আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লক্ষ্য ছিল প্রধান দুই দলকে হেয় করা



২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার আগে থেকেই দৈনিক প্রথম আলো প্রধান দুই রাজনৈতিক দল_আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং এ দুই দলের নেতাদের হেয় করার লক্ষ্য নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব প্রতিবেদনে দেশের প্রধান দুই নেত্রী_শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনার মাধ্যমে পত্রিকাটি 'মাইনাস টু' ফর্মুলার ভিত্তি তৈরির চেষ্টা চালায়। রাজনীতিবিদদের কোনো সাফল্য বা ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন না করে প্রথম আলো 'সংস্কারের' আওয়াজ তোলে। এক-এগারোর পরও পত্রিকাটি এ ধারায় প্রতিবেদন প্রকাশ অব্যাহত রাখে। কেবল প্রতিবেদন প্রকাশ নয়, একই এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পত্রিকাটি একাধিক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

ওই সব বৈঠকের সংবাদ পরিবেশনেও এই ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। এ ধরনের অসংখ্য প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন প্রবণতাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদন ছিল 'পাঁচ বছরে প্রতিশ্রুতির সামান্যই পূরণ করেছে বিএনপি'। এতে বলা হয়, 'অসংখ্য প্রতিশ্রুতির সামান্যই বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আজ পাঁচ বছর পূর্ণ করছে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার। বিএনপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো ও সরবরাহে উন্নতির।

কিন্তু দেশের মানুষ এখন আলোর চেয়ে অন্ধকারেই থাকে বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ। সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে সরকার আপাতসফল হলেও নীরব চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ছোটবড় সব ব্যবসায়ী। ...সব মিলিয়ে জোট সরকারের পাঁচ বছরে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ ভালো ছিল না একেবারেই। ' আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরুদ্ধে নতুন দল গঠনে প্রথম আলো জরুরি অবস্থার আগে থেকেই সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

২০০৬ সালের ২১ অক্টোবর তারা সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কর্নেল (অব.) অলির নেতৃত্বে শিগগিরই নতুন দল হচ্ছে বলে একটি প্রতিবেদন গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বিএনপি থেকে বড় বড় নেতা নতুন দলে যাচ্ছেন বলে তথ্য দেওয়া হয়। প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়, নতুন এই দলটিতে যুক্ত হবেন বিএনপির অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা, যাঁরা দল গঠনের সঙ্গে একসময় যুক্ত ছিলেন এবং নিজ নিজ এলাকায় যথেষ্ট শক্তিশালী। ২০০৬ সালের ১৩ নভেম্বরে প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ছিল 'সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে পারে সরকার'। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হতে পারে।

বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এখনো সামরিক বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়নি। ২০০৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধান শিরোনাম ছিল 'সন্ত্রাসী গডফাদার ঋণখেলাপি জঙ্গিরাও নির্বাচনে প্রার্থী'। প্রতিবেদনের একটি অংশে প্রধান দুটি দল সম্পর্কে বলা হয়, 'বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতিতে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদ, গডফাদারদের বিরুদ্ধে নিজেদের জোরালো অবস্থানের কথা সব সময়ই জানান দেন। কিন্তু যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচনায় রাখে না।

' দেশে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পরই প্রথম আলো প্রধান দুই দলের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ছাপতে শুরু করে। ২০০৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সম্পাদক মতিউর রহমান নিজেই 'এরশাদকে পেতে বিএনপি ও আ. লীগের কোটি কোটি টাকার প্রতিযোগিতা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন লেখেন। এতে বলা হয়, 'আওয়ামী লীগ এরশাদকে সাড়ে তিন কোটি টাকা অগ্রিম দিয়েছে। আর এরশাদ চারদলীয় জোটে না যাওয়ায় বিএনপি চাপ দিয়ে অগ্রিম দেওয়া দুই কোটি টাকা ফেরত নিয়েছে। ' প্রতিবেদনের বিস্তারিত বর্ণনায় বলা হয়, '২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদকে নিজ নিজ জোটে পেতে এক অবিশ্বাস্য আর্থিক লেনদেন করতে সম্মত হয়েছিল।

