আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইহা একটি বর্ষপূর্তি পোস্ট!!!



দেখতে দেখতে কেমন এক বছর হয়ে গেল সামুতে! এক হিসেবে লম্বা সময়, সন্দেহ নেই। আবার অন্য হিসেবে শুরু মাত্র। সামুর সাথে প্রথম পরিচয় ২০০৭ অথবা ২০০৮, এরকম একটা সময়ে। কিছু বন্ধুর কাছে শুনতাম বাংলা ব্লগের কথা, 'অপরবাস্তব' - এর প্রথম বা দ্বিতীয় সংকলন পড়েছিলাম, পড়ে বেশ মজাই লেগেছিল। তখন অবশ্য লেখালেখির আশপাশ দিয়ে হাঁটতাম না।

ক্যাম্পাসের বাঁধাহীন ঝলমলে দিনগুলো! তখন লেখা আসেনি, দিনগুলোই নিজেরাই ছিল কবিতার মত, লেখার প্রয়োজন ছিলোনা বোধহয়। তবে বই পড়ার অভ্যেস সেই ছোটবেলা থেকেই। চোখ ফোটার পর থেকে দেখতাম বাসার সবাই গল্পের বই পড়ছে। আমার উপরে বড় চার ভাই বোন, তারা সবাই তাদের পছন্দ মত বই পড়ছে। আমাদের বাসায় এখনও সেবা প্রকাশনীর বইয়ের বেশ বড় সংগ্রহ।

গ্রাম থেকে লুঙ্গি পড়ে বড় চাচা এসেছেন, তিনিও দেখতাম দুপুরে খাওয়ার পরে চোখের সামনে মেলে ধরেছেন মাসুদ রানার 'চারিদিকে শত্রু'! আশেপাশে ছাড়ানো বইগুলোর সাথে বন্ধুত্ব হতে সময় লাগলো না মোটেই। সামুর সাথে আমার সম্পর্কও বলা যেতে পারে এই পাঠের সূত্র ধরে। ২০১১ থেকে মোবাইল দিয়ে মাঝে মাঝে ঢুকতাম সময় কাটাতে, বিশেষ করে বাসে করে কোথাও যেতে অথবা দুঃসহ কোন ট্রাফিক জ্যামে বসে টাইম পাস করার জন্য বেশ উপকারী মনে হত। ২০১২ সালের শুরুতে চাকুরীর সূত্রে ঢাকা ছেড়ে এক যুগ পরে যশোরে আবার বাড়ি ফিরলাম। চিরচেনা আড্ডা, প্রিয়মুখগুলো ছেড়ে অনেকটাই নিঃসঙ্গ একটা জীবনে।

এই নিঃসঙ্গতার একটা খুব সহায় বন্ধু হয়ে দাঁড়াল এই সাম হোয়ার ইন ব্লগ! কোন হিসাব না খুলেই ব্লগে বসে শুধু পড়তাম। গত বছরের শুরুতেও কখনও ভাবিনি কবিতা লিখব বা আমাকে দিয়ে কখনও কবিতা লেখা হবে। কবিতার এমন কোন উৎসুক প্রেমিক পাঠকও কখনও ছিলাম না। মূলত ভালবাসি গল্প। মাথায় একটা নাটকের গল্প এসেছিল, লিখে ফেললাম 'বন্দুকমানব'।

তারপরে আরেকটা গল্প লিখতে লিখতে কিভাবে যেন একটা কবিতা লিখে ফেললাম! লিখে নিজেই খুব অবাক হয়ে গেলাম, এইটা কী হল? আমি কি কবিতা লিখে ফেললাম নাকি?! তারপরে কয়েকদিনে আরও কয়েকটা লিখে ফেললাম, আমি তো বিস্ময়ে হতবাক, কবিতাকে সবসময় একটু সমীহ করে পাশ কাটিয়ে চলেছি, সেই কবিতা কি আমার উপরে ভর করতে যাচ্ছে? কয়েকদিন পরে ব্লগে একটা হিসাব, মানে চালু ভাষায় যাকে বলে অ্যাকাউন্ট, খুলে ফেললাম। নিজে যে কয়েকটা কবিতা লিখেছি, খুব লাজুক মুখে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন দোস্ত বন্ধুকে পড়তে দিয়েছি। কবিতার সাথে তাদের আলাপ পরিচয় আমার থেকেও অনেক কম, তারা পড়ে শুনে মাথা নাড়িয়ে বলেছে- উত্তম হইয়াছে। অতঃপর আটপৌরে সংলাপে ফিরে যাওয়া। ওদের কথায় ভরসা করার কিছু নেই, যাকে তারা ভালোবাসে তার শখের কিছু তো তাদের ভালো লাগবেই! ব্লগে হিসাব খোলার সময় নিক নিয়ে হল এক যন্ত্রণা, ভাললাগার কিছু সুন্দর নাম দিয়ে খুঁজলাম, পেলাম না, আগেই নাকি দখল হয়ে গেছে! এটাকে দুষ্টু খেয়াল বলা ঠিক হবে কিনা জানিনা, মাথায় আসলো ৎঁৎঁৎঁ, দেখতে সুন্দর লাগে, উচ্চারণ নিয়েও একটু মজা থাকলো! এই মজার মাশুল অবশ্য এখন আমাকে দিতে হচ্ছে।

