আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চে- নিয়া পুরাতন কথা!!!!

নিজের বিষয়ে কিছুই বলিবার নাই

আসসালামু আলাইকুম, ১.আমাদের মতোন দেশে এবং পশ্চিমা দেশগুলিতেও ''চে গুয়েভেরা'' নামখানি নানাভাবে আকাশে-বাতাসে আজিকাল ভাসিয়া বেড়ায়। উহা যে খারাপ বিষয় তাহা বলিবার উদ্দেশ্য আমার নাই। মার্কিন-মুলুকের হাটে-বাজের চে-র টুপি, গেন্জী, টি-শার্ট----এইগুলিতে ভরিয়া রহিয়াছে। আমাদের দেশেও হয়তো কিছুদিন বাদে চে-মার্কা লুঙ্গিও দেখিতে পাইবো। উহার মানে কী? উহার মানে একটাই।

তাহা হইতেছে চে এখন আর কোনো বিপদের নাম নহে। চে এখন আর কোনো বিপ্লবীর নাম নহে। চে এখন একটি ফ্যাশানের নাম। ২.আমি চে-র অবদানকে অস্বীকার করিতেছি না। করিবার উপায়ও নাই।

কিন্তু নিজেদের জীবনাদর্শে কতোখানি চে-গুয়েভেরাকে রাখিয়াছি? এইটা ভাবিবার বিষয়। তাহার কারণ হইতেছে যে : চে ছিলেন বিপ্লবী। তিনি দেশে-দেশে বিপ্লব ছড়াইয়া দিতে চাহিয়াছিলেন। কিন্তু বিপ্লব তো গাছের পাকা ফল নহে যে ঝাকি দিলেই টুপ করিয়া পড়িয়া যাইবে। ৩.চে-কে নিয়া বন্দনা-গীতি লিখিবার লোকের অভাব হয় নাই।

কিন্তু বিপ্লবী মানুষের সংখ্যা সংখ্যা দিন-দিন কমিয়া যাইতেছে। আমরা চে-কে নিয়া কবিতা আওড়াই। কিন্তু িতিনি যে বলিয়া গিয়াছেন : “the revolution is not an applethat falls when it is ripe. you have to make it fall.” এইসব কথার দিকে আমাদের নজর নাই। নজর দিবার সময়ও নাই। শুধু পঞ্জিকা দেখিয়া চে-র জন্ম-মৃত্যুর দিন তাহাকে নিয়া নানারকম শ্রদ্ধা জানাইতে থাকি।

উহা কি আসলেই শ্রদ্ধা নাকি শ্রদ্ধা দেখাইবার একটি ভান মাত্র? ৪.চে-গুয়েভেরা যে-মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন তাহার নাম মার্কসবাদ। সেই মতবাদের কতখানি চর্চা হইতেছে তাহা নিয়াও প্রশ্ন করিবার অনেক অবকাশ রহিয়া যায়। মার্কস সাহেব বলিয়াছিলেন : ইতিহাসের অতিগুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যেন দুই-দুইবার করিয়া হাজির হইয়া থাকে। প্রথমবার হাজির হয় বিয়োগান্তক নাটক হিসাবে আর পরেরবার প্রহসন হিসাবে। মার্কসের বয়ান এইরকম : ''History repeats itself, first as tragedy, second as farce.''(মার্কস রচনাবলী : চতুর্থ খণ্ড)।

চে-র বন্দনা দেখিয়া সেই কথাই আবার মনে পড়িয়া যাইতেছে। যদিও আমি মার্কসবাদী নহি। কিন্তু এই দুনিয়ার একজন বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী হিসাবে মার্কস সাহাবের গুরুত্ব একেবারেই অস্বীকার করিতে পারি না। ৫.আবার মজার বিষয় এই যে আমরা চে-কে বিপ্লবী বলিয়া সালাম জানাই আর লাদেনকে সন্ত্রাসী বলিতে দ্বিধা করি না। হামাস আর হিজবুল্লাহ-র নেতাগণকেও অবলীলায় সন্ত্রাসী বলিয়া নিন্দা জানাই।

অথচ ভুলিয়া যায় যে একসময় চে-গুয়েভরাকেও সন্ত্রাসী বলিয়া অভিহিত করা হইতো। অর্থাৎআমাদের বিপ্লবীদের মনোজগতেও মার্কিন সংস্কৃতির আগ্রাসন কতোভাবেই না দেখিতে পাইতেছি!!!! শত্রু-মিত্র চিনিবার ক্ষমতাও যেন আমাদের লোপ পাইতেছে। অথচ এইটা চিনিবার দিকে চে-গুয়েভরা কতোভাবেই-না তাহার কমরেডদের প্রতি অনুরোধ জানাইয়াছিলেন!!!সেই কথা আমরা ভুলিয়া যাইতেছি। আরেক জার্মান দার্শনিক হেগেল সাহাব বলিয়া গিয়াছিলেন যে ইতিহাসের শিক্ষা এই যে আমরা ইতিহাস হইতে কিছুই শিক্ষা লইতে চাহি না। হেগেলের বক্তব্যটি হইতেছে :We learn from history that we do not learn from history" ।

চে-কে নিয়া এই মতাদর্শহীন মাতামাতি হেগেলের কথাকেই আবার স্মরণ করাইয়া দেয়। যদি আমাদের কান থাকিতো তবে উহা নিশ্চিয়ই শুনিতে পারিতাম। পরম করুণাময় আমাদিগকে সহজ সরল পথে চলিবার তাওফিক দিন। সকলে ছহি-ছালামতে থাকিবেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।