আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাতের আকাশ ও তারা পরিচিতি

এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের ত ই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝিঁ পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ। http://zizipoka.com/

রাতের আকাশ ও তারা পরিচিতি সেই সে অতি প্রাচীন কাল থেকেই আকাশের তারাদের দিয়ে নানা প্রকারের ছবির কল্পনা করেছে মানুষ। আদি কালের যাযাবর জাতীর যাযাবর লোক খোলা আকাশের নিচে তাদের পালিত গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি রাতের পর রাত পাহারা দিতে দিতে আকাশে ফুটে থাকা অসংখ্যা অগুনিত তাঁরাদের দেখে দেখে এঁকেছে তাদের কল্পনার ছবি তাঁরাদেরই নিয়ে। নিজেদের আকা তাঁরাদের সেই সব ছবি নিয়ে দিনের বেলা হয়তো তারা কত গল্প করতো। রাতের আকাশের তাঁরার মেলাতেই দেখা দিয়েছে তাদের মেষ, বৃষ।

যাযাবর যুবকের চোখে তার প্রিয়াও তাঁরাদের মাঝেই স্থান করে নিয়েছে, শস্য চয়নরতা কন্যারাশি তারই স্বাক্ষী। আরো আছে মিথুন রাশি। কিন্তু কিভাবে শুরু হয়েছিলো ছবি আকার এই খেলা তা কেউ বলতে পারে না। হয়তো কোনো এক যুবক রাতের বেলা তাঁরাদের নিয়ে ছবি এঁকেছে আর পরদিন আবার তার বন্ধুদের ডেকে দেখিয়েছে। সেই বন্ধুরাও হয়তো আবার নিজেদের মত করে অন্য তাঁরাদের নিয়ে ছবি এঁকেছে।

এমনি ভাবেই হয়তো এক জন থেকে আরেক জনে, এক দল থেকে আরেক দলে, এক বংশ থেকে আরেক বংশে, এক যুগ থেকে অন্য আরেক যুগে তাঁরাদের ছবি প্রচলিত হয়ে আসছে। আর সেইসব ছবিই আজ আধুনিক জ্যোতিবিদ্যার বইয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। যারা এই ছবি এঁকেছিলো তারা কবেই বিলিন হয়ে গেছে সময়ের গর্ভে কিন্তু তাদের আকা সেই সব ছবি হাজার হাজার বছর ধরেও পরিবর্তন হয়নি। কেউ জানেনা কখন কে কোন ছবিটি কল্পনা করেছিলো, কিন্তু আজো তাদের সেই নিদৃষ্ট তাঁরাদের দিয়েই সেই একই ছবি কল্পনা করা হচ্ছে। এমনি ভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে প্রতিটি তারার ছবি সেই একই রয়ে গেছে, কোনো পরিবর্তন হয়নি।

অতি আদিম কাল থেকেই মানুষ যে রাতের তাঁরা ভরা আকাশের মোহে আকৃষ্ট হয়েছে তার প্রমাণ মিলে গুহামানবের গুহায় তাঁরাভরা আকাশের ছবি দেখে। আগেই বলেছি প্রাচীন কালের মানুষেরা তাঁরাদের নিয়ে আলোচনা করেছে, তাঁরার সাথে তঁরা মিলিয়ে নানান ধরণের ছবি কল্পনা করেছে। প্রতিটি সভ্যতার মানুষেরাই তাঁরাদের নিয়ে এই আলোচনা জারী রেখেছে। তারা তাঁরাদের সেই কাল্পনিক ছবিকে কেন্দ্র করে তৈরি করেছে নানান ধরনের গল্প-কাহিনী, আবার কখনোবা তাদের মাঝে প্রচলিত কোনো গল্প-কাহিনীকে কেন্দ্র করেই আকাশের তাঁরাদের নিয়ে ছবি কল্পনা করেছে। সভ্যতাগুলি যখন আরো পরিপক্ক হয়েছে তখন তারা ধীরে ধীরে ঝুঁকেছে জ্যোতিষশাস্ত্রের দিকে, আর এই জ্যোতিষশাস্ত্র থেকেই জন্ম হয়েছে আমাদের আজকের আধুনিক জ্যোতিবিজ্ঞানের।