কাউকে যদি পরিচয় দেই যে ব্লগে লেখি তাহলে স্বাভাবিকভাবেই নিকের পরিচয় দিতে হয়। আর নিক খানা তাদেরকে উচ্চারণ করে বোঝাতে যে আমাকে কি পরিমান হিমশিম খেতে হয় সেটা নিশ্চয় আপনার বুঝতে পারছেন! ব্লগে হিসাব খুলে কবিতা পোস্ট দেওয়া শুরু হল। সারাজীবন পড়েছি গল্প, অধ্যয়ন গণিতশাস্ত্রে, লিখতে বসেছি কবিতা- যেখানে ছন্দ মাত্রা বিষয়ক বিন্দু মাত্র ধারণা নেই। তাই প্রথমে কবিতার শিরোনাম দিতাম 'প্রয়াস কবিতা'- কেউ যেন এগুলোকে কবিতা ভেবে ভুল না করেন, যেন বুঝতে পারেন কেউ একজন কবিতা লেখার 'চেষ্টা' করেছে! কবিতা দিয়ে ব্লগে জায়গা করে নেওয়াটা একটু সময় সাধ্য ব্যাপার, যেটা আজকে বুঝি। কিন্তু প্রথম প্রথম বেশ হতাশ লাগত।

কেউ আমার ব্লগে আসেনা, আমার কবিতা কেউ পড়েনা! দীর্ঘ একটা সময় গেছে এরকম। বছরের মাঝখানে স্কুল পরিবর্তন হলে নতুন ক্লাসে গিয়ে নতুন ছেলেটা যেমন টিফিন টাইমে ক্লাসের এক কোনে মুখ গুঁজে বসে থাকে, আমার অবস্থা ছিল অনেকটা সেইরকম। একটা পোস্ট পড়ে দারুণ লেগেছে, বেশ কিছু ভেবেছি, কিন্তু সেটা আর মন্তব্যে না লিখে সটান বের হয়ে এসেছি! তারপরে আস্তে আস্তে একজন দুইজনের সাথে পরিচয়, ভালো লাগা বিনিময় করতে করতে এই ব্লগ এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে মায়াবী এক জানলা, যেখান দিয়ে একবার উঁকি না দিতে পারলে দিনগুলো কেমন অসম্পূর্ন থেকে যায়। এই ব্লগের কাছে, ব্লগবন্ধুদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো শুধু এই জন্যে না যে তোমাদের ভালোলাগার মধ্যে দিয়ে আমি আমার ভেতরের এক লেখক সত্ত্বাকে আবিস্কার করেছি, সুন্দর সৃষ্টিশীল সময় কাটানর একটা অবলম্বন পেয়েছি, আমি কৃতজ্ঞ থাকব আমার খুব নিঃসঙ্গ অস্থির এক সময়ে আমার পাশে ছিলে তোমরা বন্ধু হয়ে। আমার অনেক বোবা যন্ত্রণার ভাষা ছিলোনা, আমি কবিতার মধ্যে ভরে তাদেরকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছি, তোমরা ভালোবেসে সেই যন্ত্রণার কথা পাঠ করেছ! তোমাদের জন্য রইলো ভালোবাসা।

অমর সাহিত্য সৃষ্টির কোনো দুঃসাহসী বাসনা আমার নেই। সামর্থের বিষয়টাতো অনেকই পরে। সাহিত্যের মাপকাঠিতে আমার লেখা 'কবিতা', 'অকবিতা' বা 'ব্যর্থ কবিতা' কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে বা পড়বে এটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথা নেই। আমি লিখে আনন্দ পেয়েছি, আর সেই লেখা পড়ে আর একজনও যদি আনন্দের অনুভবটুকু পায়, তবে সেটাই হতে পারে একমাত্র প্রাপ্তি। যাহোক অনেক কথা হল, মাথার মধ্যে আরও অনেক কথা ছিল বলবার, প্রথম বছর পূর্তির পোস্ট বলে কথা, স্মৃতিচারণার ইতং বিতং যে থাকবেই এই পোস্টে।

