আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: ফাঁস

আমি স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে

১. ‘প্লিজ, ছাড়ো!’ জাভেদের আলিঙ্গনের আগুনে পুড়তে পুড়তে, ওর চুম্বনের স্ফুলিঙ্গ ঠোঁট-গ্রীবা-মুখে মাখতে মাখতে হঠাৎ যেন সম্বিত ফিরে পায় মালিহা। আচমকা মনে পড়ে স্বামী আর সন্তানের কথা। জাভেদের শরীরে তখনও উত্তাপ আর সাপের ফোঁস ফোঁস। মালিহা তার কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে ব্লাউজের হুক লাগাতে থাকে। দু’টো হুক লাগাতেই খপ করে তার হাত চেপে ধরে জাভেদ।

‘আজ আমার জন্মদিন। প্লিজ, আজ না করো না…। ’ জাভেদের কণ্ঠে কাতরতা। মালিহার হাত তার ব্লাউজের বাকি হুক তিনটে আর লাগাতে পারে না। সে বুঝতে পারে, আজ আত্মসমর্পন করা ছাড়া তার গত্যন্তর নেই।

জাভেদের উত্তাপ মালিহার শরীরের তাপমাত্রা কয়েক সেকেন্ডই নিয়ে যায় স্ফুটনাংকে...। মালিহার যুক্তি, সমাজ, ধর্ম – সব যেন উড়ে যায় জাভেদ নামের এক ঘুর্ণিঝড়ের দাপটে। আজ জাভেদের জন্মদিন। মালিহা তাই পরেছে ময়ূলকণ্ঠি নীল রঙের সিল্কের শাড়ি। দুপুরে অফিস ফাঁকি দিয়ে এসেছিল জাভেদের ফ্ল্যাটে।

কথা ছিল, দুজনে লাঞ্চ করবে Village নামের নতুন রেস্টুরেন্টটায়। শেষ মুহূর্তে মত পাল্টে জাভেদ ফোন করেছিল মালিহাকে, ‘শরীরটা ভাল লাগছে না। Village থেকে হোম ডেলিভারি নিচ্ছি। তুমি বাসায় চলে এসো’। ‘তোমার বউ?’ ‘আজ ক্যাথি-র একটা কাজ পড়েছে এম্ব্যাসীতে ।

আসতে বিকেল হবে। প্লিজ, বাসায় এসো’ লাঞ্চ-ব্রেকে অফিস থেকে বেরিয়েছিল মালিহা। জাভেদের ফ্ল্যাটটা মালিহার অফিস থেকে কাছে। গুলশান থেকে বাড্ডা। রিকশা পেতেই যেটুকু দেরী।

তারপর সোজা এই ফ্ল্যাট নাম্বার 2-C। মালিহার এই প্রথম আসা জাভেদের ফ্ল্যাটে। ওর কানাডিয়ান স্ত্রী ক্যাথি আজ বাসায় নেই। এই সুযোগটা জাভেদ হয়তো কাজে লাগাতে চেয়েছে...। তাই রেস্টুরেন্ট না গিয়ে বাসায় খাবার আনিয়েছে, মালিহাকে ডেকে নিয়েছে তার ফ্ল্যাটে।

জাভেদ ছিল মালিহার সহপাঠি। পাশ করার আগেই মালিহার বিয়ে হয়ে গেল মধ্যবয়সী আফজাল আহমেদের সাথে। আফজাল তখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী; জাভেদ তখনও ছাত্র। কাজেই মালিহার পরিবারের কাছে জাভেদ ছিল অযোগ্য পাণিপ্রার্থী। সেসব অনেক আগের কথা।

‘১৪ বছরের অজ্ঞাতবাসের’ পর গত মাসে জাভেদ কানাডা থেকে ফিরেছে। ফিরেই খুঁজে বের করেছে মালিহাকে। মালিহা আফজালের মধ্যবিত্ত মানসিকতা আর ব্যবসায়ে মার খেতে খেতে ভেঙ্গে পড়া ব্যক্তিত্বের সাথে খাপ খাওয়াতে খাওয়াতে ক্লান্ত, ভীষণ ক্লান্ত; নিজেকে যখন মনে হচ্ছিল খাঁচার ভেতর ডানা ঝাঁপটানো এক টিয়া… ঠিক তখন জাভেদকে হঠাৎ পেয়ে যেন খাঁচার দরজা খুলে মালিহা পেয়ে গেল অবাধ ওড়ার এক উন্মুক্ত আকাশ। । জাভেদ দেশে ফিরেছে মাস খানেক হলো।

