আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা ব্লগ লিখি। কেন লিখি?

বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।

ব্লগ কাকে বলে যারা ব্লগ লিখছেন তাদেরকে আর নুতন করে বুঝিয়ে বলার কিছু নেই। ব্লগ শব্দটি ইংরেজ Blog এর বাংলা প্রতিশব্দ, যা এক ধরণের অনলাইন জার্নাল । ইংরেজি Blog শব্দটি আবার Weblog এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

যিনি ব্লগে পোস্ট করেন তাকে ব্লগার বলার হয়। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন আর ব্যবহারকারীরা সেখানে তাদের মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক কালে ব্লগ ফ্রিলান্স সাংবাদিকতার একটা মাধ্যম হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ নিয়ে এক বা একাধিক ব্লগার রা এটি নিয়মিত আপডেট করেন। বেশির ভাগ ব্লগই কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয সম্পর্কিত ধারাবিবরণী বা খবর জানার; অন্যগুলো আরেকটু বেশিমাত্রায ব্যক্তিগত পর্যায়ের অনলাইন দিনপত্রী/অনলাইন দিনলিপি সমূহ।

একটা নিযম-মাফিক ব্লগ লেখা, ছবি, অন্য ব্লগ, ওয়েব পেজ আর এবিষয়ের অন্য মাধ্যমের লিংকের সমাহার/সমষ্টি। পাঠকদের মিথষ্ক্রিয়াময় ছাঁচে মন্তব্য করার সুবিধে-রাখা বেশিরভাগ ব্লগের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রায় ব্লগই মূলত লেখায আকীর্ণ, কিছু কিছু আবার জোর দেয শিল্প (আর্ট ব্লগ), ছবি (ফটোব্লগ), ভিডিও (ভিডিও ব্লগিং), সঙ্গীত (এমপিথ্রিব্লগ) আর অডিওর (পডকাস্টিং) ওপর। মাইক্রোব্লগিং-ও আরেকধরনের ব্লগিং, ওটায খুব ছোট ছোট পোস্ট থাকে। ডিসেম্বর, ২০০৭-এর হিসেবে, ব্লগ খোঁজারু ইঞ্জিন টেকনোরাট্টি প্রায এগারো কোটি বার লাখেরও বেশি ব্লগের হদিস পেয়েছে।

"ওয়েবলগ" শব্দটা জোম বার্গার ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৭-এ প্রথম ব্যবহার করেন। শব্দটার ছোট্ট সংস্করণ "ব্লগ" চালু করেন পিটার মেরহোলজ, ঠাট্টা করে তিনি তাঁর ব্লগ পিটারমে.কম (PeterMe.com)-এর সাইডবারে ১৯৯৯-এর এপ্রিল বা মে মাসের দিকে ওয়েবলগ (weblog) শব্দটা ভেঙে উই ব্লগ (we blog) হিসেবে লেখেন। তার ঠিক পরপরই, পাইরা ল্যাবস-এ ইভান উইলিয়ামস "ব্লগ" শব্দটা বিশেষ্য এবং ক্রিয়া দুটো হিসেবেই ব্যবহার করা শুরু করেন ("ব্লগ করা", মানে দাঁড়ায় "কারোর ওয়েবলগ সম্পাদনা করা বা কারোর ওয়েবলগে লেখা দেওয়া") এবং পাইরা ল্যাবের ব্লগার পণ্যের সাথে সম্পর্ক রেখে "ব্লগার" শব্দটা ব্যবহার করেন, জনপ্রিয় করে তোলেন পরিভাষাটি। তবে ব্লগে যারা লিখেন তাদের সব চেয়ে বড় সুবিধা হলো- নিজেকে প্রকাশের সুবিধা। কেননা, পত্র-পত্রিকাতে সব কিছু ইচ্ছে মতো প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

কারণ পত্রিকার পাতা সীমিত । আর আপনি যা লিখছেন তা সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতির সাথে নাও মিলতে পারে। কিন্তু ব্লগে আমার মতামত প্রকাশের সুযোগ বলতে গেলে অসীম। আর সব চেয়ে বড় গুণ হল যা পোস্ট করছেন তা সাথে সাথেই প্রকাশিত হয় । একই সাথে পাঠকের প্রতিক্রিয়াও জানা যায় বলে ব্লগ লেখক এক ধরনের আত্নতৃপ্তি লাভ করতে পারেন।