শেষ করছি আমার বাগানে ফোটানো কিছু ফুলের ছবি আর নানা সময়ে লেখা কিছু নুড়ি কবিতা(মানে ছোট্ট কবিতা!) দিয়ে। গত বছর ১৬ ডিসেম্বর থেকে ছাদে একটা বাগান শুরু করেছি, আপনার যেন ভুলেও ভাববেন না এই বাগানের গাছগুলোর নিয়মিত যত্ম- আত্মি করার সামর্থ বা নিরবিচ্ছিন্ন মনোযোগ আমার আছে, বাড়ির মানুষদের যত্মেই ওরা এখনও বেঁচে আছে, এবং এই বর্ষায় ভিজে বেশ রোশনাই চেকনাই চেহারা নিয়েছে। মরুভূমির বুকে যখন জল মেলেনা, মরীচিকার চেয়ে বন্ধু আর কে আছে? প্রতি সাঁঝে আমার কথা ভেবেই প্রদীপ জ্বালো তুমি- এই মায়াটুকু ছাড়া আমার আর কি থাকে? প্রদীপ তুমি ঠিকই জান তাহলে, আলোর ছোবলে অন্ধকার বাঁচেনা। তাইতো কোলের নিচে অন্ধকার গুঁজে রাখ, আর কে না জানে- অন্ধকার ছাড়া প্রদীপ বাঁচেনা... যে জীবনে মিলনের মূলসুত্রই না মেলা সেই জীবনে সমান্তরাল রেখারা কভু মেলে না, যদিও অসীমে মেলার স্বপ্ন বুনে চলে। তারপরেও তুমি যদি আমাকে চাও- তবে তুমি সমান্তরালই থেক... পরানের আকাশে যদি না মেলে দেখা কিতাব খুঁড়ে আর লাভ কি বল? আমার দুয়ারে যদি না আস তুমি, তোমার আলোই যদি না ভাসে সকাল কাজ কি তোমার সপ্তম আসমানে আরশ সাজিয়ে!!! কখনও কখনও... বেঁচে থাকতে চাওয়ার অর্থ- একটু খানি ভুলে থাকতে চাওয়া।

কখনও কখনও... ভাল থাকতে পারার মানে- একটু খানি ভুলে থাকতে পারা। । অনেকদিন হয়ে গেল, আমি কোন স্বপ্ন দেখিনা। কি বলব অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে- এখন একটা দুঃস্বপ্ন হলেও চলত!!! বৃষ্টি ঝরে, বৃষ্টি পড়ে, বৃষ্টি কাঁদে, ডানায়, ছায়ায়, পাতায়, হাওয়ায় তোমার চোখের ক্লান্ত কোলে দলছুট মেঘ কিছু নীর খুঁজে ফেরে, ঝরছে, ঝরুক, তবু ঝরে যাক, গ্লানি, প্রেম, অথবা নিছক নোনা জল কাঁদছে, কাঁদুক, তবু বয়ে যাক... ধার করা আলোই চাঁদের কত রূপ!!! আর এদিকে দেখ, বেচারা সূর্যের দিকে তো তাকানোই যায়না... আশ্বিনী ঝড়ে তোরও বুকে যদি বান ডাকে, কাশবন আর চড়ুই এর আঁচল তুলে, নদীর মত তুইও আসিস নেচে। নৌকো ছেড়ে বাঁশি হাতে শঙ্খচূড় সাজে, দেখিস তুই, দেখাব তোকে, ঝিনুক বুকে সর্বনাশের মুক্তো কেমনে গাঁথে... দেখ যদি কোন ভোরে তোমার পথের ধারে, আদিম আলিঙ্গন সিক্ত এক জোড়া বকুল ঝরে আছে, তবে সেদিনই বুঝে নিও প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে- সে আর ফিরবে না এই পথে... বহুদিন পরে বৃষ্টি ছুঁয়ে, বহুদিন পরে বৃষ্টিতে ঝরে, বহুদিন পরে বৃষ্টিতে মিশে, আমি একা তবু; তুমি আমি মিলে, আমরা দুজন, আমরা আবার, সেই কবেকার ‘আমরা’ হয়ে যাই...।

আমার আর একটুও ভাল লাগে না এত কোটিতে ভাংচুর হয়ে গেছি! অযুতে নিযুতে টুকরো বিখন্ড হয়ে গেছি... আমি ছড়িয়ে গেছি, শুকিয়ে, মুড়িয়ে, কাঁটাতারের সীমান্তের পিলারে পিলারে- আপাদমস্তক গুড়িয়ে গেছি... সাগরপারের ধবধবে সাদা বালির মত, সকাল- সন্ধ্যা সময়ের আঙ্গুল গলে, আমি ঝরে পড়ি, আমি ঝরে পড়ি... আমি তোমার কাছে জানতে চাইলাম সত্য কী? তুমি আমার সামনে মেলে ধরলে একখানা কিতাব! অথচ তোমার চেয়ে আর কে ভালো জানতো;- মাটির মানুষ আমি, কাগজের ঐ শুকনো পাতায় কি আর আদমের তৃষ্ণা মেটে? শ্রমিকের ঘামে শুধু নোনতা লবণ নয়, রক্ত ঝরা হিমোগ্লোবিন কণাও থাকে... জেন, কোহিনূর হীরাতেই শুধু নয়, আলোর দ্যুতি অশ্রুবিন্দুতেও গান বাঁধে... কখনও কেউ দেখেছো নাকি,- সমুদ্রের দেখা না পেয়ে এক নদী ফিরে গেছে পর্বতে? কখনও কেউ শুনেছ নাকি, কাঁটা না বিঁধিয়ে ফুটেছে ভালোবাসা মানুষ সরোবরে ?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।