ব্যবসার চেষ্টা করছে এখানে। বিয়ের এত বছর পর জাভেদকে পেয়েছে মালিহা; অথচ দেখা হতেই মনে হলো, যেন মাঝখানের এই ১৪টি বছরের কোন অস্তিত্বই নেই! যেন সেই ভার্সিটির টগবগে, চঞ্চল তরুণ এখনও জাভেদ; মালিহারও নিজেকে মনে হলো সেই মুক্ত বিহঙ্গ...। জাভেদের সাথে এক ঘরে অভিসার এই প্রথম মালিহার। এ যেন এক পুনর্জন্ম। ভীষণ ভীষণ সুখের এক অপার্থিব শিহরণ শরীরের আনাচে কানাচে।

সেই শিহরণের অনুরণন অনুভব করতে করতে লাঞ্চ ব্রেক শেষে অফিসে ফেরে মালিহা। তার এই ১৪ বছরের বিবাহিত জীবনে আফজাল তো একদিনের জন্যেও তার শরীরে জ্বালাতে পারেনি এমন কুসুম কোমল আলো! নিজেকে কখনও তো এমন পূর্ণ মনে হয়নি এর আগে কোনদিন! মালিহা বুঝতে পারে, অফিসের কাজে তার আর মন বসবে না আজ...। ২. রাত দশটা। আলিফ ভাত খেয়ে এসে বসেছে পড়ার টেবিলে; এমন সময় তার বাবা-র উত্তেজিত কণ্ঠ শুনতে পেলো। আলিফ-এর বাবা আফজাল আহমেদ আজকাল বেশ রাত করে বাসায় ফিরছেন; এবং অধিকাংশ সময়ে তাঁর মেজাজ খারাপ থাকে।

কখনও কখনও হয়তো ভাল মেজাজেই বাসায় ফেরেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পরই শোনা যায় মালিহার সাথে ঝগড়া করছেন। আজকের ঝগড়া কী নিয়ে হচ্ছে? আলিফ একটু কান পাতলো; স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। হতে পারে বাবা বাসায় ফিরে দেখেন মা টেলিফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কারো সাথে গল্প করে চলেছেন, হতে পারে কাল কী বাজার হবে তা নিয়ে, হতে পারে সংসারে কে কত টাকা দিচ্ছে তার চুলচেরা হিসেব নিয়ে...। আলিফ এসব নিয়ে আর ভাবতে চায় না; বাবা-মায়ের ঝগড়া সে আশৈশব দেখে আসছে; ছোট থেকে বড় – কত না বিষয়ে তাঁদের ঝগড়া হয়। মাস কয়েক আগে মায়ের পুরনো বন্ধু জাভেদ আংকেল দেশে ফিরেছেন।

তাকেঁ নিয়ে আজকাল প্রায়ই বাবার সাথে ঝগড়া হচ্ছে মায়ের। ‘ধূর! ভাল্লাগে না। ’ নিজেকেই নিজে কথাটা বলে এম.পি.থ্রি. প্লেয়ারটা চালু করল আলিফ। হেডফোনে বেজে উঠলো ওয়ারফেইজের গান। আবার অংক করায় মন দিলো আলিফ।

সামনে তার বৃত্তি পরীক্ষা। এর পর ক্লাস সিক্স। মা বলেছেন, বৃত্তি পেলে নতুন সাইকেল কিনে দেবেন। সেই স্বপ্ন সফল করতে অংক করায় মন দেয় আলিফ। এর কয়েক ঘন্টা পর।

গান শুনতে শুনতে আলিফ ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ তার দরজায় শব্দ। উঠে দরজা খুলে দিতেই মালিহা হুড়মুড় করে ঢুকলো, ‘আ-আলিফ! তোর বাবা…’ ‘কী করেছে বাবা? আজও মেরেছে তোমাকে? তুমি আর যেও না ও ঘরে’ ঘুম-জড়ানো গলায় বলে আলিফ। ‘ড্রয়িং রুমে…’ মালিহা বাকিটা না বলে হাঁপাতে লাগলো। দৌড়ে বারান্দা পেরিয়ে ড্রয়িং রুমে পৌঁছল আলিফ।

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তার বাবার দিকে। সিলিং ফ্যান-এর সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আফজাল আহমেদ তখন ঝুলছেন। তার পাশে কাত হয়ে পড়ে আছে একটা চেয়ার। বিদ্যুৎ নেই; জানালা দিয়ে আসছে চাঁদের আলো। সে আলোয় ঝুলন্ত বাবাকে দেখে জ্ঞান হারালো আলিফ ।

৩. আলিফের যখন জ্ঞান ফিরলো, তখন সকাল। বাসা ভর্তি মানুষজন। প্রতিবেশী মহিলারা তো আছেনই, আত্মীয়দের অনেকেই এসে গেছেন। আলিফ উঠে আগে গেল ড্রয়িং রুমে। লাশ কে নামালো? মনে হচ্ছে, বাবা ক্লান্ত হয়ে ঘুমুচ্ছেন মেঝেতে।

