আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোথায় মানবতাঃ ৩০ টাকা বেতন! আর ১ কেজি চাল ৩৫ টাকা!!

দেখে যা অনির্বান কি সুখে আছে প্রাণ...
৯ অক্টোব‍ঃ বিশ্ব ডাক দিবস দৈনিক মজুরী সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা ২৪ হাজার ইডি কর্মচারীর মানবেতর জীবনযাপন আব্দুর রহীম। বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার রয়না গ্রামে। প্রথম যখন ডাক বিভাগে শাখা পোষ্টমাষ্টার হিসাবে কাজ শুরু করেন তখন তার মাসিক সম্মানী ভাতা ছিল ২২ টাকা। সে পাকিস্তান আমলের কথা। তার পরে গত ৪০ বছরে ১২ দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে তিনি সম্মানী ভাতা পান ১০১০ টাকা।

বর্তমানে তার প্রতিদিনের গড় মজুরী পড়ে ৩৩ টাকা। এতে তার সংসারের প্রাত্যহিক ব্যয় মেটানোই দুরুহ হয়ে পড়ে। শুধু আব্দুর রহীমই নয়, নাম মাত্র ভাতায় কর্মরত দেশের প্রায় ২৪ হাজার ইডি কর্মচারী বর্তমান দুর্মুল্যের বাজারে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপণ করছেন। ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে দেশে দু-ধরনের ডাক কর্মচারী রয়েছে। একটি জাতীয় বেতন স্কেলভূক্ত, অপরটি অবিভাগীয় (ইডি) বা সম্মানী ভাতায় কর্মরত।

সারা দেশে এমন অবিভাগীয় কর্মচারী বা এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল এজেন্ট (ইডিএ) রয়েছেন প্রায় ২৪ হাজার। এদের মধ্যে রয়েছে সাব পোষ্ট মাষ্টার, শাখা পোষ্টমাষ্টার, চিঠি বিলিকারী, ডাক বহনকারী ও চৌকিদার। এসব কর্মচারীরা সরকারী তহবিল থেকে সম্মানী পেলেও তারা সরকারী কর্মচারী নন। এরা প্রতিদিন চার ঘন্টা ডিউটি করেন। বিনিময়ে সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৪ টাকা ভাতা পান।

শাখা পোষ্ট অফিসের সাব পোষ্টমাষ্টারদের মাসিক সম্মানী ভাতা ১৩২০ টাকা। এছাড়া মাসিক ১০১০ টাকা সম্মানীতে শাখা পোষ্টমাষ্টার হিসাবে ৮ হাজার ১১৩ জন কর্মরত আছেন। সারা দেশে ৮ হাজার ২৪৬ জন চিঠি বিলিকারী মাসিক ৯৯০ টাকা ও ৫ হাজার ৯২৫ জন ডাক বহনকারী ৯৫০ টাকা হারে সম্মানী ভাতা পান। এছাড়া ১ হাজার ৪৩২ জন চৌকিদার, ঝাড়–দার ও অন্যান্য ইডি কর্মচারী মাসিক সম্মানী পান ৯১০ টাকা। ঈদ বা পূজায় তারা কোন উৎসব ভাতা পান না।

বৃদ্ধ বয়সে অবসরে যাবার সময় খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয় তাদের। অথচ পোষ্ট অফিসে চিঠি গ্রহণ থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি এসব চিঠি, মানি-অর্ডার, ইন্টারভিউ কার্ডসহ যাবতীয় কাগজপত্র সঠিক সময়ে বিলি করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন তারা। সারাদিনে ৪ ঘন্টা ডিউটি করলেও মূলত দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়েই অফিস করায় এরা চাকুরীর পাশাপাশি অন্য কোন কাজও করতে পারেন না। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪৪ টাকা হারে সম্মানী পেয়ে বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ-পোষণ করানোই তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারগুলো বিভিন্ন সময় ইডি কর্মচারীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির আশ্বাস দিলেও তা কার্যকর হয়নি।

ইডি কর্মচারীদের ভাতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৩ সালে ডাক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভারত ও পাকিস্তানে ইডি সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে ডাক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে উৎসব ভাতা প্রদান ও সম্মানী ভাতা ২০ ভাগ বৃদ্ধি করার প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও অদ্যাবধি তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ডাক বিভাগকে এ প্রস্তাবনার নথিপত্র প্রেরণের জন্য চিঠি দেয়। যার প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী এ প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তা ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে সরকারের নেয়া উদ্যোগ বাস্তবায়িত না হওয়ায় বর্তমানে এসব ইডি কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ ব্যাপারে ডাক কর্মচারী সালাউদ্দিন বলেন, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপক্ষো করে আমরা বাড়ি বাড়ি চিঠিপত্র বিলি করি। অন্যের বেতনের মানি-অর্ডার নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দেই। কিন্তু মাস শেষে নিজের ভাতাটা হাতে নিলেই মুখটা মলিন হয়ে আসে। বর্তমানে একজন দিনমজুর যে মজুরী পায়, আমাদের দৈনিক সম্মানী তার এক-তৃতীয়াংশেরও কম।

সারা বছরতো নয়ই, ঈদ-পার্বণেও স্ত্রী-সন্তানদের একটা ভালো কাপড় দিতে পারি না। অথচ সরকারের একটু সুদৃষ্টি পড়লেই আমাদের জীবনটা পাল্টে যেতে পারে। বাংলাদেশ পোষ্টাল ইডি কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আবু হানিফ মিয়া বলেন, ইডি কর্মচারীদেরকে সারা মাসের সম্মানী ভাতা হিসাবে যে টাকা দেয়া হয়, তা দিয়ে একটি পরিবারের এক সপ্তাহের ব্যয়ও মেটে না। অথচ এ ব্যাপারে সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এটি অমানবিক।

তাই আমরা বাধ্য হয়ে ভাতা বৃদ্ধি ও ঈদ বোনাসের দাবীতে আগামী কাল ১০ অক্টোবর থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। সূত্র-
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.