আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোষ্ট ড্রেঞ্জারাস ড্রাইভিং

LIVING IN CUONTRY SA

বর্ডারটাউনে বাসা ছেড়ে এসেছি ২ মাস হলো। আমার মেয়ে লক্সটনের কিন্টারগার্ডেনে ভর্তি হয়ে খুব খুশি। এখানে টিচাররা অনেক বেশি যতœ নেন। এক কথায় সবকিছুই ওর ভালো লাগছিলো। আসলে পানির সাথে মানুষের ব্যবহারের কোথায় যেন একটা মিল আছে।

বর্ডারটাউনে যেখানে লাইনের পানি অতিরিক্ত ক্লোরিনের জন্য খাওয়াই যায় না, সেখানে সবকিছু কেমন যেন মরুভূমির মতো। আর এখানে মারে নদীর তীরে লক্সটনের পানি শুধু ভালোই নয়, বিকেলে নদীর তীরে পার্কে আমার মেয়ে খুব মজা পেত। যাই হোক, ঠিক এরকম এক সন্ধ্যায় ফোন এলো- পাপিয়া তার আগের চাকুরীতে আবার যোগ দিতে। হঠাৎ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না- কি করবো। বাচ্চাকে নিয়ে গিয়ে মোটেলে উঠে শান্তি পাবো না, তাই ঠিক করলাম, খুব ভোরে- অথবা মাঝরাতে রওয়ানা দেব।

তাহলে ওখানে পৌছেই সে কাজে যাবে, আর আমরা বাবা মেয়ে মিলে বাসা খুজবো। সেদিন ছিলো শবে কদর। গত শবে কদর মালেশিয়া এয়ারপোর্টে করেছি। আর এবার রাত ২ টায় রওয়ানা দিলাম লক্সটন থেকে বর্ডারটাউনের উদ্দেশ্যে। প্রথম থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো।

পারুনা পার হবার পর থেকেই বৃষ্টিটা খুবই বাড়লো। সাথে প্রচ্ন্ড বাতাস। উইন্ড স্ক্রীনের ওয়াইপারটা ক্রমাগত সর্বোচ্ছ গতিতে চালিয়েও সামনটা পরিষ্কার দেখতে পারছি না। গাড়ির হিটিং সিষ্টেম সর্বোচ্ছ অবস্থায় নিয়েও আমরা শীতে কাপছি। আমার মেয়ে কারসিটে বসে প্রথমে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলো।

শেষে বিরক্ত হয়ে সিট বেল্ট খুলার জন্য কান্না শুরু করলো। প্রচন্ড তুফানের মধ্যে ঘন্টায় ১১০ কি.মি. -তে চলন্ত গাড়িতে সিট বেল্ট খুলাটা কোনভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, সেটা আমার ৪ বছরের ছোট মেয়েকে কে বুঝাবে। সবচেয়ে ভয়ে আছি রাস্তার পাশের গাছগুলো নিয়ে, কখন যে ভেঙ্গে আমার গাড়ির উপর পড়ে ঠিক নেই। তবুও একটানা ড্রাইভ করে যাচ্ছি। দাড়াবার সময় যে নাই।

রাস্তার দুধারে পানি জমে যাচ্ছে। যতক্ষণ ডিসকনটিনিউয়াস লেন মার্ক দেখছি ততক্ষণই অনেকটা মাঝখান দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। এই ভয়াবহ বৃষ্টির মধ্যেও প্রাণীরা থেমে নেই। বেশ কয়টা খরগোশকে রাস্তা পার হতে দেখলাম। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে তিনটায় পিনারো পৌছে যাত্রাবিরতি করতে চাইছিলাম,কিন্তু গাড়ি থামালেও নামার কোন উপায় নেই।

কোনমতে পাবলিক টয়েলেট গেলাম। ওযু করে এসে তাহাজ্জুদটা পড়ে সেহরী খেলাম। তারপর আবার রওয়ানা দিলাম। পিনারোর আগের ও পরের ৯ কি.মি. রাস্তা এমনিতেই খারাপ। আনইভেন সারফেস, তারউপর এই ঝড়-তুফান।