তাঁর মাথার কাছে কোরআন শরীফ পড়ছেন সালমা ফুপু। বারান্দা থেকে জানালা দিয়ে ভেতরটা স্ক্যান করছে কয়েক জোড়া কৌতুহলী চোখ। এত মানুষ কেন এসেছে? একজন বলে উঠলো, ‘অবাক কান্ড, ফাঁস দিয়া মরছে, অথচ জিহ্বা বাইর হয় নাই, চোখ বন্ধ! এমন হয় না কি?... মনে হয় যেন ঘুমের মধ্যে কেউ গলা চাইপা মাইরা পরে ঝুলাইয়া দিছে...’ আরেকজন বললেন, ‘নাকি বালিশ-চাপা দিছে?’ শুনে আলিফ চমকে উঠলো। সোফার উপর মায়ের বালিশটা দেখতে পেয়ে সে হতবাক। বারান্দায় গিয়ে সে বোঝার চেষ্টা করল, কথাটা কে বা কারা বলেছে।

কিন্তু সবাই থেমে গেল তাকে দেখে। আলিফ এখনও কিশোর, তার সাহস হলো না, এটা নিয়ে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার...। মায়ের ঘরে গিয়ে আরো চমকে গেলো আলিফ। কয়েকজন সাংবাদিক মালিহাকে ঘিরে ধরেছেন। তার মোবাইল ফোনটা একজন পুলিশ অফিসারের হাতে।

মাথা নীচু করে বিছানা বসে থাকতে দেখলো আলিফ তার মা-কে। পুলিশ বললেন, ‘আপনার মোবাইলের কল-লিস্টে দেখছি আজ সকালের আগের কোন রেকর্ড নেই...’ ‘গতকাল হাত থেকে সেটটা পড়ে গিয়েছিলো। ব্যাটারিটা খুলে গেলো। তাই...’ ‘কিন্তু মেসেজ বক্সটা খালি কেন? সব মুছে দিয়েছেন?’ ‘আমি মেসেজ অপশনটা তেমন ব্যবহার করি না। ’ আলিফ একটু অবাক হলো।

সে জানে, মা প্রায়ই মেসেজ আদান-প্রদান করেন। কৌতুহলবশত: একদিন মায়ের মেসেজ বক্স চেক করেছিল আলিফ। দুয়েকটা মেসেজ পড়ে তার কান লাল হয়ে গিয়েছিল। সবগুলো মেসেজ এসেছিল জাভেদ আংকেল এর নাম্বার থেকে... একজন সাংবাদিক এবার মুখ খুললেন, ‘আপনি বলছেন, আপনি গিয়ে বডি ঝুলতে দেখেছেন। কিন্তু যারা উনাকে ঝুলন্ত দেখেছেন, তারা বলছেন, পা ছুঁয়ে ছিল মেঝেতে...’ ‘কই? না তো?’ আরেকজন সাংবাদিক বললেন, ‘আপনার দুটো ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন।

ওগুলো উনি পেলেন কোথায়?’ ‘ওগুলো বারান্দায় শুকোতে দেওয়া ছিল’ ‘নাকি ওটা দিয়ে কেউ ফাঁস দিয়ে মেরে পরে ঝুলিয়ে...’ মালিহা ক্ষেপে গেল, ‘কী বলছেন যাচ্ছে তাই? ওকে কে মারতে যাবে? বাসায় বাইরের কেউ তো ছিল না। আমি ওকে মেরে বিধবা হবো? তাতে আমার লাভ, না ক্ষতি?’ পুলিশ অফিসার বললেন, ‘সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আপনি বললেন, উনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। কোন চিকিৎসা করিয়েছেন কখনও?’ মালিহা এবার একটু নড়ে বসলো। ‘সে রকম সিরিয়াস কিছু তো নয়...।

আসলে ওর ব্যবসায় মন্দা চলছিল। কম্পিটিটররা খুব চাপে রেখেছিল। শেয়ার বাজারে যা ইনভেস্ট করেছিল, সব গেছে। এই ফ্ল্যাটটা লোন করে কেনা, সেটার ই.এম.আই. বাকি পড়েছিল... এসব নিয়ে ও বেশ দুশ্চিন্তায় ছিল। প্রায়ই বলত, এসব থেকে ও মুক্তি চায়...’ এটা অবশ্য আলিফও শুনেছে বাবার মুখে।

