়ে কাছের মেয়েটির দিকে হেঁটে চলে যাচ্ছি আর আমার আত্মাকে তার কাছে সমর্পন করছি। আসলে এর বাতাসেই কিছু আছে। -বুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাইছো। আমি ঠিক এরকমটাই চাচ্ছি, যেখানে আমি কাজ করতে পারবো। আর এই লন্ডনের মতো ব্যস্ত শহরে আমার কোন সুযোগই নেই।

-ঠিক, ধরো তুমি একটা মেয়েকে প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে দেখ, এখন তুমি যদি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে যাও তো তোমাকে এমন সাহসী হতে হবে যে তুমি চাইলে তখন অলিম্পিকে স্বর্নপদক জিতে যেতে পারো। - একদম ঠিক, লন্ডন বাজে জায়গা। গ্রামের ঐ পরিবেশেই আমি ভিন্ন একজন মানুষ হয়ে যেতে পারি। আমার কি ভাগ্য যে এই ট্রাভারস মহিলাটি তোমার আন্টে পরিনত হয়েছে। - কি বোঝাতে চাচ্ছো বুঝলাম না, আন্টে পরিনত হয়েছে মানে।

সে তো শুরু থেকেই আমার আন্ট। - বলতে চাচ্ছি, কি অপূর্ব কথা যে মেডেলিন যার সাথে থাকতে যাচ্ছে সে তোমার আন্ট। - একদমই না। আমার কাজিন এঞ্জেলা আর মেডেলিন খুব ঘনিষ্ট বন্ধু। কানেসে সে আমাদের সাথেই ছিল সবসময়।

- ওহ, মেডেলিনের সাথে তোমার কানেসে দেখা হয়েছিল, তাই না? ওহ খোদা, বারটি, বেচারা বললো খুব আক্ষেপের সুরে, আমি যদি তখন সেখানে থাকতাম। বিচ পায়জামা পড়ে নিশ্চয়ই ওকে খুব সুন্দরী লেগেছে, ওহ বারটি......। - ঠিক, আমি বললাম যেন দূর থেকে। গতরাতের ঘটনার পরও একজনের কাছ থেকে এরকম উত্তেজনা আশা করা যায়না। আমি বেল টিপলাম, জীভস এলে ওকে বললাম টেলিগ্রাফ ফর্ম আর পেন্সিন এনে দিতে।

তারপর আন্ট ডাহলিয়ার কাছে সুন্দর ভাষায় একটা টেলিগ্রাম লিখলাম, উনাকে জানালাম যে আমি আজ আমার খুব কাছের এক বন্ধুকে ব্রিঙ্কলী কোর্টে পাঠাচ্ছি, যার নাম অগাস্টাস ফিঙ্ক-নটল, আপনার সান্নিধ্য উপভোগ করার জন্য, আর টেলিগ্রামটা গুসির হাতে দিলাম। -তোমার কাছের কোন পোষ্ট অফিসে পাঠিয়ে দিও, আমি বললাম, উনি বাড়ি পৌছেই টেবিলের উপর এটা দেখতে পাবেন। গুসি লাফিয়ে উঠলো, টেলিগ্রামটা হাতে নিয়ে নাচাতে নাচাতে চলে গেল আর আমি জীভসের দিকে ফিরলাম আর পুরো ব্যাপারটা সংখিপ্ত করে বললাম। -সোজা, দেখেছো জীভস, বিস্তারিত কিছু নয়। -জী,স্যার।

- কোন কষ্টসাধ্য কিছু নয়, বিচিত্র কিছু নয়, একদম প্রাকৃতিক সমাধান। -জী,স্যার। - শুরু থেকেই এই পদ্ধতিতে কাজ করা দরকার ছিল। বিপরীত লিঙ্গের দুজন মানুষ যখন কোন সুন্দর পরিবেশে প্রায় প্রতিদিনই দেখা করে, একসাথে ঘুরে বেড়ায়, এটাকে কি বলে? - ঘনিষ্টভাবে চলাফেরা করা,স্যার। -ঠিক তাই, আমি এই ঘনিষ্টভাবে চলাফেরার উপরই বাজি ধরতে চাচ্ছি।

আমার মতে এতেই কাজ হবে। তুমি তো জান, এই মুহুর্তে গুসি একটুকরো জেলির মতো। কিন্তু যখন সে প্রতিদিনই একটা মেয়ের সাথে একই প্লেট থেকে সসেজ তুলে নেবে, একটুকরো মাংস কাটবে, পাউরুটর সাথে খাবার জন্য, কেন?... আমি হঠাৎ থেমে গেলাম, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। -আহা, জীভস। -স্যার? -এখানেই বোঝা যাচ্ছে আসলে কিভাবে চিন্তা করতে হবে।