প্রচীন মানুষের কল্পনা করা তাঁরার ছবি আধুনিক জ্যোতিবিজ্ঞানও মেনে নিয়েছে। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে - প্রাচীন সভ্য দেশগুলির কল্পনাকরা তাঁরার ছবি গুলির মধ্যেকার মিল গুলি। রাশিচক্রের বারোটি রাশির নাম ও গঠন প্রতিটি প্রাচীন দেশে প্রায় একই ছিলো এবং আধুনিক জ্যোতিবিজ্ঞানে সেগুলি আজো একই নামে পরিচিত। আমাদের রাশিচক্র পৃথিবী সূর্যের অন্যান্য গ্রহগুলির মতই সূর্যকে প্রদক্ষিন করছে। আমরা পৃথিবীর মানুষেরা পৃথিবীর এই ভ্রমণ বেগ বুঝতে পারিনা, বরং সূর্যকেই আকাশ পথে চলতে দেখি।

সূর্যকে দিনের বেলে আকাশে একটি বৃত্তাকার পথে চলতে দেখা যায়। সূর্যের এই আপাত ভ্রমণ বৃত্তপথকে প্রাচীন প্রতিটি জাতী বারটি ভাগে ভাগ করেছে। কোনো দেশই বারোর কম বা বেশী ভাগে ভাগ করেনি। কোথায় গ্রীস আর কোথায় আমাদের ভারতবর্ষ, আর কোথাইবা মিসর। এই সমস্ত দূর দেশের মাঝে যখন যোগাযোগের কোনো সুযোগই ছিলো না তখন এই আশ্চর্য মিল সত্যিই অদ্ভূত মনে হয়, মনে হয় অলৌকিক কিছু রয়েছে এর পিছনে।

যার ব্যাখ্যা আজো মেলেনি। সূর্যপথের এই বারটি ভাগের বারটি নাম রয়েছে এবং এই বারটি অংশেই বারটি ছবি কল্পনা করা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে শুধুমাত্র চীন ছাড়া, গ্রীস, মিসর, ক্যালডিয়া, আরব, ভারতবর্ষ প্রভৃতি দেশে এ বারটি অংশ এবং এদের নাম হুবুহু একই ছিলো এবং আছে, তাছাড়া তাদের ছবিও প্রায় একইরূপ। সূর্যপথের বারভাগের প্রতিটি ভাগকে রাশি বলে আর তাই সূর্যের ভ্রমণ পথকে রাশি চক্রও বলা হয়। রাশিচক্রের বারটি রাশি বাংলা নাম >>> আরবী নাম >>> পাশ্চাত্ত্য নাম >>> রাশির ছবি ১।

মেষ >>>>> হামাল >>>>>এরিস >>>>>>> ভেড়া। ২। বৃষ >>>>> থৌর >>>>>> টরাস >>>>>>> বলদ। ৩। মিথুন >> > জৌরা >>>>> জেমিনী >>>>>> নর-নারী।

৪। কর্কট >>>> সরতন >>>> ক্যান্সার >>>>> কাঁকড়া। ৫। সিংহ >>>> আসাদ >>>>> লিও >>>>>> সিংহ। ৬।

কন্যা >>>> আজরা >>>>>ভার্জো >>>>>> কুমারী মেয়ে। ৭। তুলা >>>> মীজান >>>>> লিব্রা >>>>>>> নিক্তি। ৮। বৃশ্চিক >>> আকরাব >>>> স্করপিও >>>>>> কাঁকড়া বিছা।