আফজাল আহমেদ প্রায়ই বলতেন, ‘সব ছেড়ে-ছুড়ে কোথাও চলে যেতে পারতাম!...’ কিন্তু আলিফ বুঝতে পারছে না, তার বাবা সত্যিই কেন এভাবে চলে গেলেন...? পুলিশ অফিসার বললেন, ‘ম্যাডাম, একটা ইউ.ডি. মামলা হবে...’ ‘ইউ.ডি. মানে?’ ‘আন-ন্যাচারাল ডেথ। ’ ‘এস.আই. সাহেব!’ দরজায় দাঁড়িয়ে প্রায় গর্জে উঠলো জাভেদ। সবাই চমকে তাকালো তাঁর দিকে। জাভেদের পেছনে উকি দিচ্ছে স্থানীয় এম.পি. সাহেবের এক চ্যালা। তাকে দেখে পুলিশ অফিসার উঠে দাঁড়ালেন।

ইশারায় তাঁকে ডেকে বারান্দার এক কোনে নিয়ে গেল জাভেদ। আর এম.পি. সাহেবের সেই চ্যালা এসে ধমকে বিদায় করলেন সাংবাদিকদের। আলিফ নীরব দর্শক। মালিহা আলিফকে কাছে ডাকলো। আলিফ ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।

বারান্দার আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখলো জাভেদের হাত ঢুকে গেছে পুলিশের পকেটে। অফিসারটির মুখ হাসিতে গদগদ...। আলিফ ঠিক বুঝতে পারছে না, কী হতে যাচ্ছে। এমন সময় ওদের ল্যান্ড-ফোনটা বেজে উঠলো। মালিহা ফোনটা রিসিভ করে কার সাথে যেন কথা বলছে আর কাঁদছে।

আলিফ সেটা দেখে কাছে গেল। মালিহা ফোনটা ধরিয়ে দিল আলিফকে, ‘তোর আজম চাচ্চু। অস্ট্রেলিয়া থেকে...’ কানে রিসিভার ঠেকিয়ে হ্যালো বলতেই ওপ্রান্তে আলিফ শুনলো তার চাচা আজম আহমেদ কাঁদছেন। তিনি আসবেন দুই দিন পর। পোস্ট-মর্টেম করতে বললেন আজম।

লাশ দাফন করে ফেলতে বললেন। আলিফ বলল, ‘চাচ্চু, তুমি আসো, তারপর না হয়...’ ‘না। আমি ভাইয়ার লাশ দেখতে চাই না। যা শুনছি সবার কাছ থেকে...’ ‘কী শুনছ?’ আজম হঠাৎ কান্না থামিয়ে কণ্ঠ কঠিন করে বললেন, ‘লাশ কি পুলিশ নামিয়েছে, নাকি তোর জাভেদ আংকেল আর তার লোকজন?’ ‘আমি ঠিক জানি না...’ ‘আমি জানি। পুলিশ আসবার আগেই লাশ নামানো হয়েছে।

তুই তখন অজ্ঞান ছিলি। সেই রাতেই তোর মা জাভেদকে ফোন করে বাসায় ডাকিয়েছে...’ আলিফ বুঝতে পারে না, আজম এসব কথা তাকে এখন কেন বলছেন। তিনিই বা শুনলেন কোথায়? সে চুপ করে থাকে। আজম বললেন, ‘তোর বাবার কোন সুইসাইডাল নোট পাওয়া গেছে?’ ‘না’ ‘তাহলে এটা সুইসাইড না’ আলিফের বুকটা ধড়াস করে উঠলো। সুইসাইড না হলে এটা কী? খুন? লাইনটা কেটে গেল।

ফোন রেখে মালিহার ঘর থেকে বারান্দায় এলো আলিফ। মালিহা তখন নীচু স্বরে তার মোবাইল ফোনে কথা বলছে। পাশ দিয়ে যেতে যেতে কান খাড়া করে আলিফ শুনতে পেল, মালিহা কাকে যেন বলছে, ‘পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট যেন উল্টা-পাল্টা না আসে। জাভেদ বলেছে, টাকা কোন সমস্যা না। তোমরা ডাক্তারকে ম্যানেজ কর...’ ৪. আলিফ রিক্সা করে স্কুলে যাচ্ছিলো।

রেল ক্রসিং-এ রিক্সা দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ সে দেখে, একটা চায়ের দোকানের সামনে আফজাল আহমেদ দাঁড়িয়ে। আলিফের বুকটা ধড়াস করে ওঠে। চিৎকার করে বাবাকে ডাকে সে। আফজাল সেই ডাক শুনে দ্রুত চলে গেলেন দোকানটার পেছনে।

আলিফ রিক্সা থেকে নেমে দৌড়ে গেল তার বাবার কাছে। আফজাল কিছুটা অপ্রস্তুত। ‘তুমি এতদিন কোথায় ছিলে, বাবা?’ হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করে আলিফ। ‘লুকিয়ে ছিলাম। তুই চলে যা।

