আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিএফএল বিতরণে অনিয়ম, বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিয়ে সংশয় (কপি পোস্ট)



দেশে বিনামূল্যে কমপ্যাক্ট ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্প (সিএফএল বাল্ব) বিতরণের পরও বিদ্যুৎ সাশ্রয় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সিএফএল বিতরণে অনিয়মের কারণে এনিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিনামূল্যে বিতরণকৃত সিএফএল বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। সিএফএল বাল্ব বিতরণ করে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ৫০ মেগাওয়াটও হয়নি। অনেকে ৪টির পরিবর্তে অনিয়মের মাধ্যমে ৫০ থেকে ৮০টি বাল্ব নিচ্ছেন।

পরে তা খোলা বাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ডিপিডিসির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা মিটার প্রতি গ্রাহকদের ৪টি করে বাল্ব দিচ্ছেন। অধিকাংশ ভবনে একাধিক মিটার থাকায় তারা বেশি পাচ্ছেন। তারা জানান, একদিনের মধ্যে এতো বিশাল পরিমাণ বাল্ব বিতরণ করা সম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে দেশব্যাপী সিএফএল বিতরণ কতটুকু সফলতা বয়ে আনবে তা নিয়ে তারা সন্ধিহান।

এদিকে প্রথমবার বিতরণের পর ডিপিডিসি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ডিপিডিসির ১৩টি অঞ্চলের ১১ কেভি ফিডারের বিদ্যুতের লোড বিশ্লেষণ করেছে। তাতে দেখা গেছে, সিএফএল বিতরণের পর দিন সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় বিদ্যুৎ সাশ্রয় হওয়ার কথা ছিল ৩৫ মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে মাত্র ১১ মেগাওয়াট। অন্যান্য বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাশ্রয়ের পরিমাণ একই রকম। ফলে এবারও বাল্ব বিতরণে বিদ্যুতের তেমন সাশ্রয় হবে না বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে বিতরণ কোম্পানিগুলোতে এখনো লাখ লাখ বাল্ব পড়ে আছে। এছাড়া বাল্ব বিতরণে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেশের ৩৯ জেলায় ৫০ লাখ গ্রাহকের মাঝে দ্বিতীয় কিস্তিতে সিএফএল বিতরণ চলছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ৯ লাখ ৫৫ হাজার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব বিতরণ করা হচ্ছে। এর আগে প্রথম কিস্তিতে গত ১৯ জুন সিএফএল বিতরণ হয়।

ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি) ১৮৫টি কেন্দ্রের মাধ্যমে সকাল ৯টা থেকে বাল্ব বিতরণ শুরু করে। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ডিপিডিসির নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জসহ উত্তর জোনের মোহাম্মদপুর, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, খিলগাঁও, শ্যামলী, রাজারবাগ এবং রামপুরায় এ বাল্ব বিতরণ করা হচ্ছে। মোহাম্মদপুরে সিএফএল বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। এছাড়া কামরাঙ্গীরচরে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গ্রাহকদের মাঝে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্ব বিতরণ করেন।

গ্রাহকরা তাদের সর্বশেষ পরিশোধিত বিদ্যুৎ বিলের কাগজ ও পুরাতন সাধারণ বাল্ব জমা দিয়ে নতুন সিএফএল বাল্ব সংগ্রহ করছেন। প্রতিটি গ্রাহককে সর্বোচ্চ ৪টি বাল্ব দেয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই ৪টির পরিবর্তে ৫০ থেকে ৮০টি বাল্ব সংগ্রহ করছেন। অভিযোগ উঠেছে, এসব বাল্ব ব্যবহার না করে বিক্রি করে দেয়া হয়। এর ফলে এ বাল্ব বিতরণের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বাল্ব বিতরণ কার্যক্রম চলছে অনেকটা মন্থর গতিতে।

এতে সিএফএল এর একটা বড় অংশই বিতরণের বাইরে থেকে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাল্ব সংগ্রহে আসা গ্রাহকদের। প্রথম কিস্তির সোয়া লাখ বাল্ব এখনো ডিপিডিসির গোডাউনে পড়ে আছে। সাধারণ গ্রাহকরা জানান, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ যদি প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে বাল্ব বিতরণ করত তবে কোনো সমস্যা হতো না। তারা অভিযোগ করে বলেন, বাসার মালিকের নামে মিটার থাকায় তারা কাগজ দেখিয়ে অতিরিক্ত বাল্ব তুলে নিচ্ছে। অথচ আমরা এ বাল্ব পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সোবহান শীর্ষ নিউজ ডটকমকে জানান, আগামীকাল শনিবার থেকে মন্ত্রণালয় ও ডিপিডিসির মনিটরিং টিম বাসায় বাসায় গিয়ে বাল্ব সঠিকভাবে লাগানো হয়েছে কিনা তদারকি করবে। এ বাল্ব বিতরণে রাজধানীতে ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে ডিপিডিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে বাল্ব বিতরণ করার মতো জনবল না থাকায় এটি সম্ভব নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিএফএল বাল্বগুলোতে এক বছরের ওয়ারেন্টি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনো অভিযোগ থাকলে প্যাকেটের গায়ে উল্লেখিত ঠিকানায় যোগাযোগ করা হলে তা সমস্যার সমাধান করা হবে।

সাধারণ ১শ ওয়াট বাল্বের পরিবর্তে ২টি ২৩ ওয়াট এবং ৪০ থেকে ৬০ ওয়াটের পরিবর্তে ২টি ১৪ ওয়াটের বাল্ব দেয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ইফিশিয়েন্ট লাইটিং ইনিশিয়েটিভ ফর বাংলাদেশ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৭৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সিএফএল বিতরণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এবার দেশের ৩৯টি জেলা এবং ৯টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকরা এসব বাল্ব পাচ্ছেন। আরইবি, পিডিবি, ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকো নিজেদের গ্রাহকদের মাঝে এ বাল্ব বিতরণ করছে। এর আগে প্রথমবারের মতো গত ১৯ জুন ৫৫ লাখ সিএফএল বাল্ব বিতরণ করা হয়।

এ প্রকল্পের আওতায় পরে আরো এক কোটি ৭৫ লাখ সিএফএল বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।