আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেনীতে ৮ দিনে ৫ খুন

mamun.press@gmail.com

আবদুল্লাহ আল-মামুন >>> ফেনীতে গত ৮ দিনে ৫টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধ, পারিবারিক কলহ, যৌতকের দাবীতে এসব খুনের ঘটনায় জেলাব্যাপী উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের উজালিয়া গ্রামে গতকাল শনিবার সকালে পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের পিটুনীতে আবুল হোসেন (৬০) নামে এক বৃদ্ধ ঘটনাস্থলেই মারা গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী ওই বৃদ্ধের স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়েসহ পাঁচ জনকে গনধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এদের মধ্যে ছোট মেয়ে তাহমিনা সুলতানা রতœাকে পুলিশ হেফাজতে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে বৃদ্ধের স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েসহ পাঁচ জনকে আসামী করে ফেনী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা রজু করেছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের উজালিয়া গ্রামের আবুল হোসেন তার পরিবারের সুখ শান্তির জন্য দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছর সৌদি আবরে প্রবাস জীবন কাটিয়ে আয় রোজকার করেছেন। ইতিমধ্যে দুই ছেলেকে ডুবাই পাঠিয়েছেন। শেষ বার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তিনি সৌদী পুলিশের হাত আটক হয়ে প্রায় ৭ মাস কারাগারে কাটাতে হয়। গত প্রায় তিন মাস আগে সৌদি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি খালি হাতে বাড়ী ফিরে আসেন।

আয় রোজগার না থাকায় তাকে দৈনন্দিন হাত খরচের টাকার জন্যও স্ত্রী ও ছেলের কাছে হাত পাততে হয়। পরিবারে শুরু হয় অশান্তি। এনিয়ে একাধিকবার পারিবারিক ঝগড়া ও মারামারি হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে বৃদ্ধ আবুল হোসেন নিজের ঘরবাড়ী ছেড়ে পাশেই এক আতœীয় বাড়ীতে গিয়ে বসবাস শুরু করে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তিনি বাড়ীর পাশের একটি দোকানে চা নাস্তা খেয়ে নিজ বাড়ীতে যান।

সেখানে আবারও স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে তার ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। তার ছোট ভাই সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বৃদ্ধ আবুল হোসেন তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নির্যাতনে মারা গেছে। বৃদ্ধ আবুল হোসেনকে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা হত্যা করেছে মর্মে খবর দ্রুত গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে শত শত গ্রামবাসী আবুল হোসেনের বাড়ীতে জড়ো হয়। তারা উত্তেজিত হয়ে আবুল হোসেনের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ঘর থেকে টেনে হেঁছড়ে বের করে গনপিটুনি শুরু করে। খবর পেয়ে ফেনী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পোঁছে স্ত্রী খুরশিদা আক্তার (৫০), ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩২), মেয়ে রাবেয়া আক্তার (৩৫), হাসিনা আক্তার (২৮) ও তাহমিনা সুলতানা রতœাকে (১৮)আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

তাদের মধ্যে মেয়ে তাহমিনা সুলতানা রতœাকে চিকিৎসার জন্য ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ফেনী সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করে। ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু আহম্মদ আল মামুন, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোঃ এয়াকুব আলী মিয়া,ফেনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এলাকাবাসীকে শান্ত থাকার অনুরোেধ করেন। এ ঘটনায় বৃদ্ধের ছোট ভাই সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে তার স্ত্রী খুরশিদা আক্তার, ছেলে জহিরুল ইসলাম, মেয়ে রাবেয়া আক্তার কোহিনুর,হাসিনা আক্তার ও তাহমিনা সুলতানা রতœাসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ফেনী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে ফেনী থানা হাজতে আটক খুরশিদা আক্তার (বৃদ্ধার স্ত্রী) তার স্বামীকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তিনি জানান, তার স্বামী গতকাল শনিবার সকালে বাড়ীতে গিয়ে তার ওপর হামলা ও তাকে মারধর শুরু করেন। তার চিৎকারে ছেলেমেয়েরা এগিয়ে অসে। ইতিমধ্যে সে নিজেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রতিবেশী এক পলী চিকিৎসককে ডেকে আনা হয় এবং তার পরামর্শে হাসপাতালে নেয়ার পথে কিছু লোক বাধা দেয়। সময় মত হাসপাতালে নেওয়া গেলে তিনি হয়তো মারা যেতেন না।

ফেনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আমিনুল ইসলাম বৃদ্ধ আবুল হোসেনের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার ও লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ছাগলনাইয়ায় চাচাকে জবাই করে হত্যা জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে চাচা রহিম উলা (৩৫) কে ধারালো কিরিছ দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে ভাতিজা দিদার। গ্রামবাসী ঘাতক দিদারকে(২৫) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের উত্তর সতর গ্রামে কালা মিয়া বাড়িতে। এলাকাবাসী জানায়, উত্তর সতর গ্রামের কালা মিয়ার প্রথম স্ত্রীর পুত্র ছফিউলার সাথে দীর্ঘদিন যাবত দ্বিতীয় স্ত্রীর পুত্র রহিম উলা ও হাবিব উলার জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ চলছে।

বিরোধের জের ধরে শুক্রবার সকালে রহিম উলা তাদের বাড়ির পশ্চিম পাশের ভিটিতে গরু বাঁধতে গেলে তার সৎভাই সফিউলার পুত্র দিদার ধারালো কিরিছ দিয়ে তাকে জবাই করে শরীর থেকে মাথাটি আলাদা করে ফেলে। খবর পেয়ে ছাগলনাইয়া থানার পুলিশ সকাল ৯টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। ফেনীর পুলিশ সুপার মোঃ ইমাম হোসেন ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোমিনুর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে নিহতের বড়ভাই হাবিব উলা বাদী হয়ে ছাগলনাইয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। সফি উলা জানান, তার পুত্র দিদার একজন মানসিক রোগী।

দাগনভূঞায় যৌতকের জন্য গৃহবধূ হত্যা দাগনভূঞার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের কৈখালী গ্রামের গৃহবধূ জেসমিন আক্তার (১৯) কে গত মঙ্গলবার সকালে স্বামী ও তার পরিবার যৌতকের জন্য জন্য হত্যা করেছে । মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৬ মাস পূর্বে ফেনী সদর উপজেলার শর্শাদী ইউনিয়নের রাস্তারখিল গ্রামের জয়নাল আবদিনের মেয়ে জেসমিন আক্তারের সাথে দাগনভূঞার কৈখালী গ্রামের নূরুল ইসলাম হাবিলদারের ছেলে নূরুল আবছারের (১৯) সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্বামীর চাহিদামত যৌতক দেয়া হয়। পুনরায় যৌতকের জন্য জেসমিনকে চাপ দিলে জেসমিন তার পিতাকে স্বামীর দাবীর কথা বলে। তাতে জেসমিনের পিতা যৌতকের দাবী মেটাতে অপরাগতা প্রকাশ করলে স্বামী ও পরিবার জেসমিনের উপর মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করতে থাকে।

ঘটনার পূর্ব রাতেও যৌতকের জন্য জেসমিনকে শারিরীক নির্যাতন করে। পরদিন সকালে স্বামীসহ তার পরিবার জেসমিনকে পিটিয়ে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে জেসমিন আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। লাশ ফেনী সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে জেসমিনের পিতার বাড়ী রাস্তারখিলে দাফন করা হয়। জেসমিনে পিতা জয়নাল আবদিন বাদী হয়ে দাগনভূঞা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। মামলার আসামীরা হলেন- স্বামী নূরুল আবসার বাদশা, শ্বশুর নূরুল ইসলাম, ভাসুর আবদুল আউয়াল, শ্বাশুড়ী শরিফা খাতুন, ননদ জাহিদা আক্তার সুমি ও শাহেদা আক্তার রুবী।