যা এখান থেকে’ ‘না। তুমি বাসায় চলো, বাবা। তোমাকে হারিয়ে আমি কত কেঁদেছি তুমি জানো?’ ‘জানি। ’ ‘তোমার কী হয়েছিল সেই রাতে? তুমি কিভাবে মারা গেলে? জানো, এই নিয়ে কত ঝামেলা…’ হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন আফজাল। তারপর দৌড়…।

আলিফ ধড়মড়িয়ে উঠলো। তার শরীর ঘামে ভিজে গেছে। বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো, সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল। এরকম স্বপ্ন সে ইদানিং রোজ দেখছে। প্রায় প্রতিটা স্বপ্নেই সে দেখে, আফজাল ফিরে এসেছেন।

প্রায় সব স্বপ্নেই বাবাকে মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন করে আলিফ। জবাবটা পাবার আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। আফজাল মারা যাবার প্রায় দুই মাস পরও এখন আলিফ ঠিক বুঝতে পারছে না, আসলেই কিভাবে মারা গেলেন তিনি। নিজ হাতে বাবাকে কবরে শুইয়েছে আলিফ। তবু আলিফের এখনও মাঝে মাঝে মনে হয়, বাবা কোথাও লুকিয়ে আছেন, হঠাৎ ফিরে এসে সবাইকে চমকে দেবেন একদিন...।

আলিফের জীবনটাই যেন বদলে গেছে এই দু’মাসে…। স্কুলে স্যার-ম্যাডামদের প্রশ্নের যেন শেষ নেই। বন্ধুরা কেউ কেউ সরাসরি বলেছে, ওর সাথে তারা মিশতে চায় না। কারো কারো আবার উকিল-স্বভাব। আলিফের বাবাকে তার মা খুন করেছেন, এটা প্রমাণ করতে তাদের প্রাণান্তকর চেষ্টা।

স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে আলিফ। সারাদিন বাসায় থাকে। কম্পিউটারে গেমস খেলে, অথবা গীটারে তোলার চেষ্টা করে নতুন কোন গান। কোন কিছুই ভাল লাগে না তার। মহল্লার ওষুধের দোকান থেকে কিছু ঘুমের ওষুধ কিনে রেখেছে।

বাবার মৃত্যুর পর ১ মাস নির্ঘুম রাত পার করতে করতে সে ক্লান্ত। তারপর থেকে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমায় সে। মায়ের সাথে কথা বলে না খুব বেশি প্রয়োজন না হলে। তার আজম চাচ্চু এসেছিলেন বাবার মৃত্যুর তৃতীয় দিন। বাড়িতে সেদিন মিলাদ মাহফিল।

সারাদিন ভাড়া-করা “হুজুর” দিয়ে দোয়া-দরূদ পড়ানো, তারপর আত্মীয় আর প্রতিবেশিদের মধ্যে প্যাকেট বিতরণ। অনেকের চোখেই সেদিন খুশির ঝিলিক, যেন এটা দোয়ার অনুষ্ঠান নয়, তেহারি খাওয়ার উৎসব । প্যাকেট নিয়ে কাড়াকাড়ি, কে বাসায় বেশি প্যাকেট নিয়ে গেল তা নিয়ে রেষারেষি, আফজালের রেখে যাওয়া সম্পত্তির বন্টন নিয়েও বিতর্কের ঝড় ওঠে কারো কারো চায়ের কাপে। আজম চেয়েছিলেন আফজালের মৃত্যু উপলক্ষে ওই লোক-দেখানো শোক পালন না করতে। অন্য আত্মীয়রা তা মানেননি।

আজমকে অনেকে চাপ দিয়েছিলেন মালিহার নামে মামলা করতে, তদন্ত করে আফজালের মৃত্যু-রহস্য উদঘাটন করতে। আলিফের কথা চিন্তা করে আজম আর তা করেননি মিলাদ শেষে আলিফকে নির্জনে ডেকে কিছু কথা বলেছিলেন আজম। সেই কথাগুলো আলিফের বুকে বিঁধে আছে তীরের মতো। মালিহাকে নিয়ে কোন কোন পত্রিকায় প্রতিদিন খবর বেরিয়েছে সপ্তাহ জুড়ে। মালিহা আর জাভেদের পরকীয়া নিয়ে এখনও কানাঘুষা চলছে আত্মীয় আর পরিচিত মহলে।

সেসব নিয়ে আজমের সাথে আলিফের দীর্ঘ আলাপ হয়েছিল। আলিফ জানতো, তার মায়ের পুরনো বন্ধু এই জাভেদ আংকেল। কিন্তু জাভেদ দেশে ফেরার পর তার সাথে মালিহার ঘনিষ্ঠতার কথা বিস্তারিত জানতো না আলিফ। আলিফ জানতো না, তার মা আর জাভেদ মানুষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে বিভিন্ন মন্ত্রী-আমলার অফিসে বা বাসায় গিয়ে চাকরির তদবির করত। মালিহার সাথে সচিবদের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে যে গুজব ছড়াচ্ছে চারিদিকে, তার সত্যতা নিয়ে আলিফের মনে এখন কোন দ্বিধা নেই।