বিএনপির পক্ষ থেকে চুক্তি চূড়ান্ত করার আগেই এরশাদকে অগ্রিম দুই কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে দুই ভাগে সাড়ে তিন কোটি টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এরশাদ চারদলীয় জোটে না যাওয়ায় পরে বিএনপির পক্ষ থেকে চাপ দিয়ে তাঁর কাছ থেকে দুই কোটি টাকা ফেরত নেওয়া হয়। বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির উচ্চপর্যায়ের সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও এসব তথ্য রয়েছে।

' ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি 'শেখ হাসিনাকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি দিয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী সিলেটিরা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান চৌধুরী বিপুল অর্থের বিনিময়ে সিলেট-২ (বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন বলে সিলেট অঞ্চলে আলোচনার ঝড় বইছে। ...আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বুলেটপ্রুফ যে মার্সিডিজ গাড়িটি এখন ব্যবহার করেন, তা সিলেটের লন্ডনপ্রবাসীদের উপহার দেওয়া। ' ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ছিল 'অষ্টম সংসদের ১৮৩ জন সোয়া কোটি টাকা ফোন বিল খেলাপি'। এতে সংসদ সদস্যদের হেয় করে বলা হয়, 'স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সাংসদদের খেলাপি ফোন বিলের পরিমাণ ৯ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

' ২০০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি 'এ মাসেই দল গঠনের ব্যাপারে ঘোষণা দেবেন ড. ইউনূস' শীর্ষক প্রতিবেদনটি গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়। বলা হয়, প্রয়োজন হলে শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক ছেড়ে রাজনীতিতে নামবেন, রাজনৈতিক দল গঠন করবেন। ২০০৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি 'দ্বিতীয় মেয়াদে খালেদা জিয়া বেপরোয়া হয়ে পড়েন' শিরোনামের প্রধান প্রতিবেদনে সাবেক এক আমলার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বড় আকারের একটি আলোকচিত্রও ছাপা হয়। ২০০৭ সালের ১০ এপ্রিল প্রধান প্রতিবেদন ছিল মহাজোটপ্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।

শিরোনাম ছিল 'শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকার চাঁদাবাজি মামলা'। ২০০৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মন্তব্য গুরুত্বসহ ছাপে প্রথম আলো। তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল ও ভঙ্গুর। ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের তীব্র সমালোচনা করে লেখা সংবাদ বিশ্লেষণটির শিরোনাম ছিল 'উচ্চাভিলাষী নানা লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক প্রশ্ন'। পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর একইভাবে বিএনপির ইশতেহার বিশ্লেষণ করে বলা হয়, 'দ্রব্যমূল্যের পরিসংখ্যান নিয়ে বিভ্রান্তি, অসংখ্য প্রতিশ্রুতি।

' সংস্কার থেকে সরে আসা যাবে না ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রথম আলো 'দেশের পরিস্থিতি, জরুরি আইন ও করণীয়' শিরোনামে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। পরের দিন ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম দেওয়া হয় 'সংস্কার করে নির্বাচন হতে হবে'। সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মতামত হাইলাইট করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দিয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। সেনাবাহিনী ব্যবহারে বিচক্ষণতা ও পরিমিতিবোধের প্রয়োজন, বর্তমান সরকারকে আরো সহায়তা দিতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক দলের সংস্কার ছাড়া দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা সম্ভব নয়।

গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন কামনা করছে। এ দেশ পরিচালিত হবে রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের মাধ্যমে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ছাড়া দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। এতে আরো বলা হয়, মানুষ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে শুভেচ্ছা জানালেও সেনাশাসন কেউ চায় না। এ দেশের সেনা সদস্যরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

এ দেশেও তাঁদের সেই সুযোগ থাকা উচিত। ২০০৭ সালের ৬ মে প্রথম আলো 'রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার' শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক করে। এ বৈঠকের সূত্র ধরে পরের দিন ৭ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রধান শিরোনাম ছিল 'সংস্কার থেকে সরে আসা যাবে না'। প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়, বর্তমান সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সংস্কার কর্মসূচি থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সরে আসার কোনো সুযোগ নেই।

সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে এ সংস্কার করতে হবে। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.