পুলিশ সুপার ইমাম উদ্দিন ও ওসি শেখ লুৎফুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। চাঁদা না দেয়ায় যুবলীগ কর্মীদের হামলায় আহত স্কুল শিকের মৃত্যু যুবলীগ কর্মীদের হামলায় আহত সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউপি’র হাজীপুর রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক ও সাবেক ইউপি মেম্বার মাষ্টার সামছুল হক (৫৫) গত শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, স্কুল শিক সামছুল হুদার নিকট এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এলাকার যুবলীগ কর্মী মোঃ এয়াছিন প্রকাশ বাদশা ডাকাত ও তার ভাই গোলাম মাওলা। দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে তারা গত ১১অক্টোবর বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ী ফেরার পথে সামছুল হুদা (৫৫) কে আহাম্মদপুর গ্রামের আবুল হোসেন সেক্রেটারীর বাড়ীর দরজায় ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে কুপিয়ে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে রাস্তার পাশে ফেলে যায়। খবর পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজন তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

ওই দিন রাতেই কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে গত ১৩অক্টোবর সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। অবশেষে গতকাল শনিবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। যুবলীগকর্মী বাদশা ডাকাত, তার ভাই গোলাম মাওলা ও তাদের সহযোগীরা ইতিপূর্বে মাষ্টারের দুই ছেলেকে কুপিয়ে পিটিয়ে বাড়ী ছাড়া করেছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাষ্টারের একটি হাত ও পা শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অপর হাত পায়ের হাঁড় ভেঙ্গে চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে নিহত স্কুল শিক সামছুল হুদার ছেলে ওসমান গণি বাদী হয়ে বাদশা ও তার বড় ভাইকে আসামী করে সোনাগাজী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। সামছুল হুদার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। সংখ্যালঘু মহিলার লাশ উদ্ধার ফেনীতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জ্যোসনা রানী শীল (৫৮) নামে এক মহিলার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তিনি নোয়াখালী জেলাধীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকালি গ্রামের মৃত উপেন্দ্র কুমার শীলের স্ত্রী।

পুলিশ ও পারিবারিক সুত্র জানায়, জ্যোসনা রানী শীলের ছেলে রনজিত কুমার শীল ফেনীর কনসেপ্ট হাসপাতালে চাকুরী করে। গত প্রায় চার মাস আগে থেকে ছেলের বউ সহ ফেনী পৌরসভার দনি সহদেবপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় তারা থাকতেন। গত মঙ্গলবার সকালে উপাসনার জন্য তিনি বাসার অদুরে ‘গুরু মন্দিরের’ উদ্দেশ্যে বের হন। কিন্তু দুপুরেও বাসায় ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুজি শুরু করে। শহরে মাইকিং করা হয়।

কিন্তু কোথাও না পেয়ে ফেনী মডেল থানায় সাধারন ডায়েরী করা হয়। এ দিকে জ্যোসনা রানী শীল নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একই এলাকায় অবস্থিত ‘কালী মন্দিরের’ পাশে ঝোঁপের মধ্যে থেকে দুগন্ধ বেরিয়ে আসায় স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। তারা ঝোঁপের মধ্যে একটি লাশ দেখে ফেনী মডেল থানা পুলিশে খবর দেয়। ফেনী থানা পুলিশ আধা পচন ধরা লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ফেনী সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করে। জ্যোসনা রানীর ছেলে রনজিত কুমার শীল জানান রাতেই তিনি মায়ের লাশ শনাক্ত করেন।

এ ঘটনায় রনজিত কুমার বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীর বিরুদ্ধে ফেনী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম মহিলার লাশ উদ্ধার ও মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি এ হত্যাকান্ডকে রহস্যজনক আখ্যায়িত করে তদন্ত চলছে বলে জানান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।