তার মনে পড়ছে, মাসকয়েক আগে ‘অফিসের কী একটা দরকারে’ তাকে নিয়ে এক সচিবের বাংলোতে গিয়েছিল মালিহা । মালিহাকে সেই সচিব নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর বেডরুমে ‘অসুস্থ স্ত্রীকে দেখাবার’ অজুহাতে। আলিফকে প্রায় একঘন্টা একা বসিয়ে রেখেছিল ড্রয়িং রুমে। সেদিন সচিবের বাংলো থেকে বেরিয়ে মালিহা জাভেদকে ফোন করে বলেছিল, ‘ডোন্ট ওয়ারি, কাজ হয়ে যাবে’। অবুঝ আলিফ সেদিন কিছুই বোঝেনি, অথচ আজ সেই সব কিছুর অর্থ পরিষ্কার বুঝতে পারছে সে।

পত্রিকায় মালিহা ও জাভেদের ছবিসহ বেশ কিছু খবর ছাপা হয়েছে আফজালের মৃত্যুর পর। সব সাংবাদিকের মুখ টাকা দিয়ে বন্ধ করতে পারেনি মালিহা। আজম বিদেশে বসেও সব জেনেছেন তাঁর এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছ থেকে। আজমের ধারণা, জাভেদ আর মালিহা মিলে খুন করেছে আফজালকে, সম্পত্তির লোভে, অথবা অন্য কোন কারণে। কথাটা শুনে কেঁপে উঠেছিল আলিফ, প্রতিবাদ করতে পারেনি।

আলিফের সেদিন কান লাল হয়ে গিয়েছিল, ইচ্ছে করছিল আজমের মুখ চেপে ধরতে, পারেনি। ইচ্ছে করছিল ছুটে কোথাও পালিয়ে যেতে। কিন্তু সে জানে, পালিয়ে যাবার পথ নেই। তার মা কি তবে খুনি? সে কি আর এক বাড়িতে বাস করবে তার সাথে? আসলেই কি তার বাবা আত্মহত্যা করেন নি? সত্যিটা কী? কোথায় গেলে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারবে আলিফ? এই সমাজ থেকে বেরিয়ে যাবার পথ কোনটা? সেই দিন থেকে এরকম অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খা্চ্ছে আলিফের মনে। আজম তাকে বলেছেন, সামনের বছর অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবেন তাকে।

কিন্তু সেখানে গিয়েও কি ভাল থাকতে পারবে আলিফ? তার চাচী বা চাচাত ভাই-বোনরা কি তাকে প্রশ্নে প্রশ্নে ক্ষত-বিক্ষত করবে না সেখানে? আলিফ জানে না, কবে আবার সে স্কুলে যাবে। সে বুঝতে পারে না, তার মা-র সাথে কী আচরণ তার করা উচিত…। সে ভেবে পায় না, কী এমন ঘটেছিল সেই রাতে, যার পরিণতি তার বাবার মৃত্যু? আর ভাবতে পারছে না আলিফ। ড্রয়ার খুলে আরো কয়েকটা ট্যাবলেট বের করে সে। ৫. মালিহা দাঁড়িয়ে আছে সেই ফ্যানটার নীচে।

তার বড় আপা বলেছিলেন, অপমৃত্যুর সাক্ষী এই ফ্যানটা দূর করে দিতে, সে তা করেনি। এটা ফেলতে কেন তার এত মায়া লাগলো? এ কি ধরে রাখবার মতো কোন স্মৃতি চিহ্ন? এই ফ্যান থেকে সে ঝুলতে দেখেছে তার স্বামীর লাশ…। সে রাতে আফজাল যেন অন্য মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। হন্তদন্ত হয়ে আসলেন বাসায়, এসেই মালিহাকে প্রশ্নে প্রশ্নে তটস্থ করে তুললেন। আফজাল-মালিহার সংসারে ঝগড়া হয় নিয়মিত।

কিন্তু সে রাতের ঝগড়া যেন এক অসুরের মতো ঝড়। মালিহা শুরুতে বুঝতে পারেনি, আফজালের এই হঠাৎ ক্রোধের কার্যকারণ। ‘জাভেদের সাথে তোমার কিসের বন্ধুত্ব?’ আফজালের সেই প্রশ্নটা যেন এখনও একই তীব্রতায় কানে বাজছে মালিহার। মালিহা জবাব দিয়েছিল, ‘তুমি তো জানো, আমরা এক সাথে পড়তাম’ ‘একসাথে পড়তে সেই ভার্সিটি লাইফে। মেনে নিলাম প্রেমও করেছ তখন।

