আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মা, শুধু তোমায় ভালবাসি বলব না...

আবীর শাকরান মাহমুদ আজ মা দিবস। আসেন ভাইয়া-আপুরা, সুন্দর সুন্দর মনমোহিত স্ট্যাটাস-লেখা দিয়ে মায়ের প্রতি ভালবাসা জাহির করি। যেই মহিলাকে আমরা দিনে চব্বিশটা ঘন্টা জ্বালাই, তাঁকে উপলক্ষ বানিয়ে ফেসবুকের- ব্লগের হোমপেজ ভর্তি করে ফেলি। তারপরই চলেন, গিয়ে আরও একটু জ্বালাইয়া আসি উনাকে। অমান্য করি উনার কথা।

করলেই কি! দায়িত্ব তো স্ট্যাটাস দিয়েই শেষ করে দিসি... মাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিব, অবশ্যই খুবই ভালো- সন্দেহ নাই। কিন্তু সারাদিন উনার কথা অমান্য করে, কথার পিঠে কথা বলে, কষ্ট দিয়ে তারপর সন্ধ্যায় ফেসবুকে বসে ‘মা’কে ফেসবুকের একদিনের হুজুগ বানাব-এটা কী খুব ভাল? মাকে নিয়ে দুটা লাইন লিখলেই কি উনার প্রতি আমার কর্তব্য শেষ হয়ে যাবে? আপনিই ভেবে দেখুন, কাল কয়টা কথা শুনেছেন উনার? কয়জনই বা মাকে জড়িয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন, ‘মা, কেমন আছ তুমি?’ কিংবা, ‘মা, তুমি কিছু খাইস?’ শুকনা কথায় চিড়া ভেজে না। তেমনি কোন কাজ ছাড়া শুকনা স্ট্যাটাসেও মায়ের মন ভিজবে না। আজকের কতটা স্ট্যাটাস কতজনের মা দেখবেন, জানিনা। আর দেখলেও কতজন খুশি হবেন, তাও জানিনা।

আমার মা তো এই স্ট্যাটাস-লেখা দেখে উল্টা লেখাপড়া বাদ দিয়ে এই ফেসবুকের- ব্লগের সংসারে বসে থাকার জন্য ঝেড়ে বকা দিবেন। (এটা সিউর!) তারপর হয়ত আমাদের কথা শোনার অনীহা দেখে চুপচাপ চলে যাবেন তিনি তাঁর সংসার সামলাতে। ওটা ফেসবুক সংসার না। সেই সংসারে- যাতে আমার অতীত লেখা ছিল। বর্তমান লেখা আছে।

এমনকি ভবিষ্যতও... এবার কিছু ক্ষুদ্র নমুনা দেখুন আমি কিভাবে আমার মাকে অলটাইম জ্বালাতে থাকি... -আবীর, সারাদিন বাইরের ফার্স্ট ফুড খেওনা। এমনেই মোটা হয়ে যাইতেছ। সেমাই বানিয়েছি আজকে। খেয়ে যাও। -আম্মা, সময় নাই।

(মনে মনেঃ আসলে ইচ্ছে নাই। কই হীরাঝিলের গ্রিল, কই আম্মার সেমাই) -আবীর, ভাত খেয়ে পানি খাও নাই। এটা ঠিক না। পানি খেয়ে আস। -ধুর, আম্মা যাও তো।

খাব না। -তুমি সারাদিন কী নিয়ে ল্যাপটপে গুতাগুতি কর। রেখে একটু আমাদের সাথে বস। -আম্মা, কাজ করতেছি। জরুরি কাজ।

(কোন জরুরি কাজ বুঝে নেন...) -বাবা, সারাদিনে একটু তো পড়তে বসো... -আম্মা, মেডিকেলে এত পড়তে হয় না। তুমি মেডিকেলের বোঝটা কী বলতো? -আবীর, এত রাত না জাগলে হয় না? তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়। ভোরে উঠবা। -সিরিয়াসলি, আম্মা, জ্বালাইয়না তো। তুমি এত বেশি বুঝ কেন? -এখন তুমি বড় হইস।

যাও, মসজিদে যাইয়া নামায পড়। -আম্মা, টাইম নাইতো। বাসায় পড়ে ফেলি। আমি অস্বীকার করছি না। হুম।

এরকম প্রায়ই করি। আমিও তো আপনাদের মতই। তাই, এটাও জানি, এই ঘটনা শুধু আমার একার না। আর এটাও জানি, এরকম করা ঠিক হচ্ছে না। তাই ভাবছি, আস্তে আস্তে শুধরাবো।

অলরেডি মায়ের বয়স ৫০ পেরিয়েছে। আর কতদিন মায়ের সাথে থাকতে পারব আল্লাহ জানে। তাই আসেন, আজকে থেকে মায়ের জন্য একটা ভাল কাজ করি। মনে মনে ঠিক করি, দিনে অন্তত মায়ের পাঁচটা কথা অবশ্যই শুনতে চেষ্টা করব। শুধু ঠিক করলেই হবেনা।

আসেন, সত্যি সত্যি ট্রাই করি। যদি শুনে থাকেন, তবে আসুন, এখন স্ট্যাটাস দেই। ব্লগে লেখালেখি করি। এটাই হবে, আজকের মা দিবসে মায়ের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। ১০০% গ্যারান্টি।

বিশ্বাস না করলে, জিজ্ঞাসা করে দেখেন আপনার মাকে। মা, মা গো, শুধু তোমায় ভালবাসি বলব না। বলব, তোমার সব কথা শোনার চেষ্টা করব। আজ, কাল, পরশু... আজীবন। আমার ডিসশন আমি নিলাম।

আমার কথা আমি বললাম। শুনতে ইচ্ছে না করলে এড়াইয়া যান। আমি কাঙ্গাল। কাঙ্গালের কথা শুনতে হয়না... কাঙ্গালের কথা বাসি হলে ফলে। মা দিবস, ২০১৩ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।