আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লক্ষ্য



পনুর শরীর কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে। নাহ আর ভাল লাগছে না। কবে যে এই যন্ত্রনা থেকে রেহাই পাবে। পায়ে পায়ে বারান্দায় চলে আসে। ছোট থেকে এই বারান্দা তার প্রিয়।

ভিতরের দিকে হওয়াতে বাইরের লোকের দেখার সুযোগ নাই কে বসে আছে ওখানে। বিরাট দোলনা টাংগানো। পনু বসে বসে দোল খায়। সে অপেক্ষা করে আছে কখন সুজন আসবে। প্রায় দিনই সুজনের আসতে দেরি হয়ে যায়।

জানে পনু অফিস শেষ করে মায়ের কাছে যাবে, বোনদের কোন দরকার থাকলে তা মিটিয়ে তবে সে পনুর কাছে আসবে। শাহজাহানপুর থেকে মিরপুর। ঢাকা শহরের এ প্রান্ত আর ও প্রান্ত। কি যে বিরক্ত লাগে পনুর,তার এত সমস্ত জীবনের হিসাব নিকাশ এভাবে উলট পালট হয়ে যাবে সে ভাবেনি। কি রে আপি কি করিস এই নে তোর চা, জীবন চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়।

ছোট ভাইটার প্রতি কৃতজ্ঞতা উথলে উঠে। সত্যি চায়ের জন্য অস্হির লাগছিলো। তুই কি ভাবে জানলি? আরে আমি সব জানি। এই যেমন তুই দুলাভাই নিয়ে যত দুঃশ্চিন্তা করছিস, তার কোনটাই সত্যি না, কারন, উনি এখন খাবার ঘরে মায়ের কাছে বসে গল্প করছেন! বলিস কি! কখন আসলো? আমিতো জানিনা। কারন তুই ঘুমাচ্ছিলি, আমরা আজ অনেক ক্ষন আড্ডা মারলাম।

দুলাভাইয়ের অফিস আগেই ছুটি হয়ে গেছে। সে আগে চলে এসেছে। জীবনের এই কথাটায় পনু প্রমাদ গুনলো। আগে অফিস ছুটি হয়ে গেছে মানে কি, ও কি আবার কাজ ছেড়ে দিচ্ছে নাকি! কয়দিন থেকে সুজন বলছে ব্যাংকের এই চাকরি আর ভাল লাগছে না। সে অন্য কিছু দেখবে।

পনু চায় না চাকরি বদল করুক। বিশেষ করে এই সময়ে। যখন মাস গেলে নির্দিষ্ট বেতন অবশ্যই দরকার। তার চায়ের রুচি নষ্ট হয়ে গেল। মেজাজ বিগড়াতে শুরু করল।

এই লোকটা যে বিয়ের পর এরকম করবে একদম বুঝতে পারে নি। এই নিয়ে তিন বার চাকরি ছাড়ল। কপালও এমন আবার পেয়েও যায়। গতবারের চাকরি ছাড়ার সময়ই প্রমিস করেছে আর চাকরি বদলাবে না, মনে হয় সেটা ভুলে গেছে। আপিরে বেচারিকে এত তাড়াতাড়ি খুঁটিতে বেঁধে ফেলিস নাতো।

তোদের আসলে এক বয়সী বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি। যা যা তুই আর জ্ঞান দিতে আসিস না। নিজে যখন সংসার করবি তখন বুঝবি অস্হিরতা কি রকম লাগে। সুজন ভাইয়ার চাকরি না থাকলে অসুবিধা কোথায়? তোর তো আছে? তুই তো আর কয় দিন পরেই অফিসে ফিরে যেতে পারবি। মন খারাপের মধ্যেও পনুর হাসি পেয়ে যায়।

কমপক্ষে ছয়মাস লাগবে তার আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে। জীবনের কাছে কয়দিন! দোলনা থেকে উঠতে গিয়েও উঠল না। যদি চাকরি ছেড়েই দিয়ে থাকে ওনিয়ে কথা বলে আর কি লাভ! তার চেয়ে অন্ধকারে চুপ করে বসে আছে সেটাই বরং ভাল লাগছে। এই আপি লাইট জ্বালাবি না মশা কামড়াচ্ছে। পনুর ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে।