কিন্তু এখন এসব কেন? ছি:! তুমি আমার স্ত্রী? ভাবতে ঘেন্না হয়!’ ‘কী যা তা বলছ?’ মালিহার গলাও চড়েছিল সেই রাতে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় দেখতে পাচ্ছিল নিজের লাল হয়ে যাওয়া মুখ। আফজাল ছুটে এসে মালিহার গালে চড় কষালেন। ‘চোরের মায়ের বড় গলা! তুমি প্রায়ই জাভেদের ফ্ল্যাটে যাও না? ওর সাথে এক বিছানায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাও না?’ চড় খেয়ে দমে যায়নি মালিহা। ধাক্কা দিয়ে আফজালকে ফেলে দিয়েছিল খাটের ওপর।

তার কলার চেপে ধরে বলেছিল, ‘চুপ কর! প্রমাণ করতে পারবে? যা বলছ, তার কোন প্রমাণ আছে তোমার কাছে?’ আফজাল ঝটকা মেরে উঠে পড়েছিলেন খাট থেকে। ‘প্রমাণ ছিল না বলেই এতকাল চুপ ছিলাম। ’ বলে মেঝেতে পড়ে থাকা কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা সিডি বের করে ছুঁড়ে মেরেছিলেন মালিহার গায়ে। ‘এটা কী?’ মালিহা বিস্মিত! ‘এটা ক্যাথি আমাকে দিয়েছে। আফজালের ফ্ল্যাটে লিফটের দরজার ওপর যে সি.সি. ক্যামেরা লাগানো আছে, এটায় তার কিছু ভিডিও ফুটেজ আছে।

তুমি কবে কবে কখন কখন আফজালের ফ্ল্যাটে গিয়েছ,তার সব প্রমাণ ক্যাথি রেখে দিয়েছে। আজ বাসায় ডেকে আমাকে দিলো। ছি:!’ মালিহার মাথায় যেন পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছিল সেই রাতে। কিছুক্ষণ কথা হারিয়ে মূর্তি হয়ে গিয়েছিল সে। আফজাল তখন ছুঁড়ে চলছিলেন একের পর এক কথার তীর।

এক পর্যায়ে মালিহাকে ডিভোর্স দেবেন বলে শাসালেন আফজাল। তখন মুখ খুলেছিল মালিহা, ‘তোমার নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ, আমার স্বামী হবার মিনিমাম কোন যোগ্যতা তোমার আছে কি না...’ ‘হোয়াট?’ ‘ইয়েস! নিজের অনিচ্ছায় তোমাকে বিয়ে করেছিলাম। সে কথা থাক। ১৪ বছর তোমার সংসারে যে ঘানি টানছি, তার বিনিময়ে কী পেয়েছি বলতে পারো? ব্যবসা আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে কাটে তোমার দিন আর রাত। গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে, শেয়ার বাজারে এত টাকা ঢেলে পথে বসে গেছ।

সে খেয়াল আছে? সংসারের খরচ কে যোগায়? তুমি, না আমি?’ ‘আরে! সংসার কি আমার একার?’ ‘আর ফ্ল্যাটটা? জাভেদ দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত কত মাসের কিস্তি বাকি ছিল হিসাব আছে? জাভেদ না থাকলে এই ফ্ল্যাট এতদিনে ব্যাংকের হয়ে যেত, আমরা নেমে যেতাম রাস্তায়...’ ‘তুমি জাভেদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছ? আমাকে তো বলেছ তোমার প্রভিডেন্প ফান্ড থেকে লোন...’ ‘মিথ্যে বলেছি। সব টাকা জাভেদ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, জাভেদ আমাকে টাকা রোজগারের অনেক রাস্তা দেখিয়েছে। নইলে, এতদিনে পথের ফকির হয়ে যেতে তুমি...। ’ আফজাল যেন কথা হারিয়ে ফেলেছিলেন মালিহার এই জবাবে।

মালিহা তখন গলার জোর ফিরে পেয়েছিল, ‘বউকে শাসন করার আগে নিজের যোগ্যতার দিকে একবার তাকাও। তোমার না আছে টাকা, না আছে পুরুষত্ব। কিসের জোরে আমাকে শাসন কর তুমি, হ্যাঁ?’ আফজালের চোখের রাগ মুহূর্তে যেন উধাও হয়ে গিয়েছিল মালিহার এই কথায়। মালিহার হাত ধরে বলেছিলেন, ‘তুমি এত বড় কথা বলতে পারলে আমাকে?’ ‘অবশ্যই বলতে পারলাম। আরো বলব, শোন।