আমি মাত্রই সসেজ, মাংস, পাউরুটির কথা বলছিলাম। -জী,স্যার। - এখনও তেমন ক্ষতি হয়নি। আমার টেলিগ্রাফের ফর্ম আর পেন্সিল দাও। এক্ষুনি গুসিকে সাবধান করা দরকার।

-ওকে যেটা করতে হবে তা হচ্ছে মেয়েটার মনে এমন একটা অনুভুতি তৈরি করা যাতে মেয়েটা মনে করে গুসি তার প্রেমের অন্ধ হয়ে আছে। সসেজের উপর আক্রমন করে লাভ নেই। -না, স্যার। - ঠিক আছে, তাহলে। ফর্মটা নিয়ে আমি নিম্নোক্ত টেলীগ্রাম খসড়া করলাম।

ফিঙ্ক-নটল ব্রিঙ্কলী কোর্ট মার্কেট স্নডসবুরি ওরসেস্টারশায়ার সসেজ রেখে দিও, মাংস খেওনা। বারটি। -এক্ষুনি মাঠিয়ে দাও,তাড়াতাড়ি, জীভস। - খুব ভালো,স্যার। আমি বালিসে আরাম করে শুলাম।

-জীভস, আমি বললাম, লক্ষ্য করেছো আমি কিভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছি। তুমি নিশ্চয়ই আমার কর্মপদ্ধতি শেখার ব্যাপারে আগ্রহ বোধ করছো। - সন্দেহ নেই,স্যার। - অবশ্য এখনো তুমি আমার কাজের পুরো গভীরতা বুঝতে পারোনি। তুমি কি জানো আন্ট ডাহলিয়া এখানে কেন এসেছিল? উনি বলতে এসেছিলেন উনি যে মার্কেট স্নডসবুরি স্কুলের গভর্নর, সেখানে আমাকে পুরষ্কার বিতরন করতে হবে।

- সত্যি স্যার! আমার ধারনা কাজটা করতে আপনার মোটেও ভালো লাগবেনা। - আহ, কিন্তু কাজটা তো আমি করছিনা, কাজটা গুসির উপর গছিয়ে দেবো। -স্যার? -জীভস, আন্ট ডাহলিয়াকে এখনি টেলিগ্রাম করো যে আমি আসতে পারছিনা, আর পরামর্শ দাও যে ,আমার বদলে আমার তরুন বন্ধুকে উনি এই কাজে লাগাতে পারেন। - কিন্তু মিঃ ফিঙ্ক-নটল যদি রাজি না হন, স্যার? - রাজী হবে না? তুমি কি তাকে রাজি না হতে দেখতে পাচ্ছো? মনে মনে একটা ছবি তৈরি করো জীভস, দৃশ্য, ব্রিঙ্কলী কোর্টের ড্রইং রুম, গুসি এক কোনায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে, আর আন্ট ডাহলিয়া ওর সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে কথা বলছে, তোমার হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি, গুসি কি তখন রাজি না হয়ে পারবে? - পারবেনা ,স্যার। আপনার সাথে আমি একমত।

মিসেস ট্রাভারসের খুব শক্তিশালী ব্যাক্তিত্ব। - রাজি না হয়ে কোন উপায়ই তো নেই। সে অবশ্য পিছলে বেরুতে পারে, কিন্তু সেটা করা উচিত হবে না কারন সে মিস বাসেটের সাথে থাকতে চায়। গুসি মনে হয় কাজটা করবে আর এমন একটা কাজ থেকে আমি বেঁচে যাবো যা করতে আমার আত্মারাম খাচা ছাড়া হবার যোগাড়। মঞ্চে উঠা আর তারপর স্কুলের সব লাফাঙ্গা ছেলেদের উদ্দেশ্যে ছোট, কিন্তু ঝাঁঝালো ভাষন দেয়া,ওফ, এরকম একবার হয়েছিল আগে, তাই না জীভস? তোমার মনে আছে সেই মেয়েদের স্কুলের কথা? - পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে,স্যার।

