আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘নাফিস’ কাণ্ডে কোটি তরুণের স্বপ্নভঙ্গ হবে কি

মানব সেবাই আমার মূল ধর্ম

বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী। এজন্য নিজেকে তিলে তিলে গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যান তারা। তারপরও সাধ ও সাধ্যের মিল না হওয়ায় তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। কিন্তু বাংলাদেশি যুবক কাজী রেজওয়ানুল হাসান নাফিসের ৩০ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের পর নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের মনে। বর্তমানে যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছেন কিংবা সেদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়ার কথা ভাবছেন তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

নাফিসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থী ভিসা পেতে কোনো সমস্যা হবে কি না এ নিয়েও শঙ্কিত তারা। তবে শিক্ষাবিদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষকসহ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নাফিসের অপরাধ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাছাড়া আমেরিকা রাষ্ট্র হিসেবে অনেক উদার। তাই নাফিসের ঘটনা অন্যদের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হবে না।

অবশ্য সাবেক রাষ্ট্রদূত হারুন-অর-রশীদ মনে করেন নাফিসের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ভিসা দেয়া পুরোপুরি বন্ধ না হলেও আগের চেয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে। তিনি ঢাকা টাইমস২৪ডটকমকে বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্র ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করে। বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের ভিসা পেতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই নাফিসের ঘটনায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে বেশি কড়াকড়ির মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। নাফিসের কারাদণ্ডের রায়ের পর যারা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে।

অনেকে এজন্য অনেক টাকাকড়ি খরচ করে বিপাকে পড়েছেন। এখন ভিসা পাবেন কি পাবেন না এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এমনই একজন শিক্ষার্থী মাহফুজুল হক জানান, তিনি প্রায় ছয়মাস ধরে নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ নেয়ার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে সবধরনের কাগজপত্রও অনলাইনের মাধ্যমে জমা দিয়েছেন। এখন অপেক্ষায় আছেন কনফার্মেশন লেটারের।

কিন্তু বাংলাদেশি যুবক নাফিসের কারাদণ্ডের রায়ের পর মাহফুজ তার স্বপ্নপূরণ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মনে করেন নাফিসের ঘটনা অন্যান্যদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি ঢাকা টাইমস২৪ডটকমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আবেদনগুলো অনেক বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে। তারা মেধাকে বেশি মূল্যায়ন করে। তাই যারা উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায় তাদের জন্য আতঙ্কের কিছু নেই।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) ঢাকা টাইমস২৪ডটকমকে বলেন, যেকোনো দেশ তাদের নিরাপত্তার জন্য যেকোনো ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারে। এটি তাদের সহজাত অধিকার। কিন্তু নাফিসের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেবে এটা ঠিক নয়। কারণ, এটি একজন নাগরিকের ব্যক্তিগত বিষয়। এটি বর্তমান সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ঘটনা নয় বা জঙ্গিবাদের পক্ষে সরকারের কোনো পদক্ষেপও নয়।

তাই এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন তিনি। নাফিসের ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের রাষ্ট্র এবং সরকারের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। এটা আমেরিকার সরকারও জানেন। এখানে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার প্রশ্ন আসে না। ’ সাবেক সংস্থাপন সচিব আলী কবীরের মতে আমেরিকার রাষ্ট্রীয় নীতি অনেক উদার।

তারা একজনের অপরাধের জন্য অন্যদের দায়ী করায় বিশ্বাসী নয়। তাই নাফিসের ঘটনা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন না। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক গুড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করায় গত শুক্রবার নিউইয়র্কের ফেডারেল আদালত বাংলাদেশি যুবক কাজী রেজওয়ানুল হাসান নাফিসকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এর আগে নাফিস দোষ স্বীকার করে বিচারকে চিঠি দিয়েছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন, এতে তার শাস্তি কিছুটা কমবে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। নাফিস চাইলে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.