যেটা পত্রিকাতে সম্ভব নয়। আর এটা না বললেও পাঠক বুঝতে পারেন যে, ব্লগের লেখকদের একটা বিরাট অংশ পত্রিকার সাংবাদিকতায় জড়িত। তারা স্বনামে-বেনামে ব্লগ লিখেন। অনেক অপ্রকাশিত খবর পাঠককে জানাতে পারেন। বোঝাই যায় তাদের নিজেদের পত্রিকাতে তাদের স্বাধীনতার ঘাটতি রয়েছে যেটা ব্লগের বেলায় নেই।

ব্লগ বলতে গেলে একটা সীমাহীন মত প্রকাশের উন্মুক্ত মঞ্চ। লন্ডনের হাইড পার্কের ভার্চুয়াল রূপ যেন ব্লগ। আর বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষেরই কোন এক অদৃশ্য কারণে রাজনীতির প্রতি সীমাহীন মোহ রয়েছে। কাজ নেই তো ভেরেন্ডা ভাজ। তাই বাংলাদেশের মানুষ সব চেয়ে বেশী ব্লগ লিখতে পারার কথা।

কিন্তু বাংলাদেশে ব্লগারের সংখ্যা বলতে গেলে সীমিত। হাতে গোনা কয়েকজনকে দেখা যায় একই নামে বিভিন্ন ব্লগে সক্রিয় থাকতে । আর বাকি বেশীর ভাগকেই দেখা যায় উৎসাহের সাথে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে । কিন্তু কিছু দিন চলার পর আর তাদের দেখা মেলে না। ব্লগাররা ঝরে পড়েন কেন? ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে ব্লগ লিখতে উৎসাহী হই বিবিসি বাংলা রেডিওতে ব্লগের উপর একটি অনুষ্ঠান শুনে।

সেই অনুষ্ঠানে এক জন ব্লগার (সম্ভবত তপন বাগচী তার নাম) এসেছিলেন । জনাব তপন বাগচীর কথা আমার অনেক ভাল লেগেছিল। সন্ধ্যার বেলার অনুষ্ঠানে শুনার পর সেই রাতেই আমি সামহোয়ারইন ব্লগে নাম রেজিস্ট্রি করি। তাই ব্লগে আমার বয়সখুব বেশী দিনের নয়। আমার অল্প দিনের ব্লগীয় জীবনে দেখলাম, কোন ব্লগারই বোধ হয় বেশী দিন ব্লগে থাকেন না।

আর তাই ৫৭ হাজার ব্লগার এই ব্লগে থাকলেও তাদের একটা বিরাট অংশ বোধ হয় কখনোই সাইন ইন করেন না। কেউ কেউ হয়তো ১/২ মাস ব্লগিং করে বিদায় নিয়েছেন। তবে কয়েক জনকে আমি শুরু থেকেই দেখছি তারা দুর্দান্ত চালাচ্ছেন। তবে আশার কথা, ব্লগে এখন নোংরা বকাঝকা মনে হয় কমে এসেছে। শিক্ষিত, পরিসীলিত মানুষ কেন বকাঝকা করবে? আপনার সাথে আমার মতের মিল না হতেই পারে।

তাই বলে আপনাকে আমি কেন বকা-ঝকা করব? এই বোধটা মনে হয় আমাদের সবার মাঝে আসতে শুরু করেছে এটা একটা আশার কথা। মনে হয় আমরা সভ্য হতে শুরু করেছি। ব্লগ কি করতে পারে? ব্লগ সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে। ব্লগ হতে পারে একটি মুক্ত মঞ্চ। যেখানে সবাই ইচ্ছে মতো তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন।

আমার তো মনে হয় পত্রিকাগুলোর চিঠিপত্র বিভাগ এখন আর আগের মতো চিঠি পাচ্ছে না। কারণ পত্র লেখকরা অনেকেই ব্লগকে মত প্রকাশের মঞ্চ হিসাবে নিয়েছেন। ব্লগ তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে কাজ করতে পারে। আমি নিজে কম্পিউটারের অনেক সমস্যার সমাধান পেয়েছি ব্লগ থেকে । ব্লগ কখনোই পত্র-পত্রিকার বিকল্প নয়।

পত্রিকার সাথে এর কোন প্রতিযোগিতাও নেই। তবে পত্রিকার চেয়ে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে ব্লগ। ৬৮ হাজার গ্রামের সর্বত্র সাংবাদিক নেই। কিন্তু ব্লগার থাকতে পারেন সর্বত্র। তারা সমাজের নানা ঘটনা, সংবাদ, তথ্যচিত্র ব্লগে তুলে ধরতে পারেন।