৯। ধনু >>>>> কৌস >>>>> স্যাজিটারিয়াস >>> ধনুক। ১০। মকর>>>> জিদ্দী >>>>> ক্যাপ্রিকর্নস >>>>> ছাগল। ১১।

কুম্ভ >>>> দলওয়া >>>>একোয়ারিয়াস >>>> কলস। ১২। মীন >>>> হূত >>>>>> পিসেস >>>>>>>> মাছ। রাশিচক্রের রাশিগুলোর মধ্য দিয়ে সূর্যের আপত গতি। প্রাচীন কালের লোকদের কাছে রাশিচত্রের তাঁরামণ্ডলিগুলি ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেই সময় এই রাশি চক্রের উপর চাঁদ আর সূর্যের অবস্থান দেখেই মাস-ঋতু-বছর হিসাব করা হতো।

প্রতি মাসেই সূর্য এক রাশি থেকে আরেক রাশিতে সরে যায়, ফলে সূর্য কোন রাশিতে তা দেখে সহজেই বুঝা যায় তখন কোন মাস চলছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সূর্য কোন রাশিতে অবস্থান করছে তা বুঝবো কি করে!! দিনের বেলাতো সূর্যের আলোতে কোনো তাঁরাই দেখা যাবে না, তাহলে উপায়? উপায় অবশ্যই আছে, মোটামুটি সকলেই আমরা জানি পূর্ণিমার রাতে চাঁদ থাকে টিক সূর্যের উল্টো দিকে। ফলে তখন চাঁদ যে রাশিতে থাকবে সূর্য থাকবে তার পরের ঠিক সপ্তম রাশিতে। ধরা যাক কোনো পূর্ণিমা রাতে আমরা দেখতে পেলাম চাঁদ রয়েছে মকর রাশিতে তাহলে সেই সময় সূর্য থাকবে কর্কট রাশিতে। কিন্তু এই পদ্ধতির একটি সমস্যা হচ্ছে, এর জন্য আপনাকে পুরো এক মাস অপেক্ষা করতে হবে।

তবে আরো একটি সহজ উপায়ে আপনি প্রতি দিনই জেনে নিতে পারেন সূর্য কোন রাশিতে আছে। মহাকাশের প্রতিটি তাঁরা, তাঁরামণ্ডলি, সূর্য ইত্যাদি জ্যোতিষ্কই ২৪ঘন্টায় এক বার মধ্যগমন করে। মধ্যগমন হচ্ছে-ঠিক মাঝ আকাশে অবস্থান করা। যা বলছিলাম- আমাদের সূর্য মধ্যগমন করে ঠিক দুপুরে। সুতরাং সূর্যের ঠিক উল্টো দিকের রাশিটি মধ্যগমন করবে ঠিক মাঝ রাত্রিতে।

ফলে ঠিক মাঝরাত্রিতে রাশিচক্রের যে রাশিটি মধ্যগমন করবে তার আগের ঠিক সপ্তম রাশিতেই সূর্য সেই দিনের বেলাতে অবস্থা করেছিলো। তাই চাইলেই একজন লোক প্রতিদিন রাতেই দেখে নিতে পারি সূর্যের অবস্থান কোন রাশিতে। এভাবেই মূলতো প্রাচীন কালের লোকেরা হিসাব রাখতো। চলবে.............. (সকল প্রকারের অনিচ্ছাকৃত ভুল ও অপারদর্শিতা হেতু অস্বচ্ছতার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। গুণীজন নিজ গুণেই আমার ভুলগুলি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এ আশাই রইলো।

ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন সকলে। ) ====================================================== গ্রন্থপঞ্জিঃ ১। "খগোল পরিচয়" - মোহাম্মদ আবদুল জব্বার। ২। "তারা-পরিচিতি" - মোহাম্মদ আবদুল জব্বার।

৩। "রাতের আকাশের তারা" - হাসান খুরশীদ রুমী।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।