মনে হলো- দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছি আমি পথ। কোন মতে ম্যালে হাইওয়ে পেরিয়ে বর্ডার টাউনের রাস্তায় উঠলাম। আগামী ১৩২ কি.মি. পেট্রোল ষ্টেশতো দুরের কথা কোন মানব বসতির চিহ্নও নেই। আল্লাহর নাম নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি, ভেতরে বাংলা তরজমাসহ কোরআন শরীফের তেলাওয়াত চলছে। শুনে শুনে পেছনে মা-মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

ঘুম যে আমারও আসছে না, তা কিন্তু নয়, কিন্তু এ কথা ভুলে গেলে হবে না যে ঝড় তুফানে সাউথার্ন ম্যালের ক্যাঙ্গারু রা বসে থাকবে না, যে কোন সময় ওরা গাড়ির সামনে পড়তে পারে। ১১০ এ গাড়ি এমনিতেই তুলার মতো হালকা হয়ে যায়, তারমধ্যে যদি ক্যাঙ্গারুর সাথে ধাক্কা খাই তাহলে আর উপায় নেই। মোবাইলের নেটওয়ার্ক ও নেই। ভরসা ০০০, কল করে পুলিশকে বলতে হবে আর,এ,এ,-কে খবর দেবার জন্য। কিন্তু উদ্ধারের জন্য একঘন্টা এই ঠান্ডায় অপেক্ষা করার চেয়ে ফ্রিজের ডিপে ডুকে বসে থাকা ঢের ভালো।

পিনারো ছেড়ে এসেছি ৭০ কি,মি, হবে। এর মধ্যে আমার মেয়ে আবার পেশাব করতে চাইলো। ঝড়ের মধ্যে পার্কিং খুজতেও সমস্যা। বেশিরভাগ ট্রাক- পার্কিংই গাছে ঘেরা। অনেক পরে একটা তুলনামূলক খালি পার্কিং পেয়ে আধো ভিজা হয়ে ওর কাজটা সারলাম।

তারপর আবার রওয়ানা দিলাম। এবার আর শুধু বৃষ্টি আর তুফান নয়, একেবারে শিলাবৃষ্টি। রাস্তার উপর বরফ জমে সাদা হয়ে গেছে। গাছগুলোও সাদা হয়ে গেছে। গাছের ডালে ডালে ঘষা লেগে প্রচন্ড শব্দ হচ্ছে।

কিন্তু আমার দাড়াবার সময় যে নেই। অবশ্য দাড়াবার জন্য নিরাপদ কোন জায়গাও নেই। শেষ পর্যন্ত কিথ বাইপাসে পৌছে বৃষ্টিটা হালকা হলো। কিন্তু রাস্তা মারাত্মক পিচ্ছিল। আকাবাকা বৃষ্টিভেজা রাস্তায় গাড়ি কন্ট্রোল করা খুবই সমস্যা।

তারউপর দুচোখ জুড়ে ঘুম। রেললাইনটা ক্রস করে ডিউক হাইওয়ে তে উঠতেই শুরু হলো লম্বা লম্বা ট্রাকের অত্যাচার। এদের পানিতে যে শুধু পুরো গাড়িটা গোসল করে তা না, ওয়াইপারের ও অনেক সময় লাগে উইন্ড স্ক্রিন পরিষ্কার করতে। নারাকোর্ট রোডে ওঠে প্রথমবারের মতো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। দুরে বর্ডারটাউনের আলো দেখা যাচ্ছে।

স্পিড লিমিট ও ৮০ তে নেমে এলো। ভোর সাড়ে ৫ টায় বর্ডারটাউনে পৌছে কোনমতে ফজরের নামাজটা পড়লাম। আমার জীবনে এতো বিপদজনক আবহাওয়ায় আর কখনও ড্রাইভ করিনি। আল্লাহর শুকুর আদায় করলাম যে আমরা নিরাপদে পৌছতে পেরেছি

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.