- আমাকে কি গাঁধার মতো কাজ করেছিলাম!! - অবশ্যই আমি মনে করি সেদিন আপনি আরো ভালো করতে পারতেন, স্যার - তুমি তোমার ঐ চাঙ্গা করার বোমাটা আবার তৈরি করে নিয়ে এসো। আমার ধারনা আন্ট ডাহলিয়ার তিন ঘন্টার মত সময় লেগেছে ব্রিঙ্কলী কোর্টে পৌছতে, কেননা এর কিছুক্ষন পরই উনার টেলিগ্রামটা এলো। টেলিগ্রামটা হাতে নিয়ে এতোটাই উত্তপ্ত মনে হল যে আন্ট আমার টেলিগ্রামটা পড়ার সাথে সাথেই এটা পাঠিয়ে দিয়েছেন। টেলিগ্রামটা এরকমঃ আমি আইনগত পরামর্শ নিচ্ছি যে হতচ্ছাড়া কোন বোনের ছেলেকে বেশি শাস্তি দিলে তাকে খুন বলে গন্য করা হবে কিনা। যদি গন্য করা না হয় তো সাবধানে থেকো।

তুমি কিভাবে তোমার ফালতু বন্ধুকে আমার উপর গছিয়ে দিতে চাচ্ছো? তোমার কি ধারনা ব্রিঙ্কলী কোর্ট একটা কলোনী না অন্যকিছু? কে এই স্পিঙ্ক-বটল? ভালোবাসা। । ট্রাভারস। এরকম প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াই আমি আশা করেছিলাম, আমিও উত্তর পাঠালাম খুব সংযমের সাথেঃ -বটল না। নটল।

ভালোবাসা। বারটি। আন্ট ডাহলিয়া তার টেলিগ্রাম পাঠানোর কিছু পর, গুসি নিশ্চয়ই ওখানে পৌছেছে, কারন এর বিশ মিনিট পরেই আমি নিম্নোক্ত টেলিগ্রামটি পেলামঃ তোমার সাংকেতিক টেলিগ্রামটি পেয়েছি বারটি,সেটা ছিল “সসেজ রেখে দিও, মাংস খেওনা। ”, এই সংকেত কিভাবে ভাংবো জানাও, ফিঙ্ক-নটল। আমি উত্তর পাঠালামঃ কলিজাও বাদ দিও, চিয়ার্স, বারটি।

আমার ধারনা গুসি বাড়ির কত্রীকে সহজেই প্রভাবিত করতে পারবে, সে হচ্ছে এমন একজন সরল সোজা মানুষ আমার আন্ট ডাহলিয়ার মতো মহিলা তাকে প্রথম দর্শনেই পছন্দ করবে। যাই হোক, আন্ট ডাহলিয়ার টেলিগ্রামও পেয়ে গেলাম একটু পরঃ -তোমার এই বন্ধুটি এসে পৌছেছে, আর আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি তোমার বন্ধু হিসেবে যতটা খারাপ মনে করেছিলাম ততটা সে নয়। চোখ দুটো ভাসা ভাসা, কিন্তু অনেকটাই পরিচ্ছন্ন আর সামাজিক আর অবশ্যই নিওটদের ব্যাপারে বেশি জানে। আমি ভাবছি ওকে দিয়ে কিছু লেকচারের আয়োজন করব এলাকাতে। গ্রীষ্মকালীন হোটেল হিসেবে আমার বাড়ি ব্যবহার করার ব্যাপারে তোমার সাহস দেখে আমি অভিভুত, সাক্ষাতে তোমার সাথে কথা হবে।

একত্রিশ তারিখে তোমাকে আশা করছি। ভালোবাসা, ট্রাভারস। আমি উত্তর পাঠালাম এরকমঃ -আমার এপয়েন্টমেন্ট খাতা খুঁজে দেখলাম এই মুহুর্তে ব্রিঙ্কলী কোর্ট যাওয়া অসম্ভব। ক্ষমা করো। তু রা রা।

বারটি। উত্তরে পেলাম এই হুমকিঃ -ওহ, এই কথা? তুমি আর তোমার এপয়েন্টমেন্ট খাতা! ক্ষমা চাচ্ছো!! তোমাকে বলে রাখি ছোড়া এর জন্য তুমি চরম আফসোস করবে। তুমি যদি একমুহুর্তের জন্যও ভেবে থাকো যে তোমাকে পুরষ্কার বিতরন করতে হবেনা, তাহলে তুমি ভুল করছো। ব্রিঙ্কলী কোর্ট লন্ডন থেকে একশ মাইল দূরে, তা না হলে এক্ষুনি একটা ইট ছুড়ে মারতাম। ভালোবাসা, ট্রাভারস।

এবার আমি আমার ভাগ্য পরীক্ষা করবো, হারি বা জিতি। যত খরচ হোক এবার একটু বেশি লিখতেই হচ্ছেঃ -না, শোনো। বিস্বাস করো, আসলে আমাকে তোমার দরকার নেই। ফিঙ্ক-নটল্কে দিয়ে পুরষ্কার বিতরন করাও। তোমাকে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, সে একজন জাত পুরষ্কার বিতরনকারী, এতে তোমারই ভালো হবে।