তুমি আমাকে ডিভোর্স কী দেবে? আমি তোমাকে ডিভোর্স দেব। অক্ষম পুরুষকে ডিভোর্স দিতে আইনে কোন বাধা নেই। ’ ‘আমি অক্ষম? তাহলে আলিফ?’ ‘শুধু সন্তান জন্ম দিতে পারলেই পুরুষ হয় না। বিছানায় যে পুরুষ বউকে স্যাটিসফাই করতে পারে না, সে আবার পুরুষ মানুষ! তুমি সব দিক দিয়ে ব্যর্থ। এই জীবনে কোন দিক দিয়ে তুমি সফল, আমাকে বলতে পারো? একটা ওয়ার্থলেস, সেলফিশ লোক! তোমার জায়গায় আমি থাকলে এতদিনে গলায় দড়ি দিতাম...’ এর পরের ঘটনা মালিহার ঠিক মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে।

আফজাল ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন এ’টুকু মনে আছে। মালিহা তার জবাবে কী বলেছিল, তা ঠিক মনে করতে পারে না সে। রাতে না খেয়ে শুয়ে পড়েছিলেন আফজাল। মালিহাও খায়নি কিছু। আলিফকে ওর ঘরে ডিনার দিয়ে এসে শুয়ে পড়েছিল মালিহা।

এক বিছানায় শোবে না বলে ড্রয়িং রুমে চলে গিয়েছিলেন আফজাল। ঝগড়া হলে এটা প্রায়ই ঘটে। মালিহা তাই তাকে ডাকাডাকি না করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ... মাঝরাতে কেন তার ঘুম ভাঙলো? কেন মনে হলো, আফজালের মাথায় বালিশটা দিয়ে আসি? কেন মনে হলো, লোকটাকে বড্ড বেশি অপমান করা হয়েছে? তাই তো বালিশ নিয়ে ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই সে দেখল ফ্যানের সাথে ঝুলছে... তার ১৪ বছরের দাম্পত্য!! আফজালের পায়ের কাছে একটা কাগজ পেয়েছিল মালিহা। সেটায় লেখা, ‘মালিহা, তোমার মনে আজ অন্য পুরুষ! আর আমি হলাম নপুংসক! মরে গেলে মানুষ কোথায় যায় জানি না।

তবে আমার খুব ইচ্ছা, ফিরে এসে দেখব, কতটা সুখে আছ তুমি। ’ কাগজটা আর কারো হাতে পড়লে এই মৃত্যুর জন্যে সবাই মালিহাকে দায়ী করবে, এটুকু বুঝতে সময় লাগেনি মালিহার। সমাজে যে সম্মান নিয়ে সে মাথা উঁচু করে চলে, তাতে এতটুকু ছাড় দিতে নারাজ সে। তাই তো, যত যাই সে এতকাল করেছে, লোকচক্ষুর আড়ালে করেছে, নিজের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে করেছে। ।

আজ আফজাল মরে গিয়ে তাকে সকলের চোখে এত নীচে নামিয়ে দেবে, এটা হতে দিতে রাজী ছিল না মালিহা। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো কি? খবর পেয়ে জাভেদ তার স্ত্রীকে ঘরে বন্দী করে রেখে সে রাতে ছুটে এসেছিল। টাকা ঢেলেছে জলের মতো। পুলিশ, ডাক্তার, সাংবাদিক –এদের সবা্রে মুখ বন্ধ করেছে। তবু শেষ রক্ষা হলো না।

আজমের এক বন্ধু তার প্রত্রিকায় ফলাও করে সব ছেপে চলেছে। টিকতে না পেরে জাভেদ ফিরে গেছে কানাডায়, ক্যাথির সাথে সেপারেশন চলছে। আলিফ আর ভালবাসে না তার মা-কে। অফিসেও সবাই তাকে দেখে ঘৃণার দৃষ্টিতে। এই জীবন কি মালিহা চেয়েছিল? আফজাল নিজে মরে গিয়ে এ কী জীবন তাকে দিয়ে গেলেন? এটাই কি ছিল আফজালের শেষ ইচ্ছা? মালিহা শেষ বারের মতো ফ্যানটার দিকে তাকালো।

তার পায়ের নীচের এই চেয়ারটার ওপর শেষবার দাঁড়িয়েছিলেন আফজাল। আজ সে দাঁড়িয়েছে। তার দুটো ওড়না জোড়া দিয়ে গলার ফাঁস বানিয়েছিলেন আফজাল। তাঁর লুঙ্গি দিয়ে নিজের গলার ফাঁস বানিয়েছে মালিহা। হঠাৎ দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো আলিফ।

আলিফের কান্নার শব্দ পাচ্ছে মালিহা। আর দেরি করতে চায় না সে। কোন প্রলোভন, কোন মায়া তাকে আজ বাঁধতে পারবে না। সে আজ নিজেকে বেঁধেছে আফজালের লুঙ্গির ফাঁসে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.