তবে এই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত পত্রিকার খবর কপিপেস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, প্রতিষ্ঠিত পত্রিকার পাঠকরা সেই খবর পত্রিকা কাগজে কিংবা ওয়েবে দেখে খবরটি জেনে যাবেন। তাই ব্লগে সেই খবর না প্রকাশ করাই ভাল। তাতে মানুষের বিরক্তি কম হবে। ব্লগকে আরো আধুনিক করা প্রয়োজন।

যাতে করে পাঠক আরো সুবিধা পেতে পারে। প্রতি দিন হাজার হাজার পোস্ট আসে। সবগুলো পাঠকের চোখে পড়ে না। তাই প্রথম পৃষ্ঠাকে আরো ঢেলে সাজানো দরকার। যাতে করে পাঠকরা বিগত ১২ ঘন্টার সব পোস্টের অন্তত শিরোনামটা দেখে নিতে পারেন।

মানুষ কষ্ট করে পোস্ট দেবেন আর আমরা পাঠকরা পড়ব না তা কি করে হয়? ব্লগ লিখে কি লাভ? “ব্লগ লিখে কি এমন লাভ?” এটা একটা লাখ টাকা দামের প্রশ্ন। একটি পত্রিকার বেশীর ভাগ লেখার (চিঠিপত্র কলাম ছাড়া ) জন্যই টাকা ব্যয় করতে হয়। কিন্তু ব্লগের সব লেখাই ব্লগাররা স্বেচ্ছায় ও বিনাপারিশ্রমিকে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে লিখে থাকেন। এটা মনে হয় মনের টান থেকে এক ধরনের আনন্দের জন্যই ব্লগাররা লিখে থাকেন। অনেক ব্লগার আছেন তারা যে সময় ব্লগে ব্যয় করেন ঠিক ঐ পরিমাণ সময় ব্যয় করে হুমায়ূন আহমেদ কিংবা ইমদাদুল হক মিলন বই লিখে কয়েক লাখ টাকা কামাই করে ফেলতে পারেন।

“ব্লগ লিখে কি এ লাভ?” এই প্রশ্ন ইদানিং মনে হয় অনেক ব্লগারকেই ভাবায়। আর তাই প্রতিদিনই ঝরে পড়ছেন অনেক ভাল ভাল ব্লগার। যাদের মাঝে অনেক ভাল লেখা বের হয়ে আসতে পারত। বাংলাদেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো ব্লগেও নারীরা পিছিয়ে। তবে কর্মক্ষেত্রে সম্ভব না হলেও ব্লগ ক্ষেত্রে অনেক ছেলে ব্লগার মেয়ের নাম ধারণ করে ব্লগ লিখে চলেছেন বলে বাজারে প্রচলিত রয়েছে।

কেননা, নারী নিকরে ব্লগের পাঠক বেশী। কোন নারী নিকের পোস্ট এলে শত শত বার হিট হতে থাকে। এটা কি কারণে বুঝা ভার। আর অনেক কষ্ট করে একটা পোস্ট দেয়ার পর কেউ যদি নাইবা পড়ে তাহলে কি লাভ? তাই হয়তো অনেক ছেলে ব্লগার তাদের ব্লগীয় জেন্ডার পরিবর্তনের প্রয়াস নেন। তবে অনেক ব্লগার আসলেই অনেক জনপ্রিয়।

তারা পোস্ট দেবার পরপরই শত শত বার হিট হয়। মন্তব্যেরপর মন্তব্য আসতে থাকে। এধরনের ক্ষেত্রে একটি হতাশাজনক ব্যাপার হল অনেক বিখ্যাত ব্লগারই তাদের পোস্টের মন্তব্যের জবাব দিতে কার্পণ্য করেন। আমার মনে হয় এটা ব্লগীয় অসৌজন্য। সামহোয়্যারইন - বাঁধ ভাঙার আওয়াজ কেন? বাংলায় অনেক ব্লগ থাকলেও কেন জানি না সামহোয়্যারইন ব্লগের বাইরে আর যেতে ইচ্ছে করছে না।

এই ব্লগের সব ব্লগার যেন আমার চেনা। কাউকে কাউকে অন্য ব্লগে দেখা গেলেও এই ব্লগের প্রতি তাদের সীমাহীন টান রয়েছে। বাঁধ ভাঙার আওয়াজ আমাকে যেন কোন এক অদৃশ্য সুতোয় বেধেঁ ফেলেছে। শুধু আমি একা নই আরো অনেকেই এর বাঁধনে বাঁধা পড়েছে। এ বাঁধন ছিড়ব আমি কেমন করে?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.