একত্রিশের অনুষ্ঠানের জন্য আগাস্টাস ফিঙ্ক-নটল হতে পারে এক সত্তিকারের আবিষ্কার। এই সুযোগ হাতছাড়া করোনা, একবার হারালে আর পাবেনা। টিঙ্করি-টঙ্ক। বারটি। একটা ঘন্টা শ্বাসরুদ্ধ কাটার পর একটা আনন্দের জোয়ার এলোঃ -ঠিক আছে, তোমার কথায় কিছু একটা আছে, মনে হচ্ছে।

তোমাকে প্রতারনাকারী, মেরুদন্ডহীন,কাপুরুষ ধরে নিয়ে আমি স্পিঙ্ক-বটলকেই বেছে নিলাম। যেখানে আছো সেখানেই থাকো। ভালোবাসা, ট্রাভারস। মনে হল বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। মন থেকে একটা বোঝা নেমে গেল মনে হচ্ছে।

কেউ যেন জীভসের ঐ চাঙ্গা করা পানীয় পাইপ দিয়ে আমার গলায় ঢেলে দিচ্ছে। গান গাইতে গাইতে আমি রাতের জন্য তৈরি হয়ে নিলাম। ডিনারের জন্য ড্রোনসে গেলাম আর আমার সাজসজ্জার বাহার দেখে কেউ কেউ বাজে মন্তব্যও করলো। বাড়ি ফিরে সটান শুয়ে পরলাম আমার পুরানো বিছানায় বাচ্চা ছেলের মত পাচ মিনিটের মাথায়। মনে হল সবধরনের ঝামেলা থেকে একবারে মুক্তি পেয়েছি।

সকালে ফুরফুরে মেজাজে যখন চায়ের কাপে চুমিক দিচ্ছি, তখন দেখলাম আরো একটা টেলিগ্রাম এসেছে। বুকটা ভেঙ্গে গেল। আন্ট ডাহলিয়া কি মন পরিবর্তন করে ফেলেছেন?গুসি কি এমন একটা চমৎকার সুযোগ হাতছাড়া করেছে, রাতের বেলায় পানির পাইপ বেয়ে নিচে নেমে পালিয়েছে? মনের ভেতর এখন এসব টেনসন চলছিল, তখন খাম খুললাম আর পড়লাম। -স্যার? জীভস বললো, দরজা খুলে। আমি আবারো জিনিসটা পড়লাম।

হুম, বিষয়টা পরিষ্কার হয়েছে। আমি যা ভেবেছিলাম তা থেকে এটা অনেক দূরে। -জীভস, আমি বললাম, তুমি কি জানো? - না,স্যার। - তুমি আমার কাজিন এঙ্গেলাকে চেনো? - জী,স্যার। - তরুন টাপি গ্লসপকে চেনো? - জী,স্যার।

- ওরা ওদের বাগদান ভেঙ্গে দিয়েছে। - খুব খারাপ লাগলো শুনে,স্যার। - আন্ট ডাহলিয়ার কাছে থেকে জানতে পারলাম। আসলে কি ঘটতে পারে? - আমি বলতে পারছিনা, স্যার। - তুমি কিভাবে বলবে, বোকার মত কথা বলনা।

- জী,স্যার। আমি একটু চিন্তাক্লিষ্ট হলাম। -এখন আমার কাজ হচ্ছে, আজি আমরা ব্রিঙ্কলী কোর্টে যাচ্ছি। আন্ট ডাহলিয়া নিশ্চয়ই ভেঙ্গে পড়েছেন, আর এখন আমাকে তার পাশে গিয়ে দাড়াতে হবে। তুমি ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও সকাল সকাল আর ১২.৪৫ এর ট্রেনে রওনা দাও।

আমার দুপুরে খাবার দাওয়াত আছে। আমি গাড়ি নিয়ে আসবো তোমার পেছন পেছন। -খুব ভালো,স্যার। আমি আরো একটু চিন্তাক্লিষ্ট হলাম। -স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, খবরটা আমার কাছে একটা ধাজ্জা, জীভস।

- কোন সন্দেহ নেই,স্যার। - অনেক বড় একটা ধাক্কা। এঙ্গেলা আর টাপি, কি সুন্দর। কি হল হঠাৎ, কি সুখী ছিল ওরা দুজন। জীবন আসলে বড় বিষাদময়,জীভস।

-জী,স্যার। - একদম মেনে নেয়া যাচ্ছে না। - একমত স্যার। - ঠিক আছে, আমার জন্য গোসলের ব্যবস্থা করো। - খুব ভালো , স্যার।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.