আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবশেষে সুমতিঃ ভিকারুননিসায় প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি লটারির মাধ্যমে হবে

ব্লগর ব্লগর হাজার বছর

দীর্ঘদিন ধরেই ভর্তিসংক্রান্ত ব্যাপারে ভিকারুননিসা ব্যাপকভাবে আলোচিত। অন্যসব ব্যাপার তো আছেই, প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ছোট্ট শিশুদের উপর অতিমাত্রায় চাপ পড়ে বলে বিতর্ক ছিলো। এব্যাপারে প্রথম আলোয় একটি খবর ছাপা হয়েছে। খবরটি নিম্নরুপঃ রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ লটারির মাধ্যমে ছাত্রী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মুহূর্তে রাজধানীর হলি ক্রস, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি, ওয়াইডব্লিউসিএ, এসওএস হারমেন মেইনারসহ কয়েকটি স্কুলে লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির পদ্ধতি চালু আছে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, লটারির মাধ্যমে ভর্তি শিশুদের মানসিক যন্ত্রণার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। তা ছাড়া এই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করলে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়মের সুযোগ অনেকটা কমে আসবে। তাঁরা বলছেন, যেসব বিদ্যালয়ে লটারি চালু আছে, সেখানে ভর্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ কম। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নোমান উর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করা সম্ভব হলে শিশুদের ওপর চাপ কমবে এবং অভিভাবকেরাও অনেক ঝামেলা থেকে রেহাই পাবেন। তিনি বলেন, অধিদপ্তরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে।

রাজধানীর বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নামকরা বিদ্যালয়গুলোতে বয়সের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এর প্রস্তুতি নিতে গিয়ে শিশুরা বলতে গেলে নির্যাতিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে পরীক্ষাভীতি। এ ছাড়া নাম-ডাকহীন অনেক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়া শিশুদের তাদের অভিভাবকেরা নামী স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করাচ্ছেন। এর ফলে কেউ পাঁচ বছরে, আবার কেউ আট বছরে প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে।

এতে সহপাঠীদের মধ্যে বয়স ও পরিপক্বতার পার্থক্য হচ্ছে। ভর্তিপরীক্ষার উপযোগী করাতে অভিভাবকেরা সন্তান নিয়ে কোচিং সেন্টারে ও শিক্ষকের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন। অনেক অভিভাবক শিশুকে ভর্তিপরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করাতে গিয়ে শারীরিক নির্যাতনও করেন। এসব চাপে নষ্ট হচ্ছে শিশুর শৈশব। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, লটারির মাধ্যমে ভালো-খারাপ মিশ্রণে শিক্ষার্থী নির্বাচিত করা হলে অনেকগুলো বিদ্যালয় কাছাকাছি ফল অর্জন করতে পারবে।

এর ফলে পাবলিক পরীক্ষায় সমমানের ও সমখ্যাতির বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়বে। অন্যদিকে সবাই নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রাণপণ প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসবে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম বলেন, ৬ অক্টোবর কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভায় লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী বছর জন্মনিবন্ধন সনদ দেখে প্রথম শ্রেণীতে পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সী ছাত্রীদের প্রাথমিক বাছাই ফরম দেওয়া হবে। এরপর প্রকাশ্য লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

তিনি জানান, নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। তা ছাড়া আবেদনকারী যে শাখায় ভর্তি হতে আগ্রহী, শুধু সেই শাখার ফরম সংগ্রহ করতে পারবে। ভর্তির পর শাখা বদল করা যাবে না। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মনজুর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিশুর অধিকার। সেখানে লেখাপড়া শিখে তাকে ভর্তি হতে হবে কেন? তিনি আরও বলেন, ভর্তির জন্য শিশুদের কোচিং সেন্টারে পাঠানো, গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ানো, গাইড বই ধরিয়ে দেওয়াসহ নানামুখী চাপ দেওয়া অন্যায়।

তাই অভিজাত প্রতিষ্ঠানে যেহেতু আসনের সীমাবদ্ধতা আছে, সেহেতু লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যেতে পারে। পাশাপাশি যে এলাকার শিক্ষার্থী ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে ভর্তি হয়, সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। রাজধানীর একটি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসান জাকির বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে শিশুরা প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের যেসব বিষয় শেখে, তা চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার কথা। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে এই অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।