কেন সে জীবন সম্পর্কে কোন হুট করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সারাজীবন মায়ের কষ্ট দেখে এসেছে। বাবা মধ্যপ্রাচ্য চলে গেল। অনেক টাকার চাকরি। অনেক স্বপ্ন।

পনু আর জীবনের জন্যই সবকিছু, এত কষ্ট। অথচ নিয়তির কি পরিহাস, আস্তে আস্তে পনু আর জীবনের কথা ভুলেই গেল। ওখানেই নতুন জীবন গড়ে নিয়েছে। পনুর মায়ের ভাগ্য ভাল দাদাবাড়ি থেকে নিচতলাটা ওদের দেওয়া হয়েছে। কারন ওটা কেউ নিতে চাচ্ছিল না নিচতলাটা গুমোট, আলো ঢুকেনা।

পুরোপুরি অস্বাস্হ্যকর। কিন্তু কি আশ্চর্য্য পনু আর জীবনের সেরকম কোন বাড়াবাড়ি রকমের অসুখ কখনো করেনি। পনুর মা পাড়ার মহিলাদের জামা কাপড় শেলাই করে দিয়ে অনেক কষ্টে বাচ্চাদুটোকে মানুষ করেছে। আর বড়লোক ভাসুর দেওর ননদের কাছ থেকে যা পাওয়া গেছে। ছোট থেকেই সে দেখেছে তার মা কোন অপরাধ না করেও সারাজীবন মনে হয় যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করে গেল।

কি অসহায় লাগত পনুর মায়ের ঐ অবস্হা দেখে। কোনদিন কোনকিছুর জন্য মায়ের কাছে আবদার করেনি। জানত মায়ের চোখদুটো খালি পানিতে ভরে যাবে, আর কিছু হবে না। পনুরা নানাবাড়ি যায়নি, মা কোনদিন ফিরে যেতে চায়নি। পনুর মাথা খুব ভাল ছিল।

স্কুলে পড়ার সময়ই সে প্রাইভেট পড়ান শুরু করে। তার বয়সীদেরকে। এ নিয়ে তার কখনো গর্ব হত না, বরং সমবয়সীদের জন্য করুনা লাগতো। বেচারিরা চেষ্টা করে না, চেষ্টা করলেই পারে। সে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিল পড়া শেষ করে, তাকে মানুষের মত মানুষ হতে হবে।

মাকে নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ে এসে সুজনের সাথে পরিচয়। কি যে হল পনুর। কোথায় তার পড়াশোনা, কোথায় কি। সব ভুলে গেল।

দিনরাত সুজনের চিন্তা। পনু আজীবন মনে করে এসেছে পড়া শেষ করে ভাল চাকরি যোগার করে এবাড়ি থেকে মাকে নিয়ে সরে যাবে। নতুবা যদি বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হয় মাকে নিয়ে যাবে। জীবনের জন্য কোন চিন্তা নাই। তার মাথাও ভাল।

সে নিজের রাস্তা চিনে নিবে। পনু কখনো কোন ছেলের দিকে চোখ তুলে দেখেনি। একজনকেই দেখল আর ফেঁসে গেল। বছর খানেক পরে ওরা বিয়ে করে। সুজনের বাবা মায়ের অনেক আপত্তি ছিল এ বিয়েতে।

সুজন শোনেনি। বিয়ের পরে পনু ওদের বাড়ি গিয়ে ছিল, কয়েক মাস। ভাল লাগত না। মায়ের জন্য মনটা অস্হির লাগতো। খালি মনে হত কি করলো।

সারাজীবন মনে করে রাখলো এটা করব আর করলো অন্যটা। আর এখন বাচ্চা হওয়ার অজুহাতে মায়ের কাছে চলে এসেছে। পরম মমতায় পেটের উপর হাত বোলায়। আহা আমার বাচ্চাটাও কি মনে করবে, জীবনটা বৃথা হয়ে গেল। না সেটা সে কিছুতেই হতে দিবে না।

অনাগত সন্তানের জন্য শুভ কামনায় মনটা ভরে গেল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.